চট্টগ্রামের ‘লাইফ লাইন’খ্যাত পোর্ট কানেকটিং সড়ক (পিসি রোড)। ২০২২ সালের নভেম্বরে ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটির সংস্কার ও উন্নয়নকাজ শেষ করেছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এক বছর না যেতেই সড়কটিতে গর্ত তৈরি হয়। এখন অনেকাংশে সড়কটি যানচলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দরের চার হাজারের বেশি পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করে। শুধু এটি নয়, চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই চট্টগ্রাম নগরের অধিকাংশ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়কগুলো সংস্কারে গত এক দশকে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। প্রতিবছর সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কারে গড়ে ৪০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। প্রতিবছরই বর্ষার বৃষ্টিতে ৪০০ কোটি টাকার কাজ ধুয়েমুছে গেছে। সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা বলছেন, ভারী বর্ষণ ও ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়ক নষ্ট হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিম্নমানের কাজ ও পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা ঠিক না থাকায় এক মৌসুমেই সড়ক বেহাল হয়ে পড়ে। 
প্রতিবছর বর্ষা এলে নগরে জলাবদ্ধতা হয়। দফায় দফায় ডুবে যায় সড়ক। পানি নামার পর ভেসে উঠে সড়কের কঙ্কাল। ধুয়েমুছে যায় সড়কের বিটুমিন। সড়কে তৈরি হয় বড় বড় গর্ত। নুড়ি পাথর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে সড়ক। ঘটে দুর্ঘটনা। এসব গর্তে পড়ে অতীতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। চট্টগ্রাম নগরের সড়ক সংস্কারে গত ১০ বছরে অন্তত ছয়টি প্রকল্প নিয়েছে সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে পাঁচটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এসব প্রকল্প ও নিজস্ব অর্থায়নে রাস্তা, ফুটপাত ও সংস্কারের কাজে ব্যয় করা হয়েছে ৪ হাজার ৮৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৭৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সড়ক সংস্কারে ব্যয় করা হয়েছে ৭২৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া নগরের সড়কের উন্নয়নে আড়াই হাজার কোটি টাকা ও কভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি প্রজেক্টের আওতায় ২৬৭ কোটি টাকার সংস্কারকাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ও করা হয়েছে। এত ব্যয়ের পরও সংস্কারের বছর না পেরুতেই সড়কগুলো বেহাল হয়ে পড়ে। চলতি বর্ষা মৌসুমে নগরের অন্তত ১০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরে সড়ক রয়েছে ১ হাজার ৪৪২ কিলোমিটার। জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বর্ষায় জলাবদ্ধতার কারণে সড়ক ডুবে যায়। বিটুমিনের রাস্তায় পানি জমে থাকলে সড়ক দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। সড়ক যাতে টেকসই হয় এ জন্য সিসি ও ব্লক দিয়ে সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নিতে হবে।’ 
সরেজমিন দেখা যায়, নগরের পোর্ট কানেক্টিং সড়কের নিমতলা থেকে বড়পোল পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা। একদিকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্পের কাজ করছে সিডিএ। অন্যদিকে সুয়ারেজ প্রকল্পের কাজ করছে ওয়াসা। এ জন্য সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে। কাজ শেষে প্যাচওয়ার্ক করা হয়নি। ইটের খোয়া দিয়ে চলাচল উপযোগী করা হয়েছে। ভারী যানবাহন চলাচল ও বৃষ্টিতে খোয়া উঠে গিয়ে সড়কটি বেহাল হয়ে পড়েছে। নগরের নিমতলা থেকে তালতলা পর্যন্ত সড়কের অবস্থা বেহাল বেশি। সড়কটিতে যাত্রীবাহী যানবাহনের পাশাপাশি বন্দরের পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরি, ট্রেইলার ও প্রাইমমুভার হেলেদুলে চলছে। ২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট ট্রেইলার উল্টে গিয়ে অটোরিকশার ওপর পড়ে। এতে তিনজন নিহত হন। সড়কটি সংস্কার ও উন্নয়ন শেষে ২০২২ সালের ৯ নভেম্বর উদ্বোধন করেছিলেন সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এই এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান। তিনি সড়কটি দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন। তিনি সমকালকে বলেন, ‘সড়কটি সংস্কারের বছর না পেরুতেই নষ্ট হয়ে গেছে। এরপর জোড়াতালির সংস্কার করা হয়েছিল। এখন ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়কটির বেহাল দশা।’
