জুবাইদার ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান
Published: 6th, May 2025 GMT
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফিরেছেন তাঁর পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান। প্রায় ১৭ বছর পর দেশে ফিরলেন জুবাইদা রহমান।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪২ মিনিটে খালেদা জিয়া ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী কাতারের রাজপরিবারের বিশেষ বিমান (এয়ার অ্যাম্বুলেন্স) রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
খালেদা জিয়াকে গাড়ির সামনের আসনে বসে থাকতে দেখা যায়। পেছনের আসনে হাসিমুখে বসেছিলেন তাঁর দুই পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শামিলা রহমান।
২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বসবাস করছেন তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমান।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে জুবাইদা রহমানও আজ দেশে ফিরেছেন। এর ফলে জুবাইদার ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান হয়েছে। দেশে ফিরে বাবার ধানমন্ডির বাসায় থাকার ইচ্ছা পোষণ করেছেন তিনি।
জুবাইদাকে বরণ করে নিতে ধানমন্ডির ৫ নম্বর রোডে অবস্থিত তাঁর বাবার বাড়ি মাহবুব ভবনও প্রস্তুত করা হয়েছে। বাড়িটি সুসজ্জিত করার পাশাপাশি তাঁর স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাড়তি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, তাঁর সহধর্মিণী জুবাইদা রহমান ও জুবাইদা রহমানের মা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় একটি মামলা করে দুদক। এই মামলায় জুবাইদা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতের ওই সাজা স্থগিত হয়।
জুবাইদা রহমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। পরে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে মেডিসিনে এমএসসি করেন। তিনি চিকিৎসকদের সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় প্রথম হয়ে ১৯৯৫ সালে চিকিৎসক হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। তবে ২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটি নিয়ে লন্ডনে যাওয়ার পর দ্বিতীয় মেয়াদে ছুটি বাড়ানোর পরও ফেরত এসে চাকরিতে যোগ না দেওয়ায় তাঁকে বরখাস্ত করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
জুবাইদা রহমানের জন্ম বাংলাদেশের সিলেট জেলায়। তিনি প্রয়াত রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলীর মেয়ে। মাহবুব আলী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারের সময়েও তিনি যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানী জুবাইদা রহমানের চাচা।
আরও পড়ুনখালেদা জিয়া ‘ফিরোজা’য় পৌঁছেছেন১ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনখালেদা জিয়া দেশে ফিরলেন, সঙ্গে দুই পুত্রবধূ৪ ঘণ্টা আগে১৯৯৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানের সঙ্গে জুবাইদা রহমানের বিয়ে হয়। ১৯৯৫ সালে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দেন তিনি। ২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটি নিয়ে তিনি স্বামী তারেক রহমানের চিকিৎসার জন্য লন্ডনে আসেন।
গত ৮ জানুয়ারি কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডন যান খালেদা জিয়া। সেখানে লন্ডন ক্লিনিক নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। লন্ডন ক্লিনিকে ১৭ দিন প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে ছিলেন তিনি।
খালেদা জিয়ার দেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে তাঁর গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ ঘিরে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদেরও মোতায়েন করা হয়েছে।
আরও পড়ুনফুল, ব্যানার, পতাকা, স্লোগানে খালেদা জিয়াকে পথে পথে শুভেচ্ছা৩ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন ২০০৮ স ল রহম ন র বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে বিএনপি নেতা–কর্মীদের মানববন্ধন, স্মারকলিপি
কুমিল্লা-১০ (কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট) সংসদীয় আসনকে ভেঙে ত্রিখণ্ডিত করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রকাশ করা খসড়া তালিকা বাতিল এবং বিলুপ্ত হওয়া কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।
‘কুমিল্লা-৯ নির্বাচনী এলাকা পুনরুদ্ধার বাস্তবায়ন কমিটি’–এর ব্যানারে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরীর অনুসারী বিএনপির নেতা–কর্মীরা এ কর্মসূচি পালন করেন। এতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপি, কুমিল্লা মহানগর দক্ষিণের ৯ ওয়ার্ড ও লালমাই উপজেলা বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের কয়েক শ নেতা–কর্মী অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখতার হোসাইন, সদস্যসচিব ওমর ফারুক চৌধুরী, লালমাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাসুদ করিম, সদস্যসচিব ইউসুফ আলী মীরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। এ সময় ‘নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত, মানি না, মানব না’, ‘আসন পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত, বাতিল করো, করতে হবে’, ‘সাবেক কুমিল্লা-৯ নির্বাচনী এলাকা, ফিরিয়ে দাও, দিতে হবে’-সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী বিএনপি নেতা–কর্মীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বৃহত্তর কুমিল্লা সদর দক্ষিণ এলাকা নিয়ে সাবেক কুমিল্লা-৯ আসনটি ফিরিয়ে দিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের এই খসড়া বাতিল করতে হবে। যদি আসন ফিরিয়ে দেওয়া না হয়, তাহলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখতার হোসাইন বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা ও পৌরসভা (বর্তমানে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলা এবং কুমিল্লা সিটি করপোরেশন দক্ষিণের ৯টি ওয়ার্ড) নিয়ে বিলুপ্ত হওয়া কুমিল্লা-৯ আসনের সীমানা ছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল হক চৌধুরী এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে মনিরুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসনটি বিলুপ্ত করে কুমিল্লা-৬, কুমিল্লা-৮ ও কুমিল্লা-১০ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। চার থেকে পাঁচ দফা পরিবর্তনের পর বর্তমানে কুমিল্লা-১০ (কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট) আসনে রয়েছে বিলুপ্ত হওয়া কুমিল্লা-৯ আসনটি। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করছেন, আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু সেই দাবি মেনে নেওয়া হয়নি।
আখতার হোসাইন বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যেখানে কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহাল করার কথা, সেখানে সেটি না করে কুমিল্লা-১০ সংসদীয় আসনকে ভেঙেচুরে ত্রিখণ্ডিত করে খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। ২০০৮ সালের মতো এবারও ষড়যন্ত্র করে মনিরুল হক চৌধুরীকে আটকানোর জন্য ইসি এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
লালমাই উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব ইউসুফ আলী মীর বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগপর্যন্ত কুমিল্লায় ১২টি আসন ছিল, ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় একটি আসন কমিয়ে কুমিল্লায় হযবরল অবস্থার সৃষ্টি করেছে ইসি। সেই থেকেই তাঁরা কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করছেন। ইসির ঘোষিত খসড়া তালিকা বাতিল করতে হবে। সেটি না করা হলে নেতা–কর্মীরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবেন।
কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম বলেন, কুমিল্লা-১০ আসনের নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত খসড়া বাতিল এবং বিলুপ্ত হওয়া কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে একটি স্মারকলিপি পেয়েছেন। এটি ইসি সচিবের কাছে পাঠানো হবে।