ইসলামের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ
Published: 8th, May 2025 GMT
মদিনার মসজিদে নববিতে সূর্যের আলো এসে পড়েছে। একদল সাহাবা জড়ো হয়েছেন, তাঁদের কণ্ঠে ন্যায়বিচারের দাবি। তাঁরা খলিফার কাছে তাঁদের অভিযোগ তুলে ধরছেন, কিন্তু তাঁদের হাতে তরবারি নেই—আছে কোরআন। এই দৃশ্য ইসলামি ইতিহাসের একটি চিরন্তন ছবি। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, যা মুসলিম সমাজের ন্যায়বিচার ও জনকল্যাণের প্রতি অঙ্গীকারের প্রতীক, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিভিন্ন রূপে প্রকাশ পেয়েছে। মিছিল, সংলাপ, প্রতীকী অভিযোগ, মসজিদে সমবেত দোয়া—এসব ছিল মুসলিমদের অধিকার আদায়ের শান্তিপূর্ণ অস্ত্র। এই প্রবন্ধে আমরা ইসলামের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের ধর্মীয় শিকড়, খেলাফতের যুগে এর প্রাথমিক রূপ এবং এর সামাজিক তাৎপর্য অনুসন্ধান করব।
ন্যায়ের জন্য কথা বলার আহ্বান
ন্যায়বিচার ইসলামের মূল শিক্ষার অন্যতম। কোরআন বলে, ‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর জন্য ন্যায়ের সাক্ষী হও, যদিও তা তোমাদের নিজেদের বা তোমাদের পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে যায়।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১৩৫)
এই আয়াত মুসলিমদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে উৎসাহিত করে, এমনকি তা শাসকের বিরুদ্ধে হলেও। মহানবী (সা.
রাশিদুন খলিফারা এই শিক্ষাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন। আবু বকর সিদ্দিক (রা.) খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পর মদিনার মসজিদে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমি তোমাদের দায়িত্বে নিযুক্ত হয়েছি, কিন্তু আমি তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম নই। যদি আমি ভালো করি, তবে আমাকে সাহায্য করো; আর যদি আমি ভুল করি, তবে আমাকে সংশোধন করো।’ (ইমাম মালিক, মুয়াত্তা, ২/৮৮১, বৈরুত: দারুল কুতুব, ১৯৮৫)
এই বক্তব্য জনগণকে শাসকের তদারকি ও সংশোধনের অধিকার দিয়েছিল। ইমাম মালিক (৭১১-৭৯৫ খ্রি.) বলেন, ‘এই শর্ত ছাড়া কেউ ইমাম হতে পারে না।’ (আল-কুরতুবি, তাফসিরুল কুরতুবি, ৫/২১২, কায়রো: দারুল কুতুব, ১,৯৬৪)
এই ধর্মীয় শিকড় মুসলিম সমাজে প্রতিবাদের সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করেছিল। প্রতিবাদ ছিল ‘আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার’ (ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে বাধা দেওয়া)-এর অংশ, যা মুসলিমদের ধর্মীয় দায়িত্ব।
আরও পড়ুনসাবধানী মানুষের নয়টি গুণ০৭ মে ২০২৫খিলাফত যুগে প্রতিবাদের প্রথম রূপ
খিলাফতের যুগে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বিভিন্ন রূপে প্রকাশ পেয়েছে। এটি কখনো সংলাপ, কখনো সমাবেশ, আবার কখনো প্রতীকী অভিযোগের মাধ্যমে। এই প্রতিবাদগুলো শাসক ও জনগণের মধ্যে একটি গতিশীল সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। এখানে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা তুলে ধরা হলো:
