ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের গাছ বিক্রির টাকা আত্মসাতের মামলায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনসহ ১৯ জনকে ১২ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক মো. রবিউল আলমের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। 

বিস্তারিত আসছে…

ঢাকা/মামুন/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রিতে বড় বাধা নিবন্ধন ফি ও অগ্রিম কর

দেশের বাজারে ১০টির বেশি ব্র্যান্ডের বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি হচ্ছে। তবে এখনো বিক্রি কম। এ ক্ষেত্রে বড় বাধা গাড়ি নিবন্ধন ফি ও অগ্রিম কর। বিক্রেতারা বলছেন, বিশ্বের অনেক দেশ বৈদ্যুতিক গাড়ি বা ইলেকট্রিক্যাল ভেহিকেলের (ইভি) ব্যবহার বাড়াতে নিবন্ধন ফি ও অগ্রিম কর মওকুফ করেছে। কোনো কোনো দেশ বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে নগদ প্রণোদনা দেয়। কিন্তু বাংলাদেশে এসব সুবিধা নেই। এ-সংক্রান্ত নীতিমালার খসড়া তৈরি হলেও এখনো তা পাস হয়নি।

দেশের রাস্তায় গাড়ি চালাতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) অনুমোদন লাগে। এ জন্য বিআরটিএতে নির্দিষ্ট অঙ্কের নিবন্ধন ফি জমা দিতে হয়। এই ফি নির্ধারিত হয় গাড়ির ইঞ্জিনের ক্ষমতা বা সিসির ওপর। তবে বৈদ্যুতিক গাড়ির ইঞ্জিনক্ষমতা হিসাব করা হয় মোটরের শক্তির ওপর। আর মোটরের হিসাব হয় কিলোওয়াটে। দেশে বিক্রি হওয়া বেশির ভাগ বৈদ্যুতিক গাড়ির মোটর হচ্ছে ১০১ থেকে ১৬০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন। এসব বৈদ্যুতিক গাড়ির নিবন্ধন ফি দাঁড়ায় ২ লাখ ৪৭ হাজার থেকে ৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা।

জ্বালানিচালিত ১৫০০ সিসি ইঞ্জিন ক্ষমতাসম্পন্ন গাড়ির জন্য অগ্রিম কর দিতে হয় ২৫ হাজার টাকা, যা ২০০০ সিসির গাড়ির ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা। অথচ একই ধরনের ইঞ্জিনক্ষমতার বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্ষেত্রে (১০০ থেকে ১৭৫ কিলোওয়াট) অগ্রিম কর দিতে হয় ২ লাখ টাকা। কারও একাধিক গাড়ি থাকলে বৈদ্যুতিক গাড়িটির অগ্রিম কর দাঁড়ায় ৩ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে র‍্যানকন মোটরসের বিভাগীয় পরিচালক ইমরান জামান খান বলেন, প্রতিবেশী ভারতে বৈদ্যুতিক গাড়ির নিবন্ধন ফি ৬০০ রুপি, যা বাংলাদেশের ৮৪০ টাকার মতো। থাইল্যান্ডে নিবন্ধন ফি নেই। নেপাল অবশ্য ২ হাজার টাকার একটু বেশি ফি নেয়।

এই খাতের ব্যবসায়ীরা জানান, বিশ্বে বেশির ভাগ দেশ নিবন্ধন ফি, প্রণোদনা ও অগ্রিম কর মওকুফের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক গাড়ি কিনতে জনগণকে উৎসাহিত করে।

দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি কম

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যমতে, দেশে ২০২১ সালে ৪টি, ২০২২ সালে ২টি, ২০২৩ সালে ৩৮টি ও ২০২৪ সালে ৬৬টি বৈদ্যুতিক গাড়ি নিবন্ধন হয়েছে। চলতি ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০২।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ভারত বৈদ্যুতিক বাহন বিষয়ে ২০১২ সালে নীতিমালা তৈরি করে। বর্তমানে সে দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি হচ্ছে মোট গাড়ির ২ দশমিক ৫ শতাংশ। থাইল্যান্ড ২০১৫ সালে, নেপাল ২০১৮ সালে ও শ্রীলঙ্কা ২০২৩ সালে এ-সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে। বর্তমানে থাইল্যান্ডের মোট গাড়ির প্রায় ২১ দশমিক ২ শতাংশ বৈদ্যুতিক গাড়ি। নেপালে এই হার ৭৬ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে সাকল্যে বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ২১২। আর নীতিমালা এখন হয়ইনি।

