বিচারকার্য সম্পাদনে দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেক নিরপরাধ মানুষও বছরের পর বছর কারাগারে বন্দী থাকেন। এটি অমানবিক ও শরিয়তবিরোধী। এর প্রভাব শুধু ওই ব্যক্তির ওপর পড়ে না, তাঁর পরিবারের ওপরও পড়ে।

শনিবার রাতে ‘মাযলুম কারাবন্দীদের মুক্তিতে উম্মাহর করণীয়’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর লিখিত বক্তব্যে এসব কথা উঠে আসে। রাজধানীর তোপখানা রোডের বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মিলনায়তনে এ সেমিনারের আয়োজন করে বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলন।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা ছিল হেফাজতের আমির ও বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলনের প্রধান উপদেষ্টা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর। তবে তিনি বার্ধক্যের কারণে উপস্থিত থাকতে পারেননি বলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

আমিরের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান হেফাজতের নায়েবে আমির মুহিউদ্দীন রব্বানী। এতে বলা হয়, আদালত কোনো বন্দীকে জামিন দিলে সেটি অবিলম্বে কার্যকর করা উচিত। কিন্তু প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে জেলগেটে জামিনপ্রাপ্ত বন্দীকে আটকে রাখা শুধু আদালত অবমাননাই নয়, ইসলামের দৃষ্টিতে স্পষ্ট জুলুম।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, কারাগারের ভেতরে অনেক বন্দী রাজনৈতিক বা ধর্মীয় কারণে বৈষম্যের শিকার হন, এটি ইসলামী ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের পরিপন্থী। এ অবস্থার পরিবর্তন জরুরি। চলমান সংবিধান সংস্কারে এই বিষয়গুলো সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করা অপরিহার্য।

এর আগে বক্তব্য দেন হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দীন রব্বানী। তখন তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পরও ওলামায়ে কেরাম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। তাঁদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের মুক্তি না দিলে আলেম-ওলামারা প্রধান উপদেষ্টার বিরুদ্ধে মাঠে নামতে বাধ্য হবেন।

সেমিনারে প্রধান আলোচক ছিলেন বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলনের উপদেষ্টা ও হেফাজত নেতা মুফতি হারুন ইজহার। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবর যে মামলার আসামি, একই মামলায় ওলামায়ে কেরামও আসামি আছেন। কিন্তু বিএনপি নেতা কারাগার থেকে বের হতে পারলেও ওলামায়ে কেরামের অনেকেই বের হতে পারেননি। একইভাবে জামায়াতের নেতারাও বের হয়েছেন। কিন্তু কাউকে খুন না করেও ওলামায়ে কেরাম কারাগারে আছেন। অনতিবিলম্বে তাঁদের মুক্তি দিতে হবে।

মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানী বলেন, আশেকে রাসুল যাঁরা কারাগারে আছেন, তাঁদের মুক্তি দিতে হবে। নইলে এমন আন্দোলন গড়ে তোলা হবে, কারাগারের গেট খুলে, ইট খুলে সবাইকে মুক্ত করা হবে। এ জন্য তৌহিদি জনতাকেও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির আবু জাফর কাসেমী বলেন, এখনো হাজার হাজার ওলামায়ে কেরাম কারাগারে বন্দী রয়েছেন। তাঁদের অতিসত্বর মুক্তি দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সেমিনারের মধ্যভাগে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সেখানে গত বছরের আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের পর বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলনের সৃষ্টি এবং এখন পর্যন্ত যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, তার বিবরণ তুলে ধরা হয়।

এর আগে সেমিনারে বক্তব্য দেন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘রাওয়া’র সভাপতি কর্নেল (অব.

) আবদুল হক। তিনি বলেন, বিপ্লবের পর যেনতেন একটা সরকার গঠনের ফলে যাঁরা জুলুমের শিকার, তাঁরা সুবিচার পাননি। যাঁদের বিনা অপরাধে আটক করে রাখা হয়েছে, তাঁদের মুক্তি দিতে হবে।

খেলাফত মজলিশের নায়েবে আমির আহমদ আলী কাসেমী বলেন, জঙ্গি মামলায় অনেক ওলামায়ে কেরামকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ১০ বছর, ১৫ বছর অনেকে কারাগারে আছেন। আবার নতুন করে অনেককে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মুক্তি দিতে হবে।

সেমিনারে সূচনা বক্তব্য দেন বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক মুহাম্মদ ইসহাক খান। সংগঠনটির সভাপতি মীর ইদরীস নদভীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মুফতি শফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আবদুল কাইয়ুম সোবহানী, সহপ্রচার সম্পাদক মুফতি শরিফউল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান হামিদী, লেখক খালেদ সাইফুল্লাহ আড়াইহাজারী, লেখক ও প্রকাশক আবু তাসমিয়া আহমদ রফিক, ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবী, ইন্তিফাদা বাংলাদেশ নামের প্ল্যাটফর্মের প্রেসিডিয়াম সদস্য মেহেদী হাসান।

আরও বক্তব্য দেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আশরাফ উজ জামান, আইনজীবী মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, আমার দেশ পত্রিকার সাংবাদিক আবু সুফিয়ান, প্রকৌশলী মাসরুর চৌধুরী, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সোহেল রানা, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশের (পুসাব) নির্বাহী সদস্য সাকিন শাবাব প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসল ম র র আম র র পর ব

