ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর নাগরিকদের ৭২ ঘণ্টার জন্য পর্যাপ্ত খাবার, পানি ও প্রয়োজনীয় জিনিস মজুত করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ইউরোপিয়ান কৌশলের অংশ হিসেবে এ পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে বিপর্যয়কর বন্যা, অগ্নিকাণ্ড, মহামারি ও সামরিক আক্রমণের মতো পরিস্থিতিতে প্রস্তুত থাকা।

ইউরোপিয়ান কমিশনের পক্ষ থেকে প্রথমবার প্রস্তুতিমূলক কৌশলের রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। ইউরোপিয়ান কমিশন বলেছে, তারা নাগরিকদের সংকট মোকাবিলায় প্রস্তুতির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উৎসাহিত করতে এ পরামর্শ দিয়েছে। এর মধ্যে পারিবারিক জরুরি পরিকল্পনা তৈরি করা এবং প্রয়োজনীয় সরবরাহ মজুত করার মতো বিষয়গুলো যুক্ত রয়েছে।

জার্মানি ও নরডিক দেশগুলো থেকে আংশিকভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে এ কৌশলের পথে হেঁটেছে ইউরোপিয়ান কমিশন। জার্মানিতে সামরিক হামলা বা জাতীয় সংকটের ক্ষেত্রে জনগণকে কী করতে হবে, তার পরামর্শ দিতে তথ্যসংবলিত লিফলেট তৈরি করে বিতরণ করা হয়। একই সঙ্গে অ্যাপের মাধ্যমে তথ্য দেওয়া হয়।

প্রস্তুতি ও সংকট ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ইউরোপীয় কমিশনার হাদজা লাহবিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে তাদের দেশের নাগরিকদের ৭২ ঘণ্টার জন্য টিকে থাকার প্রস্তুতি নিতে পরামর্শ দিতে বলেছি।’ জনগণ কী মজুত করবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। তাতে জরুরি ব্যাগ দেখানো হয়েছে। তাতে পানিরোধী আবরণে মোড়া পরিচয়পত্র, টিনজাত খাবার, বোতলজাত পানি, দেশলাই, সুইস ছুরি, টাকা, খেলার জন্য তাস, ওষুধ ও একটি ছোট রেডিও রাখতে দেখা গেছে।

জলবায়ু–সংকট, মহামারি, সাইবার-আক্রমণ ও সামরিক আক্রমণের ফলে সম্ভাব্য পরিস্থিতির ঝুঁকির প্রতিক্রিয়ায় ইইউর আরও ভালো সমন্বয় এবং জনসচেতনতা নিশ্চিত করার জন্য এই কৌশল তৈরি করা হয়েছে। নথিটিতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের অবশ্যই বড় আকারের সংকটের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এর মধ্যে সশস্ত্র আগ্রাসনের আশঙ্কাও অন্তর্ভুক্ত, যা এক বা একাধিক সদস্যরাষ্ট্রকে প্রভাবিত করতে পারে।’

ইউরোপীয় কমিশনের পক্ষ থেকে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য ইউরোপব্যাপী প্রস্তুতির আহ্বান জানানো হয়েছে। এর মধ্যে স্কুলের পাঠ্যক্রমে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা, কাঁচামাল, আশ্রয়কেন্দ্র, জেনারেটর এবং সম্ভাব্য খাদ্য ও পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ইইউ মজুত কৌশল তৈরির কথা বলা হয়েছে।

বেসামরিক বা সামরিক পরিষেবার ক্ষেত্রে ইইউর কোনো ক্ষমতা নেই। তবে কোভিড মহামারি সংকটে ইইউ বড় ভূমিকা পালন করে। গত বছর ফিনল্যান্ড অভিযোগ করে, কোনো সদস্যরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আগ্রাসনের ক্ষেত্রে ইইউ কী করবে, সে সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট পরিকল্পনা নেই। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন বলেন, পাঁচ বছর আগের তুলনায় সংকট ও দুর্যোগ মোকাবিলায় ইইউ আরও ভালোভাবে প্রস্তুত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউর প য় ন ক প রস ত ত র জন য ত কর র

এছাড়াও পড়ুন:

নতুন শিক্ষাবর্ষে তিন শ্রেণির বই ছাপাই শুরু হয়নি

আসন্ন নতুন শিক্ষাবর্ষে বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য প্রাথমিক স্তরের অর্ধেকের বেশি বই ছাপিয়ে মাঠপর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিক স্তরের কোনো বই এখনো সরবরাহ করতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই ছাপার কার্যাদেশই এখনো দেওয়া হয়নি। আর নবম শ্রেণির বই ছাপার বিষয়ে মুদ্রণকারীদের সঙ্গে মাত্রই চুক্তি হচ্ছে।

এমন অবস্থায় জানুয়ারির শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই, বিশেষ করে মাধ্যমিকের বই তুলে দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন না এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা। তাঁদের ভাষ্য, এবার ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই আবার দরপত্র দিয়ে ছাপানো হচ্ছে। আবার মাধ্যমিকে বই ছাপার কাজে মন্ত্রণালয় ও ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদন পেতেও দেরি হয়েছে। ফলে বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দেওয়া কঠিনই হবে।

এনসিটিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক বই ছাপায় কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু মাধ্যমিক বই নিয়ে তৈরি হয়েছে বড় ধরনের সংকট। এবার মোট বইয়ের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম।

চলতি বছরও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই পৌঁছাতে প্রায় তিন মাস দেরি হয়েছিল। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতির মুখে পড়ে এবং বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি সমালোচনার মুখে পড়ে। কিন্তু আসন্ন শিক্ষাবর্ষেও একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।

