জেনে নিন, আকিকা কেন ও কীভাবে দেবেন
Published: 12th, July 2025 GMT
সন্তানের জন্ম একটি অপার আনন্দের মুহূর্ত। এই আনন্দকে আরও অর্থবহ করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ হিসেবে ইসলাম আকিকার নিয়মের প্রচলন ঘটিয়েছে। আকিকা হলো নবজাতকের জন্য পশু কোরবানি করে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং সন্তানের কল্যাণ কামনা। নবীজি (সা.) নিজের নাতি হাসান ও হুসাইন (রা.)–এর জন্য আকিকা দিয়েছিলেন।
আকিকার নিয়মনবীজি (সা.
আকিকার প্রধান নিয়মগুলো এমন—
সময়: আকিকা সাধারণত সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে করা উত্তম। তবে সপ্তম, চতুর্দশ বা একুশতম দিনেও করা যায়। পরিস্থিতির কারণে আরও দেরি হলে যেকোনো সময় আকিকা দেওয়া যায়।
আরও পড়ুনআকিকা শিশুর অধিকার২০ জানুয়ারি ২০২৫পশু: ছেলেশিশুর জন্য দুটি এবং মেয়েশিশুর জন্য একটি ছাগল বা ভেড়া জবাই করা হয়। পশু কোরবানির মতো সুস্থ, প্রাপ্তবয়স্ক ও নির্দোষ হতে হবে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘ছেলের জন্য দুটি সমান পশু এবং মেয়ের জন্য একটি পশু।’ (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ২,৮৩৬)
তবে যদি কেউ ছেলেশিশুর জন্য একটি ছাগল দেয়, তাহলেও আদায় হবে।
নিয়ত: জবাইয়ের সময় আকিকার নিয়ত করতে হবে। উদাহরণ: ‘আমি আমার সন্তানের [নাম] জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আকিকা করছি।’
নামকরণ ও মাথা মুণ্ডন: সপ্তম দিনে শিশুর নাম রাখা এবং মাথা মুণ্ডন করে চুলের ওজনের সমপরিমাণ সোনা বা রুপা দান করা সুন্নাহ।
গোশত বিতরণ: আকিকার গোশত তিন ভাগে ভাগ করা যায়—এক ভাগ গরিবদের, এক ভাগ আত্মীয়–প্রতিবেশীদের এবং এক ভাগ নিজেদের জন্য। গোশত রান্না করে খাওয়ানো বা কাঁচা বিতরণ করা যায়।
আরও পড়ুনশিশুর অশুচি দূর করার অনুষ্ঠান আকিকা০২ নভেম্বর ২০২৩আকিকার তাৎপর্য
আকিকা একটি সুন্নাতে মুয়াক্কাদা অর্থাৎ এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আকিকা শিশুর জন্য পশু জবাই করা হয়, যাতে তার রক্ত প্রবাহিত হয় এবং তার ওপর থেকে কষ্ট দূর হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,৪৭২)
এটি শিশুর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া এবং সম্ভাব্য বিপদ থেকে রক্ষার প্রতীক।
আকিকা সমাজে সৌহার্দ্য বাড়ায়। আত্মীয়–প্রতিবেশীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে আকিকার গোশত খাওয়ানো পরিবার ও সমাজের বন্ধন মজবুত করে। এ ছাড়া শিশুর নামকরণ ও মাথা মুণ্ডনের মাধ্যমে পরিবারে সবার কাছে শিশু মুসলিম নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুনআকিকায় নবজাতকের মঙ্গল-কামনা২৯ জানুয়ারি ২০২৩উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ শ র জন য ম ণ ডন তম দ ন
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করল ‘নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরাম’
জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ ঐক্যবদ্ধভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে ‘নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরাম’। সংগঠনটির ভাষ্য, প্রত্যাশিত জুলাই জাতীয় সনদে নারীর জন্য অর্থপূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে কোনো বাস্তব পরিবর্তন আনা হয়নি। এই সনদে বাংলাদেশের নারীর আকাঙ্ক্ষা নিদারুণভাবে অনুপস্থিত। তাই এই সনদ তারা প্রত্যাখ্যান করছে এবং সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ন্যক্কারজনক’এই আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিবাদলিপিতে আজ বৃহস্পতিবার ফোরাম এ দাবি তুলে ধরেছে। তারা জুলাই সনদ অবিলম্বে পুনর্বিবেচনা করে নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের রূপরেখা এবং দলে নারীর অন্তর্ভুক্তির বাধ্যতামূলক কাঠামো সংযোজন করার দাবি জানিয়েছে।
