বন্দরে ৩০০ কোটি ডলার বিদেশি বিনিয়োগ হবে
Published: 8th, May 2025 GMT
চট্টগ্রামের তিন বন্দর প্রকল্পে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার বা ৩ বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ হবে। বন্দর নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি খাতে ধারাবাহিকভাবে এই বিনিয়োগ হবে। আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দরের তিনটি প্রকল্প পরিদর্শন শেষে এই বিনিয়োগের কথা জানান বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী।
আজ সকালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় লালদিয়ার চর, বে টার্মিনাল ও বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনাল এলাকা পরিদর্শন করেন আশিক চৌধুরী। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান, প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আশিক চৌধুরী বলেন, সরকারি–বেসরকারি অংশীদারত্বের আওতায় লালদিয়ার চরে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক এপিএম টার্মিনালস কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণে ৬০ থেকে ৮০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে। সাগর উপকূলে বে টার্মিনাল প্রকল্পে সিঙ্গাপুরের পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল এবং আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড ১০০ কোটি ডলার বা ১ বিলিয়ন করে ২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে দুটি টার্মিনাল নির্মাণ করবে। বন্দরে পুরোদমে চালু থাকা নিউমুরিং টার্মিনালেও বিদেশি বিনিয়োগের কথা জানান তিনি।
আশিক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশকে বৈশ্বিক উৎপাদনের অঞ্চল করতে হলে বন্দর–সুবিধা অনেক বাড়াতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগ হলে বন্দরের দক্ষতা বাড়বে। এ জন্য দেশীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
এ সময় বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, আগামী ২০৩১ সালে বে টার্মিনাল চালু হবে। এতে ২৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। আবার বে টার্মিনাল থেকে সরাসরি ইউরোপ–আমেরিকায় কনটেইনারবাহী জাহাজ চলাচল করতে পারবে। এখন সিঙ্গাপুর, কলম্বোর মতো বন্দরগুলোর মাধ্যমে কনটেইনার আনা–নেওয়া করতে হয়।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়
বন্দর প্রকল্প পরিদর্শন শেষে দুপুরে হোটেল র্যাডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বেভিউতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন আশিক চৌধুরী। এ সময় ব্যবসায়ীরা সহজে ব্যবসার পথে নানা প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেন।
মতবিনিময় সভায় কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আনার উদ্যোগ ভালো। তবে দেশীয় বিনিয়োগকারীদেরও দেখা দরকার। কারখানা চালু করতে সময়মতো গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।
বিএসআরএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমের আলীহুসাইন বলেন, উদ্যোক্তাদের জন্য ঢাকা থেকেই সব সিদ্ধান্ত হচ্ছে। এ কারণে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের এখনো ফাইল নিয়ে ঢাকায় যেতে হয়। এ জন্য ঢাকায় আলাদা করে গাড়ি, বাসা ও অফিস নিতে হয়। ব্যবসা সহজ করতে হলে ঢাকার বাইরে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা দিতে হবে।
পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমান বলেন, দেশীয় উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছেন। দেশীয় উদ্যোক্তাদের সুবিধা দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘নতুন জায়গায় বন্দর–সুবিধা নির্মাণে বিদেশি বিনিয়োগ হওয়া উচিত। নিউমুরিং টার্মিনালে যেখানে সবকিছু আছে সেখানে কীভাবে বিদেশি বিনিয়োগ হবে, তা বুঝে আসছে না আমাদের।’
মতবিনিময় সভায় আশিক চৌধুরী বলেন, গ্যাসের সমস্যা সমাধানে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, বিমানবন্দর ও বন্দর–সুবিধা কাজে লাগিয়ে চট্টগ্রামে ফ্রি ট্রেড জোন (মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল) হচ্ছে। এ–সংক্রান্ত একটি জাতীয় কমিটি প্রকল্প এলাকা যাচাই–বাছাই করছে। চট্টগ্রামের চীনের অর্থনৈতিক অঞ্চল, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের মতো প্রকল্পের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বন্দরের নতুন প্রকল্পগুলো সফল হলে এসব প্রকল্পও সফল হবে।
মতবিনিময় সভা শেষে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন আশিক চৌধুরী।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ন য় গ হব প রকল প ব যবস য় ন বল ন
এছাড়াও পড়ুন:
ইউএসএআইডির তহবিল হ্রাসে বাংলাদেশে চাকরি হারিয়েছেন ‘২০ হাজার মানুষ’
যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির তহবিল কমার কারণে এ সংস্থার অর্থায়নে বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত বাংলাদেশের ২০ হাজার মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। কমে যাওয়া তহবিলের পরিমাণ ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশের প্রতিবছর পাওয়া বৈদেশিক সহায়তার ১৮ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত ‘স্ট্রেনদেনিং কমিউনিটি সাপোর্ট এমিড চেঞ্জিং ফান্ডিং ল্যান্ডস্কেপ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়। বৈদেশিক সহায়তা কমার প্রেক্ষাপটে দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে বিকল্প পথ খোঁজার উপায় নিয়ে এ গোলটেবিলের আয়োজন করা হয়।
সেখানে একটি উপস্থাপনায় বলা হয়, বাংলাদেশ প্রতিবছর নানা উৎস থেকে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন (১১০ কোটি) মার্কিন ডলার তহবিল পায়। ইউএসএআইডির তহবিল কমার কারণে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষভাবে ৮ হাজার আর পরোক্ষভাবে আরও ১২ হাজার মানুষ চাকরি হারিয়েছেন।
সেখানে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সামনে আরও তহবিল কমবে। আন্তর্জাতিক কর্মসূচিগুলোতে সহায়তা কমে আসবে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আগে যে ফাউন্ডেশনগুলো সহায়তা দিত, সেগুলোকে কর অব্যাহতি দেয়া হতো। এখন সে কর অব্যাহতি প্রত্যাহার করে নেওয়ার আলোচনা হচ্ছে।
অন্যদিকে এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ হলে সিভিল সোসাইটি সংগঠনগুলোর সহায়তা কমতে থাকবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক এম জাকির হোসাইন খান বলেন, ‘আমাদের এ বাস্তবতা মেনে নিতে হবে যে হানিমুন পিরিয়ড ইজ ওভার। বিশ্বব্যাপী নানা বাস্তবতায় বৈদেশিক সহায়তা কমে আসছে। আমাদের টিকে থাকতে হলে নতুন মডেল, নতুন কাঠামোতে সবকিছু পুনর্বিন্যাস করতে হবে।’
আগামী দিনে ‘প্রকৃতিনির্ভর সমাধান’, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও ইনস্যুরেন্স খাতে সম্ভাবনা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। স্থানীয় সরকারের সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে নদীনালা, খালবিল, বন সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনায়ও কাজ করা যায় বলে উল্লেখ করেন জাকির হোসাইন খান।
বক্তারা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে নতুন নেতৃত্ব, নতুন ভবিষ্যৎ ও সহায়তার নতুন নতুন উৎস খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক শারমিন নিলোর্মী বক্তব্য দেন। এ ছাড়া বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন।