পড়াশোনা তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। একসময় পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ছিলেন মোহাম্মদ রায়হান (৩৫)। যদিও পুলিশের দাবি, ছদ্মবেশে চোলাই মদ বিক্রি করতেন তিনি। হত্যাচেষ্টার একটি মামলায় কারাগারে গিয়ে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের। বছরখানেক আগে জামিনে বের হয়ে এসে ভয়ংকর হয়ে ওঠেন রায়হান। কথায় কথায় গুলি ছোড়ার অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর রায়হানের নামে নগর ও জেলায় যুক্ত হয়েছে জোড়া খুনসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৩টি মামলা। এর মধ্যে হত্যা মামলা ছয়টি। সবশেষ গত রোববার রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের ইশান ভট্টের হাটে বোরকা পরে এসে যুবদল নেতা মোহাম্মদ সেলিমকে গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হলে আবার আলোচনায় উঠে আসে রায়হানের নাম।

পুলিশ জানায়, কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার পর রায়হান দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠেন। নগর ও জেলায় দাপিয়ে বেড়াতে শুরু করেন। মূলত কারাগারে থাকার সময় সাজ্জাদের কাছ থেকে দীক্ষা নেন তিনি। গত বছরের ৫ আগস্টের পর দুজনই জামিনে বেরিয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। রায়হান পারদর্শী হয়ে ওঠেন অস্ত্র চালনায়। আর সাজ্জাদ সম্প্রতি কারাগারে গেলেও তাঁর অস্ত্র ভান্ডারের দেখভাল করছেন এই রায়হান। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়।

পুলিশ জানায়, ছোট সাজ্জাদের বাহিনীতে রয়েছেন ২৫ সক্রিয় সদস্য। তাঁকে গত ১৫ মার্চ ঢাকার একটি শপিং মল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর বাহিনীর হাল ধরেন পাঁচ সহযোগী। তাঁদের অন্যতম সাজ্জাদর ডানহাত হিসেবে পরিচিত রায়হান। তিনি রাউজানের মৃত বদিউল আলমের ছেলে। হত্যাচেষ্টার মামলায় একাধিকবার কারাগারে যান তিনি। সেখানে ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। দুজনই গত বছরের আগস্টের মাঝামাঝিতে জামিনে বেরিয়ে আসেন।

ছোট সাজ্জাদ মূলত চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত আট ছাত্রলীগ নেতা খুনের মামলায় অভিযুক্ত (পরে খালাস পাওয়া) ও বর্তমানে বিদেশে পলাতক ‘শিবির ক্যাডার’ সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদের বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে পরিচিত। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ ১৭টি মামলা রয়েছে। বড় সাজ্জাদের হয়ে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও হাটহাজারীতে আধিপত্য বজায় রাখতে অপরাধ সংঘটিত করে আসছিলেন ছোট সাজ্জাদ।

পুলিশ জানায়, ছোট সাজ্জাদের বাহিনীতে রয়েছেন ২৫ সক্রিয় সদস্য। তাঁকে গত ১৫ মার্চ ঢাকার একটি শপিং মল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর বাহিনীর হাল ধরেন পাঁচ সহযোগী। তাঁদের অন্যতম সাজ্জাদের ডানহাত হিসেবে পরিচিত রায়হান। তিনি রাউজানের মৃত বদিউল আলমের ছেলে। হত্যাচেষ্টার মামলায় একাধিকবার কারাগারে যান তিনি। সেখানে ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। দুজনই গত বছরের আগস্টের মাঝামাঝিতে জামিনে বেরিয়ে আসেন। ছোট সাজ্জাদকে গত ১৫ মার্চ ঢাকার একটি শপিং মল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিভিন্ন মামলায় তাঁকে ২৭ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে একটি অস্ত্রও উদ্ধার করা যায়নি।

রাউজান ও ফটিকছড়ির পাহাড়ি এলাকায় আস্তানা করেছেন রায়হান। সেখান থেকে এসে অপরাধ করেন, বিশেষ করে গুলির পর দ্রুত পাহাড়ের নিরাপদ স্থানে চলে যান তিনি। সন্ত্রাসী সাজ্জাদের কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠেন রায়হান—মোজাম্মেল হক, পরিদর্শক (তদন্ত), বাকলিয়া থানা

ছোট সাজ্জাদ কারাগারে থাকা অবস্থায় ৩০ মার্চ বাকলিয়া এক্সেস রোডে একটি প্রাইভেট কার গুলি করে ঝাঁঝরা করা হয়। এ সময় দুজন নিহত হন। পুলিশ জানায়, আধিপত্য বিস্তারের জেরে আরেক সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেনকে মারতে গুলি করা হয়। কিন্তু ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিয়েছেন সন্দেহে সরোয়ারকে গুলি করা হয়। ঘটনার সিসিটিভি ক্যামেরায় রায়হানকে হত্যাকাণ্ডে অংশ নিতে দেখা গেছে। এ সময় তাঁর হাতে অস্ত্র ছিল।

আরও পড়ুনঅস্ত্র উঁচিয়ে চাঁদা দাবি, ছোড়েন গুলি২০ অক্টোবর ২০২৪

জোড়া খুনের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাকলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাম্মেল হক আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, কথায় কথায় গুলি ছোড়েন সন্ত্রাসী রায়হান। তাঁকে ধরতে একাধিকবার অভিযান চালিয়েও পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, ‘রাউজান ও ফটিকছড়ির পাহাড়ি এলাকায় আস্তানা করেছেন রায়হান। সেখান থেকে এসে অপরাধ করেন, বিশেষ করে গুলির পর দ্রুত পাহাড়ের নিরাপদ স্থানে চলে যান তিনি। সন্ত্রাসী সাজ্জাদের কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠেন রায়হান।’

