নাব্যতা–সংকটে চার মাস বন্ধ থাকার পর কুড়িগ্রামের চিলমারী-রৌমারী নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু হচ্ছে। এ জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।

এ বিষয়ে আজ রোববার সকালে বিআইডব্লিউটিসি চিলমারীর ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) প্রফুল্ল চৌহান বলেন, ‘নাব্যতা–সংকটে চার মাস ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। সম্প্রতি ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং খননের ফলে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। গতকাল থেকে কদম ও কুঞ্জলতা নামের দুইটা ফেরি ঘাটে প্রস্তুত আছে। দীর্ঘদিন এই নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় ট্রাক কিছুটা কম। পণ্যবাহী পরিবহন এলেই ফেরি ছেড়ে দেওয়া হবে।’

এর আগে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা–সংকটের মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে নৌপথের খননকাজ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এরপর চার মাস থেকে চিলমারী-রৌমারী নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর চিলমারী-রৌমারী নৌপথে ফেরি চলাচলের উদ্বোধন করা হয়। এর পর থেকে এই নৌপথে কুঞ্জলতা ও কদম নামের দুটি ফেরি ট্রাকসহ যাত্রী পারাপার করে আসছিল। ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্যতা-সংকটের কারণে গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে ওই নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক করতে বিআইডব্লিউটিএ ব্রহ্মপুত্র নদের ২২ কিলোমিটারে খনন শুরু করে।

আরও পড়ুননাব্যতা–সংকটে চিলমারী-রৌমারী নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ, ভোগান্তি০৯ নভেম্বর ২০২৪

বিআইডব্লিউটিএর চিলমারী নৌবন্দরের দ্বায়িত্বরত উপসহকারী প্রকৌশলী মো.

কামরুজ্জামান বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমে গিয়ে নাব্যতা–সংকট দেখা দিয়েছিল। সরকারি ও বেসরকারি ছয়টি খননযন্ত্র দিয়ে নাব্যতা–সংকট মোকাবিলায় দীর্ঘ চার মাস খননের পর এখন ফেরি চলাচল উপযোগী করা হয়েছে। সম্প্রতি ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়েছে। আশা করি, এ মৌসুমে নাব্যতা–সংকটে আর ফেরি চলাচল বন্ধ হবে না।’

আরও পড়ুনবিকল্প পথ প্রস্তুত, তবু চিলমারী-রৌমারী রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ১৩ এপ্রিল ২০২৪

নতুন করে চিলমারী-রৌমারী নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু হওয়ার সাধারণ যাত্রী ও পণ্য পরিবহনকারীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সোনাহাট স্থলবন্দর থেকে পাথর পরিবহনকারী ট্রাকচালক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘পুনরায় ফেরি চালু হচ্ছে। রংপুর দিয়ে ঘুরে ময়মনসিংহ যেতে সময় ও অর্থ দুটোই বেশি লাগে। এখন অনেক সাশ্রয় হবে। তবে শুধু ফেরি চালু করলেই হবে না; ফেরির সিডিউল ঠিক করতে হবে। সিডিউল ঠিক না থাকার কারণে ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ব যত

এছাড়াও পড়ুন:

পদ্মা নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাট

পদ্মা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ভাঙন বেড়ে যাওয়ায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। এ ছাড়া ঘাটসংলগ্ন বহু স্থাপনা রয়েছে ভাঙনের ঝুঁকিতে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয় সূত্র জানায়, দৌলতদিয়ার সাতটি ফেরিঘাটের মধ্যে ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট সচল। ৬ নম্বর ঘাট থাকলেও এখনো সচল করা যায়নি। এ ছাড়া কয়েক বছর আগে ১, ২ ও ৫ নম্বর ঘাট নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।

গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাটসহ মধ্যবর্তী এলাকার ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে ৪ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাটে কিছু বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্র বলছে, দৌলতদিয়া ঘাটের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দেওয়ায় বর্তমানে সচল সব ঘাটই (৩, ৪ ও ৭ নম্বর) ভাঙনের ঝুঁকিতে। এর মধ্যে ৪ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাট বেশি ঝুঁকিতে।

বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘ভাঙন দেখা দেওয়ায় ফেরিঘাট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিআইডব্লিউটিএকে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছি। তিনটি ঘাট সচল থাকলেও ভাঙন আরও বৃদ্ধি পেলে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নেপাল চন্দ্র দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ফেরিঘাটের দুই কিলোমিটারজুড়ে ভাঙন দেখা দেয়। ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় জরুরি মেরামত ও সংরক্ষণকাজের অংশ হিসেবে তিন দিনে প্রায় সাত শ বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। তবে ফেরিঘাটের মধ্যবর্তী এলাকায় বস্তা ফেলা হয়নি। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ মিললে বাকি কাজ করা যাবে।

ঘাটসংলগ্ন এলাকায় ভাঙনের ঝুঁকি

ঘাটসংলগ্ন বাহিরচর ছাত্তার মেম্বার পাড়া, মজিদ মাতুব্বর পাড়া, শাহাদত মেম্বার পাড়া, বাজার, মসজিদ, স্কুলসহ একাধিক স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে অনেকে স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। ছাত্তার মেম্বার পাড়ার চারটি পরিবার তাদের ঘর সরিয়ে নিয়েছে।

ছাত্তার মেম্বার পাড়ার নদীর পাড়ের শেষ বসতি আলতাফ মোল্লার পরিবারের। বসতভিটা রক্ষা করতে না পেরে দুটি ঘর অন্যত্র সরিয়ে ফেলছে পরিবারটি। আলতাফ মোল্লার স্ত্রী সূর্য বেগম ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘ছয়বার ভাঙনে ভিটামাটি হারায়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এইবার ভাঙলে সাতবার হইবে। এখন কোথায় দাঁড়াব বলতে পারছি না। ঘর, টিনের চাল, জিনিসপত্র ভেঙে পাশে রাখছি। এখন কোথাও জায়গা হলে চলে যাব।’

স্থানীয় আলতাফ মোল্লা, শাহাদৎ প্রামাণিক ও ময়ান সরদার বলেন, ‘কয়েক দিনে যে হারে ভাঙছে, এভাবে ভাঙন চললে ফেরিঘাট, বাহিরচর ছাত্তার মেম্বার পাড়া, মজিদ মাতুব্বর পাড়া, শাহাদত মেম্বার পাড়াসহ অনেক স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পদ্মা নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাট