কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ফটো কার্ড ঘুরছে। তিনটি বেসরকারি চ্যানেলের তিন সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতি। সেই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের একটি বক্তব্যের স্ক্রিনশটও, যাতে তিনি বলেছেন, ‘আপনারা মন খুলে সরকারের সমালোচনা করুন।’

উল্লিখিত তিন সাংবাদিকের একজন উপদেষ্টার কাছে বাংলা নববর্ষের আয়োজন ও জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের তালিকা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। তিন সাংবাদিকের প্রশ্নের মান ও ঔচিত্য নিয়ে সংশয় আছে। থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। শহীদদের বিষয়ে প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের আরও সতর্ক ও সংবেদনশীল থাকা উচিত ছিল। কিন্তু অনুচিত প্রশ্ন করার কারণে সাংবাদিকের চাকরি যাওয়ার উদাহরণ সম্ভবত এটাই প্রথম।

আশির দশকে আমাদের একজন অগ্রজ সাংবাদিক স্বয়ং রাষ্ট্রপতিকে কঠিন প্রশ্ন করেছিলেন। বলেছিলেন, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদের কবিতা প্রথম পাতায় ছাপা হয় না। আপনার কবিতা প্রথম পাতায় ছাপা হয়। আপনি কি তাঁদের চেয়েও বড় কবি? এই প্রশ্নের জন্য তাঁর চাকরি যায়নি। ঢাকা থেকে বদলি করে অন্যত্র পাঠানো হয়েছিল।

তথ্য উপদেষ্টার দিক থেকে বলা হয়েছে, ওই তিন সাংবাদিকের চাকরি যাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। সরকারের হস্তক্ষেপ ছিল এ কথা কেউ বলেনওনি। বাস্তবতা হলো, ওই ঘটনার পর একটি সংগঠন ওই তিন সংবাদমাধ্যম কার্যালয় অভিমুখে অভিযানের ঘোষণা দেয়। এরপর ওই তিন প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ তিন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয়।  

গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম মব ভায়োলেন্সের শিকার হয়েছে। অনেক সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহী পদে রদবদল এসেছে। কিছু সম্পাদক ও সাংবাদিক পত্রপাঠ বিদায় হয়েছেন, তাঁদের স্থলে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা সাংবাদিকতার স্বাধীনতার নিশ্চয়তা না দিলেও মালিকের স্বার্থ সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিয়েছেন। তাঁদের রদবদল প্রক্রিয়ায় কেবল বর্তমান সরকার নয়, ভবিষ্যৎ ক্ষমতার হিসাব–নিকাশও কাজ করেছে। 

সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি নিয়ে কোনো প্রশ্ন করলেই অনেকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কটি পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল বন্ধ করা হয়েছিল কিংবা কতজন সাংবাদিক গ্রেপ্তার, কতজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সেই উদাহরণ টানেন। আওয়ামী লীগ সরকার সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করেছে, সাংবাদিকদের ওপর জেল–জুলুম চালিয়েছে, তার পরিণতিও তারা ভোগ করেছে। তাই স্বৈরাচারী সরকারের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে না; যারা দেশের সংবাদমাধ্যমের সর্বোচ্চ স্বাধীনতা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

বাংলাদেশে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা বাইরের কেউ নিশ্চিত করতে পারবেন না। এটা সম্পাদক ও সাংবাদিকদেরই নিশ্চিত করতে হবে। সম্প্রতি ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম ‘সম্পাদকেরা মালিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা হবেন না’ শিরোনামের লেখায় সেটি পরিষ্কার করে বলেছেন। সংবাদমাধ্যমের অংশীজনেরা মালিকের বরকন্দাজের ভূমিকায় না থেকে আত্মসমালোচনা করবেন—তাঁরা অতীতে কী করেছেন, এখন কী করছেন? 

