‘‘এত বছর ক্রিকেট খেলেও যদি ক্রিকেটের জন্য কিছু বলতে না পারি, তাহলে এতদিন কি ক্রিকেট খেললাম! সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে আমার মর্যাদাই-বা থাকল কোথায়?’’ - কথাগুলো তামিম ইকবালের।
গত ২৫ এপ্রিল মিরপুর হোব অব ক্রিকেটে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন গণমাধ্যমে। যে দিন ক্রিকেট বোর্ডে ক্রিকেটারদের নিয়ে ‘শো-ডাউন’ করেছিলেন বলেও বলছেন কেউ কেউ! তবে তামিম তা উড়িয়ে দিয়েছেন এভাবে, ‘‘অবশ্যই না। অনেকদিন খেলেছি। এক্সপোজারও পেয়েছি যথেষ্ট। আর সেসবের দরকার নাই।’’
তবে ‘এক্সপোজার’ কী তামিমের পিছু ছাড়ছে? কিংবা ভিন্নভাবে ভাবলে, তামিম কী নিজেকে আড়াল রাখতে পারছেন? ক্রিকেটকে তামিম গুডবাই বলেননি। খেলার ইচ্ছা আছে ঘরোয়া ক্রিকেটে। খেলতে পারবেন কি না তা সময় বলে দেবে। তবে বিশ্বস্ত সূত্রের দাবি, প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট ক্যারিয়ার তার শেষ।
তাহলে, তার সামনে পথ খোলা কেবল ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি পদ। তামিম কী পরবর্তী ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নির্বাচিত হবেন? তিনি কী অক্টোবরে নির্বাচন করবেন? এই প্রশ্নগুলো গত আট মাস ধরেই ঘুরপাক খাচ্ছে ক্রীড়াঙ্গনে। কিন্তু তামিম নিজ থেকে আজ পর্যন্ত একবারও নির্বাচন করবেন কী না তা নিশ্চিত করেননি। তবে সেই পথে রয়েছেন তা বোঝা যাচ্ছে তার ধীর গতির ক্রিকেট সংগঠক হয়ে উঠার রূপরেখায়।
শনিবার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে পথ চলা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক অ্যাসোসিয়েশন। জেলা-বিভাগী ক্রীড়া সংগঠক পরিষদ নামে একটি সংগঠন থাকলেও আরেকটি সংগঠকদের সংগঠনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ধারনা করা হচ্ছে, জাতীয়তাবাদী আদর্শের সংগঠক ও খেলোয়াড় এবং বঞ্চিতরা এক হয়ে এমন সংগঠনের জন্ম দিয়েছেন। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম নতুন এই সংগঠকনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানেক চমক হিসেবে হাজির হয়েছিলেন। মঞ্চে থেকে রেখেছেন সাড়ে তিন মিনিটের বক্তব্য।
বড় মঞ্চে সংগঠক তামিমের আত্মপ্রকাশের দিনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দলের (বিএনপি) ক্রীড়া সম্পাদক আমিনুল হক, সাবেক সেনা কর্মকর্তা, খেলোয়াড় ও বাফুফে সভাপতি মেজর হাফিজ উদ্দিন,সাবেক বিসিবি পরিচালক ও সার্চ কমিটির সদস্য মহিউদ্দিন বুলবুল, আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, সাবেক তারকা ফুটবলার সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালী সাব্বির, বাফুফে সহ-সভাপতি ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরি হ্যাপী, ক্রীড়া সংগঠক আব্দুস সালাম, জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, সাবেক ক্রিকেটার নিয়ামুর রশীদ রাহুল, সাবেক তারকা ফুটবলার ও কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক, সাবেক হকি খেলোয়াড় আরিফুল হক প্রিন্স, শুটার শারমিন আক্তার রত্নাসহ আরও অনেকে।
নানা সময়ে বাকিদের ক্রীড়া সংগঠক এবং ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে ভাবনার প্রকাশ পেয়েছে। তামিমের কথা শুনতেই আগ্রহ ছিল সবার। ক্রিকেটার থেকে সংগঠক হয়ে উঠা তামিম নিজের বক্তব্যে ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে ভাবনা, ক্রিকেট নিয়ে অভিলাষ এবং সামনের বিসিবির নির্বাচন নিয়ে পরিস্কার বার্তা দিয়েছেন,
‘‘আমি ছোট হয়ে আপনাদের একটা জিনিস অনুরোধ করব—যারা যোগ্য ক্রিকেট বোর্ডকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য, জেলা থেকে হোক বা বিভাগ থেকে হোক.
শুধু তা-ই নয় তামিম শিকড়ে কাজ করার নির্দেশনাও দিয়েছেন। যা মনে ধরেছে প্রায় সবারই, ‘‘ক্রিকেটকে আমরা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় খেলা মনে করি। অন্যান্য খেলার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই এটা বলছি। তবে সবচেয়ে বড় খেলায় যদি এমনটা হয়, কেউ যদি নিজের জেলা-বিভাগে ক্রিকেটে উন্নতি না করে তাহলে তার বোর্ডে আসা প্রয়োজন নেই।’’
ক্রিকেট সংগঠক হিসেবে তামিম এর আগে ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)-এর চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। কিছুদিন আগে শেষ হওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের দল গুলশান ক্রিকেট ক্লাবের মালিকানা কিনেছেন। তার ক্লাব এবার লিগে সুপার লিগে উঠায় বিসিবির নির্বাচনে দুটি কাউন্সিলরশিপ পাবেন। এবার জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠকের তালিকায় উঠে গেল তার নাম। একটু একটু করে তামিমের পদচারণা বাড়ছে ক্রীড়াঙ্গনে।
নিশ্চিতভাবেই গন্তব্য চূড়ান্ত গন্তব্য, দেশের ক্রিকেটের মসনদ।
ঢাকা/ইয়াসিন
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
১৫ মের মধ্যে শেষ হবে ঐকমত্য কমিশন-রাজনৈতিক দলের প্রাথমিক আলোচনা: আলী রীয়াজ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, আগামী ১৫ মের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা শেষ করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনা করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
রোববার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে ১২-দলীয় জোটের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে আলী রীয়াজ এ কথা বলেন। ১২-দলীয় ১১ নেতা এই বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে আলী রীয়াজ বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য তৈরির দায়িত্ব শুধু জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের একার নয়। আপনারা যাঁরা সংগ্রামে আছেন, আপনারা যাঁরা আজ আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন, আপনারা আপনাদের সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলুন, অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে কথা বলুন; কী করে আমরা এক জায়গায় আসতে পারি।’
ঐকমত্যে আসার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ছাড় দেওয়ার আহ্বান জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘আমাদের সবাইকে এক জায়গায় আসতে হবে। আমরা সব বিষয়ে একমত হতে পারব না, কিন্তু রাষ্ট্র গঠনের মৌলিক জায়গায় আমাদের একমত হয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
আলী রীয়াজ বলেন, ‘শুধুমাত্র এই টেবিলে বসে, এখানে আলোচনা করে আমরা জাতীয় ঐকমত্যের চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছতে পারব, এটা আমরা মনে করি না।’
চলমান আলোচনার সময়সীমার কথা জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ১৫ মের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা শেষ করে ঐকমত্যের বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু পরিকল্পনা রয়েছে। যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হবে, সেগুলোর ভিত্তিতে জাতীয় সনদ তৈরি হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য গঠন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠক উপস্থিত আছেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার ও মোহাম্মদ মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। ১২-দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম প্রমুখ বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন।