‘ছেলের বউয়ের নির্যাতনে আমরা অতিষ্ঠ। তাই আমার সোনার ছেলে প্রাণ দিয়েছে। আমি সন্তান হারিয়েছি। এ শোক সইতে পারছি না। এর বিচার করতে হবে।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় লাশ উদ্ধার হওয়া র‍্যাবের কর্মকর্তা পলাশ সাহার মা আরতী সাহা। 

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পলাশ সাহার মরদেহ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তাড়াশি গ্রামে পৌঁছায়। সেখানে গার্ড অব অনার ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দুপুরে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

গোপালগঞ্জ-পয়সারহাট সড়কে কোটালীপাড়ার তাড়াশী বাসস্ট্যান্ডে দক্ষিণ পাশে পলাশ সাহার বাড়ি। তিনি তারাশী গ্রামের মৃত বিনয় কৃষ্ণ সাহার ছেলে। পাকা মেঝের টিনশেড ঘরের সামনে বসে আহাজারি করছিলেন পলাশের বড় বোন রমা সাহা, মেজ ভাই নন্দলাল সাহা ও বড় ভাই লিটন সাহার স্ত্রী। 

নন্দলাল সাহা বলেন, চার ভাইবোনের মধ্যে পলাশ ছিলেন সবার ছোট ও আদরের। কোটালীপাড়া থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে। পাড়াশোনা শেষ করে সাব-রেজিস্ট্রার পদে শুরু করে কর্মজীবন। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক, ৩৬তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডার ও ৩৭তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ পায়। পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশে দায়িত্ব পালন করে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর তাকে র‍্যাবে পাঠানো হয়। তারপর থেকে পলাশ সেখানে কর্মরত ছিলেন।

তিনি বলেন, দুই বছর আগে ফরিদপুর বাসস্ট্যান্ড–সংলগ্ন চৌধুরীপাড়ার সুস্মিতা সাহার সঙ্গে বিয়ে হয় পলাশের। বিয়ের ৬ মাস পর থেকে সংসারে নানা অশান্তি শুরু হয়।

নন্দলাল সাহা, পলাশ চেয়েছিল কর্মস্থল চট্টগ্রামে মা‌ ও স্ত্রীকে নিয়ে একসঙ্গে থাকতে। কিন্তু তার স্ত্রী তা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না। মা বাসায় না থাকতে চাইলে পলাশ কষ্ট পেত। মা বাসায় থাকলে স্ত্রী সহ্য করতে পারত না। এ নিয়ে ঝামেলা লেগেই থাকত। ভাই চলে গেল, আমাদের সব‌কিছু শেষ হয়ে গেল। 

নন্দলালের অভিযোগ, আত্মহত্যা প্ররোচনা করেছে পলাশের স্ত্রী সুস্মিতা সাহা। আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে তার বিচার চাই।

বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ে র‍্যাব–৭ ক্যাম্পে অভিযানের প্রস্তুতি চলছিল। এ জন্য নিজের কক্ষে যান পলাশ সাহা। তখন সহকর্মীরা গুলির শব্দ শুনে ছুটে গিয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে দেখতে পান। তার রক্তাক্ত মরদেহের পাশে একটি চিরকুট পড়ে ছিল। এতে তার মৃত্যুর জন্য নিজেই দায়ী বলে উল্লেখ করেন।

চিরকুটে লেখা ছিল, ‘আমার মৃত্যুর জন্য মা এবং বউ কেউ দায়ী না। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তাঁরা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা আছে, তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কো–অর্ডিনেট করে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পল শ স হ

এছাড়াও পড়ুন:

আওয়ামী লীগের দুজনকে ছাড়াতে ওসিকে যুবদল নেতার হুমকি, ‘আপনার রিজিক উঠে গেছে’

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলায় পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ‘আওয়ামী লীগের কর্মী’ দুই ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে নিতে এসে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে যুবদলের এক নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ওসির উদ্দেশে যুবদল নেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি মানুষ চিনেন নাই। আপনার এখানে রিজিক নাই, রিজিক উঠে গেছে।’

