সিবিএ অফিসে তালা দিলেন বিএনপি-জামায়াত নেতারা
Published: 20th, January 2025 GMT
জৈন্তাপুর উপজেলায় সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের সিবিএ অফিসে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত নেতারা। রোববার বিকেলে জৈন্তাপুরের চিকনাগুল পানিছড়ার গ্যাস ফিল্ডটির প্রধান কার্যালয়ে অবস্থিত সিবিএ অফিসে তারা তালা লাগিয়ে দেন।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগে এই অফিসটি গ্যাস ফিল্ডস কর্মচারী লীগের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তবে একই দিনে বিএনপি সমর্থিত নন-সিবিএ কর্মচারী ইউনিয়নের অফিস উদ্বোধন করেন বিএনপি-জামায়াত নেতারা।
সিলেট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন ও জৈন্তাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুর রশিদের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন গত রোববার গ্যাস ফিল্ডে প্রবেশ করেন। তারা প্রথমে বৈঠক করেন গ্যাস ফিল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল ইসলামের সঙ্গে। বৈঠক শেষে তারা সিবিএ অফিসে অবস্থানরত দুই কর্মচারীকে বের করে দিয়ে তালা লাগিয়ে দেন। পরে শ্রমিক ইউনিয়নের অফিস উদ্বোধন করেন নেতারা। ওই সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নিজাম উদ্দিন, ফতেহপুর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি আব্দুল হক, ফতেহপুর ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি রফিক আহমেদ, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি সুহেব আহমেদ প্রমুখ।
এদিকে সিবিএ সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সোবহান অফিসে তালা লাগানোর ঘটনায় ওই দিন সন্ধ্যায় গ্যাস ফিল্ডের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, বহিরাগত ৩৫-৪৫ জন অফিসটিতে তালা লাগিয়ে দেয়। অফিসের ভেতরে ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। তা চালু থাকলে আগুনের সূত্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
সিবিএ অফিস তালা লাগানোর বিষয়টি স্বীকার করে জৈন্তাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুর রশিদ জানান, ওই অফিসের লোকজন আওয়ামী লীগের অনুসারী। সে জন্য তালা লাগিয়ে দিয়েছেন।
এর আগে সরকার পতনের পর সিবিএ অফিস থেকে কর্মচারী লীগের সাইনবোর্ড ও ভেতরে রাখা বঙ্গবন্ধুসহ বিভিন্ন নেতার ছবি সরিয়ে ফেলা হয়।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ সনদ প্রকাশ উচিত নয়
প্রথমত যে বিষয়টিতে আমি গুরুত্ব দিতে চাই, সেটি হলো ঐকমত্য কমিশন কিছু সংস্কার প্রস্তাব ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ (ভিন্নমত) গ্রহণ করছে। আমি এটি সমর্থন করি না। এ প্রসঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনামকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে (গত নভেম্বরে) বলেছিলেন, তাঁরা মূলত ফ্যাসিলিটেটরের (এগিয়ে নিতে সহায়তাকারী) ভূমিকা পালন করছেন। তাঁর ভাষায়, যতটুকু সংস্কারে সবাই একমত হবেন, ততটুকুই বাস্তবায়নের জন্য বিবেচনায় নেওয়া হবে। তিনি সংখ্যার উদাহরণ দিয়ে বলেছিলেন, যদি ১০০টি প্রস্তাব আসে, আর সব দলের সম্মতি মেলে মাত্র ১০টির ক্ষেত্রে, তাহলে কেবল সেই ১০টি বাস্তবায়নের জন্য বিবেচনায় নেওয়া হবে, বাকিগুলো নয়।
আমি মনে করি, ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলো অন্তর্ভুক্ত করে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করা উচিত নয়; বরং যেসব বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য রয়েছে, কেবল সেগুলো নিয়েই জুলাই সনদ চূড়ান্ত হওয়া উচিত।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, বিএনপি যেসব প্রস্তাবের ব্যাপারে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়। ফলে ভবিষ্যতে তারা যদি ক্ষমতায় যায়, তাহলে সেসব প্রস্তাব বাস্তবায়নের সম্ভাবনা নেই। কারণ, তারা আগেভাগেই আনুষ্ঠানিকভাবে আপত্তি জানিয়েছে। সুতরাং এই প্রক্রিয়ায় জুলাই সনদ হওয়ার মানে, আমার কাছে মনে হয় সরকার কোনো একটি পক্ষকে খুশি করার কৌশল হিসেবে এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
গণতন্ত্রে সংখ্যার কথা বলা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবও বিবেচনায় রাখা উচিত। শুধু বিএনপি নয়, জামায়াতে ইসলামী বা জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) যদি কোনো প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান নেয়, তবে সেগুলো জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত না করাই শ্রেয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, নোট অব ডিসেন্টসহ জুলাই সনদ প্রকাশ করা উচিত নয়।
যে উদ্দেশ্যে উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, আমি সেটির সঙ্গে সহমত। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) উচ্চকক্ষ গঠনের যে ভাবনা, তাতে ভারসাম্য রক্ষার সুযোগ ছিল। আমি সেই প্রস্তাবের পক্ষে। তবে আমি নিম্নকক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির ঘোরতর বিরোধী।
অবশ্য সবকিছু ছাপিয়ে ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রমে কিছু বিষয় আমাকে যথেষ্ট সন্তুষ্ট করেছে। প্রথমত, কমিশনের সদস্যদের উপস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অকল্পনীয় মাত্রায় খোলামেলা বিতর্ক হয়েছে। তাঁরা একসঙ্গে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেশ পরিচালনার কাঠামো নিয়ে আলোচনা করেছেন, এটা বড় অগ্রগতি। দ্বিতীয়ত, বিএনপির অবস্থানও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তারা যেসব প্রস্তাব মানেনি, তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে। সমালোচনা হবে জেনেও তারা যেটা করবে না, সে বিষয়ে কথা দেয়নি। বিএনপি উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি, সংবিধান ও কমিশনসংক্রান্ত কিছু বিষয়ে একমত হয়নি এবং তা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে। আমি এটিকে সৎ অবস্থান মনে করি। অতীতে কোনো প্রস্তাবে সম্মতি দিলেও পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় গিয়ে তা পালন না করার প্রবণতা দেখা গেছে।
এ ছাড়া বিচার বিভাগ সম্পূর্ণভাবে পৃথক্করণের বিষয়ে সব দল রাজি হয়েছে। এটা একটা অসাধারণ অর্জন। সরকারের সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত পৃথক সচিবালয় হবে, হাইকোর্টের বেঞ্চ বিভাগীয় পর্যায়ে যাবে, নিম্ন আদালত উপজেলায় যাবে—এগুলোতে সবাই একমত হয়েছে, এগুলো অবিশ্বাস্য অর্জন।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়েও মোটামুটি সবাই একটি জায়গায় পৌঁছেছে। নির্বাচন কমিশন সরকারের হাত থেকে সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে ফেলার বিষয়ে রাজি হওয়া, কেউ ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে না পারার সিদ্ধান্ত—এগুলো খুবই মৌলিক সংস্কার। সব মিলিয়ে যতটুকু একমত হওয়া গেছে তা যথেষ্ট।
জাহেদ উর রহমান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
(মতামত লেখকের নিজস্ব)