এনসিটিবির সূত্র জানায়, আগামী বছর বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য প্রাথমিক স্তরের মোট পাঠ্যবই ৮ কোটি ৫৯ লাখ ২৫ হাজার ৩৭৯ কপি। এর মধ্যে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ছাপা ও বাইন্ডিং সম্পন্ন হয়েছে ৬ কোটি ৬৫ লাখের বেশি বই। এর মধ্যে সরবরাহ-পূর্ব পরিদর্শন (পিডিআই) সম্পন্ন হয়েছে ৫ কোটি ৫১ লাখের বেশি বইয়ে। আর মাঠপর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে ৪ কোটি ৮৫ লাখের বেশি বই।

এনসিটিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক বই ছাপায় কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু মাধ্যমিক বই নিয়ে তৈরি হয়েছে বড় ধরনের সংকট। এবার মোট বইয়ের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম।

চলতি বছরও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই পৌঁছাতে প্রায় তিন মাস দেরি হয়েছিল। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতির মুখে পড়ে এবং বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি সমালোচনার মুখে পড়ে। কিন্তু আসন্ন শিক্ষাবর্ষেও একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।

গত বছর বই সরবরাহে দীর্ঘ দেরির কারণে এবার আগেভাগেই দরপত্র প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করে মূল্যায়নের কাজও সম্পন্ন করেছিল এনসিটিবি। কিন্তু হঠাৎ ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার দরপত্র সেপ্টেম্বর মাসে বাতিল করা হয়। এই তিন শ্রেণির বইয়ের বাতিল হওয়া দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল গত মে ও জুনে। এরপর আবার দরপত্র আহ্বান করে এনসিটিবি। দরপত্র আহ্বানের পর যাচাই-বাছাই শেষ হলেও এখনো এই তিন শ্রেণির বই ছাপার কার্যাদেশ দেওয়া যায়নি।

নবম শ্রেণির বই ছাপানোর জন্য মুদ্রণকারীদের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে এবং ছাপার কাজও চলছে। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই ছাপার কার্যাদেশও দু-এক দিনের মধ্যেই দেওয়া হবে। প্রাথমিক স্তরের বই ছাপার অগ্রগতি ভালো। আশা করা যায়, বছরের শুরুতেই সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়া যাবে।এনসিটিবির বিদায়ী চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী

এবার ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৩ লাখের বেশি, সপ্তম শ্রেণির ৪ কোটি ১৫ লাখের বেশি ও অষ্টম শ্রেণির মোট বই ৪ কোটি ২ লাখের বেশি।

দরপত্রের নিয়ম অনুযায়ী কার্যাদেশের পর চুক্তি হবে, আর চুক্তির পর ৪৫ দিনের মধ্যে ওই তিন শ্রেণির বই ছাপিয়ে সরবরাহের কথা। এমন অবস্থায় কার্যাদেশ ও চুক্তি সম্পন্ন করে জানুয়ারির শুরুতেই সব শিক্ষার্থীর হাতে বই দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা।

এবার ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৩ লাখের বেশি, সপ্তম শ্রেণির ৪ কোটি ১৫ লাখের বেশি ও অষ্টম শ্রেণির মোট বই ৪ কোটি ২ লাখের বেশি।

এনসিটিবি সূত্র আরও জানায়, এবার নবম শ্রেণির মোট পাঠ্যবই ৫ কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার ২৮ কপি। বুধবার মতিঝিলে এনসিটিবি কার্যালয়ে দেখা যায়, এসব বই ছাপার বিষয়ে মুদ্রণকারীদের সঙ্গে এখন চুক্তি হচ্ছে। চুক্তি করতে আসছেন মুদ্রণকারীরা।

নিয়মানুযায়ী চুক্তির পর ৬০ দিনের মধ্যে নবম শ্রেণির বই সরবরাহের কথা। ইতিমধ্যে নভেম্বরের প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গেছে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে মুদ্রণকারীরা সাধারণত নোট ও গাইড ছাপানোয় ব্যস্ত থাকেন। আবার ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে পোস্টার ছাপানোর কাজও বাড়বে। সব মিলিয়ে জানুয়ারির শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

অন্যদিকে ইবতেদায়ি স্তরের মোট বই ৩ কোটি ১১ লাখের বেশি; যার মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ ছাপা হয়েছে।

অবশ্য এনসিটিবির বিদায়ী চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী বলেছেন, নবম শ্রেণির বই ছাপানোর জন্য মুদ্রণকারীদের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে এবং ছাপার কাজও চলছে। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই ছাপার কার্যাদেশও দু-এক দিনের মধ্যেই দেওয়া হবে। প্রাথমিক স্তরের বই ছাপার অগ্রগতি ভালো। আশা করা যায়, বছরের শুরুতেই সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়া যাবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘জেনারেল উইন্টার’ ঘিরে পুতিনের নতুন কৌশল
  • রাশিয়ার কাছ থেকে তেল-গ্যাস কেনায় যুক্তরাষ্ট্রের ছাড়পত্র পেল হাঙ্গেরি
  • পেঁয়াজের দাম প্রতিবছর বাড়ে কেন?
  • হঠাৎ বেড়েছে পেঁয়াজের দাম, কারণ কী
  • ইলন মাস্ক মঞ্চে নাচলেন, সঙ্গী হলো রোবট
  • নতুন শিক্ষাবর্ষে তিন শ্রেণির বই ছাপাই শুরু হয়নি
  • মিয়ানমার সংঘাতের আঞ্চলিক প্রভাব যাচাইয়ে বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন জার্মানির সংসদ সদস্য
  • ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের কাছে ঢাকা ‘জাদুর শহর’
  • পেঁয়াজের দামবৃদ্ধিতে কার পকেট ভারী?
  • ধামরাইয়ের বাজারে বাড়ছে সবজির সরবরাহ, দাম অপরিবর্তিত