ভারতের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার দৃশ্যত এ চিন্তা করেছে, তারা পেহেলগাম ট্র্যাজেডির দায় চাপিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে পাকিস্তানকে একঘরে করে রাখতে পারবে। কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই তারা এ দেশকে দোষারোপ করছে। তারপরও বৈশ্বিক ক্ষেত্রে ঐতিহ্যগতভাবে ভারতের বিদেশি বাণিজ্যিক অংশীদাররা বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র নয়াদিল্লির বয়ান গিলছে না। অধিকাংশ দেশ দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন যুদ্ধাবস্থা পরিহারে উভয়কেই (পাকিস্তান-ভারত) আহ্বান জানাচ্ছে। যেমন আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জে.
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদেশনীতি বিষয়ক প্রধান কাজা ক্যালাস অনুরূপ পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ‘যুদ্ধাবস্থা কারও জন্যই কল্যাণ বয়ে আনে না’। বাস্তবতা হলো, ভারত সরকারের অনেকে এবং এর অতিউৎসাহী জাতীয়তাবাদী মিডিয়া যখন পাকিস্তানি রক্ত ঝরানোর জন্য চিৎকার করছে, তখন পশ্চিমা সম্প্রদায় এই উপমহাদেশে শত্রুতা বৃদ্ধির ব্যাপারে খুব একটা কর্ণপাত করছে না। কারণ তারা ইতোমধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ ও গাজায় হত্যাযজ্ঞ নিয়ে ব্যস্ত।
পাকিস্তানের সরকার তার বিদেশি বন্ধু ও অংশীদারদের সঙ্গে অব্যাহত যোগাযোগ রাখছে; তাদের কাছে পাকিস্তানের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করছে এবং সংযমের আহ্বান জানানোর মাধ্যমে যথার্থ কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ শুক্রবার উপসাগরীয় মিত্র দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুক্রবার বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশি খেলোয়াড়দের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন। সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ অফিসাররা ভারতের যে কোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তাদের প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিয়েছেন।
দুঃখজনক, পেহেলগামের ঘটনার ছায়ায় পাকিস্তানকে একঘরে করে রাখার দ্বিচারিতাপূর্ণ লক্ষ্য বাস্তবায়নে নয়াদিল্লি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভারতীয় কর্মকর্তারা আইএমএফসহ বহুপক্ষীয় সংস্থাগুলোকে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হ্রাস ও পাকিস্তানকে সহায়তার বিষয়টি পুনরায় পর্যালোচনার অনুরোধ জানিয়েছেন, যা ভারতের হিন্দু পুনর্জাগরণপন্থি সরকারের খুবই ক্ষুদ্র মানসিকতা ও বিদ্বেষপ্রসূত পদক্ষেপ। কাশ্মীরের হামলাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানকে আঘাত করার জন্য ভারত এ সুযোগকে এভাবে ব্যবহার করছে।
এখন পর্যন্ত ভারত এমন কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ হাজির করতে পারেনি– পাকিস্তান ওই হামলার সঙ্গে জড়িত। অথচ দেশটি উভয় দেশের সমন্বিত অনুসন্ধানের বিষয়কেও নাকচ করেছে। ইতোমধ্যে ভারতীয় কট্টরবাদীদের দ্বারা ছড়ানো ঘৃণাসূচক বক্তব্য দীর্ঘদিনের দ্বিপক্ষীয় চুক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং এর পুনরুদ্ধার মুশকিল হয়ে পড়বে।
যেখানে বিদেশি শক্তিগুলো উত্তেজনা হ্রাসের আহ্বান জানিয়েছে, এমতাবস্থায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উচিত বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া। কারণ ভারতের যুদ্ধে নেমে পড়ার অবস্থান বৈশ্বিক শান্তির জন্য হুমকি তৈরি করবে। জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রতিনিধি যখন বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদে জানান, তখন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালনকারী গ্রিস বলেছে, ‘দেরি না করে অনতিবিলম্বে’ তারা একটি বৈঠক ডাকতে পারে।