আজ ৩ মে মুক্ত সংবাদমাধ্যম দিবস। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) এই দিনে মুক্ত সাংবাদিকতায় বিভিন্ন দেশের অবস্থানের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এবার বাংলাদেশের সূচক ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৪৯। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৫তম। ১৬ ধাপ অগ্রগতি। তা সত্ত্বেও আরএসএফের বিশ্লেষণে আমরা ‘বেশ গুরুতর’ অবস্থায় আছি। এবার ভারতের অবস্থান ১৫১তম, পাকিস্তানের ১৫৮তম ও ভুটানের ১৫২তম। সূচকে এই তিন দেশ বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে। তবে নেপাল (৯০তম), শ্রীলঙ্কা (১৩৯তম) ও মালদ্বীপ (১০৪তম) এগিয়ে আছে।

আওয়ামী লীগ আমলে কেউ সরকারের বিরোধিতা করলেই  ‘বিএনপি–জামায়াত’ ট্যাগ লাগানো হতো। এখন ট্যাগ লাগানো হয় ‘স্বৈরাচারের দোসর’। আওয়ামী আমলে কোনো সংবাদমাধ্যম সরকারের সমালোচনা করলেই সম্পাদক ও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (ডিএসএ) মামলা ঠুকে দেওয়া হতো। ২০২৩ সালের ২৬ মার্চ প্রথম আলোর অনলাইনে প্রকাশিত একটি ফটো কার্ডের জন্য সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে কয়েক দিন কারাগারে আটক রাখা হয়।

একই ঘটনায় প্রথম আলোর সম্পাদকের বিরুদ্ধেও ডিএসএতে মামলা হয়। ওই কার্ডের সঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তির কোনো সম্পর্ক ছিল না। তারপরও একটি বেসরকারি টেলিভিশন উসকানিমূলক প্রচার চালিয়ে প্রথম আলোর সম্পাদক ও সাংবাদিককে হয়রানি করে। সেটি করা হয়েছিল তৎকালীন সরকারকে খুশি করতে। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে নিরন্তর প্রচারণা চালাচ্ছে স্বার্থান্বেষী মহল। এর মধ্যে বিগত সরকারের হক না হক সব কাজে উৎসাহ জোগানো সংবাদমাধ্যম যেমন আছে, তেমনি আছে দেশের ভেতরে ও বাইরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাবশালী কুশীলবও। 

গত বছরের ১২ নভেম্বর বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। তারা বাংলাদেশের সংবিধানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় উল্লিখিত বাধ্যবাধকতাকে ক্ষুণ্ন করে, এমন সব আইন স্থগিত করারও দাবি করেছিল। এর মধ্যে দণ্ডবিধির আওতাধীন মানহানি–সংক্রান্ত ফৌজদারি অপরাধ ও ঔপনিবেশিক আমলের অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট রয়েছে। 

অন্তর্বর্তী সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ করার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতেও চরিত্রগত ফারাক কম। প্রস্তাবিত আইনেও যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হলেই গ্রেপ্তার করার বিধান আছে। সরকার মনে করলে যেকোনো স্থাপনায় তল্লাশি ও মালামাল জব্দ করতে পারবে। সম্প্রতি একজন অভিনেত্রীকে ১৯৭৪ সালের বহু বিতর্কিত বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তার করে সরকার।

বিশেষ ক্ষমতা আইনে কাউকে তখনই গ্রেপ্তার করা হয়, যখন তাঁর বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায় না। তিনি জামিনে মুক্তি পেলেও ফৌজদারি আইনে ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যেসব সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের কেউ জামিন পাননি। আরএসএফের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১১ জন সাংবাদিক কারাগারে আটক আছেন। হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও হামলার অভিযোগে মামলা দেওয়া হয়েছে ১৬০ জনের নামে। 

এর পাশাপাশি প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে ১৬৭ জনের। সম্পাদক পরিষদসহ বিভিন্ন মহলের সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার একটি পরিবীক্ষণ কমিটি করলেও কতজন কার্ড ফিরে পেয়েছেন, কতজনের বিরুদ্ধে কী সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে, জানানো হয়নি। 

