খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-কুয়েটে যেই অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হইতেছে, উহা হতাশাজনক। আড়াই মাস পর রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়টি খুলিলেও শিক্ষকরা শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন নাই। মঙ্গলবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে দেড় বৎসরের পরীক্ষাজটের মধ্যে রহিয়াছে; তাহার উপর সাম্প্রতিক অচলাবস্থা শিক্ষার্থীদের ক্ষতি বৃদ্ধি বৈ হ্রাস করিবে না। শিক্ষার্থীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করিবার যেই ঘোষণা দিয়াছেন, উহাও পরিস্থিতি জটিলতর করিয়া তুলিবে। শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমা প্রার্থনা করিবার পর শিক্ষক সমিতির পক্ষে উহা গ্রহণ করাই উচিত হইবে।
কুয়েটের অচলাবস্থার সূচনা হইয়াছে চলতি বৎসরের ১৮ ফেব্রুয়ারি। ঐ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ প্রশ্নে ছাত্রদলের সহিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংঘাতের অঘটন ঘটে। ইহার পর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়। বস্তুত উক্ত ঘটনার পর কুয়েট প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লইতে ব্যর্থ হয়। হামলাকারীদের শাস্তির আওতায় না আনিয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার এবং তাহাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়। যেই কারণে শেষ পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনের সূচনা করেন। এমনকি তাহারা আমরণ অনশন কর্মসূচিও পালন করিয়াছেন। অবশেষে কুয়েটের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে অব্যাহতি দিয়া সরকার অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ দিয়াছে।
প্রশ্ন হইল, কোন বিবেচনায় ‘অন্তর্বর্তী’ উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হইয়াছে? নিকট অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রকার নিয়োগের দৃষ্টান্ত আমরা দেখি নাই। ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যরূপে কুয়েট হইতেই স্বনামধন্য কোনো অধ্যাপককে এই দায়িত্ব দেওয়া যাইত, যাঁহার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ সম্পর্কে সম্যক ধারণা রহিয়াছে। ‘অন্তর্বর্তী’ সরকার ক্ষমতাসীন; তজ্জন্যই কি অন্য বিশ্ববিদ্যালয় হইতে ‘অন্তর্বর্তী’ উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হইয়াছে? বস্তুত সরকার চিন্তাভাবনা করিয়াই একজন পূর্ণাঙ্গ উপাচার্য নিয়োগ দিতে পারিত। যাহাই হউক, সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী উপাচার্য সোমবার পৃথকভাবে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগণের সহিত দীর্ঘ বৈঠক করিয়াছেন। উপাচার্যের আহ্বানে সাড়া দিয়া শিক্ষার্থীরা ক্ষমা প্রার্থনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং তদনুযায়ী সোমবার অপরাহ্ণ ৩টায় শিক্ষকদের নিকট ক্ষমা চাহিয়া শ্রেণি কার্যক্রম সূচনা করিতে উপাচার্যকে পত্রও দিয়াছেন। ইহার পর অপরাহ্ণে শিক্ষকদের সহিত উপাচার্যের বৈঠকের পরও বিদ্যমান সংকটের সমাধান না হওয়া হতাশাব্যঞ্জক।
অস্বীকার করা যাইবে না, শিক্ষকদের কটূক্তি ও লাঞ্ছনা করিয়া শিক্ষার্থীরা অন্যায় করিয়াছেন। কিন্তু যেহেতু তাহারা স্বীয় ভ্রান্তি উপলব্ধি করিয়া ক্ষমা প্রার্থনা করিয়াছেন; শিক্ষকদের উচিত হইবে উহা গ্রহণ করিয়া শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা। শিক্ষার্থীদের আরও দায়িত্বশীল হইয়া শ্রেণিকক্ষে মনোযোগী হওয়া জরুরি। তাহারা ঠুনকো অজুহাতে যেইভাবে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ করিয়া নানামুখী তৎপরতায় যুক্ত হন, উহা আদতে তাহাদেরই ক্ষতির কারণ। কথায় কথায় কর্মসূচি না দিয়া বরং শিক্ষক ও প্রশাসনের সহিত বৈঠক করিয়া সামাধানের চেষ্টাই শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকারে থাকা উচিত।
