হাওড়-বাওড়ের জেলা সুনামগঞ্জে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য টাঙ্গুয়ার হাওর, নিলাদ্রী লেক, বারেক টিলাসহ বেশ কয়েকটি বিখ্যাত পর্যটন স্পট রয়েছে। তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, শান্ত পরিবেশ ও মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের লাকমাছড়া নামের আরও একটি পর্যটন স্পট আছে যা অনেকের কাছেই অজানা। 

সুনামগঞ্জের এই লাকমাছড়া যেনো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার। মূলত লাকমাছড়া হলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লুকানো রত্ন। লাকমাছড়া দেখতে অত্যন্ত মনোরম। এখানে এক পাশে দাঁড়িয়ে ভারতীয় সীমানায় থাকা উঁচু উঁচু সবুজে ঘেরা পর্বতমালা, চুনা পাথরের বিশাল পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সবুজের আস্তরে ভারতীয় বিএসএফ জোয়ানদের ক্যাম্প, সুদূরে ছড়ার উপর ঝুলে থাকা একটি বেইলি ব্রিজ ও ছড়ার বুকজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে চুনাপাথর চমৎকার দৃশ্য দেখা যায়। যা যে কোনো মানুষকে মনোমুগ্ধ করে। প্রকৃতি কন্যা লাকমাছড়া নিজ চোখে একবার না দেখলে অজানাই রয়ে যাবে।

মায়াবী রূপের লাকমাছড়া অবস্থিত ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া ও মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশের সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায়। মেঘালয় পাহাড়ের বুক চিরে অবিরাম গতিতে স্বচ্ছ পানির ধারা নেমে এসেছে ভারত-বাংলাদেশ জিরো পয়েন্টের দৃষ্টিনন্দন লাকমাছড়ায়। এ ছড়ার পানি আঁকা-বাঁকা হয়ে লাকমা গ্রাম ছুঁয়ে জেলার পাঠলাই নদী ও টাঙ্গুয়ার হাওরের মিঠা পানির সাথে মিলিত হয়েছে। বর্তমানে প্রকৃতির আশীর্বাদে অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝে অবস্থিত লাকমাছড়া দেখে যেকোনো প্রকৃতিপ্রেমী মুগ্ধ হয়ে উঠবেন।

জানা গেছে, সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড়ের কোলে উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের লাকমা গ্রামের লাকমাছড়াটি আগে নালা হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু সম্প্রতি বর্ষায় দেশের অপার থেকে প্রবল বেগে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহিত হওয়ায় নালাটি ধীরে ধীরে বড় হয়ে যায়। ফলে ছড়া এখন বিশাল আকার ধারণ করেছে। যদিও ছড়াটি হেমন্তে পানি কিছুটা কম থাকে, তবে বর্ষা মৌসুমে এই লাকমাছড়ার নান্দনিকতা বহুগুণ বেড়ে যায়। বর্ষার সময় যেসব পর্যটকরা টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরতে আসনে তারা ছড়ার সৌন্দর্য দেখতে ভুলেন না আবার বেশিরভাগ পর্যটকদের অজানা এই লাকমাছড়ার কথা।

লাকমা গ্রামের কলেজ পড়ুয়া নূর আমিন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘আমাদের সুনামগঞ্জে দেখার মত অনেক কিছু এখন লুকিয়ে আছে। যেমন আমাদের গ্রামের লাকমাছড়া জায়গাটা এতো দারুণ, যা বলে বুঝানো যাবে না। লাকমাছড়া নতুন পর্যটন স্পট। হাওরে অনেকেই আসেন কিন্তু খুব কাছে এতো সুন্দর একটা জায়গা অনেকেই মিস করেন। আর যারা জানেন তারা এসে ভ্রমণ করে অনেক আনন্দিত হন। জায়গাটার পরিচিতি বাড়ানো গেলে হয়তো সব সময় এখানে পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকবে।”

গ্রামের প্রাক্তন শিক্ষক মিজানুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘এখানকার বাসাত, পরিবেশ, পানি, পাহাড়, সব কিছুই অসাধারণ। দেশের দূর থেকে যে পর্যটকরা সুনামগঞ্জ ঘুরতে এসে পাহাড় থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ পানিতে একটা ঝাঁপ দেন, আমি আশাবাদী সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে দিবে প্রকৃতির ছোঁয়া। বর্ষায় সিলেটের বিছানাকান্দির চেয়ে সুন্দর। কিন্তু এখানে ভালো মানের খাবার ও কাপড় পরিবর্তন করার ব্যবস্থা, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করা হলে আশা করি দেশ বিদেশের প্রকৃতিপ্রেমীরা নিয়মিত ঘুরতে আসবেন।”
 
কীভাবে যাবেন
ঢাকার গাবতলী, মহাখালী, সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল ও ফকিরাপুল থেকে সরাসরি সুনামগঞ্জের বাস পাওয়া যায়। বর্তমানে ঢাকা থেকে শ্যামলী, হানিফ, মামুন, এনাসহ বেশকিছু বাস যায় ঢাকা-সুনামগঞ্জ চলাচল করে, এসব বাসে জনপ্রতি ৮০০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকা ভাড়া। 