প্রতিবাদলিপিতে ফোরাম বলেছে, গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে, তাদের কোনো দাবিই গৃহীত হয়নি। জাতীয় জুলাই সনদ নারীর নেতৃত্বের সম্ভাবনাকে আরও সংকুচিত করেছে এবং রাজনৈতিক দলে নারীর প্রতিনিধিত্বের লক্ষ্যমাত্রাকে ২০৩০-এর পেছনে ঠেলে দিয়ে পশ্চাৎপদ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এ অবস্থায় চূড়ান্ত সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ ঐক্যবদ্ধভাবে প্রত্যাখ্যান করছে তারা। এ সিদ্ধান্ত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নয়, এটি তাদের নীতিগত অবস্থান, নারীর রাজনৈতিক সমানাধিকারের প্রতি অঙ্গীকারের প্রতিফলন এবং পুরুষতান্ত্রিক কাঠামো জিইয়ে রাখার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ।
প্রতিবাদলিপিতে ফোরাম বলেছে, নাগরিক পরিসর থেকে নানাভাবে সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে অনেকগুলো যৌক্তিক ও বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশ ঐকমত্য কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চলতি মাসে প্রত্যাশিত জুলাই জাতীয় সনদে নারীর অর্থপূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে কোনো বাস্তব পরিবর্তন আনা হয়নি।
প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলো নারীর সরাসরি নির্বচনের প্রস্তাব উপেক্ষা করেছে, ভবিষ্যতের জন্য কোনো অঙ্গীকার রাখেনি। মাত্র ৫ শতাংশ দলীয় মনোনয়ন বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়ে ২০৪৩ সাল পর্যন্ত সময়ক্ষেপণের পথ বেছে নিয়েছে। এটি কেবল হতাশাজনক নয়, এটি নারীর নেতৃত্ব ও গণতান্ত্রিক সমতার দাবির প্রতি সরাসরি অবজ্ঞা। রাজনৈতিক দলগুলোকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে বাংলাদেশের নারী ভোটাররা এ বৈষম্যের জবাব দেবেন।
জুলাই সনদ সবার হয়নি
প্রতিবাদলিপির শুরুতে বলা হয়, জাতীয় জুলাই সনদ হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ গণ–অভ্যুত্থানপরবর্তী বাংলাদেশের সব গণতন্ত্রকামী নাগরিকের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। কিন্তু এই সনদের প্রণয়নপ্রক্রিয়ায় পদ্ধতিগতভাবে দেশের জনগোষ্ঠীর ৫১ শতাংশের প্রতিনিধিত্বকে অগ্রাধিকার না দেওয়া এবং একই সঙ্গে অন্যান্য সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত না করার অবধারিত পরিণাম যা হওয়ার কথা ছিল, ঠিক তা–ই হয়েছে। জুলাই সনদ সবার হয়নি। ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বাছাইয়ে নারীর প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়নি।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনসহ শ্রম ও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্যদের বা সুপারিশমালা এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার কোনো কার্যকর উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি বলে প্রতিবাদলিপিতে উল্লেখ করেছে নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরাম। ফোরাম বলেছে, এটি ছিল একটি ঐতিহাসিক সুযোগ, যা সরকারি নির্দেশমালার দোহাই দিয়ে হেলায় হারানো হলো। আলোচনাপ্রক্রিয়ায় আহ্বান করা হলো শুধু রাজনৈতিক দলগুলোকে এবং সেখানেও নারীর অংশগ্রহণকে বাধ্যতামূলক করা হয়নি—সত্যিকার সদিচ্ছা থাকলে প্রতিটি রাজনৈতিক দল থেকে এক–তৃতীয়াংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যেত।
দাবি আদায়ের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে বলে প্রতিবাদলিপির শেষাংশে উল্লেখ করে নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরাম বলেছে, বাংলাদেশের নারীরা তাঁদের ন্যায্য রাজনৈতিক অধিকার আদায়ে সামনের দিনে জনগণ, রাজনৈতিক দল ও সরকারের সঙ্গে আলোচনা ও দর–কষাকষি চালিয়ে যাবেন। সত্যিকার ন্যায্যতা ও বৈষম্যহীন প্রতিনিধিত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন বাংলাদেশের নারীরাই।