স্মরণে রাখিতে হইবে, অনতিবিলম্বে কুয়েটে শিক্ষা কার্যক্রম আরম্ভ না হইলে উহা যদ্রূপ সাত সহস্র শিক্ষার্থীকে বিপাকে ফেলিবে, তদ্রূপ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশও অস্থিতিশীল রাখিবে। বলিবার অপেক্ষা রাখে না, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন দীর্ঘতর হইলে উহা তাহাদের পরিবারেও সংকট তৈয়ার করিবে। সর্বোপরি দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক না হইলে উহা শিক্ষকদের জন্যও অমঙ্গলজনক হইতে পারে। সমকালের সহিত সাক্ষাৎকারে কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলিয়াছেন, তাহারাও দ্রুত শ্রেণিকক্ষে প্রত্যাবর্তন করিতে চাহেন। আমাদের বিশ্বাস, তাহাদের এই সদিচ্ছাকে কার্যে পরিণত করিয়া সংকট নিরসনে নিজেরাই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করিবেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপ চ র য ন য় গ দ শ ক ষকদ র কর য় ছ ন র সহ ত
এছাড়াও পড়ুন:
হাসপাতালে রোগীর ভিড়, মুখে নেই মাস্ক
গত বুধবার সকাল ৮টা। লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীর জটলা। সবাই চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করছেন। কারও মুখে মাস্ক নেই। আবার যে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে এবং চিকিৎসকরা যে সবাইকে মাস্ক পরে বাইরে বেরুতে বলেছেন, সে ব্যাপারে তাদের কোনো ধারণা নেই।
লক্ষ্মীপুর জেলায় ইতোমধ্যে ছয়জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও ওই রোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেই কর্তৃপক্ষের। নমুনা পরীক্ষার জন্য ব্যবস্থা নেই কিটের। আক্রান্তরা জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা হলেও সবার নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখান থেকে ছয়জনের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। আক্রান্তরা বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবু হাসান শাহীন ছয়জন আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, করোনা রোগীদের জন্য হাসপাতালে পৃথক কর্নার, নমুনা পরীক্ষা কিংবা প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিরও কোনো উদ্যোগ নেই। জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং সীমিত তদারকির কারণে ঝুঁকিতে রয়েছেন জেলার সাধারণ মানুষ। আক্রান্ত একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাঁর শরীরে জ্বর ছিল না, তবে প্রচণ্ড কাশি ছিল। আরও ছিল বুক ব্যথা, মাথা ব্যথা ও গলা ব্যথা। এসব উপসর্গের কারণে ঢাকায় চিকিৎসা নিতে গিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি শনাক্ত হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা পরীক্ষার জন্য কিট বা প্রয়োজনীয় উপকরণ গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পৌঁছায়নি। ফলে জেলাভিত্তিক নমুনা পরীক্ষা বা চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না বলে দাবি করেছেন লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. অরূপ পাল বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত করোনা পরীক্ষার জন্য কিটসহ আনুষঙ্গিক উপকরণ আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। রোগীরা মূলত ঢাকায় গিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত হচ্ছেন।’
এদিকে, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে কিছু সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হলেও তা খুবই সীমিত। দুইদিন মাইকিং করা হয়েছে, এরপর আর কোনো দৃশ্যমান তৎপরতা চোখে পড়েনি। জনসচেতনতা তৈরিতে ঘাটতি রয়েছে, মানুষজনের মধ্যে এখনও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না।
জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবু হাসান শাহীন বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে যেহেতু নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা ঢাকা থেকে হচ্ছে, তাই স্থানীয় পর্যায়ে শনাক্তে কিছুটা সময় লাগছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একজন আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেই শরীর ব্যথা নিয়ে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। তার নমুনা পাঠানো হয় ঢাকায় এবং সেখান থেকেই রিপোর্ট পজিটিভ আসে। বাকি আক্রান্তদের ক্ষেত্রেও একইভাবে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।’