ঢাকার যুবদল নেতার বিরুদ্ধে শরীয়তপুরের পরিবহনে চাঁদাবাজির অভিযোগ, এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ
Published: 12th, July 2025 GMT
ঢাকা-শরীয়তপুর রুটে চলাচলকারী একটি পরিবহন কোম্পানির কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সাবেক এক নেতার বিরুদ্ধে। চাঁদা না পেয়ে গত বুধবার থেকে ওই নেতার সমর্থকেরা ‘শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস’ নামের ওই কোম্পানির কোনো বাস যাত্রাবাড়ীতে ঢুকতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ।
এ ঘটনার প্রতিবাদে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার সামনে এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও শরীয়তপুরের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে এ কর্মসূচি শুরু হয়।
৪৫ মিনিটের কর্মসূচিতে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে প্রায় এক কিলোমিটারের বেশি যানজট তৈরি হয়। আটকা পড়ে কয়েক শ পণ্যবাহী যান। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে কর্মসূচি শেষ হলে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত দিয়ে যানবাহন পারাপার শুরু হয়।
পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। যে কারণে কিছুক্ষণ ঢাকামুখী যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পুলিশের অনুরোধে অবরোধকারীরা কর্মসূচি শেষ করলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শরীয়তপুর জেলার আহ্বায়ক ইমরান আল নাজির প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রাবাড়ীতে যুবদলের এক নেতা শরীয়তপুরের একটি পরিবহন কোম্পানির কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা নিচ্ছেন। ওই নেতা ও তাঁর লোকজন আরও বেশি চাঁদার দাবিতে তিন দিন ধরে শরীয়তপুরের কোনো বাস যাত্রাবাড়ীতে যেতে দিচ্ছে না। শরীয়তপুরের বেশ কয়েকজন পরিবহনশ্রমিককে মারধর করেছে। তাঁদের যানবাহন ভাঙচুর করেছে। কোনো রাজনৈতিক দলের এভাবে চাঁদাবাজি করে মানুষকে জিম্মি করার ঘটনা বাংলাদেশে করতে দেওয়া হবে না। তাঁরা প্রশাসনের কাছে ওই চাঁদাবাজ চক্রকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় তাঁরা বড় ধরনের কর্মসূচি দেবেন।
অভিযুক্ত যুবদল নেতার নাম মুশফিকুর রহমান ওরফে ফাহিম। তিনি যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
শরীয়তপুরের বাস মালিক ও শ্রমিকদের অভিযোগ, মুশফিকের সমর্থকেরা গত তিন দিনে তাঁদের ১০টি বাস ভাঙচুর ও ১২ জন শ্রমিককে পিটিয়ে আহত করেছেন। এ ঘটনায় শরীয়তপুর জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন হাওলাদার যাত্রাবাড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিকার চেয়ে ঢাকার পুলিশ কমিশনার, ঢাকা রেঞ্জের উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি), যাত্রাবাড়ী সেনা ক্যাম্প, র্যাব ক্যাম্প, শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে চিঠি দিয়েছেন।
বাসমালিক ও শ্রমিকেরা জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে ঢাকার সঙ্গে শরীয়তপুরের সরাসরি বাস চলাচল শুরু হয়। শরীয়তপুরের আটটি কোম্পানির অন্তত ২৫০টি বাস চলাচল করছে। এর মধ্যে জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের অধীনে ‘শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস’ নামের কোম্পানির বাস চলে ১৭০টি। শরীয়তপুর শহর ও নড়িয়া থেকে এসব বাসে প্রতিদিন শরীয়তপুরের কয়েক হাজার মানুষ ঢাকার যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত যাতায়াত করেন।
মানববন্ধন কর্মসূচির কারণে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে এক কিলোমিটার বেশি যানজট তৈরি হয়। শনিবার বিকেলে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
মাদারীপুরের শিবচরে জামিনে থাকা আসামি রাকিব মাদবরকে (২৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ২২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরও ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বাদী হয়ে শিবচর থানায় মামলাটি করেন।
এর আগে গত রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের প্রধান সড়কে একটি ব্যাংকের সামনে রাকিব মাদবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাকিব শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকার নাসির মাদবরের ছেলে। তিনি সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
দুই দিন পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে শিবচর পৌর বাজারের সদর রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একটা সভ্য স্বাধীন দেশে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার না করা হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন তাঁরা।
মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বলেন, ‘রাকিবরে এতগুলো মানুষের সামনে কুপাইয়া মাইরা ফালাইলো। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসলো না। যারা খুন করছে, তারা রাকিবের পূর্বশত্রু। আবুল কালাম সরদারের নির্দেশে তার লোকজন এই খুন করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় কোনো আসামি এখন অবধি গ্রেপ্তার করে নাই। আসামিগো গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল গ্রামের আবুল কালাম সরদারের লোকজনের সঙ্গে নিহত রাকিব মাদবরের লোকজনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৬ মে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলায় আবুল কালাম সরদারের ছেলে ইবনে সামাদ নিহত হন। ইবনে সামাদ হত্যা মামলার আসামি রাকিব সম্প্রতি জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে এলাকায় আসেন। রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাকিব। এ সময় ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাকিবের মৃত্যু হয়।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুনশিবচরে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