উমরের (রা.) সংলাপ: মদিনার রাস্তায় খলিফা উমর বিন খাত্তাব (৫৮৪-৬৪৪ খ্রি.) হাঁটছেন। তিনি সাহাবি মুহাম্মদ বিন মাসলামার (মৃ. ৬৬৬ খ্রি.) সঙ্গে দেখা করেন এবং জিজ্ঞাসা করেন, ‘তুমি আমাকে কেমন দেখো?’ মুহাম্মদ (রা.) ছিলেন স্পষ্টভাষী। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাকে শক্তিশালী, ন্যায়পরায়ণ ও বিশুদ্ধ ব্যক্তি হিসেবে দেখি। তবে আপনি যদি বিচ্যুত হন, আমরা আপনাকে সংশোধন করব, যেমন তীরকে সোজা করা হয়।’ উমর (রা.) হাসলেন এবং বললেন, ‘আল্লাহর প্রশংসা, যিনি আমাকে এমন জাতির মধ্যে রেখেছেন, যারা আমার ভুল সংশোধন করে।’ (ইমাম জাহাবি, তারিখুল ইসলাম, ৩/১২৫, দামেস্ক: দারুল কুতুব, ১৯৮৭)
উসমানের (রা.) সময় প্রতিবাদ: উসমান বিন আফফানের (৫৭৬-৬৫৬ খ্রি.) শাসনামলে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ তাঁর কিছু নীতি এবং কয়েকজন প্রশাসকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। মদিনায় একদল প্রতিনিধি তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। উসমান (রা.) প্রাথমিকভাবে এই প্রতিবাদের অধিকার স্বীকার করেন এবং সাহাবাদের হস্তক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আমি চাই না কেউ আমার জন্য রক্তপাত করুক।’ (ইবনে কাসির, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৭/২১৮, দামেস্ক: দারুল ফিকর, ১৯৮৮)
উমাইয়া যুগে প্রতিবাদ: উমাইয়া শাসনকালে মুয়াবিয়া বিন আবি সুফিয়ান (৬০২-৬৮০ খ্রি.) তাঁর পুত্র ইয়াজিদের জন্য উত্তরাধিকার নির্ধারণ করেন, যা সাহাবাদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়ে। আবদুর রহমান বিন আবু বকর (মৃ. ৬৬৬ খ্রি.) মসজিদে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘এটি আবু বকর বা উমরের পদ্ধতি নয়, বরং হেরাক্লিয়াস বা কায়সারের পদ্ধতি।’ (ইবনে হাজার আল-আসকালানি, আল-ইসাবা ফি তাময়িজিস সাহাবা, ৪/১৮৩, বৈরুত: দারুল কুতুব, ১৯৯৫)
আরও পড়ুন সুরা তাহরিমে রয়েছে মানুষের জন্য কিছু শিক্ষা০২ জুন ২০২৪একটি গতিশীল সমাজ
ইসলামের ইতিহাসে প্রতিবাদ মুসলিম সমাজের গতিশীলতা ও সংগঠিত কাঠামো প্রকাশ করে। মুসলিম সমাজ ঐক্য, সংঘ ও সম্প্রদায়ের মাধ্যমে সংগঠিত ছিল, যা শাসকদের একক আধিপত্য কঠিন করে তুলেছিল। উলামা ও সুফি সাধকেরা জনগণের সঙ্গে একাত্ম হয়ে প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিতেন। ইতিহাসের সেই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের ঐতিহ্য আজও প্রাসঙ্গিক। তবে আধুনিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আমরা দেখি, মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের অধিকার দাবি ঠিকই করে, কিন্তু মুসলিম শাসকেরা সব সময় সহনশীল থাকেন না, বরং অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সহিংস উপায়ে দমন করেন। মহানবী (সা.) ও রাশিদুন খলিফারা যেখানে জনগণকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে উৎসাহিত করেছেন, সেখানে মুসলিম শাসকেরা এখন বহুক্ষেত্রে বাক্স্বাধীনতা সীমিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ফলে এখন করা প্রতিবাদগুলো মুসলিম সমাজের গতিশীলতা ও ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি আদায় করতে ব্যর্থ হয়।
আল–জাজিরা ডট নেট অবলম্বনে
আরও পড়ুনপার্থিব জাঁকজমক যেন আধ্যাত্মিকতার বাধা না হয়০৭ মে ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসল ম র র জন য গত শ ল মসজ দ
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জের কদম রসুল সেতু হবে আশীর্বাদ না অভিশাপ?
