রাতে আবার ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি হামলা
Published: 9th, May 2025 GMT
রাতে আবার হামলা-পাল্টা হামলায় লিপ্ত ভারত ও পাকিস্তান। দুই দেশের সীমান্তবর্তী রাজ্য পাঞ্জাবের উভয় অংশের বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ভারতের পাঞ্জাবের পাঠানকোট, ফিরোজপুর ও অমৃতসরে রাতের আঁধারে একে পর এক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ভারতীয় পাঞ্জাবের পাঠানকোটে বেশ কয়েকটা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং আকাশে ঝলকানি দেখা গেছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ড্রোন হামলা হচ্ছে। ড্রোনগুলো ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চলছে। পুরো শহরে ব্ল্যাকআউট চলছে।
বিবিসি লিখেছে, অন্যদিকে পাঞ্জাবের অমৃতসর শহরেও বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। অমৃতসর শহরে একের পর এক বিস্ফোরণ হচ্ছে। একই সঙ্গে ড্রোনও দেখা যাচ্ছে। বিমানবাহিনীর ঘাঁটির কাছে গুলির শব্দ শোনা গেছে।
ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, অমৃতসরে পাকিস্তানের এই হামলায় কারো মৃতু্যর খবর নেই।
ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগর ও অবন্তীপুরায় বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা গেছে। কাশ্মীরের বেশিরভাগ জায়গাতেই বিদ্যুৎ নেই।
কাশ্মীরের পুঞ্চ অঞ্চলে বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবারও গোলাগুলি চলছে, যাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে, বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
জম্মুর স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, রাতে সেখানেও বিস্ফোরণ হয়েছে। পুরো জম্মুতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। মানুষ ঘরে রয়েছে। দিনের বেলায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু সন্ধ্যা হতেই পরিস্থিতি বদলে গেছে।
৭ মে রাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। এর জবাবে ভারতেও হামলা চালায় পাকিস্তান। ওই দিন থেকে দুই দেশের মধ্যে থেমে থেমে হামলা, পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় গোলাগুলি অব্যাহত রয়েছে। উভয় দেশ হতাহতের তথ্য দিয়েছে। অবশ্য এক দেশ অন্য দেশের তথ্যকে ভুয়া' বলে প্রত্যাখ্যান করছে। তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে গুজব ও অপতথ্য ছড়ানোর অভিযোগ আনছে।
পাঞ্জাবের ফিরোজপুরে পাকিস্তানের ড্রোন হামলা: ভারত
পাঞ্জাবের ফিরোজপুরে রাতে একটি পাকিস্তানি ড্রোন হামলায় একটি পরিবারের তিন সদস্য আহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। তারা আগুনে পুড়ে আহত হয়েছেন এবং তাদের একজনের অবস্থা সংকটজনক।
ফিরোজপুর পুলিশের কর্মকর্তা ভূপিন্দর সিং সিধু বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেন, “আমরা তিনজনের আহত হওয়ার খবর পেয়েছি। তাদের দেহে আগুনে পুড়ে যাওয়ার চিহ্ন রয়েছে। চিকিৎসকরা তাদের চিকিৎসা করছেন। বেশিরভাগ ড্রোনই সেনাবাহিনী নিস্ক্রিয় করে ফেলেছে।”
স্থানীয় হাসপাতালে আহতদের গ্রহণকারী চিকিৎসক ডা.
তিনি বলেন, “ড্রোন বোমা বিস্ফোরণে তিনজন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন নারী গুরুতরভাবে দগ্ধ হয়েছেন এবং তার অবস্থা সংকটজনক। বাকি দুজনের সামান্য পোড়ার ক্ষত আছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসা শুরু করেছি। তারা সবাই একই পরিবারের সদস্য।”
একটি ড্রোনও ভারতে ফিরতে পারেনি: পাকিস্তান
পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আহমেদ শরিফ চৌধুরী দাবি করেছেন, ভারত থেকে পাঠানো ড্রোনের একটিও নিজ দেশে ফেরত যায়নি।
ভারত ইসরায়েলের তৈরি ড্রোন পাকিস্তানে পাঠিয়েছে এবং সেনাবাহিনী এমন ৭৭টি ড্রোন ভূপাতিত করছে বলে এর আগে দাবি করেছিলেন শরিফ চৌধুরী।
এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “আমরা যখন হামলা চালাবে, তাদের উত্তর দেবে, তখন ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোকে সেটার কথা বলতে হবে না। সবাই সেটা শুনতে পাবে।”
