Samakal:
2025-09-24@20:26:10 GMT

পাক-ভারত বিরোধের বয়ান

Published: 4th, May 2025 GMT

পাক-ভারত বিরোধের বয়ান

ভারতের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার দৃশ্যত এ চিন্তা করেছে, তারা পেহেলগাম ট্র্যাজেডির দায় চাপিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে পাকিস্তানকে একঘরে করে রাখতে পারবে। কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই তারা এ দেশকে দোষারোপ করছে। তারপরও বৈশ্বিক ক্ষেত্রে ঐতিহ্যগতভাবে ভারতের বিদেশি বাণিজ্যিক অংশীদাররা বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র নয়াদিল্লির বয়ান গিলছে না। অধিকাংশ দেশ দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন যুদ্ধাবস্থা পরিহারে উভয়কেই (পাকিস্তান-ভারত) আহ্বান জানাচ্ছে। যেমন আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জে.

ডি. ভ্যান্স এ আক্রমণের সময় ভারতেই ছিলেন। তিনি ভারতকে এমন পদক্ষেপ নিতে বারণ করেছেন, যা ‘বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতের সূচনা করতে পারে’। তিনি পাকিস্তানকে বলেছেন ‘সহযোগিতা’ করতে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদেশনীতি বিষয়ক প্রধান কাজা ক্যালাস অনুরূপ পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ‘যুদ্ধাবস্থা কারও জন্যই কল্যাণ বয়ে আনে না’। বাস্তবতা হলো, ভারত সরকারের অনেকে এবং এর অতিউৎসাহী জাতীয়তাবাদী মিডিয়া যখন পাকিস্তানি রক্ত ঝরানোর জন্য চিৎকার করছে, তখন পশ্চিমা সম্প্রদায় এই উপমহাদেশে শত্রুতা বৃদ্ধির ব্যাপারে খুব একটা কর্ণপাত করছে না। কারণ তারা ইতোমধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ ও গাজায় হত্যাযজ্ঞ নিয়ে ব্যস্ত। 

পাকিস্তানের সরকার তার বিদেশি বন্ধু ও অংশীদারদের সঙ্গে অব্যাহত যোগাযোগ রাখছে; তাদের কাছে পাকিস্তানের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করছে এবং সংযমের আহ্বান জানানোর মাধ্যমে যথার্থ কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ শুক্রবার উপসাগরীয় মিত্র দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুক্রবার বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশি খেলোয়াড়দের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন। সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ অফিসাররা ভারতের যে কোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তাদের প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিয়েছেন।
দুঃখজনক, পেহেলগামের ঘটনার ছায়ায় পাকিস্তানকে একঘরে করে রাখার দ্বিচারিতাপূর্ণ লক্ষ্য বাস্তবায়নে নয়াদিল্লি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভারতীয় কর্মকর্তারা আইএমএফসহ বহুপক্ষীয় সংস্থাগুলোকে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হ্রাস ও পাকিস্তানকে সহায়তার বিষয়টি পুনরায় পর্যালোচনার অনুরোধ জানিয়েছেন, যা ভারতের হিন্দু পুনর্জাগরণপন্থি সরকারের খুবই ক্ষুদ্র মানসিকতা ও বিদ্বেষপ্রসূত পদক্ষেপ। কাশ্মীরের হামলাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানকে আঘাত করার জন্য ভারত এ সুযোগকে এভাবে ব্যবহার করছে।

এখন পর্যন্ত ভারত এমন কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ হাজির করতে পারেনি– পাকিস্তান ওই হামলার সঙ্গে জড়িত। অথচ দেশটি উভয় দেশের সমন্বিত অনুসন্ধানের বিষয়কেও নাকচ করেছে। ইতোমধ্যে ভারতীয় কট্টরবাদীদের দ্বারা ছড়ানো ঘৃণাসূচক বক্তব্য দীর্ঘদিনের দ্বিপক্ষীয় চুক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং এর পুনরুদ্ধার মুশকিল হয়ে পড়বে।
যেখানে বিদেশি শক্তিগুলো উত্তেজনা হ্রাসের আহ্বান জানিয়েছে, এমতাবস্থায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উচিত বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া। কারণ ভারতের যুদ্ধে নেমে পড়ার অবস্থান বৈশ্বিক শান্তির জন্য হুমকি তৈরি করবে। জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রতিনিধি যখন বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদে জানান, তখন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালনকারী গ্রিস বলেছে, ‘দেরি না করে অনতিবিলম্বে’ তারা একটি বৈঠক ডাকতে পারে।  

অতিউৎসাহী টিভি উপস্থাপকদের মাধ্যমে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ করা’ ও উস্কানিমূলক বিবৃতি দেওয়ার পরিবর্তে ভারত বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপন করুক এবং দেশটির কাছে কোনো প্রমাণ থাকলে তাও উপস্থাপন করুক। পাকিস্তানও বৈশ্বিক মঞ্চে পূর্ণাঙ্গভাবে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করুক এবং ভারতের অভিযোগের জবাব দিক। এটি সব পক্ষের জন্যই সংকট নিরসনের একটি পথ খুলে দিতে পারে।

