‘বাঘ-কুমিররে ভয় পাইনি, মানুষের ভয়ে আমাগের সুন্দরবন ছাড়তি হলো’
Published: 7th, May 2025 GMT
ছোট্ট একটি ডিঙিনৌকায় গাদাগাদি করে সব জিনিসপত্র রাখা। নৌকার মাথায় টিনের চুলায় হাঁড়িতে ডাল-আলুর তরকারি রান্না করছেন ষাটোর্ধ্ব অহেদ আলী গাজী। কাঠের খুন্তি দিয়ে সামান্য তরকারি হাতে নিয়ে চেখে দেখলেন, লবণ ঠিকঠাক হয়েছে কি না।
নৌকার আরেক মাথায় বসে লম্বা দড়িতে কাঁকড়া শিকারের বড়শি বাঁধছিলেন জেলে রশিদ মোড়ল। তিনি বলেন, ‘এই নৌকাতেই আমাগের খাওয়াদাওয়া, ঘুম সবই চলে। আমরা দুজন প্রায় ১০ বছর একসঙ্গে জঙ্গলে যাই কাঁকড়া ধরতে। কিন্তু এইবার আর বনে না গিয়ে আইছি লোকালয়ের নদীতে। কারণ, সুন্দরবন এখন ডাকাইত ভরা। গত মাসে আমরা দুজন ডাকাইতের হাত থেকে কোনো রকমে বাঁইচে ফিরছি, সেই থেকে আর ভয়ে জঙ্গলে যাইনি।’
সোমবার বিকেলে খুলনার কয়রা উপজেলার মদিনাবাদ গ্রামসংলগ্ন কপোতাক্ষ নদের তীরে কথা হয় তাঁদের সঙ্গে। বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগরের সুন্দরবনঘেঁষা নীলডুমুর গ্রামে।
আলাপচারিতায় বনজীবনের নানা গল্পের ফাঁকে অহেদ আলী বললেন, ‘সুন্দরবনের একেবারে পাশের এলাকার মানুষ আমরা। ছোটবেলা থেকেই জঙ্গলে যাই। বাঘ–কুমিররে কোনো দিন ভয় পাইনি। অথচ মানুষের ভয়ে আমাগের জঙ্গল ছাড়তি হলো। তিন দিন ধরে কপোতাক্ষ নদে দোন বড়শি (লম্বা শক্ত দড়ি) পাইতে কাঁকড়া শিকার করছি। এখানে বেশি কাঁকড়া পাইনি, তয় যা পাইছি, তাই নিয়ে আগামীকাল বাড়ি যাব।’
রশিদ মোড়ল নদীর পানিতে হাত ধুয়ে নৌকার পাটাতনে বসে বললেন, ‘গত মাসের শুরুর দিকে আমরা দুজন নৌকা নিয়া সুন্দরবনের বেশ গভীরে গিয়েছিলাম। পরদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ ডাকাতদের সামনে পড়ি। ডাকাতরা আমাকে জিম্মি করে তাদের নৌকায় তুলে নেয়। অহেদ ভাই কোনোরকমে পালিয়ে বাড়ি চলে যান। আমি টানা চার দিন বন্দুকধারী দস্যুদের হাতে জিম্মি ছিলাম। পরে বাড়ির লোকজন বিকাশে ৩০ হাজার টাকা পাঠায়, তখন ছাড়ে। সেদিন মনে মনে কইছি, এইবার কোনোরকমে বাঁইচে আসতি পারলি, আর বনে যাইবি না।’
চুলা থেকে তরকারির হাঁড়ি নামিয়ে অহেদ আলী বলেন, ‘দোন বড়শি পেতে কাঁকড়া ধরতে ধরতে নীলডুমুর থেকে কয়রায় আইসে পড়ছি। নৌকা বেয়ে এই পর্যন্ত আসার মানে বোঝেন? পুরো দুই জোয়ার সময় লাগছে। এইখানে কাঁকড়াও বেশি পাইনি। তা–ও ডাকাত নেই, নিশ্চিতে আছি। সেদিন ডাকাতদের নিষ্ঠুর আচরণ দেখে মনে মনে বলেছিলাম, কোনোরকমে এইবার বাঁইচে আসতি পারলি আর সুন্দরবনে যাব না।’
কপোতাক্ষ নদ থেকে মাছ ধরছে জেলেরা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন দরবন
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনে অস্ত্রসহ আসাবুর বাহিনীর ২ সহযোগী আটক
সুন্দরবনে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ বনদস্যু আসাবুর বাহিনীর দুই সহযোগীকে আটক করেছে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন, মোংলা।
আটককৃতদের সংরক্ষণে থাকা ৩টি একনলা বন্দুক, ১০ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, ৫ রাউন্ড ফাঁকা কার্তুজ এবং অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।
বুধবার (৬ আগস্ট) সকালে কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক এ তথ্য জানান। এর আগে মঙ্গলবার বিকালে তাদেরকে আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন- মো. বাদশা গাজী (৪৫) ও মেহেদী হাসান (২৭)। তারা খুলনা জেলার পাইকগাছা থানার বাসিন্দা।
কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক বলেন, “গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সুন্দরবনের দস্যু আসাবুর বাহিনীর সদস্যরা ডাকাতির উদ্দেশ্যে সুন্দরবনের শিবসা নদী সংলগ্ন শরবতখালী এলাকায় গমন করবে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে ওই এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। কোস্টগার্ডের উপস্থিতি টের পেয়ে দস্যুরা পালানোর চেষ্টা করে। তখন কোস্টগার্ড সদস্যরা ২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরবর্তীতে ওই এলাকা তল্লাশি করে ৩টি একনলা বন্দুক, ১০ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, ৫ রাউন্ড ফাঁকা কার্তুজ এবং অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামাদিসহ সুন্দরবনের কুখ্যাত ডাকাত আসাবুর বাহিনীর দুই সহযোগীকে আটক করা হয়।”
তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে আটক ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে কুখ্যাত ডাকাত আসাবুর বাহিনীর সঙ্গে ডাকাতি এবং ডাকাত দলকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও রসদ সরবরাহের মাধ্যমে সহযোগিতা করে আসছিল। সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে কোস্ট গার্ড ভবিষ্যতেও এধরনের অভিযান অব্যাহত রাখবে বলে জানান তিনি।
ঢাকা/শহিদুল/এস