চাল নিয়ে কর্মকর্তাদের চালবাজিতে এখনো বন্ধ হয়নি খাদ্য গুদামের চাল চুরি। বরগুনার পাথরঘাটা খাদ্য গুদামে আমন চাল সংগ্রহে কয়েক ধাপে দুর্নীতি হয়েছে। সংগ্রহের চাল অভিনব পদ্ধতিতে চুরি করছেন খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার ডাকুয়া। এ কারণে সরকারি বিভিন্ন সহায়তার চাল উপকারভোগী পর্যায়ে পৌঁছায় বরাদ্দের থেকে অনেক কম।
পতিত সরকারের আমলে বরগুনার পাথরঘাটার জেলেদের মানবিক সহায়তার চাল কম দেওয়া ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
৫ আগস্টের পরে নানামুখি পরিবর্তনের কথা বললেও ভাগ্য খোলেনি দরিদ্র এসব মানুষের। পাথরঘাটা খাদ্য গুদামের সংরক্ষিত এলাকার ভিতরেই ঈদল ফিতর উপলক্ষে দরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দের ১০ কেজির চালের বিপরীতে চাল দেওয়া হয়েছে ৮ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম করে। এমন একটি ভিডিও এসেছে রাইজিংবিডির হাতে।
চাল চুরির ঘটনায় গোটা দায়ভার উঠতো জনপ্রতিনিধিদের কাঁধে। তবে, জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বে এখন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। তারপরও কেন সহায়তার জন্য বরাদ্দের চাল বিতরণে দুর্নীতি!
প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অনুসন্ধানে দেখা যায়, পাথরঘাটা উপজেলা খাদ্য গুদামের নথি বলছে, চলতি অর্থবছরে পাথরঘাটার মোশাররফ খান রাইস মিল থেকে ১৩১ মেট্রিক টন আমন চাল ক্রয় করেছে খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ। নথি ঘেঁটে দেখা যায়, তিন কিস্তিতে খাদ্য গুদামে চাল পাঠায় মিল মালিক।
সেই চাল গুদামে সংগ্রহ করার সময় অভিনব পদ্ধতিতে প্রতিটি বস্তা থেকে চাল বের করে বাড়ানো হচ্ছে বস্তার সংখ্যা। চাল চুরির সময় একটি ভিডিও ধারণ করেন এই প্রতিবেদক। যা রাইজিংবিডির হাতে আছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, একটি লাঠি দিয়ে পাটের বস্তায় ছিদ্র করে প্রতিটি বস্তা থেকে চাল বের করছেন গুদামের শ্রমিকরা। সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে চাল বের করার নির্দেশ দিচ্ছিলেন অঞ্জন কুমার ডাকুয়া। প্রতি ৩০ কেজির বস্তা থেকে চাল বের করা হয় এক থেকে দেড় কেজি করে। একইভাবে ৫০ কেজির বস্তা থেকে চাল বের করা হয় দেড় থেকে দুই কেজি করে।
এরপর সেই চাল নতুন করে বস্তাবন্দী করে বাড়ানো হচ্ছে চালের বস্তার সংখ্যা। গভীরতম অনুসন্ধানের জন্য ভিডিও চিত্র সংরক্ষণ করে অপেক্ষা করা হয় ভারত থেকে সরকারি ক্রয় করা চালের জন্য। গত ১৩ এপ্রিল আমদানিকৃত চাল এসে পৌঁছায় পাথরঘাটা খাদ্য গুদামের ঘাটে। পরিচয় গোপন করে সেদিন ঘাটে গিয়ে দেখা যায় একই পদ্ধতিতে আমদানিকৃত চাল জাহাজে বসেই বস্তা ছিদ্র করে চাল বের করা হচ্ছে। এরপর নতুন করে আবার বাড়ানো হচ্ছে বস্তার সংখ্যা।
ভিডিও চিত্র ধারণ করে এবার খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অঞ্জন ডাকুয়ার মুখোমুখি হলে তিনি দাবি করেন বস্তা ফেটে গেছে। তখন আমন সংগ্রহের বস্তা থেকে চাল চুরির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সবকিছু অস্বীকার করেন।
পাথরঘাটার এই খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অঞ্জন ডাকুয়ার চাল নিয়ে চালবাজির প্রমাণ পাওয়া যায় গুদামে থাকা বস্তা মেপে। চাল চুরির বিষয়টি তিনি অস্বীকার করলে- চালের বস্তা মাপলেই সেটা প্রমাণ হবে বলে তাকে চ্যালেঞ্জ দেওয়া হয়। তবে তার সহায়তায় গুদামে প্রবেশ করে চাল মাপার প্রস্তাবে তিনি বাধা দেন। গুদামে প্রবেশ করতে চাইলেও তিনি অসহযোগীতা করেন।
পরে চাল চুরির ধারণকৃত ভিডিও দেখানোর পর তিনি প্রতিবেদন প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন। তবে এ ঘটনার পর তিনি গুদামের আমন সংগ্রহের বস্তা মেপে দেখাতে রাজি হন। পরে তার সাথে প্রতিবেদক গুদামে প্রবেশ করেন।
সেসময় চাল মেপে চুরির বিষয়টি চাক্ষুষ ধরা পড়ে। গুদামের ডিজিটাল মিটারে ৩০ কেজির ১৫টি এবং ৫০ কেজির ২০টি বস্তা আমন চাল সংগ্রহের খামালের বিভিন্ন জায়গা থেকে পরিমাপ করা হয়।
নিয়ম অনুযায়ী ৭০০ গ্রাম বস্তার ওজনসহ ৫০ কেজি ৭০০ গ্রাম ও ৩০০ গ্রাম বস্তার ওজন সহ ৩০ কেজি ৩০০ গ্রাম চাল থাকবে প্রতিটি বস্তায়। তবে, গুদামের বেশিরভাগ বস্তায় দুই কেজি থেকে দুই কেজি ৪০০ গ্রাম পর্যন্ত চাল কম পাওয়া যায়।
