জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মুদি দোকানদার আবু সায়েদ হত্যার ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম এ মামলাটি গত ১৩ আগস্ট আদালতে করেছিলেন আদাবর এলাকার দুগ্ধ খামারি এসএম আমীর হামজা শাতিল। এই মামলার তদন্তে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। ইতোমধ্যে চারবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ৯ মাসের বেশি সময় পর সায়েদের লাশ উত্তোলন করা হচ্ছে ময়নাতদন্তের জন্য। 

ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে মামলা করার পর ওই দিন বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ ও মামলার নথি পর্যালোচনা করে মোহাম্মদপুর থানাকে সরাসরি এজাহার গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়। বর্তমানে এই মামলা তদন্ত করছেন ঢাকা মহানগর ডিবি ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গত ডিসেম্বরে আমাকে এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর আগে তিনজন তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন। তদন্তের অংশ হিসেবে আগামী সপ্তাহে পঞ্চগড়ে আবু সায়েদের বাড়িতে যাওয়ার কথা। সেখানে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত হবে।’ 

মামলার বাদী আবু সায়েদের শুভাকাঙ্ক্ষী আমীর হামজা শাতিল বলেন, ‘মামলা তদন্তে অগ্রগতি দেখছি না। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৭ মে পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে। শুনেছি আইও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আইওকে বলেছি, মাত্র সাতজনকে আসামি করা হলেও প্রকৃতপক্ষে এই সংখ্যা আরও বেশি। আওয়ামী লীগের লোকজন, পুলিশ, র‍্যাব ও এপিবিএন সদস্যরা সেদিন গুলি চালিয়েছিল। আমি ঘটনাস্থল থেকে ৫০ গজ দূরে আন্দোলনে ছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘যাদের তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে তারা কেউ শেখ হাসিনা বা ক্ষমতাশালী মানুষের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার মতো কর্মকর্তা নন। এ মামলায় এখন পর্যন্ত কোনো আসামির বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হয়নি।’

সেদিন কী ঘটেছিল
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই বিকেল ৪টার দিকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় রাস্তার ওপর ছাত্র-জনতা শান্তিপূর্ণ মিছিল সমাবেশ করছিল। এ সময় পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। মুদি দোকানদার আবু সায়েদ (৪৫) রাস্তা পার হয়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়ায় ঘটনাস্থলে মারা যান। 

গণহারে মামলায় ন্যায়বিচার নিয়ে শঙ্কা
আন্দোলনের সময় হতাহতের ঘটনায় সারাদেশে দেড় হাজারের বেশি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ছয় শতাধিক হত্যা মামলা। এসব মামলার  অজ্ঞাত আসামি ২ লাখ ৩৮ হাজার। এখন পর্যন্ত কোনো মামলায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক তদন্ত কর্মকর্তা সমকালকে জানিয়েছেন, জুলাই-আগস্টের পরে মামলার তদন্তের দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে। অধিকাংশ মামলাতেই শত শত আসামি। অজ্ঞাত আসামিও অনেক। একেকজন কর্মকর্তার কাছে ১৫-২০টি মামলা তদন্তের জন্য রয়েছে। এতে কর্মকর্তারা হিমশিম খাচ্ছেন। তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন সাব-ইন্সপেক্টর, ইন্সপেক্টর, এএসপি ও অ্যাডিশনাল এসপি। তদন্ত প্রতিবেদনে আসামি অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে অনেককে নানাভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে। তদন্ত করতে গিয়ে এজাহারে অনেক ফাঁকফোকর ও ত্রুটি ধরা পড়ছে। তা ছাড়া মামলার দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও সময়মতো বুঝে  পাওয়া যাচ্ছে না। আবার ঘটনাস্থলে গিয়ে অধিকাংশ মামলার বাদী-আসামি ও সাক্ষীদের ঠিকানা পাওয়া যাচ্ছে না। এতে বোঝা যায়, অনেকে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থাকায় মামলায় নাম যুক্ত করে দিয়েছে। এমন নানা কারণে তদন্তে বিলম্ব হচ্ছে। 

বিশেষজ্ঞরা যা বলেন
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণহারে মামলা ফৌজদারি মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ। মামলার ধরন ও আসামির সংখ্যা দেখে মনে হয়, এগুলো প্রতিশোধমূলক। মামলাগুলো সুনির্দিষ্টভাবে দায়ের হচ্ছে না। তাই আদালতে অপরাধ প্রমাণ করা খুবই কঠিন হবে। হত্যা মামলায় অপরাধ প্রমাণের জন্য যে ধরনের তথ্য-প্রমাণ প্রয়োজন, তাও অনেক ক্ষেত্রে অনুপস্থিত। কে কীভাবে অপরাধ করেছেন, তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন কিনা, হত্যাকাণ্ডের সময় কার ভূমিকা কী ছিল– এসব বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণ করতে হবে। বিচারে যথাযথ যুক্তি উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হলে প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে পারে।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না সমকালকে বলেন, প্রায়ই দেখছি গণহারে রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, আইনজীবী, শিল্পী ও অন্যদের বিরুদ্ধে বানোয়াট মামলা হচ্ছে। এটা এখন হাস্যকর হয়ে গেছে। মামলার আসামিরা প্রতিহিংসার শিকার। এসব মামলার বিচার দেখে যেতে পারব বলে মনে হয় না। ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে গণহারে মামলা কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না।

বিশিষ্ট আইনজীবী ড.

শাহ্‌দীন মালিক বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে, যেভাবে গণহারে মামলা হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এভাবে ফৌজদারি মামলা দায়ের হয় না, আমি দেখিনি। কোনো পেশার লোক মামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। বিচারে এসব টিকবে বলে মনে হয় না। একটা মামলায় তিন-চারশ আসামি হলে গুরুত্ব থাকে না। বিগত সরকারের আমলে এভাবে মামলা হতো। এখন বিএনপি নেতাদের জায়গায় শুধু আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’ 

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকায় ৫৭৬টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৩৪টি হত্যা মামলা। বাকি ২৪২টি অন্যান্য ফৌজদারি অপরাধের মামলা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ল ই গণহত য তদন ত র দ য় ত ব তদন ত কর কর মকর ত ন তদন ত র তদন ত র জন য র সময় অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

চীনা ভাষা কেন শিখবেন, কোথায় শিখবেন, কী কী সুযোগ

ছবি: সংগৃহীত

সম্পর্কিত নিবন্ধ