কিডনি আমাদের শরীরের ছাঁকনি হিসেবে কাজ করে। শরীরের অপ্রয়োজনীয় ও অপদ্রব্য শরীর থেকে বের করে দেয়। প্রায় ১০ শতাংশ মানুষের জীবনে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

অনেকেরই কিডনিতে পাথর দেখা দেয়। এটি যেকোনো বয়সে, যে কারও হতে পারে। কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের তিন গুণ বেশি।

কিডনির পাথর কেন হয়

ডিহাইড্রেশনের কারণে প্রস্রাবে দ্রব অত্যধিক ঘন হলে পাথরের কণা বা ক্রিস্টাল তৈরি হয়। যাঁরা গরম আবহাওয়ায় কাজ করেন ও পর্যাপ্ত পানি পান করেন না, তাঁদের পাথর তৈরির আশঙ্কা বেশি। তাই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কিডনি পাথরের রোগী বেশি পাওয়া যায়।

প্রস্রাবের সংক্রমণ থেকেও পাথর হতে পারে। সংক্রমণের ফলে প্রস্রাবে সাইট্রেট, ম্যাগনেশিয়াম ও জিংকের পরিমাণ কমে যায়। সাইট্রেট, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক পাথর তৈরি প্রতিরোধ করে।

রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। কিডনি পাথরের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই ক্যালসিয়াম অক্সালেট। এ ছাড়া ক্যালসিয়াম ম্যাগনেশিয়াম ফসফেট অক্সালেট পাথরও হয়ে থাকে।

দীর্ঘদিন রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি থাকলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। গেঁটে বাতজনিত রোগীদের এ পাথর হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির অত্যধিক কার্যকারিতা ও হরমোন বেশি তৈরি হলে রক্তে ও প্রস্রাবে ক্যালসিয়াম বেড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে বারবার কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।

আরও পড়ুনযে সাতটি মনস্তাত্ত্বিক কৌশল আপনাকে প্রভাবশালী করে তুলবে৬ ঘণ্টা আগেকিডনিতে পাথর প্রতিরোধে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস র ব ক ডন ত ক য লস

এছাড়াও পড়ুন:

নিবিড়ের কৃতিত্বের পেছনে কঠোর পরিশ্রম, প্রতিদিন পড়ালেখা ১০-১২ ঘণ্টা

১৩০০ নম্বরের মধ্যেই ১২৮৫! অবাক হওয়ার মতো এমন অনন্য ফলাফল করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে চট্টগ্রামের মেধাবী শিক্ষার্থী নিবিড় কর্মকার। নগরীর নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এমন অনন্য ফলাফল করেছে নিবিড়।

এমন সেরা ফলাফলের পেছনে বেশি বেশি পাঠ্যপুস্তক পড়া, অধ্যাবসায়, প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা পড়ালেখার ব্যস্ত থাকা, শিক্ষকদের গাইডলাইন অনুযায়ী নিজেকে তৈরি করা, মনোবল না হারানো - মূলত এসব বিষয় ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করে নিবিড়। আগামীতে প্রকৌশলী হয়ে দেশের সেবায় কাজ করার আশা তার।

নিবিড় চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা এলাকার জীবন কর্মকার ও রিপা রায়ের ছেলে। তার বাবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আর মা গৃহিণী। ছেলের এমন সাফল্যে আনন্দিত বাবা-মা।

নিবিড় কর্মকার বলেন, ‘এমন ভালো ফলাফল করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি পাঠ্যবইয়ে সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করতাম। প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা পড়ালেখা করতাম। গাইড বইয়ের চেয়ে পাঠ্যবইকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। আমি মনে করি এই ফলাফলের পেছনে পাঠ্যবইয়ে বাড়তি সময় দেওয়াটা ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে সবচেয়ে বেশি। শিক্ষকরা আমাকে খুব ভালোভাবে গাইড করেছেন। মাঝেমধ্যে পরিচিত অন্য স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গেও পড়ালেখার নানা বিষয় শেয়ার করতাম।’ তিনি বলেন, ‘এই অর্জনের পেছনে মা-বাবার ভূমিকা অনেক বেশি। উনারা আমার প্রতি অনেক বেশি যত্নবান ছিলেন। কখনও পড়ালেখা নিয়ে দুশ্চিন্তা করলে সাহস দিতেন। নানা বিষয়েও সার্বক্ষণ নানা পরামর্শ দিতেন। মা-বাবার অনেক কষ্ট আর পরিশ্রমের ভালো প্রতিদান দিতে পেরে আমি আনন্দিত।’

