গভীর রাতে পাকিস্তানে ভারতের হামলাকে কাপুরুষের কাজ হিসেবে বর্ণনা করে এর কড়া জবাব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।

শাহবাজ শরিফ তাৎক্ষণিক এক বিবৃতিতে বলেন, “বিশ্বাসঘাতক শত্রু পাকিস্তানের ভেতরে পাঁচটি স্থানে কাপুরুষোচিত হামলা চালিয়েছে। এই নিন্দনীয় আগ্রাসনের জবাব দেওয়া হবে।”

“অপ্ররোচিত ভারতীয় হামলার বিরুদ্ধে পাল্টা জবাব দেওয়ার পূর্ণ অধিকার পাকিস্তানের রয়েছে— একটি কঠিন জবাব দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: শিশুসহ ৭ জন নিহতের দাবি পাকিস্তানের

ভারতের হামলা: বিস্ফোরণে ঘুম ভেঙে যায় মুজাফফরাবাদের বাসিন্দাদের

তিনি আরো বলেন, “সমগ্র জাতি তার সশস্ত্র বাহিনীর পাশে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছে এবং আমাদের মনোবল ও সংকল্প অটুট রয়েছে। আমাদের প্রার্থনা ও সমর্থন পাকিস্তানের সাহসী সেনা ও অফিসারদের সঙ্গে আছে।”

“পাকিস্তানের জনগণ ও তার বাহিনী যেকোনো হুমকির মোকাবিলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত, আমাদের শক্তি ও দৃঢ়তা নিয়ে,” বলেন শাহবাজ শরিফ।

তিনি বলেন, “শত্রুকে তার অসৎ উদ্দেশ্য কখনোই বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।”

শাহবাজ শরিফ তার বিবৃতিতে পাঁচটি স্থানে ভারতের হামলার কথা বললেও নরেন্দ্র মোদি সরকার এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, হামলা হয়েছে ৯টি স্থানে। 

আইএসপিআর কর্মকর্তা শরিফ বলেছেন, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত হানা স্থাপনাগুলোর মধ্যে একটি মসজিদ রয়েছে। 

৭ মে পাকিস্তানের ভেতরে ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরে এই হামলা চালায় ভারতের সামরিক বাহিনী। এক বিবৃতিতে ভারত বলছে, পহেলাগামে হামলার সমুচিত জবাব দেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাসী স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে। কোনো বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়নি।

বিবিসি লিখেছে, ভারত সরকার বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান চালিয়েছে, যার লক্ষ্য পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অবস্থিত ‘সন্ত্রাসবাদী অবকাঠামো’, যেখান থেকে ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা ও হামলা পরিচালিত হচ্ছে।

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগামে ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন ২৬ জন, যাদের বেশিরভাগই পর্যটক। এই হামলায় পাকিস্তানের দায় দেখছে ভারত। নয়াদিল্লির অভিযোগ, সন্ত্রাসীদের মদদ দেয় ইসলামাবাদ। এর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে পাকিস্তান বরাবরই বলে আসছে, পহেলগাম হামলার সঙ্গে তাদের কোনো যোগসূত্র নেই। উপরন্তু, ভারতের কাছে কোনো প্রমাণ থাকলে তা দেখানোর চ্যালেঞ্জ দিয়েছে তারা।

সেই থেকে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। সেই উত্তেজনার মধ্যেই ৭ মে গভীর রাতে পাকিস্তানের ৯টি স্থানে হামলা করল ভারত। এখন পাকিস্তান কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায় বা জবাব দেয়, তারপর ওপর নির্ভর করছে বাকিটা।

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলার ঘটনাকে দুঃখজনক বলে বর্ণনা করে শিগগির তা বন্ধ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। 

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ভারত-পাকিস্তানের উভয়ের প্রতি সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

ঢাকা/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

অপারেশন সিঁদুর: ভারতীয় সেনাদের প্রশংসা করে কংগ্রেসের ঐক্যের ডাক

পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর (পিওকে) থেকে সন্ত্রাসবাদের সব উৎস নির্মূল করার জন্য ভারতের আপোষহীন নীতির প্রশংসা করেছে দেশটির প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এক প্রতিবেদনে বলেছে, পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় বুধবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করায় ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে স্বাগত জানিয়েছে কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলো।

হামলার কয়েক ঘণ্টা পরে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী বলেন, “আমাদের সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে গর্বিত। জয় হিন্দ!”

আরো পড়ুন:

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক অভিযানের নাম ‘সিঁদুর’ কেন? 

সন্ত্রাসবাদের প্রতি বিশ্বকে শূন্য সহনশীলতা দেখাতে হবে: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এক্স-এ এক পোস্টে লিখেন, “পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর থেকে উদ্ভূত সকল ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের একটি অটল জাতীয় নীতি রয়েছে। আমরা আমাদের ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর জন্য খুবই গর্বিত, যারা পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রত কাশ্মীরের সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালিয়েছে। আমরা তাদের দৃঢ় সংকল্প এবং সাহসকে সাধুবাদ জানাই।”

খাড়গে বলেন, “পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার দিন থেকে, কংগ্রেস স্পষ্টভাবে সীমান্ত পার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যেকোনো সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সশস্ত্র বাহিনী এবং সরকারের সাথে দাঁড়িয়েছে।” 

তিনি আরো বলেন, “এখন জাতীয় ঐক্য ও সংহতি প্রয়োজন। কংগ্রেস সশস্ত্র বাহিনীর পাশে রয়েছে। জাতীয় স্বার্থ আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।”

সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) নেতা একই রকম মন্তব্য করেছেন এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করেছেন।

যাদব বলেন, “ভারত, ভারতবাসী ও ভারতীয় সেনাবাহিনী আমাদের দেশে কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদকে কখনো সহ্য করেনি এবং কখনো করবেও না।”

তিনি বলেন, “ভারতীয় সেনাবাহিনী সমসময় মায়েদের গর্ভ, বোনের কব্জি এবং তাদের কপালে সিঁদুর রক্ষা করেছে।”

যাদব বলেন, “আমরা সত্য, অহিংসা ও শান্তিতে বিশ্বাসী মানুষ। আমরা ভারতীয়রা কখনও অন্যায় করি না, কিন্তু যদি কেউ আমাদের সাথে অন্যায় করে তবে আমরা তা সহ্য করি না। যারা সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করে তারা যদি আমাদের ঐক্য, অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বের উপর আক্রমণ করে, তাহলে আমরা জানি কিভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে হয় এবং উপযুক্ত জবাব দিতে হয়। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে ১৪০ কোটি ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং সরকারের পাশে রয়েছে।”

সশস্ত্র বাহিনীর ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ কে স্বাগত জানিয়েছেন সর্বভারতীয় মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসিও।

তিনি বলেন, “পাকিস্তানে সন্ত্রাসী আস্তানাগুলোতে আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীর পরিচালিত সার্জিক্যাল স্ট্রাইককে আমি স্বাগত জানাই। পাকিস্তানকে অবশ্যই একটি কঠিন শিক্ষা দিতে হবে যাতে আরেকটি পহেলগাম আর কখনো না ঘটে। পাকিস্তানের সন্ত্রাসী অবকাঠামো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে হবে। জয় হিন্দ!”

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রত্যক্ষ প্রতিক্রিয়া হিসেবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, “মঙ্গলবার রাতে, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিচালনা করে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের সন্ত্রাসী অবকাঠামোতে হামলা করেছে, যেখান থেকে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা এবং নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