ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিল নয়াদিল্লি। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পাকিস্তান থেকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে আমদানি হওয়া সব ধরনের পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সিদ্ধান্তটি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে। সূত্র: এনডিটিভি

শনিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানিয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা ও জনস্বার্থের কথা বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোনো ব্যতিক্রম থাকলে তা সরকারের পূর্বানুমোদনের ভিত্তিতে বিবেচিত হবে।

এর ফলে ভারত-পাকিস্তানের একমাত্র স্থল বাণিজ্যপথ ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত ইতোমধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ভারতের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর থেকেই পাকিস্তানি পণ্যের উপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে আমদানি প্রায় বন্ধ করে দেয় দেশটি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পাকিস্তান থেকে আমদানি ছিল মোট ভারতের আমদানির ০.

০০০১ শতাংশেরও কম।

গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের বৈসারণ উপত্যকায় সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন একজন নেপালি পর্যটক ও স্থানীয় এক ঘোড়া চালক। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দাবি, হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের জঙ্গি গোষ্ঠীর সরাসরি যোগসূত্র পাওয়া গেছে।

এই ঘটনার পর ভারত ঐতিহাসিক ইন্দাস জলচুক্তি স্থগিত করে দেয়। ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তিটির আওতায় পাকিস্তান সিন্ধু নদীর পানি পেত। ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তান সীমান্ত পেরিয়ে ধারাবাহিকভাবে সন্ত্রাসবাদে মদদ দিচ্ছে। এখন ভারত চুক্তি স্থগিত করে পাকিস্তানে পানি প্রবাহ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে, যা সে দেশের লাখ লাখ মানুষের পানির সরবরাহে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

এ ছাড়া ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানি নাগরিকদের জারি করা সব ধরনের ভিসা বাতিল করা হয়েছে। যারা ইতোমধ্যে ভারতে অবস্থান করছেন, তাদের নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে দেশত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ নির্দেশনার আওতায় চিকিৎসা ভিসাধারীরাও রয়েছেন।

জবাবে পাকিস্তান জানিয়েছে, তারা ভারতের সঙ্গে সব ধরনের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, এমনকি ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তিও বাতিল করার চিন্তাভাবনা করছে। কূটনৈতিক সম্পর্কও দুই দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে নেমে এসেছে।

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, যতদিন না জম্মু-কাশ্মীর থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল হচ্ছে, ততদিন পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও বাণিজ্য আলোচনা হবে না।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আমদ ন সব ধরন র আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

দাফনফেরত স্বজনের ওপর ককটেল হামলা

মুন্সীগঞ্জে পুরোনো বিরোধের জেরে নিহত শ্রমিক লীগ কর্মী সানা মাঝির (৪২) লাশ দাফনের পরপরই তাঁর স্বজনদের লক্ষ্য করে ককটেল হামলা হয়েছে। শনিবার বিকেল ৩টার দিকে সদরের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের মধ্য মাকহাটি গ্রামে এ হামলা হয়। 

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, ককটেল হামলার সময় ঘটনাস্থলের অদূরে রজতরেখা নদীর অন্য প্রান্তে ছিলেন পুলিশ সদস্যরা।

সানা মাঝি মাকহাটি গ্রামের প্রয়াত মোহাম্মদ মাঝির ছেলে। তিনি মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন শ্রমিক লীগ কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর গ্রাম ছেড়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে একই উপজেলার বজ্রযোগিনী ইউনিয়নের ডেকরাপাড়া গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে চলে যান। 

পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে মাকহাটি গ্রামের মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়ার ঘোষণা দিয়ে লোকজন জড়ো করে সানা মাঝিকে মারধর করে প্রতিপক্ষ। সংবাদ পেয়ে পুলিশ অচেতন অবস্থায় রাত ৩টার দিকে তাঁকে উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাকহাটি গ্রামের মোহাম্মদ মাঝির পরিবারের সঙ্গে বিরোধ চলছিল শামসুল মাঝির পরিবারের। এর জের ধরে ১৯৯৭ সালে হত্যার শিকার হন মোহাম্মদ মাঝি। এ হত্যার প্রতিক্রিয়ায় ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারিতে খুন হন শামসুল মাঝির ছেলে বিএনপি কর্মী শিপন মাঝি। এ হত্যা মামলায় ২০০৪ সালে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ প্রয়াত মোহাম্মদ মাঝির ছেলে খলিল মাঝিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। সানা মাঝি ও তাঁর চার ভাই দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন। ২০১৬ সালে কারামুক্ত হয়ে গ্রামে ফেরেন তারা। পরে দুই পক্ষের মধ্যে মীমাংসা হয়। তবে শিপন হত্যার ঘটনায় তাঁর ছোট ভাই বাবু মাঝির মনে ক্ষোভ রয়ে যায়। বাবু ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি প্রার্থী। তিনিই বড় ভাই হত্যার প্রতিশোধ নিতে বৃহস্পতিবার রাতে সানা মাঝিকে ডেকে এনে হত্যা করেন বলে এলাকাবাসীর দাবি।

সানা মাঝির পরিবার জানায়, শনিবার সকালে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। দুপুরে লাশ নেওয়া হয় মধ্য মাকহাটি গ্রামের বাড়িতে। জোহরের নামাজের পর জানাজা শেষে গ্রামের সামাজিক কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়। সেখান থেকে বিকেল ৩টার দিকে স্বজনরা ফেরার সময় তাদের ওপর অর্ধশতাধিক ককটেল ছুড়ে মারা হয়। এতে পুরো গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

নিহত সানার ছোট ভাই আসাদ মাঝির দাবি করেন, বাবু মাঝির সন্ত্রাসী বাহিনী অর্ধশতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।

সদর থানার ওসি সাইফুল আলম বলেন, এ ঘটনায় সানা মাঝির বড় ভাই হাবু মাঝি বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে শনিবার হত্যা মামলা করেন। এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে বাবু মাঝিকে।

মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবীর বলেন, স্বজনরা লাশ দাফন শেষে কবরস্থান থেকে ফিরছিলেন। এ সময় তাদের পেছন থেকে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। কবরস্থানের অদূরে জমিতে প্রতিপক্ষের লোকজন ককটেল ছোড়ে। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