ঢাকা/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব শ কয় র খবর
এছাড়াও পড়ুন:
সূর্যের সামনে স্কাইডাইভার, তৈরি হয়েছে এক অলীক আলোকচিত্র
প্রাচীন গল্পে আছে, ইকারাস মোমের ডানা নিয়ে সূর্যের খুব কাছে উড়ে গিয়েছিল। তখন মোম গলে গেলে ইকারাস নিচে পড়ে যায়। সৃজনশীল এক ফটোগ্রাফার সম্প্রতি সূর্যের দারুণ এক ছবি তুলে সেই দৃশ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় একজন স্কাইডাইভার মাত্র এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশের জন্য সূর্যের সামনে দিয়ে নেমে যান। ঠিক তখনই তাঁকে ক্যামেরাবন্দী করেন অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি। জ্বলন্ত সূর্যের মুখের ওপর দিয়ে যেন এক মানব প্রতিকৃতি নিচে নেমে গেল, এমন দৃশ্য ধরা পড়ে ক্যামেরা লেন্সে। দৃষ্টিবিভ্রমের এক অসাধারণ কীর্তি তৈরি করেছেন অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি।
অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি নিখুঁতভাবে তাঁর ক্যামেরা দিয়ে একজন স্কাইডাইভারকে ক্যামেরার সংকীর্ণ ফিল্ড অব ভিউয়ের মধ্য দিয়ে নেমে যাওয়ার সময় ধারণ করেন। ছবিটি বেশ পরাবাস্তব এক অনুভূতি তৈরি করেছে। ইকারাসকে নিয়ে প্রাচীন মিথের সঙ্গে ছবিটি তুলনা করেছেন অনেকেই।
অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি চাঁদ ও সূর্যের অত্যন্ত সূক্ষ্ম ছবি তোলার জন্য পরিচিত। তিনি সূর্যের সামনে স্কাইডাইভারের এই একটি মাত্র ছবির জন্য কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। সূর্যের ছবি তোলা এমনিতেই কঠিন কাজ। সেখানে সূর্যের সামনে গতিশীল একটি বিমান বা একজন পতিত মানবকে একই ফ্রেমে আনা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন চ্যালেঞ্জ। বিমানটির গতিপথ, সূর্যের কোণ, ক্যামেরার অবস্থান ও স্কাইডাইভারের অবতরণের মতো সব বিষয়কে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে এক করে কাজটি হয়েছে।
অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি বলেন, ‘বলা যায়, একেবারে অযৌক্তিক একটি কাজ করেছি। যদিও চূড়ান্ত ছবিটি দারুণ এক অনুভূতি দেয়। স্কাইডাইভার ছিলেন ইউটিউবার ও সংগীতজ্ঞ গ্যাব্রিয়েল সি ব্রাউন। সে সূর্যের উত্তাল হলুদ পৃষ্ঠের বিপরীতে একটি কালো সিলুয়েট বা ছায়ামূর্তি হিসেবে ছবিতে চলে এসেছে। সূর্যের অবস্থান ৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল দূরে হলেও ক্যামেরায় দারুণভাবে দেখা যাচ্ছে সব। ইকারাসের সঙ্গে তুলনা করা ছবি অসম্ভব বলে মনে হয়। আগুনের মতো সৌর ক্রোমোস্ফিয়ারের আবহের বিপরীতে একটি সত্যিকারের মানব চিহ্ন আমাদের মুগ্ধ করে। দেখে মনে হবে যেন, মহাকাশে কেউ নিচে পড়ে যাচ্ছে।’
স্কাইডাইভাররা ব্রাউনের ৩ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতা থেকে পতন শুরু করলে প্রায় ১০ সেকেন্ড সময় ব্যয় করে প্যারাসুট খোলার আগে ছবি তোলার সুযোগ মেলে। ম্যাককার্থি একটি লুন্ট ৬০ মিলিমিটার এইচ–আলফা ক্যামেরায় তার ফ্রি ফলের ছবি তোলেন। একটি এএসআই ১ হাজার ৬০০ মিলিমিটারে একক এক্সপোজার ধারণ করা হয়। আসলে এই বিভ্রমের মূল কারণ হচ্ছে দূরত্বের সামঞ্জস্য। ব্রাউন একটি ছোট বিমান থেকে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ ফুট ওপর থেকে লাফ দেন। আর ম্যাককার্থি প্রায় আট হাজার ফুট দূরে অবস্থান করেছিলেন। স্কাইডাইভার অবশ্যই সূর্যের কাছে ছিলেন না। শুধু ক্যামেরার দৃষ্টিকোণ থেকে নিখুঁত অবস্থানের কারণে স্কাইডাইভারকে অসম্ভব কাছাকাছি দেখাচ্ছিল। আসলে লাফ দেওয়ার আগে বিমানটিকে সঠিক অবস্থানে আনার জন্য ছয়বার চেষ্টা করতে হয়েছে। স্কাইডাইভারকে ফ্রেমে ধরার জন্য মাত্র একবারের সুযোগ ছিল। ম্যাককার্থি তাঁর মনিটরে সেই ক্ষুদ্র অবয়বটিকে সূর্যের আলোর সঙ্গে মিলিয়ে একটি নিখুঁত অবয়ব ধারণ করেন।
এই ছবিকে অনেকেই পৌরাণিক রূপকথার সঙ্গে তুলনা করছেন। গ্রিক মিথের ইকারাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ম্যাককার্থির এ ছবিটি সেই আখ্যানকেই একটি আধুনিক ও স্পষ্ট রূপে যেন তুলে ধরছে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া