নদীর পানিবণ্টনের লড়াই তীব্রতর করে পাকিস্তানকে চাপে রাখতে সিন্ধু উপত্যকার চন্দ্রভাগা (চেনাব) নদীর ওপর বাঁধ দেওয়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে ভারত। সে জন্য ৩ হাজার ১১৯ কোটি রুপি ঋণ নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে তারা।

এই বাঁধ ও সে জন্য জলাধার নির্মাণ হবে একেবারে নতুন (গ্রিনফিল্ড স্টোরেজ)। এই বাঁধ ও জলাধার তৈরি হয়ে গেলে সেখান থেকে ৫৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সিএনএন–নিউজ ১৮ এই খবর জানিয়ে বলেছে, নির্মীয়মান এই প্রকল্পে মোট খরচ হবে ৪ হাজার ৫২৬ কোটি রুপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২২ সালের ২৪ এপ্রিল এই প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন।

সূত্রের বরাতে এই খবরে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নিকারী সংস্থার কাছে এই ঋণের বিষয়ে খোঁজখবর করা হচ্ছে। যদিও একাংশ বিশ্বব্যাংক থেকে এই ঋণসহায়তা পেতে আগ্রহী। বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতাতেই ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬০ সালে সিন্ধু পানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

জম্মু–কাশ্মীরের কিসতোয়ার জেলায় চন্দ্রভাগা নদীর ওপর এই বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে গেলে তা পাকিস্তানে পানিপ্রবাহ কমিয়ে দিতে পারে। এত দিন ধরে এই প্রকল্প রূপায়ণে তেমন একটা উদ্যোগ দেখা যায়নি। জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের স্বার্থে চন্দ্রভাগার গতিপথ পরিবর্তনের কাজ শেষ হয় ২০২৪ সালে। এ জন্য ৬০৯ মিটার দীর্ঘ টানেল বা সুড়ঙ্গ তৈরি হবে। বাঁধের উচ্চতা হবে ১০৯ মিটার।

সরকার এখন চাইছে ২০২৭ সালের মধ্যে এই প্রকল্প তৈরির কাজ শেষ করে ফেলতে। কিসতোয়ার জেলার এই বাঁধ তৈরি হয়ে গেলে জম্মু–কাশ্মীরের শিল্প সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। বিদ্যুতের ঘাটতিও মিটবে।

পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার পর পাকিস্তানের ওপর চাপ বৃদ্ধি করতে ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে দেয়। এই চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যে প্রবাহিত ছয়টি নদীর পানি ভাগাভাগি হয়ে আসছে। চুক্তি স্থগিত রেখে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত যে ‘পানি যুদ্ধ’ শুরু করেছে, নতুন এই বাঁধ প্রকল্প তা ত্বরান্বিত করবে।

উজানে বৃহৎ জলাধার তৈরি না হলে ভাটি এলাকায় পানিপ্রবাহ কমানো সম্ভবপর নয়। মনে করা হচ্ছে, চন্দ্রভাগায় এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প সেই লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে।

সিন্ধু পানি চুক্তি অনুযায়ী, ভারত সিন্ধু অববাহিকায় উন্নয়নমূলক যা কিছু করতে পারে, এত দিন ধরে তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে উঠতে পারেনি। পেহেলগাম–কাণ্ড ও অপারেশন সিঁদুর নাম দিয়ে পাকিস্তানে হামলার পর চুক্তির আওতায় থেকে সেই কাজগুলো করার আগ্রহ ভারত দেখাতে শুরু করেছে। এই প্রকল্প নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অবস্থান কী, তা এখনো অজানা। পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াও এখনো জানা যায়নি।

সিন্ধু চুক্তি অনুযায়ী, সিন্ধু অববাহিকার মোট ছয়টি নদীর পানি দুই দেশের মধ্যে ভাগাভাগি হয়েছিল। পূর্ব দিকের তিন নদী বিপাশা (বিয়াস), ইরাবতী (রবি) ও শতদ্রুর (সতলেজ) পানির ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ ভারতের। পশ্চিম দিকের তিন নদী সিন্ধু, ঝিলম (বিতস্তা) ও চন্দ্রভাগার (চেনাব) সিংহভাগ পানি পাওয়ার কথা পাকিস্তানের। মোট পানির ২০ শতাংশের ওপর রয়েছে ভারতের অধিকার ও ৮০ শতাংশের ওপর পাকিস্তানের অধিকার।

পশ্চিমের তিন নদীর পানির ওপর ভারতের অধিকার না থাকলেও চুক্তিতে বলা হয়েছিল, তা থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের অধিকার থাকবে। সেচের কাজেও ওই নদীগুলোর পানি ব্যবহার করতে পারবে ভারত। চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন না করে ভারত চন্দ্রভাগায় এই বাঁধ প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, এই সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক অনুমোদন পায় কি না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এই প রকল প প রকল প র ব শ বব য নদ র প ন র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

হবিগঞ্জে সেপটিক ট্যাংকে নেমে দুই নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যু

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে নির্মাণাধীন একটি ভবনের সেপটিক ট্যাংকে নেমে দুই নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১২ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে পৌরসভার সাবাসপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- চুনারুঘাট উপজেলার শানখলা ইউনিয়নের পঞ্চাশ গ্রামের মানিক মিয়া (৫৫) ও বানিয়াচং উপজেলার কাটখাল গ্রামের রফিকুল ইসলাম (৩০)।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নির্মাণাধীন একটি ভবনের সেপটিক ট্যাংকের সাটারিং খোলার জন্য নিচে নামেন দুই শ্রমিক। এ সময় বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তারা। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ভবন নির্মাণের ঠিকাদার।

আরো পড়ুন:

নালা থেকে উদ্ধার করা সেই শিশুকে বাঁচানো যায়নি 

মিরসরাইয়ের মেলখুম ট্রেইলে ২ তরুণের মৃত্যু 

শায়েস্তাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীলিপ কান্ত নাথ বলেন, ‘‘সেপটিক ট্যাংকে নেমে দুই নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’’

ঢাকা/মামুন/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