সুনামগঞ্জ পুরাতন বাস স্টেশন অথবা আব্দুল জহুর সেতুতে (সুরমা ব্রিজ) নেমে, সিএনজি, লেগুনাসহ মোটরসাইকেল ভাড়া করে আপনি যেতে পারবেন লাকমাছড়ায়। আব্দুল জহুর সেতু (সুরমা ব্রিজ) থেকে পলাশ বাজার হয়ে ধনপুর সড়কে এই সহজে যাওয়া যায়। তবে পথে যাদুকাটা নদী পারাপার হতে হবে। আব্দুল জহুর ব্রিজ থেকে সরাসরি লাকমাছড়ার মোটরবাইকের জনপ্রতি ভাড়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। তবে সিএনজি অটোরিশকাও পাওয়া যায়। কিন্তু আপনি যেকোনো বাহনে উঠার আগেই দরদাম করে নেওয়া উত্তম। 

থাকবেন কোথায়
লাকমাছড়ার একটু পূর্ব দিকে বড়ছড়া বাজার সেখানে বেশ কয়েকটি হোটেল আছে। তবে বর্তমানে সুনামগঞ্জ শহরে উন্নত মানের পর্যাপ্ত হোটেল গড়ে উঠেছে। রাত্রীযাপনের জন্য আপনাকে জেলা শহরকেই বেছে নিলে ভালো হবে। হোটেলের পাশাপাশি সার্কিট হাউজ, জেলা পরিষদের ডাকবাংলো ছাড়াও ভিআইপি গেস্ট হাউজও রয়েছে। 

খাওয়া দাওয়া কোথায় করবেন
খাবারের জন্য তেমন বড় কোনো হোটেল না থাকলেও আশেপাশের বড়ছড়া বাজারে কিছু ছোট দোকান আছে। সেখান বসে বা কিনে নিয়ে খাবার খাওয়া যায়। নয়তো সুনামগঞ্জ শহর থেকে খাবার নিয়ে যেতে পারেন।

ঢাকা/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প র ক ত ক স ন দর য র স ন মগঞ জ র

এছাড়াও পড়ুন:

পছন্দের খাবার না পেয়ে কারাগার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বন্দীর মামলা

কারাগারে ভেজেমাইট (একধরনের জেলি) খেতে না দেওয়ায় কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার এক বন্দী। ওই বন্দীর নাম আন্দ্রে ম্যাককেচনি (৫৪)। তিনি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করছেন।

বর্তমানে ম্যাককেচনি অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের একটি কারাগারে (সংশোধনকেন্দ্র) সাজা ভোগ করছেন। তবে কারাগারে বসে নিজের অধিকার আদায়ের জন্য কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন তিনি।

৮০ শতাংশের বেশি অস্ট্রেলীয় পরিবারের রান্নাঘরে ভেজেমাইটের কৌটা পাওয়া যাবে। তবে ভিক্টোরিয়ার ১২টি কারাগারের বন্দীরা খাবারটি খেতে পারেন না। ভেজেমাইট খেতে না দেওয়ায় ভিক্টোরিয়ার বিচার ও সমাজ সুরক্ষা বিভাগ এবং কারাগার পরিচালনা সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করছেন ম্যাককেচনি। আগামী বছর এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা।

২০০৬ সালে ভিক্টোরিয়ার কারাগারগুলোয় ভেজেমিট নিষিদ্ধ করা হয়। কারণ, এটি মাদক শনাক্ত করতে সক্ষম কুকুরের কাজে ব্যঘাত সৃষ্টি করে। বন্দীরা আগে ভেজেমাইটের আড়ালে অবৈধ মাদক লুকিয়ে রাখতেন। তাঁরা মনে করতেন, গন্ধের কারণে কুকুর মাদক চিহ্নিত করতে পারবে না।

এ ছাড়া ভেজেমাইটে ইস্টের উপাদান থাকে, যা ভিক্টোরিয়ার কারাগারগুলোয় নিষিদ্ধ। কারা কর্তৃপক্ষের সন্দেহ, এটি ‘মদ উৎপাদনে ব্যবহার করা হতে পারে’।

কারা কর্তৃপক্ষ ম্যাককেচনিকে মানবাধিকার আইন অনুযায়ী অস্ট্রেলীয় হিসেবে নিজস্ব সংস্কৃতি উপভোগের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে—তিনি আদালতের কাছ থেকে এমন একটি ঘোষণা চাচ্ছেন।

অস্ট্রেলিয়ার আইনে প্রত্যেকের সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, জাতিগত বা ভাষাগত অধিকার নিশ্চিত করার সুবিধার কথা বলা আছে। এর মাধ্যমে প্রত্যেককে তাঁর সংস্কৃতি উপভোগের, ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের এবং ভাষা ব্যবহারের অধিকার দেওয়া হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ কারাবিধি লঙ্ঘন করেছেন, আদালতের কাছে এমন একটি ঘোষণা চান ম্যাককেচনি। কারণ, তারা তাঁর সুস্থতা বজায় রাখতে যথাযথ খাবার সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