বাফেটের উত্তরসূরি কে এই গ্রেগ আবেল, কী তাঁর মূল যোগ্যতা
Published: 4th, May 2025 GMT
বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের উত্তরসূরি হিসেবে গ্রেগ আবেলের ওপর বড় দায়িত্বই পড়েছে। চলতি বছরের শেষভাগে তিনি ওয়ারেন বাফেটের স্থলাভিষিক্ত হবেন। এই পদে বসে বাফেটের সংস্কৃতির উত্তরাধিকার বহন করার দায়িত্ব পড়বে তাঁর ওপর, যদিও পূর্বসূরির যে তারকা খ্যাতি, তার ছিটেফোঁটা আবেলের নেই।
৬২ বছর বয়সী আবেল বর্তমানে বার্কশায়ারের ভাইস চেয়ারম্যান। বিনিয়োগকারী ও বিশ্লেষকদের আশা, এই ১ দশমিক ১৮ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ১৮ হাজার কোটি ডলারের সাম্র্রাজ্যের ধ্বজা তিনি বহন করবেন। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা আশা করবেন, এত দিন বাফেট যে লভ্যাংশ দিয়েছেন, তিনিও সেই ধারা বহন করবেন।
বার্কশায়ারের বিশাল সাম্রাজ্য। রেল, সড়ক, বিমা কোম্পানি, আইসক্রিম কারখানা—কী নেই এই কোম্পানির। সেই ১৯৬৫ সাল থেকে বাফেট তিলে তিলে এসব গড়ে তুলেছেন। ৯৫ বছর বয়সী বাফেট যেদিন থেকে আর থাকবেন না, সেদিন থেকেই শুরু হবে আবেলের মূল দায়িত্ব। গতকাল শনিবার যখন বাফেট নিজের উত্তরসূরি হিসেবে আবেলের নাম ঘোষণা করেন, সেই বিষয়টিও অনেকের কাছে বিস্ময়কর লেগেছে। বাফেট আগে ঠিকঠাক বলেননি, কবে থেকে তিনি এই পদ ছাড়বেন।
বাফেট অবশ্য নিজের বয়সের কথা বারবার বলেছেন। শেষমেশ নিজের অবসরের কথা ঘোষণার আগে তিনি অবশ্য ইঙ্গিত দিয়েছেন, আবেল তাঁর চেয়ে পারদর্শী। বাফেট বলেছেন, আবেল তাঁর চেয়ে ভালো সামলাতে পারবেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, আবেল যত পরিশ্রম করেন, তিনি অতটা করতেন না।
বার্ষিক শেয়ারহোল্ডার বৈঠকে আবেলকে জিজ্ঞাসা করা হয়, সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোর বিষয়ে তাঁর অবস্থান কী হবে। জবাবে আবেল বলেন, ‘আরও সক্রিয় হতে হবে’।
নিজের গুরুর প্রশংসাও করেছেন আবেল। বলেন, ওয়ারেন শিক্ষক হিসেবে অসাধারণ; এত বছর তাঁর সঙ্গে থেকে আমি নিজেও শিখেছি।
কে এই আবেলগ্রেগরি এডওয়ার্ড আবেল ১৯৬২ সালের ১ জুন অ্যালবার্টার এডমন্টনে এক শ্রমিক শ্রেণির পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আবেল নিজেও একসময় ছোটখাটো কাজ বা এটা-সেটা করতেন। পুরোনো বোতল পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রে পুনরায় রাসায়নিক ভরা, এমন অনেক কাজই করেছেন তিনি।
একবার এক সাক্ষাৎকারে আবেল বলেছিলেন, ‘আমাদের পরিবার ছিল প্রকৃত অর্থেই শ্রমজীবী পরিবার।’ কখনো কখনো তাঁদের কাজ থাকত আবার কখনো থাকত না। অর্থাৎ তাঁরা সবাই কষ্টেসৃষ্টে পরিবারের উন্নতির চেষ্টা করতেন। ১৯৮৪ সালে ইউনিভার্সিটি অব অ্যালবার্টা থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন আবেল। এরপর তিনি প্রাইস ওয়াটার হাউসকুপার্স ও জ্বালানি কোম্পানি কল এনার্জিতে কাজ করেন।
১৯৯২ সালে আবেল বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে এনার্জিতে যোগ দেন, তখন তাঁর নাম ছিল মিড আমেরিকান এনার্জি। বার্কশায়ার একপর্যায়ে মিড আমেরিকান এনার্জি কিনে নেয়। এরপর ২০০৮ সালে তিনি মিড আমেরিকানের প্রধান নির্বাহী হন।
আবেল বর্তমানে বার্কশায়ারের বিমাবহির্ভূত ব্যবসা-বাণিজ্য যেমন বিএনএসএফ, বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে এনার্জিসহ ডজনখানেক রাসায়নিক, শিল্প ও খুচরা প্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করেন।
আবেলের ওপর বাফেটের আস্থার বিষয়টি অতীতেও বারবার উঠে এসেছে। বার্কশায়ার যে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করে, সেই বিনিয়োগ করা ঠিক হচ্ছে কি না, সেই বিষয়টিও তিনি শেষমেশ আবেলের ওপর ছেড়ে দেন।
এ ছাড়া কোম্পানিতে আবেলের খ্যাতি প্রশ্নকারী হিসেবে। তিনি গভীর প্রশ্ন করতে পারদর্শী। তিনি সবাইকে নিজের পরিকল্পনা সম্পর্কে আরও গভীরভাবে ভাবতে উৎসাহিত করেন। তাতে যেটা ঘটে সেটা হলো, কোম্পানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া আরও সুচারু হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে গরু হাটে নিতে ইজরাদারদের টানাটানি