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রকৃত সংবাদমাধ্যম না হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ কয়েকটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এটাকে নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করছে এবং সব সময় ক্ষমতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলেছে। এ রকম সংবাদমাধ্যমের সংখ্যা কম নয়, যারা ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগ সরকারের নিরন্তর বন্দনা গাইত, তারাই ক্ষমতার হাতবদলের পর সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কিছু ভালো প্রস্তাব দিয়েছে; যার মধ্যে আছে একই মালিকের একাধিক সংবাদমাধ্যম না রাখা এবং সংবাদকর্মীদের বেতনকাঠামো নির্ধারণ। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন সরকারি প্রচারমাধ্যম বিটিভি, বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা পুনর্গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে।

এর পাশাপাশি সরকারি বিজ্ঞাপন পাওয়ার জন্য পত্রিকার প্রচারসংখ্যা বাড়িয়ে দেখানোর যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে, সেটা বন্ধেরও সুপারিশ করেছে। সরকারি বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় জনগণের কাছে বার্তাটি পৌঁছে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সেটি যদি কেবল দেয়ালে সাঁটা থাকে এবং বিজ্ঞাপনের জন্য যে কটি কপি দরকার, সেই কটি ছাপা হয়, তাহলে জনগণের করের অর্থ ব্যয় করা হবে কেন।

বাংলাদেশে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা বাইরের কেউ নিশ্চিত করতে পারবেন না। এটা সম্পাদক ও সাংবাদিকদেরই নিশ্চিত করতে হবে। সম্প্রতি ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম ‘সম্পাদকেরা মালিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা হবেন না’ শিরোনামের লেখায় সেটি পরিষ্কার করে বলেছেন। সংবাদমাধ্যমের অংশীজনেরা মালিকের বরকন্দাজের ভূমিকায় না থেকে আত্মসমালোচনা করবেন—তাঁরা অতীতে কী করেছেন, এখন কী করছেন? 

সোহরাব হাসান প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি

[email protected]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ন শ চ ত করত প রথম আল র র স ব ধ নত অবস থ ন উপদ ষ ট সরক র র র চ কর র জন য ব দ কত ক ষমত আওয় ম র একট

এছাড়াও পড়ুন:

‘গোস্ত হত্তে খাইয়্যি ইয়ান মনতও নাই’

