জামালপুরে মামলা নিয়ে কথোপকথন ফাঁস, পিপির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব, ওসির প্রত্যাহার দাবি
Published: 4th, May 2025 GMT
জামালপুরে একটি মামলা নিয়ে জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. আনিসুজ্জামান ও বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদের কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনার জেরে আজ রোববার দুপুরে মো. আনিসুজ্জামানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে ওসিকে প্রত্যাহারের দাবিতে বিএনপির ব্যানারে মানববন্ধন হয়েছে।
আনিসুজ্জামান বকশীগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি এবং বকশীগঞ্জ উপজেলা শহরের নামাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তাঁকে গত বছরের ১৩ নভেম্বর জামালপুরের জেলা জজ আদালতের পিপি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির দুই নেতার মধ্যে হাতাহাতির ঘটনায় মামলা করা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে পিপি আনিসুজ্জামান ও ওসি খন্দকার শাকের আহমেদের উত্তেজনাপূর্ণ কথোপকথনের একটি অডিও ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে নানা আলোচনার পর আজ দুপুরে আনিসুজ্জামানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব করেন জেলা জজ আদালতের গভর্নমেন্ট প্লিডার (জিপি), অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি, সহকারী কৌঁসুলিসহ অন্তত ৪০ জন আইনজীবী।
অনাস্থা প্রস্তাবে বলা হয়, আনিসুজ্জামান বিভিন্ন থানায় মামলা নেওয়া না নেওয়া নিয়ে সুপারিশ করেন, যা তাঁর পদের সঙ্গে সম্পূর্ণ বেমানান। বৃহস্পতিবার একটি মামলা রেকর্ড করা নিয়ে বকশীগঞ্জ থানার ওসির সঙ্গে আপত্তিকর ভাষায় কথাবার্তা বলেন। একপর্যায়ে ওসি তাঁকে যে ভাষায় সম্বোধন করেন, তাতে সব আইনজীবীর সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ ছাড়া আনিসুজ্জামানের আচার-আচরণ, কথাবার্তা আপত্তিকর। তিনি প্রায়ই জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সম্পর্কে বিরূপ ও অসৌজন্যমূলক মন্তব্য করেন এবং সহকারী আইন কর্মকর্তাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন। এসব কারণে আনিসুজ্জামান সরকারি কৌঁসুলি পদে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। তাই তাঁকে ওই পদ থেকে অপসারণ করা হোক।
জামালপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রিশাদ রেজওয়ান অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ ব্যাপারে কথা বলতে পিপি মো.
এদিকে আনিসুজ্জামানের সঙ্গে অশালীন আচরণ এবং তা রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ওসির প্রত্যাহারের দাবিতে আজ দুপুরে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করা হয়েছে। উপজেলা বিএনপি, পৌর বিএনপিসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওসিকে প্রত্যাহারে আলটিমেটাম দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে ওসি খন্দকার শাকের আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘একই দলের জুনিয়র ও সিনিয়র নেতার মধ্যে ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করাকে কেন্দ্র করে বিরোধ হয়। এ নিয়ে সিনিয়র নেতা এক জুনিয়র নেতাকে চড়-থাপ্পড় দিয়েছিলেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা নিতে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছিল। পরে আমি এলাকার হাই–প্রোফাইল নেতাকে বিষয়টি জানাই। তখন তিনি মামলাটি নিতে নিষেধ করেন এবং বলেন, “এটা আমি আপস-মীমাংসা করিয়ে দেব।” কিন্তু ওই দিন রাতে আনিসুজ্জামান মামলাটি নিতে আমাকে প্রথমে চাপ দেন এবং পরে উত্তেজিত হয়ে অশালীন কথাবার্তা বলেন।’ মানববন্ধনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওই মানববন্ধনে উপজেলা ও পৌর বিএনপির কেউ ছিল না। ইউনিয়ন থেকে লোক এনে করা হয়েছে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ব ব এনপ র আইনজ ব অন স থ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি শিক্ষার্থীদের
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর পুনরায় ১৫ শতাংশ কর আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক’।
আজ বুধবার বিকেলে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক মানববন্ধনে তারা কর প্রত্যাহারসহ মোট চারটি দাবি তুলে ধরে। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে ছিল ‘অবিলম্বে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আরোপিত ১৫ শতাংশ কর বাতিল করতে হবে’, ‘নো ট্যাক্স অন এডুকেশন’–এমন স্লোগানসংবলিত পোস্টার।
অন্য দাবিগুলো হলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী অলাভজনক প্রতিষ্ঠান কীভাবে মুনাফা করে, তা তদন্ত করে অবৈধ আয় বাজেয়াপ্ত করা এবং শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি কমানো। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি নির্ধারণে শিক্ষাবিদ-বুদ্ধিজীবী এবং ছাত্রপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কমিটি করে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করা এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান এবং উচ্চশিক্ষার শর্ত পূরণে ইউজিসি ও সরকারের কার্যকর ভূমিকা পালন করা।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, পর্যাপ্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অভাবে দেশের লাখো শিক্ষার্থী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে বাধ্য হন। নতুনভাবে কর আরোপ করলে মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থেকে আরও বেশি বঞ্চিত হবেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বলা হচ্ছে যে ১৫ শতাংশ কর আদায় করা হবে, তবে এর প্রভাব সরাসরি শিক্ষার্থীদের ওপর পড়বে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই করের টাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই আদায় করবে। এর ফলে শিক্ষার খরচ আগের তুলনায় আরও বৃদ্ধি পাবে।
শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণ করা চলবে না উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, এটি বন্ধ করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট নেটওয়ার্কের সংগঠক নাবিন আবতাহির, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রপ্রতিনিধি তাসফিরুল কাব্য, ইউল্যাবের শিক্ষার্থী ফাত্তাহ সিয়াম, তারমিন তিশা প্রমুখ।
বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে শতকরা ১৫ ভাগ হারে আয়কর আদায়ের জন্য ২০০৭ সালের ২৮ জুন এবং ২০১০ সালের ১ জুলাই পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর বৈধতা নিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও এক শিক্ষার্থীর করা পৃথক ৪০টির বেশি রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আদায়ের দুটি প্রজ্ঞাপন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। ওই দুই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শতকরা ১৫ ভাগ হারে রিট আবেদনকারী যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে আয়কর বাবদ অর্থ আদায় করা হতো, তা ফেরত দিতে সরকার ও এনবিআরকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেন। এর ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক ৪৫টি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক ৪৫টি আপিল করে, যার ওপর শুনানি শেষে গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি রায় দেন আপিল বিভাগ।
রায়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আদায়ের দুটি প্রজ্ঞাপন অবৈধ ঘোষণাসংক্রান্ত হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করা হয়।
রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, হাইকোর্টের রায় বাতিল হওয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আদায়ের প্রজ্ঞাপন দুটি বৈধ ও বহাল থাকল। এর ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আদায় করা যাবে।