অতিউৎসাহী টিভি উপস্থাপকদের মাধ্যমে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ করা’ ও উস্কানিমূলক বিবৃতি দেওয়ার পরিবর্তে ভারত বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপন করুক এবং দেশটির কাছে কোনো প্রমাণ থাকলে তাও উপস্থাপন করুক। পাকিস্তানও বৈশ্বিক মঞ্চে পূর্ণাঙ্গভাবে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করুক এবং ভারতের অভিযোগের জবাব দিক। এটি সব পক্ষের জন্যই সংকট নিরসনের একটি পথ খুলে দিতে পারে।
পাকিস্তানি ইংরেজি দৈনিক ডন থেকে ভাষান্তরিত
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কবে আসছে ‘বনলতা সেন’
‘বনলতা সেন’ ছবির শুটিং, ডাবিং, সম্পাদনা, রংবিন্যাস, আবহসংগীতের কাজ—সবই শেষ। শিগগিরই ‘বনলতা সেন’ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডেও জমা পড়বে। পরিচালক মাসুদ হাসান উজ্জ্বল জানালেন, এখন পর্যন্ত যে পরিকল্পনা, তাতে আগামী সেপ্টেম্বরে ছবিটি মুক্তি দিতে চান। সেভাবেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের এটি দ্বিতীয় চলচ্চিত্র। নাটক ও বিজ্ঞাপনচিত্র দিয়ে হাত পাকানোর পর তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ‘উনপঞ্চাশ বাতাস’। ছবিটি ২০২০ সালের শেষ দিকে মুক্তি পায়। ‘বনলতা সেন’ সরকারি অনুদানের ছবি। ছবির পরিচালক উজ্জ্বল প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুটিংয়ে যা প্রয়োজন, তা–ই করেছি। গল্পে কোনো আপস করিনি। তাই শুটিং শেষ করতে আট মাসের মতো সময় লেগেছে।’
ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্র করেছেন মাসুমা রহমান নাবিলা। তবে শুরুতে তাঁকে অন্য একটি চরিত্রের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। উপস্থাপিকা নাবিলার এটি চতুর্থ চলচ্চিত্র। শাকিব খানের বিপরীতে ‘তুফান’ ছবিতে অভিনয় করেছেন সর্বশেষ। ২০২৪ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি হিট হয়।
আরও পড়ুনভিকির সিরিজে নিশো–নাবিলা৩০ এপ্রিল ২০২৫নাবিলা বললেন, ‘শুরুতে শুধু ওই চরিত্রের সারসংক্ষেপ দেওয়া হয়। বলেছিলাম, পুরো স্ক্রিপ্ট দেওয়া যায় কি না। তাহলে বুঝতাম, আমার চরিত্রের উপস্থাপনটা কী রকম বা কী। পুরো চিত্রনাট্য পড়ে তো আমি মুগ্ধ। পুরো গল্পটা চোখের সামনে ভেসে উঠল। যা-ই হোক, আমাকে যে চরিত্রের কথা বলেছে, ওই ধরনের চরিত্র চাইছিলাম না। ওনাকে সুন্দর করে বললাম, এই চরিত্রটা আমি এখন করতে চাইছি না। তবে আপনি যদি আমাকে বনলতা সেন বলতেন, তাহলে এককথায় রাজি হয়ে যেতাম (হাসি)। অনেক দিন পর তিনি আমাকে ডাকলেন। অডিশন নিলেন তিনবার।’ শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা দারুণ জানিয়ে বললেন, ‘উজ্জ্বল ভাই তো অনেক বড় ক্যানভাসে কাজ করেন। তাঁর সিনেমা হচ্ছে কবিতার মতো। এত সুন্দর করে বানান।’
ছবিটি নিয়ে নির্মাতা আরও বলেন, ‘আমার আফসোস—উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ, এডগার অ্যালান পো কিংবা টি এস এলিয়টের থেকে জীবনানন্দ দাশ কোনো অংশে কম নন। এত দিনে গোটা বিশ্বের তাঁকে জানা উচিত ছিল। আমি জীবনে প্রথম এমন বিস্ময়কর এক কবিকে ট্রিবিউট করার সুযোগ পেয়েছি। কেবল আমি কেন, গোটা বাঙালি জাতির জন্য জীবনানন্দ দাশ উদ্যাপনের একটা বিরাট সুযোগ। এই উদ্যাপন জাতীয় পর্যায়ের হওয়া উচিত। কারণ, এ বছরই ছিল কবি জীবনানন্দ দাশের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী। আমি অপেক্ষায় আছি কবে সেই পরিবেশ তৈরি হয়, যখন এমন এক কবিকে উদ্যাপন করে আমরা ধন্য হব।’
নাবিলা। ছবি: ফেসবুক থেকে