বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগের এক দফা দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার দুপুরে উপাচার্যের সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন ডেকে এ দাবি জানান। পরে তাঁরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মুচলেকা দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে করা মামলা ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) প্রত্যাহারের কথা জানান। এর প্রতিক্রিয়ায় বেলা দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় শিক্ষার্থীরা পাল্টা সংবাদ সম্মেলন ডাকেন।

শিক্ষার্থীদের ডাকা সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুজয় শুভ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম বক্তব্য দেন।

সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ছয় মাস আগে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সমস্যা নিয়ে ২২ দফা দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু ছয় মাসেও সেসব দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগের কর্মী শাহরিয়ারকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে আটক করেন। তবে ছাত্রলীগের কর্মীরা ফটকের নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষের দরজা ভেঙে তাঁকে ছিনিয়ে নিয়ে গেলেও তাঁদের নামে কোনো মামলা হয়নি বা শাস্তির কোনো ব্যবস্থা করেনি প্রশাসন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করলেও তা দমনে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসনামলের কায়দায় মামলা দেওয়া হয়েছে, যা উপাচার্যের নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

নানা অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, তাঁরা শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতে চান না। আবার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কোনো ভোগান্তি হোক, সেটাও চান না। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি না মানা হলে পরে আরও কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের অপসারণ ও পাতানো সিন্ডিকেট সভা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তাঁর বাসভবনের ফটক ভাঙচুর করে বিক্ষোভ করেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এরপর গত ১৩ এপ্রিল উপাচার্যের নির্দেশে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক নোটিশে অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তাঁকে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর চার দফা দাবিতে আবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।

দাবিগুলো হলো অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনকে পুনর্বহাল, রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণ, ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারের দোসর শিক্ষকদের বিভিন্ন কমিটি থেকে অপসারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যমান উন্নয়ন না করে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসন করায় উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া।

২৭ এপ্রিল রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামেন একদল শিক্ষার্থী। তাঁরা রেজিস্ট্রারকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ দাবি করে কুশপুত্তলিকা দাহ করেন এবং রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে তালা দেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) কে এম সানোয়ার পারভেজ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেন।

আজ দুপুরে উপাচার্য শুচিতা শরমিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গতকাল শনিবার ঢাকায় সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণ করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নতুন রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা ও জিডি প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, মুচলেকার মাধ্যমে এসব মামলা ও জিডি প্রত্যাহার করা হবে। অধ্যাপক মোহাম্মদ মুহসিন উদ্দীনকে অব্যাহতির বিষয়ে বলেন, বিষয়টি হাইকোর্টে বিচারাধীন। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে ফ্যাসিস্ট সরকারের সমর্থক শিক্ষক–কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে ও ব্যবস্থা নিতে একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপ চ র য র

এছাড়াও পড়ুন:

এবার উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবি শিক্ষার্থীদের, বিক্ষোভ মিছিল

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগের এক দফা দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার দুপুরে উপাচার্যের সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন ডেকে এ দাবি জানান। পরে তাঁরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মুচলেকা দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে করা মামলা ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) প্রত্যাহারের কথা জানান। এর প্রতিক্রিয়ায় বেলা দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় শিক্ষার্থীরা পাল্টা সংবাদ সম্মেলন ডাকেন।

শিক্ষার্থীদের ডাকা সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুজয় শুভ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম বক্তব্য দেন।

সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ছয় মাস আগে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সমস্যা নিয়ে ২২ দফা দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু ছয় মাসেও সেসব দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগের কর্মী শাহরিয়ারকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে আটক করেন। তবে ছাত্রলীগের কর্মীরা ফটকের নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষের দরজা ভেঙে তাঁকে ছিনিয়ে নিয়ে গেলেও তাঁদের নামে কোনো মামলা হয়নি বা শাস্তির কোনো ব্যবস্থা করেনি প্রশাসন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করলেও তা দমনে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসনামলের কায়দায় মামলা দেওয়া হয়েছে, যা উপাচার্যের নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

নানা অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, তাঁরা শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতে চান না। আবার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কোনো ভোগান্তি হোক, সেটাও চান না। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি না মানা হলে পরে আরও কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের অপসারণ ও পাতানো সিন্ডিকেট সভা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তাঁর বাসভবনের ফটক ভাঙচুর করে বিক্ষোভ করেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এরপর গত ১৩ এপ্রিল উপাচার্যের নির্দেশে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক নোটিশে অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তাঁকে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর চার দফা দাবিতে আবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।

দাবিগুলো হলো অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনকে পুনর্বহাল, রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণ, ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারের দোসর শিক্ষকদের বিভিন্ন কমিটি থেকে অপসারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যমান উন্নয়ন না করে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসন করায় উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া।

২৭ এপ্রিল রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামেন একদল শিক্ষার্থী। তাঁরা রেজিস্ট্রারকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ দাবি করে কুশপুত্তলিকা দাহ করেন এবং রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে তালা দেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) কে এম সানোয়ার পারভেজ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেন।

আজ দুপুরে উপাচার্য শুচিতা শরমিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গতকাল শনিবার ঢাকায় সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণ করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নতুন রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা ও জিডি প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, মুচলেকার মাধ্যমে এসব মামলা ও জিডি প্রত্যাহার করা হবে। অধ্যাপক মোহাম্মদ মুহসিন উদ্দীনকে অব্যাহতির বিষয়ে বলেন, বিষয়টি হাইকোর্টে বিচারাধীন। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে ফ্যাসিস্ট সরকারের সমর্থক শিক্ষক–কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে ও ব্যবস্থা নিতে একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