দুর্নীতি হয়েছে চাল ক্রয়েও
নীতিমালা অনুযায়ী ক্রয় করা প্রতি বস্তা চালে উৎপাদনের তারিখসহ মিলের সিল থাকা বাধ্যতামূলক। তবে, গুদামের আমন চাল সংগ্রহের খামালে থাকা বেশিরভাগ বস্তায় দেখা যায় ভিন্ন ভিন্ন মিলের সিল এবং সব পুরাতন বস্তা।
নতুন বস্তায় চাল সংগ্রহ করার কথা থাকলেও সেই নিয়মের ব্যত্যয় করেছেন অঞ্জন। গুদামে আমনের চাল সংগ্রহের সব বস্তায় তারিখ দেওয়া ছিল ২০২৩ ও ২০২৪ সালের।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার ডাকুয়া কোন কথা না বলে প্রতিবেদকে ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করেন যা গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা হয়।
এদিকে এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার কার্যালয়ে গিয়েও পাওয়া যায়নি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ তানভীর হোসেনকে।
তবে মুঠোফোনে তিনি জানান, চাল চুরির বিষয়টি জানার পরে দায়িত্বরত কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার ডাকুয়াকে গালিগালাজ করেছেন তিনি। পরবর্তীতে এমন কাজ করবে না বলে ক্ষমা চেয়েছেন অঞ্জন ডাকুয়া।
ধান-চাল ক্রয় কমিটির সভাপতি ও পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.
এদিকে এই ঘটনায় কথা বলতে রাজি না হয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মাদ মামুনুর রশিদ।
তবে, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের প্রধান সহকারী মিজানুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, “আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আমাকে তদন্ত কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন।”
এসময় তিনি চাল চুরির ভিডিও দেখে প্রাথমিকভাবে চুরির ঘটনা সত্য বলে দাবি করেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি অঞ্জন ডাকুয়া বরগুনার আমতলীতে উপখাদ্য পরিদর্শক থাকা অবস্থায় ধান ক্রয়ে দুর্নীতি করায় উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১৯৫ বস্তা ধান জব্দ করে ১০ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন তাকে।
ঢাকা/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ ল ব র কর প থরঘ ট আমন চ ল র জন য ন র পর
এছাড়াও পড়ুন:
আ.লীগ নিষিদ্ধ হবে কি না ঠিক করবে জনগণ: মঈন খান
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে কি না– তা জনগণ ঠিক করবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান। শুক্রবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কার্টার সেন্টারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে জাতীয় নাগরিক পার্টির দাবির বিষয়ে মঈন খান বলেন, এটা নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যেসব রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কথা বলছে, তারা তাদের বক্তব্য বলেছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক তো বিএনপি নয়– এটি জনগণের সিদ্ধান্তের বিষয়। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে কারা নির্বাচন করবে, কারা করবে না। এটাই আমাদের (বিএনপি) বক্তব্য।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কি আসলেই নির্বাচন করতে চায়, তারা কি আসলেই গণতন্ত্র চায়? সেটা তো আওয়ামী লীগকে বলতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের পর ৯ মাস চলে গেছে। অথচ এখন পর্যন্ত দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর ধরে এ দেশের মানুষের ওপরে জুলুম, লুটপাট ছাড়াও ফ্যাসিস্ট কায়দায় এ দেশকে তছনছ করার ঘটনায় তারা ভুল স্বীকার করেনি, তারা ক্ষমা চায়নি বাংলাদেশের মানুষের কাছে। তাই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নটি আসলে আমাদের জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন নেই। এর উত্তর বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ জানে।
বৈঠকে ড. আব্দুল মঈন খান ছাড়াও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার ছিলেন। কার্টার সেন্টারের ডেমোক্রেসি প্রোগ্রামের সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর জোনাথন স্টোনস্ট্রিট ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।