গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আলোচনা ফিলিস্তিনি ছিটমহল থেকে ইসরায়েলি বাহিনী কখন প্রত্যাহার করবে সেই ইস্যুতে স্থবির হয়ে পড়ছে। দোহায় আলোচনার যুদ্ধবিরতি আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি সূত্রের বরাত দিয়ে শনিবার রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য মার্কিন প্রস্তাবের উপর পরোক্ষ আলোচনা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

গাজায়, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শনিবার ইসরায়েলি সেনাদের গুলিবর্ষণে খাদ্য সহায়তা পেতে যাওয়া ১৭ জন নিহত হয়েছেন, যা মার্কিন-সমর্থিত সাহায্য বিতরণ ব্যবস্থার আশেপাশে সর্বশেষ গণহত্যার ঘটনা। জাতিসংঘের মতে, ছয় সপ্তাহে ত্রাণপ্রার্থী ৮০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

রয়টার্সের সাথে কথা বলা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ত্রাণপ্রার্থীদের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি করা হয়েছে। নাসের হাসপাতালে সাদা কাফনে মোড়ানো বেশ কয়েকটি মৃতদেহ দেখা গেছে। 

জিম্মিদের পর্যায়ক্রমে মুক্তি, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং যুদ্ধের অবসান নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে একটি চুক্তির জন্য নতুন করে চাপ সৃষ্টি করতে ইসরায়েল ওে হামাসের প্রতিনিধিদল এক সপ্তাহ ধরে কাতারে অবস্থান করছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি শিগগিরই একটি চুক্তির আশা করছেন। কিন্তু ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি সূত্রগুলো দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলোর কথা বলেছে, যা অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

একটি ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, হামাস ইসরায়েলের প্রস্তাবিত প্রত্যাহার রূপরেখা প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসরায়েলের প্রস্তাব অনুযায়ী, গাজার প্রায় ৪০ শতাংশ ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণে থাকবে, যার মধ্যে রাফাহের সমস্ত দক্ষিণাঞ্চল এবং উত্তর ও পূর্ব গাজার আরো অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

দুটি ইসরায়েলি সূত্র জানিয়েছে, হামাস চায় মার্চ মাসে পুনরায় হামলার আগে ইসরায়েল পূর্ববর্তী যুদ্ধবিরতিতে যে অবস্থানে ছিল তাতে ফিরে যাক।

ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, যুদ্ধের অবসানের জন্য সাহায্য এবং গ্যারান্টি সম্পর্কিত বিষয়গুলোও একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। আরো মার্কিন হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান করা যেতে পারে।

ঢাকা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে

অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।

১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’

এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।

পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।

পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।

আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)

সম্পর্কিত নিবন্ধ