দাম বেড়েছে সবজি ও মুরগির, কাঁচামরিচে আগুন
Published: 11th, July 2025 GMT
দেশের বিভিন্ন স্থানে টানা বৃষ্টির প্রভাবে জলাবদ্ধতা ও বন্যা দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। এর প্রভাবে পড়েছে বাজারে। উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় কাঁচামরিচসহ অধিকাংশ সবজির দাম বেড়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) রাজধানীর নিউ মার্কেট ও রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়, এ সপ্তাহে দাম বেড়ে তা হয়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
আরো পড়ুন:
ধানের মৌসুমে অস্থির চাঁপাইনবাবগঞ্জের চালের বাজার
এক ইলিশের দাম ৭৭০০ টাকা
অধিকাংশ সবজির দাম প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এখন বাজারে প্রতি কেজি বেগুন মানভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, দেশি গাজর ১৩০ টাকা, টমেটো ১৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, দেশি শশা ৭০, বরবটি ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, কাকরোল ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৭০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, প্রতি পিস লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং জালি কুমড়া ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুদিবাজারে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। এখন বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, রসুন ১৮০ টাকা ও দেশি আদা ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছের দাম স্বাভাবিক আছে। বাজারে এখন এখন মাঝারি আকারের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায়। চাষের পাঙাসের কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, কৈ ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, দেশি শিং ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৪০০ থেকে ৫০০টাকা। এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়।
বেড়েছে মুরগির দাম
কোরবানির ঈদের পর গত কয়েক সপ্তাহ ব্রয়লার মুরগির দাম কম ছিল। কিন্তু, দেশের বিভিন্ন স্থানে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে প্রান্তিক পর্যায়ে খামারের ক্ষতি হওয়া এবং পরিবহন সমস্যার কারণে এ সপ্তাহে মুরগির দাম বেড়েছে। এখন বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়, যা গত সপ্তাহ ছিল ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন ১২০ থেকে ১২৫ টাকা।
রাজধানীর নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা গৃহিণী ঝর্না আক্তার রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেছেন, “তিন-চার দিন আগে কাঁচামরিচ নিয়েছিলাম ১২০ টাকায়। আজ সেই কাঁচামরিচ চাচ্ছে ৩০০ টাকা। আমাদের মতো যারা নিম্নআয়ের মানুষ, তাদের জন্য হঠাৎ করে এরকম দাম বেড়ে যাওয়া কষ্টের বিষয়। তাই, চাহিদা বেশি থাকলেও আজ ২০ টাকার কাঁচামরিচ নিলাম। মুরগির দামও বেড়েছে। সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, নিম্ন মানুষের কথা চিন্তা করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য।”
রায়েরবাজারের সবজি বিক্রেতা শফিক হাসান বলেছেন, “এ সপ্তাহে বৃষ্টি বন্যার জন্য সবজির দাম বেশি। বিশেষ করে, কাঁচামরিচের দাম এক লাফে ৩০০ টাকা হয়েছে। আমরা পাইকারিভাবে কম নিয়ে আসছি। আশা করি, সরবরাহ বাড়লে এবং বৃষ্টি কমলে কাঁচামরিচসহ অন্যান্য সবজির দাম আবার কমবে।”
ঢাকা/রায়হান/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম রগ র দ ম সবজ র দ ম ৩০০ ট ক ৫০ ট ক
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্ব অর্থনীতিতে ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাব এখনো তেমন একটা পড়েনি: আইএমএফ
মার্কিন শুল্কবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বজুড়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল, বাস্তবে তার প্রভাব এখন পর্যন্ত অনেকটাই সীমিত। তবু তার কোনো প্রভাব পড়েনি—এমনটা ভাবার সময় আসেনি। তেমনটা ভাবা হলে বিষয়টি ভুল হবে—এমন সতর্কবার্তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে আইএমএফ ২০২৫ সালের জন্য বৈশ্বিক ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কিছুটা বাড়িছে। সংস্থাটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কবৃদ্ধির মাত্রা প্রত্যাশার চেয়ে কম হওয়ায় কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।
ওয়াশিংটনের হিসাবমতে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যে বাণিজ্যচুক্তিগুলো করেছে, সেগুলোর ফলে শুল্কহার এপ্রিলের চেয়ে কম—বেশির ভাগ দেশের জন্য তা ১০ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে।
আইএমএফের নতুন পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। জুলাই মাসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, চলতি বছর প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশের চেয়ে কিছুটা বেশি হলেও মহামারির আগের গড় প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৭ শতাংশের তুলনায় কমই হবে। সংস্থাটির ধারণা, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ২ দশমিক ১ শতাংশ।
আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়ের-অলিভিয়ার গুরিঞ্চাস ব্লগ পোস্টে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র একাধিক দেশের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি করেছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রেই তারা ছাড় দিয়েছে। অন্যদিকে বেশির ভাগ দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপ থেকে বিরত আছে। তাঁর ভাষায়, ব্যবসায়ীরাও সময় নষ্ট করেননি—শুল্কবৃদ্ধির আগেই আমদানি বাড়িয়েছেন, সরবরাহব্যবস্থা নতুন করে সাজিয়েছেন।
গুরিঞ্চাস সতর্ক করেছেন, বাণিজ্য–উত্তেজনা এখনো প্রশমিত হয়নি। এসব চুক্তি কতটা টিকবে, তারও নিশ্চয়তা নেই। সেই সঙ্গে মার্কিন আমদানিকারকেরা শেষ পর্যন্ত বাড়তি খরচের বোঝা ভোক্তার ঘাড়েই চাপিয়ে দিতে পারেন। তাঁর মন্তব্য, অতীতের অভিজ্ঞতা বলে, পুরো চিত্র ফুটে উঠতে সময় লাগে।
চলতি বছর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র যেন এক বিশৃঙ্খল বাণিজ্যযুদ্ধের ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে আছে। কখনো শুল্ক বাড়ানো, কখনো তা স্থগিত রাখা, আবার কখনো হঠাৎ নতুন চুক্তি—এই ওঠানামার মধ্যে বিশ্বজুড়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।
এর মধ্যে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য–সম্পর্ক আবারও টান টান হয়ে উঠেছে। বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ে বিবাদের জেরে ট্রাম্প চীনের ওপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। ১ নভেম্বর থেকে তা কার্যকর হবে—এমন দিনক্ষণও ঠিক করে রেখেছেন তিনি। বর্তমানে চীনের পণ্যে শুল্ক আছে ৩০ শতাংশ। নতুন করে ১০০ শতাংশ শুল্ক যোগ হলে মোট শুল্কভার দাঁড়াবে ১৩০ শতাংশ।
গুরিঞ্চাস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অভিবাসননীতির কারণে দেশটির শ্রমবাজারে চাপ পড়ছে। এ কারণে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। তাঁর ভাষায়, ‘আমরা দেখছি, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে বিদেশে জন্ম নেওয়া কর্মীর সংখ্যা দ্রুত কমছে—শুল্কবৃদ্ধির সঙ্গে এ বিষয়ও সরবরাহ খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’
গুরিঞ্চাসের মন্তব্য যেন বিশ্ব অর্থনীতির সারকথাই তুলে ধরে—যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধির গতি কমে গেলে সেই অভিঘাত কেবল যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সীমিত থাকে না; পৃথিবীর সবার ওপর তার প্রভাব পড়ে। কেননা, বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতিগুলোর জিডিপির মূল উৎস হচ্ছে রপ্তানি। সেই রপ্তানির মূল গন্তব্য আবার যুক্তরাষ্ট্র।