অনেক দেশেই একটা কথার প্রচলন আছে, প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়ালে যেখানে নদী বা খাল নেই, সেখানেও তিনি একটা সেতু বানানোর প্রতিশ্রুতি দেন। এ রকমটি আমাদের দেশে হরহামেশা হয়ে থাকে। একবার প্রথম আলোতে এই সেতু নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় তুঘলকি কাণ্ডের একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
দুই পাতার বিশেষ ক্রোড়পত্র। খালের ওপর সেতু তৈরি হয়েছে, তাতে ওঠা বা নামার ব্যবস্থা নেই। ফসলের মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে সেতু, আশপাশে কোনো খাল-বিল নদী কিছু নেই। আবার কোথাও সেতু তৈরি হয়েছে, তাতে ওঠা বা নামার পথ নেই, কিন্তু স্থানীয় জনতা বাঁশ দিয়ে নিজেরাই র্যাম্প বানিয়ে নিয়েছেন। এ রকম চিত্র আমাদের কষ্ট করে খুঁজতে হয় না, চলতে-ফিরতেই চোখে পড়ে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে দেখেছি, ব্যক্তি বিশেষের অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে কীভাবে প্রকল্প-মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন নতুন প্রকল্পের উদ্ভাবন করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা হয়েছে প্রকল্প।
এসব প্রকল্পের অধিকাংশের যথাযথ সমীক্ষা ছিল না। অপরিকল্পিত এসব প্রকল্পে ছিল টাকার শ্রাদ্ধ। বিভিন্ন বাহানায় প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা। মেয়াদ বৃদ্ধি মানে বাজেট বৃদ্ধি। এই সবকিছুকে উন্নয়ন বলে চালানো হয়েছে। এর অধিকাংশই জনগণের কোনো কাজে আসেনি।
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে অনেকগুলো প্রকল্প চলমান রয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এসব প্রকল্পের দায়িত্বে রয়েছে। এসব প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এবং এর পরবর্তী বাস্তবতা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এর একটি হচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিতব্য কদম রসুল সেতু।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় এই সেতুর অবস্থান। নগরাঞ্চলে শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়কে যুক্ত করার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু। এই সেতুকে নারায়ণগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নও বলা চলে। কিন্তু এই সেতুর নকশা তৈরিতে বড় ধরনের ত্রুটি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
এই ত্রুটি এখনই যে তৈরি হয়েছে, তা নয়। এই ত্রুটিপূর্ণ নকশা নিয়েই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন পার করেছে। এখন জনসমক্ষে প্রকল্পটি উন্মুক্ত হওয়ায় ত্রুটিটি জনগণের নজরে এসেছে। জনগণ যেহেতু এসব প্রকল্পের অংশীজন, তাই এমন প্রকল্প গ্রহণের শুরুতে তাঁদের মতামত নেওয়া গেলে বা বিষয়টি অবগত করে তাঁদের তাতে যুক্ত করা গেলে শুরুতেই ত্রুটি চিহ্নিত করা যেত।
পশ্চিম পাড়ের মুখটি পরিবর্তন করে দ্রুত সেতুর কাজ শুরু করাটা জরুরি। এই পরিবর্তন করতে গিয়ে প্রকল্প যাতে বিঘ্নিত বা বিলম্বিত না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এমনিতেই ভুল নকশা নিয়ে বহু সময় পার করা হয়েছে। এখনই এ বিষয়ে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করছি।এ সেতুটি নির্মাণের দায়িত্বে যৌথভাবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ৭৩৫ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি ২০১৭ সালে একনেকে অনুমোদিত হয়। কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮ সালে। এর মেয়াদ ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেতুটির পূর্ব পাড়ের র্যাম্প-স্পট (নামার মুখ) বন্দর উপজেলার সিএসডি অঞ্চল এবং পশ্চিমাংশের র্যাম্প শহরের নারায়ণগঞ্জ কলেজের সামনে। নারায়ণগঞ্জ কলেজটি শহরের অত্যন্ত ব্যস্ততম সড়ক নবাব সিরাজউদ্দৌলা সড়কে অবস্থিত।