সরেজমিন দেখা গেছে, নগরের শেখ মুজিব সড়কের বারিক বিল্ডিং ও রশিদ বিল্ডিং এলাকায়ও বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এ সড়কটিও বন্দরের পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া নগরের বিমানবন্দর সড়কের সিইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেড, কাস্টমস ও পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে এসব সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে নাভিশ্বাস উঠছে যাত্রীদের। এছাড়াও নগরের মেরিনার্স সড়ক,  জামালখান সড়ক, শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ সড়ক, সিডিএ অ্যাভিনিউ, শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক, আরাকান সড়ক, মুরাদপুর-অক্সিজেন সড়ক, বায়েজিদ সড়ক, ঢাকা ট্রাঙ্ক (ডিটি) রোড, হালিশহর সড়ক, কাপাসগোলা সড়ক, স্ট্র্যান্ড রোড ও আলকরণ রোড বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এসব সড়কের পিচ উঠে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত।
এছাড়া নগরের ফকির মোহাম্মদ সড়ক, কবির আহমদ সওদাগর সড়ক, আকমল আলী সড়ক, প্রাণহরি দাস সড়ক, হালিশহর আবাসিক এলাকার একাধিক সড়ক, শুলকবহরের আবদুল হামিদ সড়ক, নূর আহমদ সড়ক, জুবিলী সড়ক, আমবাগান সড়ক, প্রবর্তক মোড় থেকে দুই নম্বর গেট মোড়, সিডিএ অ্যাভিনিউ, কে বি আমান আলী সড়ক, ইশান মহাজন সড়কের অবস্থা বেহাল।
শুধু নগরের মূল সড়ক নয়, অলিগলির সড়কেরও বেহাল দশা। ওয়াসার পাইপ লাইন বসানোর জন্য দক্ষিণ কাট্টলীর প্রাণ হরিদাশ রোডে খোঁড়াখুড়ি করা হয়েছিল। সেটি আর সংস্কার করা হয়নি। এখন গাড়ি চলাচলতো দূরের কথা মানুষ চলাচলের উপযোগীও নেই সড়কটি। এই এলাকার বাসিন্দা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মামুনুল হক। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি হলে সড়কটি চাষের জমিতে পরিণত হয়। তখন কোন গাড়িও আসতে চায় না। কাদা মাড়িয়ে মানুষকে যাতায়াত করতে হয়।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আনিসুর রহমান বলেন, ‘ভারী বর্ষণের কারণে নগরের বেশ কিছু সড়কের অবস্থা খারাপ। স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জন্য ওয়াসা এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য সিডিএ বিভিন্ন সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করছে। এসব কারণে কয়েকটি সড়ক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এই মুহূর্তে বড় ধরনের সংস্কার করা যাচ্ছে না। আপাতত প্রাথমিকভাবে গাড়ি চলাচলের উপযোগী করে সংস্কার করে দেওয়া হচ্ছে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক স স ক র কর র সড়ক র প রকল প প রক শ ন সড়ক দ সড়ক ই সড়ক নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

কাজ না করেই অর্ধেক টাকা তুলে নেন ঠিকাদার

সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের প্রতিবাদে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। এমনকি ওই সড়কের কাজ না করেই অর্ধেক টাকা উঠিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেন তারা। গতকাল সোমবার দুপুরে সদর ইউনিয়নের সূর্য নারায়ণপুর এলাকার কর্মসূচিতে শতাধিক মানুষ অংশ নেন। তারা সড়কটির কাজ যথাযথভাবে করার দাবি জানান। 
স্থানীয় সূত্র জানায়, সূর্য নারায়ণপুরের আব্দুর রশিদের বাড়ি থেকে বক্তারটেক পর্যন্ত ২৮০ ফুট দীর্ঘ রাস্তাটিতে ইট বিছিয়ে (সলিং) ৮ ফুট চওড়া করার কথা। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অধীনে কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পের আওতায় এ কাজের প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সদর ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আল আমিন পালোয়ান এ কাজের ঠিকাদার। কিন্তু এলাকাবাসী সড়কটিতে নিম্নমানের ইট ব্যবহার ও বালু না দিয়েই কাজ শুরুর অভিযোগ করেছেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আল আমিন পালোয়ান একই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। যে কারণে গত সরকারের আমলে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গণঅভ্যুত্থানের পর একাধিক মামলায় আসামি হয়ে পালিয়ে যান। কিন্তু সম্প্রতি এলাকায় এসে ওই সড়কের কাজ না করেই অর্ধেক টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন। নিম্নমানের সামগ্রী বসানোর প্রতিবাদ করলে এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির গুজব ছড়িয়েছেন তিনি। এমনকি নানা মাধ্যমে আল আমিন হুমকিও দিচ্ছেন। 
সেখানে বক্তব্য দেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মঈনুল ইসলাম, ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসার কাজল, মো. রানা শেখ প্রমুখ। তাদের অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে আল আমিন পালোয়ানের নম্বরে কল দিয়েও সংযোগ মেলেনি। 
কাপাসিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. তামান্না তাস্‌নীম বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে সরেজমিন পরিদর্শনে যেতে বলেছেন। তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কাজ না করেই অর্ধেক টাকা তুলে নেন ঠিকাদার
  • ‘এদেশে কেউ বিয়ে করতিও চায় না, দিতিও চায় না’
  • চালকের কষ্ট তিন গুণ তাই গাড়ি ভাড়া দ্বিগুণ
  • রাঙামাটির ৭ সড়কই ভালো
  • দরবেশ হাট ডিসি সড়কে শত শত গর্ত
  • ৩০ সড়কে যানবাহন চলাচলই কঠিন
  • আধা কিলোমিটার সড়কে ছয় গ্রামের মানুষের কষ্ট
  • সীমান্ত বাণিজ্যে নতুন আশা ‘প্রশস্ত’ বিলোনিয়া সড়ক
  • ছোট সড়কে বড় যানবাহন দুর্ভোগ চরমে