ওই যুবদল নেতার নাম নাজমুল হুদা ওরফে মিঠু। তিনি পাশের পীরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতি। পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার দুজনকে ছেড়ে দিতে রাজি না হওয়ায় ওসির সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডার এক পর্যায়ে তিনি হুমকি দেন বলে অভিযোগ। তবে অভিযুক্ত নেতা হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে রানীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের রাজোর গ্রামের সারোয়ার নুর (৩২) ও হামিদুর রহমান (৬০), ভাউলারবস্তি গ্রামের খলিলুর রহমান (৫০) ও ধর্মগড় শালফার্ম এলাকার জিয়াউর রহমানকে (৪২) আটক করে পুলিশ। বাচোর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম এবং আটক সারোয়ার ও হামিদুরের বাড়ি একই এলাকায়। ওই দুজনকে আটক করে গাড়িতে তোলার সময় জাহিদুল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাঁদের ছেড়ে দিতে পুলিশকে চাপ দেন। পুলিশ রাজি না হলে তিনি বিভিন্নজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। পরে পুলিশ তাঁদের থানায় নিয়ে আসে।

গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে জাহিদুলের নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৩৫ জন ব্যক্তি থানায় উপস্থিত হন। পরে পীরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল হুদা থানায় এসে সারোয়ার ও হামিদুরকে আত্মীয় দাবি করে তাঁদের ছেড়ে দিতে ওসিকে অনুরোধ করেন। আটক ব্যক্তিরা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নন বলে দাবি করেন। বেলা দেড়টার দিকে নাজমুল হুদার সঙ্গে জাহিদুল ইসলাম যুক্ত হয়ে তাঁদের ছেড়ে দিতে ওসিকে চাপ দিতে থাকেন। রাজি না হওয়ার এক পর্যায়ে ওসির সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান তাঁরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন এলাকার কয়েকজন। এ ঘটনার দুটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, থানা ভবনের সামনে লোকজনের জটলা। এ সময় যুবদল নেতা নাজমুল হুদাকে বলতে শোনা যায়, ‘মামলা করে ফেলেছেন, বলে দেন। কোনো কিছুই বলেন না। তিনটা থেকে ফোন দিচ্ছি, আমি মানুষ না?’ জবাবে ওসি বলেন, ‘আমি তো বলেছি, হবে না।’ এরপর নাজমুল বলেন, ‘ফালতু কথা বলবেন না। হবে না এ কথা বলেন নাই। মিথ্যা কথা বলবেন না।...আপনি মানুষ চিনেন নাই। আপনার এখানে রিজিক নাই, রিজিক উঠে গেছে।’ এ সময় ওসি তাঁদের চলে যেতে বললে আরও অনেকে কথা বলা শুরু করেন।

১ মিনিট ২০ সেকেন্ডের আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, নাজমুল ওসিকে বলছেন, ‘পোশাকের ই দেখাইলেন, আর কি! আর চ্যালেঞ্জ করলেন আমাদের সঙ্গে।’ তখন এক পুলিশ সদস্যকে বলতে শোনা যায়, ‘এত কথা বলিয়েন না ভাই।’ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাজমুল বলেন, ‘কেন কথা বলব না? শোনেন আওয়ামী লীগ আমলের থেকে এখন আরও বেশি ই হচ্ছে।’ তখন ওসি তাঁদের চলে যেতে বললে নাজমুল বলেন, ‘কেন যাব? থানা আমরাও সেভ করছি, বুঝলেন? তিন-চার দিন থানায় বসে ছিলাম। না হলে থানা জ্বালায় দিত। আমরা কথা বলব না তো, কে কথা বলবে?’

জানতে চাইলে রানীশংকৈল থানার ওসি আরশেদুল হক বলেন, মঙ্গলবার রাতে আটক সবাই আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক। তাঁদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইন ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের ছাড়িয়ে নিতে স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও পীরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতি থানায় এসে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। তখন পুলিশ সদস্যদের হাড়গোড় ভাঙাসহ থানা জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে যুবদল নেতা নাজমুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার রাতে তাঁর ব্যবসার অংশীদার ও তাঁর বাবাকে আটক করে পুলিশ। ওসিকে ফোন করলে তিনি তাঁকে থানায় যেতে বলেন। তিনি রানীশংকৈল থানায় গিয়ে পুলিশকে জানান, তাঁরা কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত না। কিন্তু ওসি কোনো উত্তর না দিয়ে কয়েক ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন। ওসির ওই আচরণের কারণে প্রতিবাদ করেছেন। হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘পুলিশকে হুমকি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমি শুধু বলেছি, ৫ আগস্ট আমরা থানা পাহারা না দিলে উত্তেজিত জনগণ থানা পুড়িয়ে দিত।’

জানতে চাইলে জেলা যুবদলের সদস্যসচিব মো. জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