এর উত্তর পাশে শহরের বৃহত্তর স্কুল নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুল এবং কলেজ ঘেঁষে শহরের সবচেয়ে বড় বাজার দিগুবাবুর বাজারে প্রবেশমুখ। ব্রিটিশ শাসনামল থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরে রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট, বাস টার্মিনাল একই জায়গায় অবস্থিত। এবং সেখানে যাওয়ার এটিই যেমন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, আবার দেশের বৃহত্তর রং ও সুতার বাজার টানবাজারে যাওয়ার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এখানেই রয়েছে রেলক্রসিং। যার ফলে বিভিন্ন সময় এখানে দুর্ঘটনায় অনেকের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে এ সড়কটিতে লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত। ১ নম্বর রেলগেট থেকে পুরো সিরাজউদ্দৌলা সড়কটিতে প্রতিনিয়ত প্রচণ্ড ট্রাফিক থাকে।
নারায়ণগঞ্জে অপরিকল্পিত নগরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে এখানে গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিত পরিবহনব্যবস্থা। ১৮৮৫ সালে নারায়ণগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত রেলব্যবস্থা চালু হলে যাতায়াতের সুব্যবস্থার কারণে নারায়ণগঞ্জ সে সময় পূর্ববঙ্গের সিংহদ্বারে পরিণত হয়েছিল। গোয়ালন্দ থেকে স্টিমারে নারায়ণগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ থেকে রেল বা সড়কপথে ঢাকা বা অন্যান্য জায়গায় যাওয়া যেত। কিন্তু আজকে ১৪০ বছর পর এই যোগাযোগব্যবস্থা জনদুর্ভোগের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আর এ জন্যই কদম রসুল সেতুর নকশা প্রণয়নে এলাকার বাস্তবতা, ট্রাফিক প্রভাব নিরূপণে যথাযথ সমীক্ষা তৈরির ক্ষেত্রে ত্রুটি রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই সেতু দিয়ে ঘণ্টায় কত যান চলাচল করবে এবং তার ধারণ সক্ষমতা এই সড়কের কতটুকু রয়েছে, তা এই প্রকল্পের নকশা তৈরির ক্ষেত্রে সঠিকভাবে গুরুত্ব পায়নি। বর্তমান অবস্থায় সেতু থেকে সড়কে গাড়ি নামার কোনো বাস্তবতা নেই।
১ নম্বর রেলগেটের কাছেই রয়েছে বন্দর খেয়াঘাট। প্রতিদিন এই বন্দর খেয়াঘাট দিয়ে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে দেড় লাখ লোক যাতায়াত করে। এই সংখ্যার ৬০ শতাংশ যদি সেতু ব্যবহার করে, তা হলে সেতু ও সড়কে তার প্রভাব কতটা পড়বে, যথাযথ সমীক্ষা করে তা বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল।
এই শহরে আজ সাড়ে ৯ লাখ মানুষের বসতি। যদি বর্তমান হাড়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়, তা হলে আগামী ১০০ বছরে এই সংখ্যা দাঁড়াবে এক কোটির বেশি। এ ধরনের প্রকল্প অন্তত ১০০ বছর সামনে রেখে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু রাজনীতি ও আত্মস্বার্থ যখন গুরুত্বপূর্ণ হয়, তখন আর কোনো কিছু বিবেচনায় থাকে না। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।
বিষয়টিতে মনে হচ্ছে যেনতেনভাবে একটা সেতু বানিয়ে দিলেই কাজ সারা হয়ে গেল। এটি জনগণের কাজে লাগুক আর না লাগুক, কিচ্ছু যায় আসে না। বর্তমান নকশায় এই সেতুর মুখ যেভাবে আছে, সেভাবে বাস্তবায়িত হলে এটি উপকার তো নয়ই, বরং স্থায়ীভাবে নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য বড় ধরনের দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠবে। সেতুটি নারায়ণগঞ্জের জন্য আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে।
পশ্চিম পাড়ের মুখটি পরিবর্তন করে দ্রুত সেতুর কাজ শুরু করাটা জরুরি। এই পরিবর্তন করতে গিয়ে প্রকল্প যাতে বিঘ্নিত বা বিলম্বিত না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এমনিতেই ভুল নকশা নিয়ে বহু সময় পার করা হয়েছে। এখনই এ বিষয়ে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করছি।
রফিউর রাব্বি আহ্বায়ক, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক আন্দোলন