পাকিস্তানি ইংরেজি দৈনিক ডন থেকে ভাষান্তরিত

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য ব ষয়ট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনৈতিক দলগুলোকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংস্কারের প্রতি প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে

বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের অবনতির পর্বে, গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। এ জন্য সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের প্রতি শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে।

চলতি মাসে বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়া ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার ফ্রান্সের স্ত্রাসবুর্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দপ্তরে প্রতিবেদনটি পেশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন উপস্থাপনের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সফরে আসা প্রতিনিধিদলের প্রধান মুনির সাতোরি।

মুনির সাতোরি বলেন, ‘আমাদের সফরের দুটি উদ্দেশ্য ছিল। একটি হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করা ও গণতান্ত্রিক উত্তরণে মানবাধিকারের গুরুত্ব তুলে ধরা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, প্রায় বিস্মৃত হতে যাওয়া রোহিঙ্গাদের পাশে থাকা। রোহিঙ্গা সংকট যাতে হারিয়ে না যায়, সে জন্য এটি ইইউর রাজনৈতিক এজেন্ডায় আবারও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকাজ নিয়ে মুনির সাতোরি বলেন, ‘এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতার প্রস্তাব করেছি।’

প্রতিনিধিদলের সদস্য ইজাবেল উইসেলার-লিমা বলেন, যখন বিশ্বে নাটকীয়ভাবে গণতন্ত্র অবনতির পথে, তখন বাংলাদেশ পথ পরিবর্তন করে দেখিয়েছে যে গণতন্ত্রের পথে যাওয়া যায়। তারা চেষ্টা করছে গণতন্ত্রের দিকে যাওয়ার। আর এ জন্য সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এটা আশা করা জরুরি যে সামনে নির্বাচন হবে এবং তা প্রতিযোগিতামূলক হবে, যা হওয়া উচিত। অন্তর্বর্তী সরকার এ জন্য চেষ্টা করছে।

রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে ইজাবেল বলেন, ‘কক্সবাজার বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির। সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজা সংকটের কারণে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি মানুষ ভুলে যাচ্ছে। এ সংকট আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠেছে। কারণ, মিয়ানমার তাদের দায়িত্ব নিচ্ছে না। আর বাংলাদেশও দরিদ্র দেশ। বাংলাদেশের নিজেরই বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে। ফলে রোহিঙ্গাদের জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিয়ে নেওয়া তাদের জন্য সম্ভব নয়। রোহিঙ্গা সংকটের এখনকার চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বাংলাদেশ বর্তমানে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে অবস্থায় রয়েছে।’

প্রতিনিধিদলের আরেক সদস্য আরকাদিউজ মুলারজিক বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবিরে সবচেয়ে বেশি মানবিক অনুদান আসে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো থেকে, যদিও আগে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা দিত। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রতি প্রতিশ্রুতি খুবই নগণ্য, এটি আশ্চর্যজনক এবং গ্রহণযোগ্য নয়। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বদলে অনেক দূরে থাকা ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোকে এর দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বড় অংশগ্রহণকারী হওয়া উচিত ছিল। বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গেও কথা বলা উচিত। কারণ, বর্তমানে আমরা ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি নিয়ে দর–কষাকষি করছি।’

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিনিধিদলের সদস্য ক্যাটারিনা ভিয়েরা বলেন, এটি পরিষ্কার যে বাংলাদেশ ইতিহাসে দেশটি বর্তমানে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটি একটি সুযোগ সত্যিকারের অগ্রগতির। শিগগিরই হয়তো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের ভেতরে গ্রহণযোগ্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সবাই নির্বাচনটি স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দেখতে চায়। এ বিষয়গুলো শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্বের থেকে আসেনি, এসেছে নাগরিক সমাজ, ছাত্র ও যুব আন্দোলনের পক্ষ থেকেও, যাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। তারা নিজেদের মধ্যে সংলাপের মধ্যে রয়েছে। যদিও অনুতাপের বিষয় হচ্ছে ধর্মীয়, লিঙ্গ ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু এবং নারীদের এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ নেই। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সমাজ গঠনে এখানে উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।

আরকাদিউজ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে সংস্কারে উৎসাহ, যারা সংস্কারে কাজ করছেন, তাঁদের প্রতি সংহতি প্রকাশ ও গণতান্ত্রিক কাঠামোয় গঠনমূলক সহযোগিতা করে ইইউ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশ্ব যখন গণতন্ত্রের উল্টো পথে যাত্রা করছে, তখন বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের আশা করার অবকাশ রয়েছে। গণতন্ত্রের পথে আরও অনেক কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় বাংলাদেশ সামনে দিকে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেবে বলে মনে করি। এটি এখন নির্ভর করছে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের প্রতি শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে।’

১৬ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার উপকমিটির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ সফর করে। এ সময়ে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, বেসরকারি সংস্থা, নাগরিক সমাজ সংগঠন, শ্রমিক প্রতিনিধি এবং মাঠপর্যায়ে কর্মরত বহুপক্ষীয় সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে।

এ ছাড়া প্রতিনিধিদলটি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরও পরিদর্শন করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