কুষ্টিয়ায় আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায় কার্যকরের দাবিতে মানববন্ধন
Published: 27th, March 2025 GMT
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকারী পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও রায় কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। আবরার ফাহাদ কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে জিলা স্কুলের প্রধান ফটকের সামনে এই মানববন্ধন করা হয়। কর্মসূচিতে আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ ও ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজও উপস্থিত ছিলেন।
আধা ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে অংশ নেওয়া প্রায় সবার হাতে ছিল বিভিন্ন ধরনের স্লোগান লেখা ফেস্টুন। তাঁরা আবরারের হত্যাকারীদের রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান। আগে থেকেই পলাতক (জিসান, তানিম, রাফিদ) ও সদ্য পালিয়ে যাওয়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুনতাসির আল জেমিকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিও জানান তাঁরা।
মানববন্ধনে বলা হয়, এ রকম স্পর্শকাতর একটি মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমি গত বছরের ৬ আগস্ট গাজীপুরের হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালিয়ে গেছেন, যা খুবই উদ্বেগজনক ঘটনা।’
মানববন্ধনে আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, ‘আমি চাই না আর কোনো মায়ের কোল খালি হোক। আর কোনো বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ উঠুক। দ্রুত সময়ের মধ্যে রায় কার্যকর করে দেশের মানুষকে বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থাশীল করে তুলতে হবে।’
জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাঁদের বক্তব্যে বলেন, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর জেলাতে মানববন্ধন করতে দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগের ইন্ধনে তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এর পেছনে ছিলেন। যাঁরা আন্দোলন করতে চেয়েছিলেন, তাঁদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এই রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশপন্থী রাজনীতিতে ফিরতে হবে এবং ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দিতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, মানববন্ধনে অংশ নেওয়াদের মধ্যে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত আদর্শে ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে আবরারের প্রশ্নে তাঁরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। আবরারের হত্যাকারী ছাত্রলীগ নামক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি যেমন নিষিদ্ধ হয়েছে, তাদের পৃষ্ঠপোষক আওয়ামী লীগকেও সেভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। তা না হলে আবরারের আত্মার শান্তি মিলবে না।
মানববন্ধনে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলোর মধ্যে আছে পলাতক সব আসামিকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; মামলার রায় দ্রুত কার্যকর করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে; সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। মানববন্ধন শেষে একটি প্রতিনিধিদল কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমানের কাছে স্মারকলিপি দেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবর র ফ হ দ র য় ক র যকর আবর র র
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজারে নদীবন্দরের সীমানা নিয়ে উত্তেজনা, বিক্ষোভে পিছু হটল বিআইডব্লিউটিএ
কক্সবাজার শহরে নদীবন্দরের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। আজ রোববার দুপুরে শহরের বাঁকখালী নদীর কস্তরাঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ে পিছু হটেন বিআইডব্লিউটিএর (বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ) কর্মকর্তারা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আজ কস্তুরাঘাট এলাকায় নদীবন্দরের সীমানা নির্ধারণে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা আসবেন—এমন খবরেই সকাল থেকেই স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হতে থাকেন। সকাল ৯টা থেকে বদরমোকাম, কস্তুরাঘাট ও পেশকারপাড়ার লোকজন গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ শুরু করেন। এতে ওই এলাকার যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা ১১টার দিকে একই জায়গায় কয়েক শ নারী-পুরুষ এক হয়ে মানববন্ধন করেন। পরে দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ, র্যাব, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা কস্তুরাঘাট এলাকায় পৌঁছান। এরপর উত্তেজনা আরও বাড়ে। শেষ পর্যন্ত সীমানা নির্ধারণের কাজ বন্ধ করেই ফিরে যায় বিআইডব্লিউটিএ।
বিআইডব্লিউটিএ ও জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত ১ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর বাঁকখালী নদীর ওই অংশে উচ্ছেদ অভিযানে ৪৯৬টি অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে প্রায় ৬৩ একর জমি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার জমি আবার দখলের ঝুঁকি থাকায় কাঁটাতারের বেড়া ও সীমানা পিলার দেওয়ার উদ্যোগ নেয় বিআইডব্লিউটিএ।
যা বলছেন বিক্ষোভকারীরা
অবরোধকারীদের দাবি, উচ্ছেদ হওয়া স্থানের মধ্যে ব্যক্তিমালিকানাধীন খতিয়ানভুক্ত জমিও রয়েছে। পারুল আক্তার নামের এক নারী বলেন, ‘আমাদের খতিয়ান আছে, খাজনাও দিচ্ছি। ক্ষতিপূরণ না দিয়ে বা আলোচনা না করে ঘরবাড়ি ভাঙা ও কাঁটাতার দেওয়া চলবে না।’
সাবিনা ইয়াছমিন নামের আরেক নারী বলেন, অনেক পাকা ভবন যখন তৈরি হলো, তখন কেউ থামাননি। এখন হঠাৎ উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে অনেকেই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ক্ষতিপূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা এ জায়গায় স্থায়ী কোনো অবকাঠামো হতে দেবেন না।
স্থানীয় বাসিন্দাদের এ মানববন্ধনে বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও অংশ নেন। তাঁদের একজন কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা মহিলা দলের সভাপতি নাসিমা আকতার। তিনি বলেন, বাঁকখালী নদীর দখল নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পৃথক তিনটি মামলা রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ নিয়েও হাইকোর্টে তিনটি মামলা হয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি না করে ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করে জায়গাজমিতে কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলা অন্যায়। আলোচনার মাধ্যমে সংকটের নিরসন না করলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
কর্মসূচিতে থাকা জেলা যুবদলের প্রচার সম্পাদক ও আইনজীবী মো. ইসমাইল বলেন, বিআইডব্লিউটিএর উচ্ছেদ করা জমিতে অসংখ্য মানুষের খতিয়ানভুক্ত জমি রয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে তিনিসহ ৭৭ জন মামলা করেছেন।