রাজশাহীতে দুই পশুহাটের ইজারাদারদের দ্বন্দ্বে গরুবাহী গাড়ি রাস্তায় আটকে পড়ছে। রীতিমতো টানাটানি শুরু হয়েছে হাটে গরু নিতে। রাজশাহীর সিটিহাট ও দামকুড়া পশুহাটে গরু নিতে ইজারাদারদের লোকজন মাঠে নেমে পড়ায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন পরিচালিত সিটিহাট এবার ইজারা পেয়েছেন শওকত আলীসহ কয়েকজন ব্যক্তি। জেলার পবা উপজেলা প্রশাসনের আওতাধীন দামকুড়া পশুহাট ইজারা নিয়েছেন মোহাম্মদ সাহ জাহান আলী নামে এক ব্যক্তি।
সূত্র জানায়, ১৯৮৯ সালে চালু হওয়া দামকুড়া পশুহাট ২০০৫ সাল পর্যন্ত সক্রিয় ছিল। ওই বছর সিটিহাট চালু হলে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট দুই হাটই ইজারা নিয়ে দামকুড়া হাট বন্ধ রাখে। দীর্ঘদিন পর এবার দুই হাট ইজারায় পড়েছে দুইজন ভিন্ন ব্যক্তি। ফলে দুই পক্ষই নিজেদের হাটে গরু তোলার জন্য মাঠে নেমেছেন। দুইটি হাটই বসে সপ্তাহের রবিবার ও বুধবার।
আরো পড়ুন:
ইলিশ: দাম স্বাভাবিক, ক্রেতা কম
কড়া নাড়ছে ঈদ, চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা
দামকুড়ার ইজারাদার মোহাম্মদ সাহ জাহান আলী অভিযোগ করেছেন, সিটিহাটের লোকজন রাস্তা থেকে গরুবাহী গাড়ি জোর করে তাদের হাটে নিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে তিনি গত ২৯ এপ্রিল বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, যার অনুলিপি পাঠানো হয়েছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ২৩ ও ২৭ এপ্রিল হাটের দিনে সিটিহাটের লোকজন পলাশবাড়ি, কদমশহর, কাঁকনহাট দরগাপাড়া মোড়, দারুসা হাট হাজির মোড়সহ অন্তত ১০টি স্থানে অবস্থান নেয়। লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে গরুবাহী গাড়ি তারা সিটিহাটের দিকে যেতে বাধ্য করেন।
রবিবার (৪ মে) সকালে মুরারিপুর সিদ্দিকের মোড়ে এমন চিত্র দেখা যায়। গরুবাহী নসিমন-করিমনগুলোকে দুই পক্ষ দুইদিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। ফলে মহাসড়কে জটলা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে দামকুড়া থানা পুলিশ এসে গরুবাহী গাড়িগুলো সিটিহাটের দিকে পাঠিয়ে দেয়। এই ঘটনায় ইজারাদার সাহ জাহান আলী পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
আজ দুপুর সোয়া ১টার দিকে দামকুড়া হাটে গিয়ে দেখা যায়, গরু এসেছে অল্পই। হাটে গোদাগাড়ীর কুন্দলিয়া গ্রামের গরু ব্যাপারি আবদুর রহমান মিলন বলেন, “সকাল ৮টায় গরু তুলেছি, এখনো গাড়িতে আছে। জোর করে এখানে ঢোকানো হয়েছে। হাটে তো ক্রেতাই নেই। সিটিহাটে গেলে ভালো হত।”
অপর ব্যাপারি আমতলী গ্রামের রাকিব আলী বলেন, আমি সিটিহাটেই যেতে চেয়েছিলাম। পথে ধরে আমাদের গরু দামকুড়া হাটে নিয়ে আসা হয়েছে। কেউ কেউ জোর করে হাটে ঢোকানোর পর আবার গরু প্রতি ছাড়ের টাকা দিয়ে হাট থেকে বেরিয়ে গেছেন। ক্রেতা বেশি থাকায় তারা গেছেন সিটিহাটে।”
দামকুড়া পশুহাটের ইজারাদার সাহ জাহান আলী দাবি করেন, “আমরা কখনো গরু ঘিরে আনিনি। সিটিহাটের লোকজন প্রথম থেকে এটা করছে। বাধ্য হয়েই আমাদের লোকজন এখন মাঠে নামছে।”
সিটিহাটের ইজারাদার শওকত আলী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমরা কাউকে জোর করছি না। ওরাই গরু ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা বলেছি, ব্যাপারিরা যেন নিজের পছন্দের হাটে যেতে পারেন।”
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ রকিবুল হাসান ইবনে রহমান বলেন, “দুই হাট একই দিনে হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। পুলিশ মাঠে কাজ করছে। কারো গরু নিয়ে টানাটানির সুযোগ নেই। যিনি যে হাটে যেতে চান, যেতে পারবেন। বিষয়টি নিয়ে কোনো বড় ধরনের উত্তেজনা এখনো নেই। প্রয়োজনে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।”
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