জোড়া খুনের আগে গত ২২ এপ্রিল বেলা একটায় রাউজান সদর ইউনিয়নের পূর্ব রাউজান ৮ নম্বর ওয়ার্ডের গাজীপাড়ায় সিএনজি ট্যাক্সি স্টেশন এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করা হয় ইব্রাহিম নামের যুবদলের এক কর্মীকে। তাঁর মাথায় ও বুকে গুলি লাগে। এই মামলার অন্যতম আসামি রায়হান। গত বছরের ২৯ আগস্ট নগরের অক্সিজেন-হাটহাজারীর পশ্চিম কুয়াইশে গুলি করে হত্যা করা হয় দুই বন্ধু মো.

মাসুদ ও মো. আনিছকে। এর এক মাসের মাথায় গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর চান্দগাঁও অদূরপাড়া জাগরণী ক্লাবসংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে গুলি করে হত্যা করা হয় ইট-বালুর ব্যবসায়ী মো. তাহসীনকে। প্রতিটি খুনের ঘটনায় সাজ্জাদের সঙ্গে রায়হান জড়িত বলে পুলিশ জানায়। সাজ্জাদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর রায়হান রাউজান চলে যান। গত ২৩ মে নগরের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে সন্ত্রাসী আকবর আলী ওরফে ঢাকাইয়া আকবরকে প্রকাশ্যে গুলি করে খুনের মামলারও আসামি করা হয় রায়হানকে।

আরও পড়ুন‘সন্ত্রাসী’ ছোট সাজ্জাদ কারাগারে, তবু থামেনি তাঁর বাহিনী৩০ মে ২০২৫

তিন ভাই এক বোনের মধ্যে রায়হান দ্বিতীয়। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলটির বিভিন্ন মিছিল ও সমাবেশে যোগ দিতেন রায়হান। স্থানীয় এক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের সঙ্গে তাঁর সখ্য ছিল। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বিএনপির সভায় যোগ দিতে শুরু করেন রায়হান। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে নিজের ফেসবুক আইডিতেও দেন তিনি।

যুবদল নেতা মোহাম্মদ সেলিমকে গুলি করে হত্যার বিষয়ে জানতে চাইলে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তিন-চার খুনিকে শনাক্ত করতে পেরেছি। তাঁদের একজন সন্ত্রাসী মোহাম্মদ রায়হান। জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’

বাকলিয়া জোড়া খুনের মামলার বাদী নিহত মানিকের মা ফিরোজা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রায়হান মামলা তুলে নিতে আমাকে ফোন করে হুমকি দিয়েছিল। একের পর এক প্রকাশ্যে গুলি করে মানুষ মারছে, তবুও তাকে ধরতে পারছে না র‌্যাব-পুলিশ। তাকে ধরতে না পারলে মায়ের বুক খালি হতে থাকবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক গত বছর র ম হ ম মদ আগস ট র ব কল য় র পর দ র একট

এছাড়াও পড়ুন:

প্রেমের টানে ভারতে গিয়ে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি তরুণী

প্রেমের টানে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে এক বাংলাদেশি তরুণী গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাকে অনুপ্রবেশে সহায়তা করার অভিযোগে তার প্রেমিক ভারতীয় নাগরিককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ত্রিপুরার সেপাহিজলা জেলায়। অভিযুক্তরা বর্তমানে ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিএসএফ তাদের আটক করে। পরে স্থানীয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। 

গ্রেপ্তার ওই বাংলাদেশি তরুণীর নাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে তিনি বাংলাদেশের বগুড়া জেলার বাসিন্দা বলে জানানো হয়েছে। আর তার প্রেমিকের নাম দত্ত যাদব। তিনি কর্ণাটকের বাসিন্দা। 

পুলিশ জানায়, ওই বাংলাদেশি তরুণী একসময় মুম্বাইয়ের একটি বিউটি পার্লারে কাজ করতেন। পরে বেঙ্গালুরুর একটি বেসরকারি সংস্থায়  যোগ দেন। এসময় কর্ণাটকের বাসিন্দা দত্ত যাদবের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়। তবে কয়েক মাস আগে ওই তরুণী আবার বাংলাদেশে চলে যায়। প্রেমিকের অনুরোধ রাখতে আবার ভারতে আসেন। তবে তার সঙ্গে পাসপোর্ট ও ভিসা ছিল না। তাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় অনুপ্রবেশে সহায়তা করায় তার প্রেমিক দত্ত যাদবকেও গ্রেপ্তার করা হয়। 

পুলিশ আরও জানায়, তারা ত্রিপুরা থেকে বেঙ্গালুরুতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। এসময় বিএসএফ তাদের আটক করে। 

অভিযুক্তদের ভারতীয় পাসপোর্ট আইন এবং ১৪ ফরেনারস অ্যাক্ট ও ভারতীয় ন্যায় সংহিতার অধীন বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানায় পুলিশ। 

ত্রিপুরা রাজ্যের পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ওই বাংলাদেশি তরুণীকে ভারতে অনুপ্রবেশে কোনো দালাল সহযোগিতা করেছে কি না তা খুঁজে বের করা হচ্ছে। সেটি মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।  

সম্পর্কিত নিবন্ধ