এছাড়াও পড়ুন:

হজের অব্যয়িত প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ফেরত পেল ৯৯০ এজেন্সি: ধর্ম উপ‌দেষ্টা

হ‌জের নিবন্ধ‌নের সময় বাড়া‌তে সৌ‌দি সরকা‌রকে অনু‌রোধ জানা‌নোর কথা জা‌নি‌য়ে ধর্ম উপ‌দেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন ব‌লে‌ছেন, “হজের অব্যয়িত ৩৭ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা ফেরত পেল ৯৯০টি হজ এজেন্সি। ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৮ বছরে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের ‘মাসার নুসুক’ প্লাটফর্মের আইবিএএন হিসাবে অব্যয়িত পড়ে থাকা এই টাকা ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টায় ফেরত পাচ্ছে তারা।”

সোমবার (১৩ অক্টোবর) সচিবালয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে অনু‌ষ্ঠিত সংবাদ স‌ম্মেল‌নে তি‌নি এসব কথা জানান।

আরো পড়ুন:

কোটির ঘরে ১০০ নাটক!

৫ অক্টোবরের মধ্যে লিড এজেন্সি নির্ধারণে ধর্ম মন্ত্রণালয় চিঠি 

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “সরকারি-বেসরকারি উভয় মাধ্যমে হজযাত্রীদের হজ পালনের নিমিত্ত সৌদি প্রান্তের খরচ নির্বাহের জন্য সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের ‘মাসার নুসুক’ প্লাটফর্মের আইবিএএন হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে অর্থ প্রেরণ করা হয়ে থাকে। গত ৮ বছরে এ হিসাবে বাংলাদেশি হজ এজেন্সিসমূহ যে টাকা পাঠিয়েছিল, তার কিছু টাকা অব্যয়িত ছিল।”

তিনি বলেন, “এই অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য হজ এজেন্সির দিক থেকে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়। এ টাকা ফেরত আনার জন্য সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ে কয়েকবার পত্র প্রেরণ করে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও এ বিষয়ে আলোচনা করে এ মন্ত্রণালয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ হজ অফিসের মাসার নুসুক  প্লাটফর্মের আইবিএএনে অব্যয়িত টাকা ফেরত দিয়েছে।”

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অব্যাহত ও বহুমাত্রিক যোগাযোগের কারণেই এই অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে ধর্ম উপদেষ্টা আরো বলেন, “সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের আইবিএএন হিসাবে মোট ৯৯০টি বাংলাদেশি হজ এজেন্সির অব্যয়িত অর্থ জমা ছিল। সবকটি এজেন্সির টাকাই ফেরত পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে ফেরত দেয়া এই অর্থ বাংলাদেশ হজ অফিসের ‘মাসার নুসুক’ প্লাটফর্মের আইবিএএনে থেকে এ অফিসের হজ সংক্রান্ত সৌদি ফ্রান্সি ব্যাংকে পরিচালিত অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়েছে।”

ড. খালিদ বলেন, “হজ এজেন্সির অব্যয়িত টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আমাদের দাপ্তরিক সব প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। এই অব্যয়িত অর্থ ফেরত আনা এবং তা সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সিসমূহকে ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় উদ্যোগ ও সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে।”

হজের নিবন্ধনের সময় বাড়বে কি না- জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় ১২ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত ছিল। এ সময় পর্যন্ত ৫৯ হাজার ৮৫৯ জন নিবন্ধিত হয়েছেন। এরপর নিবন্ধন বন্ধ রয়েছে।”

তিনি বলেন, “মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সৌদি সরকারের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হবে। এই বৈঠকে হয়ত তারা আমাদের কাছে জানতে চাইবেন কতজন নিবন্ধিত হয়েছেন, কতজনের ভাউচার হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে আমরা আশাবাদী, সময় একটু বাড়তে পারে, যদি তারা অনুমোদন করে। আমরা তাদের সময় বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করব।”

“সময় বাড়বে কি না সেটি সৌদি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা বুঝতে পারবো। আমরা হজ এজেন্সিগুলোকে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছি, আজ বিকেল ৫টার মধ্যে জানাতে হবে- অপেক্ষমাণ হজযাত্রী আর কতজন আছেন, যারা নিবন্ধনের জন্য সিস্টেমে ইনপুট দিতে পারেননি। এ তথ্য আমরা আজ বিকেলের মধ্যে পেলে আগামীকালের মিটিংয়ে বলবো যে এতজন হজযাত্রী নিবন্ধনের অপেক্ষায়,” যোগ ক‌রেন উপ‌দেষ্টা।

এবার হজে যেতে সরকারি ও বেসরকারি কোটা উন্মুক্ত রাখা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “যতজন হবে ততজনই সরকারি ব্যবস্থাপনায় যেতে পারবেন। এটা নিবন্ধনের ওপর নির্ভর করবে।”

সংবাদ বিবৃতিতে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মু. আব্দুল আউয়াল হাওলাদার, হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. আয়াতুল ইসলাম, প্রশাসন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ইমতিয়াজ হোসেন, যুগ্ম-সচিব (হজ) ড. মো. মঞ্জুরুল হক, উপদেষ্টার একান্ত সচিব ছাদেক আহমদ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