হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসার: ‘স্টেজ ফোর’-এর রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব
Published: 5th, May 2025 GMT
হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসারে আক্রান্তদের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পুরুষ, বাকি ২০ থেকে ৩০ শতাংশ নারী। ধূমপানের কারণে পুরুষদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। তবে এই ক্যানসার হলে স্টেজ ফোরের প্রাথমিক পর্যায় থেকেও রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব।
কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যানসার মেডিসিন ও রেডিওথেরাপি–বিশেষজ্ঞ ডা.
অনুষ্ঠানটি গত বুধবার সরাসরি সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।
আলোচনার শুরুতেই উপস্থাপক জানতে চান, কারা হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসারের ঝুঁকিতে রয়েছেন? উত্তরে ডা. এস এম নাজমুল আলম বলেন, সাধারণত হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসার বলতে মানুষের মাথা থেকে ঘাড় পর্যন্ত নাক, নাকের গহ্বর, সাইনাস, ঠোঁট, জিহ্বা, মাড়ি, গালের ভেতরের অংশ, মুখের তালু, গলা, কণ্ঠনালি, শ্বাসনালির ওপরে, খাদ্যনালি, টনসিল, লালাগ্রন্থি ইত্যাদি অংশের ক্যানসারকে বোঝানো হয়। তিনি বলেন, এবার আসি কারা ঝুঁকিতে সে বিষয়ে। মূলত যাঁরা ধূমপান, মদ্যপান, পান-জর্দা, তামাক-গুল সেবন করেন, অনিয়ন্ত্রিত জীবনাচরণ রয়েছে, কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ও রেডিয়েশনের সংস্পর্শে থাকেন এবং পরিবারের কারও আগে এ ধরনের ক্যানসার হয়েছে তাঁরা এর ঝুঁকিতে আছেন। এ ছাড়া ‘হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসে’ আক্রান্ত হলেও এই ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি থাকে।
নাজমুল আলম বলেন, হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসারে আক্রান্তদের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পুরুষ, বাকি ২০ থেকে ৩০ শতাংশ নারী। যাঁদের বয়স ৫০ বছরের বেশি।
সম্পূরক প্রশ্ন হিসেবে উপস্থাপক জানতে চান, নারীরাই পান বেশি খান আর ধূমপান পুরুষেরাই বেশি করেন। তাহলে ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যায় এত পার্থক্য কেন?
উত্তরে নাজমুল আলম বলেন, নারীরা গুল বা পান বেশিক্ষণ মুখে রাখার কারণে তাঁদের জিহ্বা ও মুখগহ্বরের ক্যানসার হচ্ছে। কিন্তু পুরুষেরা ধূমপানের কারণে হেড অ্যান্ড নেকের বাকি অংশগুলোতে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই এ ধরনের ক্যানসারে নারীদের তুলনায় পুরুষদের আক্রান্তের হার বেশি।
পারিবারিক ইতিহাসের সঙ্গে এ ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার প্রভাব সম্পর্কে ডা. নাজমুল আলম বলেন, অন্যান্য ক্যানসারের মতো এ ক্ষেত্রেও এটি গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর প্রভাবটা অতটা মারাত্মক নয়।
হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সম্পর্কে ডা. নাজমুল আলম বলেন, এ ধরনের ক্যানসার বিস্তৃত জায়গাজুড়ে হয়ে থাকে। তাই স্থানভেদে এর লক্ষণ একেক জায়গায় একেক রকম হয়ে থাকে। যদি মোটাদাগে বলা যায়, গলায় দীর্ঘ সময় ধরে ব্যথা, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, শ্বাস নিতে গেলে শব্দ হওয়া, গন্ধের অনুভূতি কমে যাওয়া, অতিমাত্রায় কাশি, গালে, জিহ্বায় বা মুখগহ্বরে কোথাও কোনো সাদা বা লাল ক্ষত হওয়া, দীর্ঘদিন সর্দি, নাক থেকে রক্তক্ষরণ, গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে যাওয়া, কথা বলতে কষ্ট হওয়ার মতো লক্ষণ থাকতে পারে। এ ছাড়া মুখের কোনো অংশ যেমন চোখের ওপরে, ঘাড়ে, গলায়, নাকের চারপাশ, কানের আশপাশ বা চোয়াল ফুলে যাওয়া বা মুখের এক পাশ ফুলে যাওয়া, মুখে ব্যথা, মুখ খুলতে সমস্যা, কানে ব্যথা, এক কানে শুনতে সমস্যা, দাঁতে ব্যথার মতো লক্ষণও প্রকাশ পেতে পারে। যদি দেখা যায় এ ধরনের লক্ষণ দুই সপ্তাহেও সারছে না, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রসঙ্গক্রমে উপস্থাপক জানান, এসকেএফ অনকোলজি বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র ইউজিএমপি ও অ্যানভিজা ব্রাজিল অনুমোদিত প্ল্যান্ট। ফলে এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রায় ২৭টি দেশে এবং দক্ষিণ আমেরিকায় রপ্তানি হচ্ছে। এ ছাড়া এসকেএফ অনকোলজির সারা দেশে রয়েছে ৩৩টি সেবাকেন্দ্র, যার মাধ্যমে ক্যানসারের ওষুধ পাওয়া যায়। শুধু তা-ই নয়, ঘরে বসে অর্ডার করলেই বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তে সহজেই ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হয়।