‘অবাজি ডাইল আর চইল কিনতে পরাণ বাইর যার, মাছ-গোস্ত হডে পাইয়ুম। গোস্ত হত্তে খাইয়্যি ইয়ান মনতও নাই।’ (বাবা ডাল আর চাল কিনতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে, মাছ-মাংস কোথায় পাব? মাংস কখন খেয়েছি সেটা মনেও নেই।)
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথাগুলো বলছিলেন পটিয়ার ইন্দ্রপুল এলাকার লবণ শ্রমিক কবির হোসেন (৬৫)। তার গ্রামের বাড়ি চকরিয়ার পেকুয়ায়। তিনি ২০ বছর ধরে লবণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। দুই ছেলে, তিন মেয়ে, স্ত্রীসহ সাত সদস্যের সংসার তার। সংসার তাকে একাই চালাতে হয়। প্রতিদিন কাজ পেলে আয় হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। মাসে গড়ে ২০ দিন কাজ পান। আয় হয় ১০-১২ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে ৭ সদস্যের সংসার চালানো কঠিন। তার ওপর আছে ঋণের কিস্তি শোধের দায়।
কবির হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত নৌকা ও ট্রাক থেকে লবণ খালাসের কাজ করি। মেয়ের বিয়ের জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি এনজিও থেকে। এগুলো প্রতি সপ্তাহে শোধ করতে হয়।’
গত বুধবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত উপজেলার ইন্দ্রপুল এলাকার লবণ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। বেশির ভাগ শ্রমিক জানান, তাদের সংসারে অভাব লেগেই আছে। অনেকেই ঋণগ্রস্ত। সরেজমিন দেখা যায়, সারিবদ্ধ কারখানা আর গুদামে ঠাসা সরু গলিতে দিনের আলো ঠিকমতো পৌঁছায় না। প্রতিদিন কোটি টাকার বাণিজ্য হলেও পরিবেশ একেবারেই নোংরা। 
ছোট-বড় মিলিয়ে ৫০টি লবণ কারখানা আছে ইন্দ্রপুল এলাকায়। ৭৭ বছর আগে ১৯৫২ সালে ইন্দ্রপুলে লবণ শিল্প গড়ে ওঠে। দেশের মোট চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ লবণ সরবরাহ হয় এখানকার কারখানাগুলো থেকে। ৩ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেন। কক্সবাজারের টেকনাফ, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, মহেশখালী ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীর লবণ মাঠ থেকে নৌপথ ও সড়কপথে পটিয়ার ইন্দ্রপুলে অপরিশোধিত লবণ আসে। এখানকার অর্ধশতাধিক কারখানায় লোড-আনলোড ও ক্রাশিং কাজে যুক্ত শ্রমিকরা। লবণশিল্পের পাশাপাশি এখানে গড়ে উঠেছে চটশিল্প, সুতা, পলিব্যাগ, রাইস মিল, তুষ ও কালো কাঠের মিল, সেমাই ও ময়দা কারখানা।
লোড-আনলোডের কাজ করেন ভোলার আবুল হাশেম (৬০)। তিনি বলেন, ‘আমরা দিনে হাজার টাকা মজুরি পেলেও সংসার চালাতে কষ্ট হয়। বস্তা বহন করা অতি পরিশ্রমের কাজ। এ জন্য আমাদের অনেক খাওয়া-দাওয়া করতে হয়। প্রতিদিন একজন শ্রমিকের ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ করতে হয় খাওয়ার পেছনে। এতে দিনের আয়ের অর্ধেক চলে যায়। বাকি অর্ধেক টাকা দিয়ে ৫-৬ জন সদস্যের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।’
মোহাম্মদ রিয়াজ (৩৬) বলেন, ‘আমাদের শ্রমে-ঘামে লবণ আমদানি রপ্তানির কাজ চলে পটিয়ায়। কিন্তু আমাদের জীবন চলে অনেক কষ্টে। অসুস্থ হলে কাজ জোটে না, খাবারও জোটে না। ২ বছর আগে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। এখনও শোধ করতে পারিনি।’
হাবিবুর রহমান (৫৫) বলেন, ‘ভারী কাজ প্রতিদিন করা সম্ভব হয় না। সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়া কাজ করতে গিয়ে অনেক শ্রমিক আহত হন। কিন্তু আমাদের দেখার কেউ নেই। এ ছাড়া বর্ষা এলে কাজ থাকে না। এতে আমরা অভাবে পড়ি।’
১৯৫২ সালের দিকে চানখালী খালের পাড়ে লবণশিল্পের সূচনা হয়। তখনকার দিনে ওই এলাকায় কোনো লবণ কারখানা ছিল না। সে সময় সাম্পান বা বোটে করে বাঁশখালী এলাকা থেকে কালো লবণ এনে ইন্দ্রপুলে বিক্রি করা হতো। প্রথম দিকে এ শিল্পের সূচনা করেন হাজী চুন্নু মিয়া, পরবর্তী সময়ে চুন্নু মিয়ার ছেলে তোফায়েল আহমেদ সওদাগর লবণশিল্পের প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। পরে আবদুল কাদের সওদাগর, আবদুর রহমান, নজু মিয়া, ফজর রহমান, আফাজুর রহমান, আবদুল খালেক, আবদুস ছামাদ, আবদুস সাত্তার, নুরুল হুদা, ইউসুফ, এজাহার মিয়া, মনীন্দ্রলাল, আবদুর রহিম, নজির আহমেদ, আলী আহমেদ, আজিজ সওদাগর, মতি সওদাগর, কবির আহমেদ, গাজী আবদুল কাদের, গাজী আবদুল হক, মুনসেফ আলী, আবুল খায়ের লবণশিল্পের বিকাশে বড় ভূমিকা রাখেন। 
বর্তমানে চানখালী খালের শাখা উপশাখা খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। ফলে লবণশিল্পও পড়েছে সংকটে। ব্যবসায়ীরা খাল খননের দাবি জানিয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