বিওয়াইডি বাংলাদেশের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা ইমতিয়াজ নওশের প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ৩৫০টির বেশি গাড়ি বিক্রি করেছি। তবে এর মধ্যে ৭০ শতাংশ প্লাগইন হাইব্রিড গাড়ি, বাকি ৩০ শতাংশ পুরোপুরি বৈদ্যুতিক গাড়ি। এ গাড়ির প্রতি ধীরে ধীরে মানুষের আগ্রহ বাড়লেও নিবন্ধন ফি ও অগ্রিম কর বেশি হওয়ায় কিনছেন কম।’

চার্জিং স্টেশন কম

এই খাতের ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে বর্তমানে বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য প্রায় ৪০টি চার্জিং স্টেশন রয়েছে। এর অধিকাংশই ঢাকায়। ডিসি (ডিরেক্ট কারেন্ট) চার্জিং স্টেশন স্থাপনে ৬০ লাখ টাকা এবং এসি (অলটারনেটিং কারেন্ট) চার্জিং স্টেশন করতে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা লাগে। সে জন্য এসি চার্জিং স্টেশন বেশি হয়। রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট এবং হোটেলেও চার্জিং স্টেশন তৈরি করা যায়।

দেশে ক্র্যাক প্লাটুন চার্জিং সলিউশন লিমিটেড ২০২২ সাল থেকে বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জিং স্টেশন নিয়ে কাজ করছে। এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগে প্রায় ৩৫টি চার্জিং স্টেশন তৈরি করেছে। চলতি বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি আরও ২০টি চার্জিং স্টেশন স্থাপন করবে।

ক্র্যাক প্লাটুন চার্জিং সলিউশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর শাহরিয়ার প্রথম আলোকে বলেন, চার্জিং স্টেশনের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো বিনিয়োগ। দেশে এখনো এ ধরনের চার্জিং স্টেশন থেকে আয় করার মতো বৈদ্যুতিক গাড়ি নেই। আগামী ২০৩০ সালের পর থেকে এই খাত থেকে বড় আয়ের সম্ভাবনা আছে। তাই শুরুতে এই খাতে সরকারিভাবে আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন। তাহলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়বে।

প্রোগ্রেস মোটরস ইমপোর্টস লিমিটেডের কান্ট্রি লিড (বিপণন ও পরিচালন) তানজিলা তাসলিম বলেন, বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে অধিকাংশ ক্রেতা ভাবেন দেশে চার্জিং স্টেশনের স্বল্পতা রয়েছে। দেশে চার্জিং স্টেশনের প্রয়োজন থাকলেও স্বল্পতা নেই। সব বৈদ্যুতিক গাড়ির সঙ্গে একটি করে চার্জিং স্টেশন বা যন্ত্র দেওয়া হয়। তাই বাসাতেই গাড়িতে চার্জ দেওয়া যায়।

তৈরি হচ্ছে ইভি শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা

বিশ্বের নতুন যত গাড়ি বাজারে আসছে, তার ২০ শতাংশের বেশিই এখন বৈদ্যুতিক। সে জন্য দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি জনপ্রিয় করতে ইতিমধ্যে নানা সুবিধা যুক্ত করে নতুন নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। নীতিমালার খসড়ায় বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানিতে শুল্কহার ও নিবন্ধন ফি কমানো এবং এ ধরনের গাড়ি কেনায় ব্যাংকঋণের সীমা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

‘ইলেকট্রিক ভেহিকেল শিল্প উন্নয়ন’ শীর্ষক এই নীতিমালায় বলা হয়েছে, নতুন ইভি কেনার ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে গাড়ির মোট মূল্যের ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যাবে, যার মেয়াদ হবে আট বছর। এ ছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা সরকারি ও করপোরেট সংস্থাগুলোর জন্য কেনা গাড়ির ৩০ শতাংশ হবে বৈদ্যুতিক—এমন পরিকল্পনাও রয়েছে নীতিমালায়। সেই সঙ্গে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বৈদ্যুতিক গাড়ির নিবন্ধন, ট্যাক্স টোকেন ও ফিটনেস সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) সম্পূর্ণ মওকুফ ও নিবন্ধন ফি ৫০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব রয়েছে।

র‍্যানকন গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (অটো ডিভিশন ২) মোস্তাফিজুর রশিদ বলেন, ভারতে বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারে রাজ্য সরকার ১৫ শতাংশ ও কেন্দ্রীয় সরকার ৪০ শতাংশ প্রণোদনা দেয়। এভাবে তিন-চার বছর প্রণোদনা দেওয়ার পর এখন ভারতে মানুষ বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার দিকে ঝুঁকছে। তবে বাংলাদেশে এই নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যতে করপোরেট ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা বাড়তে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