আলোচনার এ পর্যায়ে হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসারের স্ক্রিনিংয়ের ধরন সম্পর্কে জানতে চান উপস্থাপক। উত্তরে ডা. নাজমুল আলম বলেন, এ ধরনের ক্যানসারের স্ক্রিনিং প্রতিবছর করতে হয়। এ সময়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের কাছে গিয়ে দাঁতের পাশে অস্বাভাবিক কিছু আছে কি না, মুখের পাশে কোনো আলসার আছে কি না, এমন ক্ষত যা সহজে শুকাচ্ছে না অর্থাৎ সিম্পল ফিজিক্যাল এক্সামিনেশনের মধ্য দিয়ে স্ক্রিনিংটা করতে হয়। তিনি বলেন, ‘সাধারণত জিহ্বা বা মুখগহ্বরে ক্যানসারের আশঙ্কা মনে হলে “পাঞ্চ বায়োপসি” নামে একটা পরীক্ষা করা হয়। নাকে হলে যেটা “বায়োপসি” এবং স্বরযন্ত্রে হলে সেটা “ডিএল বায়োপসি”র মাধ্যমে নির্ণয় করি। যদি কোনো টিউমার বা অতিরিক্ত মাংসপিণ্ড পাওয়া যায় সে ক্ষেত্রে আরও কিছু পরীক্ষা হয়। সিটি স্ক্যান ফেসের নেক, এমআরআই অব দ্য ফেসের মাধ্যমে নির্ণয় করা হয় ক্যানসার ওই জায়গাতেই আছে নাকি ছড়িয়ে পড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি ছড়িয়ে পড়ে সে ক্ষেত্রে বর্তমান অবস্থার জন্য বুকের সিটি স্ক্যান, এন্ডোস্কপি, ফাইবার অব টিকলারিঙ্গস্কপি এবং পেট সিটি স্ক্যান ইত্যাদির মতো আধুনিক পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যানসারটি সম্পর্কে জানতে পারি।’
বাংলাদেশে হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসারের বর্তমান পরিস্থিতি, স্ক্রিনিং, সচেতনতা ও চিকিৎসাপদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ দেন ডা. এস এম নাজমুল আলমউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে মঙ্গলবার ৬ ঘণ্টা চলবে মোটরসাইকেল-অটোরিকশা
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মঙ্গলবার লন্ডন থেকে ঢাকায় ফেরার পর তাঁকে অভ্যর্থনা জানাবেন দলের নেতা-কর্মীরা। ফলে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত যানজটের আশঙ্কা করছে পুলিশ। এমন পরিস্থিতিতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ছয় ঘণ্টার জন্য মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
সেতু বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে যানজট ও ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলতে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলতে পারবে এই দুটি যান। প্রতিটি যানের জন্য ২০ টাকা টোল দিতে হবে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক এ এইচ এম সাখাওয়াত আখতার প্রথম আলোকে বলেন, মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা চলতে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি সাময়িক। ঢাকা মহানগর পুলিশের অনুরোধেই তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যে চিকিৎসা শেষে সোমবার কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দেশের পথে রওনা দিয়েছেন খালেদা জিয়া। কাতারের রাজধানী দোহায় যাত্রাবিরতি দিয়ে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে তাঁর। খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়ি বিমানবন্দর থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসে না এসে নিচের রাস্তা দিয়ে গুলশানে যাওয়ার কথা। এ জন্যই এক্সপ্রেসওয়ের ব্যবহারে কিছুটা শিথিলতা আনা হয়েছে বলে সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সোমবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলীয় নেতা-কর্মীরা বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাবেন। এই পথে বিএনপি ও এর বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কারা কোথায় অবস্থান নেবেন, তাঁরা কী করতে পারবেন, কী করতে পারবেন না—সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন তিনি।
২০২৩ সালে চালুর পর থেকেই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে দুই এবং তিন চাকার যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। তবে গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় টোল প্লাজায় ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডের পর কয়েক দিন সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হয়। মূলত এক্সপ্রেসওয়েতে জট ও দুর্ঘটনা এড়াতেই দুই ও তিন চাকার যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এটি করা হয়েছে এর নির্মাণ ও পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের আগ্রহে।
বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগে (পিপিপি)। প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই উড়ালসড়কের একাংশ চালু হয়েছে। বাকি পথের নির্মাণকাজ চলমান আছে। এক্সপ্রেসওয়েটি শুরুতে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত চালু করা হয়। এরপর কারওয়ান বাজর পর্যন্ত তা সম্প্রসারণ করা হয়।
আরও পড়ুনখালেদা জিয়া ঢাকার উদ্দেশে লন্ডন ছেড়েছেন২ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনখালেদা জিয়া এলে ঢাকার কোন কোন পথে অভ্যর্থনা, রিজভীর নির্দেশনা০৪ মে ২০২৫