পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও ভারতে গোলাবর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা। দুই দেশের উত্তেজনাকর অবস্থা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে বাংলাদেশ। পরিস্থিতি যাতে খারাপের দিকে না যায়, সে জন্য দু’পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবার বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের এই অবস্থান জানায়।  

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, আঞ্চলিক শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার চেতনায় কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমিত হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ। আর তা হবে এ অঞ্চলের জনগণের শান্তি ও কল্যাণের জন্য।

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যে গতকাল বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.

তৌহিদ হোসেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান বৈঠকে বসেন। সে বৈঠক ভারত-পাকিস্তান প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা, জানতে পারেনি সমকাল। তবে সভা শেষে ড. খলিলুর রহমান ভারত-পাকিস্তান নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান পড়ে শোনান।

এদিকে, দুই দেশের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ নয়, শান্তিপূর্ণ সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে সামরিক হামলার নিন্দা জানিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

তারেক রহমান লেখেন, ‘প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা সামরিক হামলার নিন্দা এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে সংযম প্রদর্শন এবং সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাই। অভিন্ন স্বার্থ ও আকাঙ্ক্ষার ওপর নির্মিত একটি স্থিতিশীল এবং শান্তিপূর্ণ অঞ্চল সবার সর্বোত্তম স্বার্থে কাজ করে।’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার মতো ঘটনা কারও জন্য মঙ্গলজনক হবে না। এ ঘটনার গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক তদন্ত হওয়া উচিত। উভয় পক্ষকেই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন। দিনশেষে যুদ্ধ কারও জন্যই কল্যাণকর নয়। বিবৃতিতে কাশ্মীরবাসীর সমস্যার স্থায়ী সমাধান আন্তরিকভাবে কামনা করেছে দলটি।

এদিকে, পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল এক বিবৃতিতে দলটি বলেছে, এ হামলা দুই দেশের মধ্যকার চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিকে আরও ঘনীভূত করে যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি করেছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতায় সরাসরি আঘাত। উভয় পক্ষকে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতির স্বার্থে ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে দলটি। 

দলটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতে অবস্থান করা পলাতক ফ্যাসিবাদী ও গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের হাজারো নেতাকর্মী বাংলাদেশের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। এই দুর্বৃত্ত গোষ্ঠী বিদ্যমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে অস্থিরতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টিতে চক্রান্তে লিপ্ত। তারা সীমান্তে অনুপ্রবেশ ও নাশকতার মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিকদের জানমালের ক্ষতিসাধনে সক্রিয় রয়েছে। সরকার ও সার্বভৌমত্ব রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি এনসিপি সীমান্তে নজরদারি ও সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। 

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক গতকাল রাতে ভারত থেকে পাকিস্তানের কয়েকটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ, বেসামরিক নাগরিকদের হতাহত করা এবং যুদ্ধ-উন্মাদনা পরিস্থিতিতে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই যুদ্ধ-উন্মাদনা দুই দেশের জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। উল্টো এই যুদ্ধের বলি হবে উভয় দেশের সাধারণ মানুষ।

ভারত থেকে পুশইন করা ঠিক নয়

গতকাল বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের পর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বলেন, ভারত সীমান্ত দিয়ে পুশইনের খবর আমরাও পাচ্ছি। প্রতিটি ঘটনা আলাদাভাবে নিরক্ষণ করছি। আমরা শুধু বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রমাণসাপেক্ষে গ্রহণ করব। আর এ প্রক্রিয়া হতে হবে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে। এভাবে পুশইন করাটা ঠিক নয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র ল র রহম ন পর স থ ত উপদ ষ ট র জন য অবস থ গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

রংপুরে গণপিটুনিতে ২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা

রংপুরের তারাগঞ্জে গণপিটুনিতে দুইজন নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। নিহত রুপলালের স্ত্রী ভারতী রানী বাদী হয়ে রবিবার (১০ আগস্ট) দুপুরে অজ্ঞাত ৭০০ জনের বিরুদ্ধে তারাগঞ্জ থানায় মামলা করেন। 

এদিকে, ওই ঘটনার প্রতিবাদে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বেলতলী এলাকায় রুপলালের মরদেহ নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। ফলে সড়কের দুই দিকে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। আন্দোলনকারীরা দ্রুত আসামিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।  

স্থানীয় সমাজসেবক সাবু খান বলেন, “রুপলাল নিরপরাধ। তাকে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। তিনি বাঁচার জন্য অনেক আকুতি করেছেন। নিজেকে পুলিশ বা সেনাবাহিনীর কাছে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কেউ তার কথা শোনেনি। তাকে হত্যা করেছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।”

আরো পড়ুন:

পাবনার সেলিম গাজীপুরে এসে হন স্বাধীন, পাল্টান বাবার নামও

মুরগির ডাক শুনে ঘরের দরজা খুলতেই খুন হন জসীম

ঘনিরামপুর এলাকার বাসিন্দা নান্নু মিয়া বলেন, “আমরা রুপলাল হত্যার বিচার চাই। আসামিদের দ্রুত শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটনোর সাহস অন্য কেউ না পান।”

তারাগঞ্জ পূজা উদযাপন কমিটি সাধারণ সম্পাদক পাপন দত্ত বলেন, “২৪ ঘণ্টার মধ্যে রুপলাল ও প্রদীপ লালের হত্যাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আতে হবে।”

নিহত রুপলালের স্ত্রী ভারতী রানীর দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, তারাগঞ্জ বাজারে রুপলাল রবিদাস জুতা সেলাই করতেন। গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মিঠাপুকুরের ছরান বালুয়া এলাকা থেকে ভাতিজি জামাই প্রদীপ লালকে নিয়ে ভ্যানে করে বাড়ি ফেরার পথে সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট বটতলা মোড়ে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি তাদের পথরোধ করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। 

এরই একপর্যায়ে সন্দেহভাজনরা প্রদীপ লালের কালো ব্যাগ তল্লাশি করে ‘স্পিড ক্যানের’ বোতলে দুর্গন্ধযুক্ত পানীয় ও কিছু ওষুধ পান। বোতলের ঢাকনা খোলার পর দুর্গন্ধে বুড়িরহাট এলাকার মেহেদী হাসানসহ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে উত্তেজিত হয়ে রুপলাল ও প্রদীপ লালকে বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে মাঠে নিয়ে প্রায় ৫০০-৭০০ জন লোক লাঠি ও লোহার রড দিয়ে মারধর শুরু করে। 

এক পর্যায়ে তাদের কান দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করে। তাদের তারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক রুপলালকে মৃত্য ঘোষণা করেন। প্রদীপ লালকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির জন্য পাঠান। সেখানে প্রদীপ লাল ভোর ৪টায় মারা যান। 

এলাকাবাসী জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল ও হাসপাতাল থেকে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রুপলালের লাশ বাড়িতে পৌঁছায়। এরপর তার মরদেহ নিয়ে মহাসড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী।

এ সময় সড়কের দুই পাশে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঘটনাস্থলে যায় সেনাবাহিনীর একটি টিম। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামি গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে, মরদেহ নিয়ে সড়ক থেকে সরে যান বিক্ষোভকারীরা।

তারাগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুক বলেন, “নিহত রুপলালের স্ত্রী ভারতী রানী বাদী হয়ে রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ৫০০ থেকে ৭০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তদন্ত চলছে। কিছু আলামত পেয়েছি, সেগুলো যাছাই বাছাই চলছে।’

ঢাকা/আমিরুল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