নিবিড় বলেন, ‘এবার ভালো ফলাফল করে আগামীতে প্রকৌশলী বিষয়ে পড়ার প্রবল ইচ্ছা। বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে দেশের জন্য, সমাজের জন্য কিছু করতে চাই।’

নিবিড়ের বাবা জীবন কর্মকার বলেন, ‘ছেলের এমন সেরা অর্জনে আমি আনন্দিত ও গর্বিত। এমন ফলাফলের মাধ্যমে আমাদের জীবন ধন্য করেছে নিবিড়। সবসময় তার পাশে থাকার চেষ্টা করেছি আমি ও তার মা। এবারের ফলাফল আগামীতে আরও ভালো কিছু করতে তাকে উৎসাহ যোগাবে।’ নিবিড়ের মা রিপা রায় বলেন, ‘সামান্য নম্বরের জন্য সে কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তির সুযোগ পায়নি। এতে ওর মতো আমাদেরও খুব মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু সেখানে চান্স না পেলেও নিবিড় যে মেধাবী এত ভালো ফলাফল করে তা প্রমাণ করেছে সে। তার এই ফলাফলে সে দিনের সব কষ্ট এখন নিমিষেই দূর হয়ে গেছে। নিবিড়কে নিয়ে আমরা গর্বিত। তার এমন সেরা ফলাফল নিঃসন্দেহে চট্টগ্রামবাসীর জন্যও গর্বের ও আনন্দের।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুর রহমান বলেন, ‘নিবিড় অত্যন্ত ভদ্র, সুশৃঙ্খল ও পরিশ্রমী শিক্ষার্থী। সব সময় নিয়মিত ক্লাস করেছে সে। কোনো কিছু বুঝতে সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকের পরামর্শ নিত। ভালো ফলাফল করার এক ধরনের নেশা কাজ করতো তার মাঝে। এসবের কারণে সে নজরকাড়া নম্বর পেয়েছে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের।’

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী বলেন, ‘১৩০০ নম্বরের মধ্যে ১২৮৫ পাওয়া নিঃসন্দেহে অত্যন্ত ভালো ফলাফল। মেধাবী শিক্ষার্থীর পক্ষেই এমন ফলাফল করা সম্ভব।’ তিনি বলেন, ‘তবে এমন ফলাফলকে দেশসেরা বলা যাবে না। কারণ কাউকে দেশসেরা হিসেবে কেবল মন্ত্রণালয় বা বোর্ড কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করতে পারে। কারণ ঢাকা বা অন্য বোর্ডে আর কোনো শিক্ষার্থী যে এর চেয়ে বেশি নম্বর পায়নি সেটা আমরা নিশ্চিত করে বলবো কিভাবে? কারণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সবোর্চ্চ জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা করতেও নির্দেশনা রয়েছে। সেখানে কোনো শিক্ষার্থী দেশসেরা সেটা নির্ধারণ করা খুবই কঠিন। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমন বিষয় তুলে ধরতে আগ্রহী নয়।’

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এবারের এসএসসি পরীক্ষার পাসের হার ৭২ দশমিক ৭ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১ হাজার ৮৪৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৪৯০ জন এবং ছাত্রী ৬ হাজার ৩৫৩ জন।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ২১৯টি কেন্দ্রে ১ হাজার ১৬৪টি বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা এবার এসএসসিতে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ৭৮ হাজার ৭২৫ জন ছাত্রী ও ৬১ হাজার ৬৬৩ জন ছাত্র। এবার ছাত্র পাসের হার ৭১ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং ছাত্রী পাসের হার ৭২ দশমিক ১৯ শতাংশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