মানুষের সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাসের প্রধান শর্তের একটি যোগাযোগ। মানুষ যেদিন থেকে সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে শুরু করেছে সেদিন থেকেই একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের প্রয়োজনিয়তা অনুভব করতে শিখেছে। আসলে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি, ব্যক্তি থেকে গোষ্ঠী, গোষ্ঠী থেকে জাতি, এমনকি জাতি থেকে রাষ্ট্র ধারণার পরতে পরতে যোগাযোগের গুরুত্ব অপরিসীম। একটি জাতি-রাষ্ট্র জন্মের প্রধান শর্তগুলোর অন্যতম অনুষঙ্গ হলো ‘গণযোগাযোগ’।

মূলত গণযোগাযোগ হলো একে অপরের সঙ্গে, অথবা বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তথ্য ভাগাভাগি করে নেওয়া। বর্তমানে গণযোগাযোগের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো ইন্টারনেট বা অন্তর্জাল। অন্তর্জাল দুনিয়ার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গণযোগাযোগের ধারণাও পালটে দিয়েছে। আগে গণযোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল সংবাদপত্র। যদিও সংবাদপত্রকে কার্যকর গণযোগাযোগের বাহন হয়ে উঠতে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। তবে ইন্টারনেট বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গণযোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এসেছে নিউ মিডিয়া; অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, রেডিও, টেলিভিশন এবং হাল আমলের অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

কিন্তু ৩০ বছর আগেও আমাদের গণমাধ্যমের রূপ ছিল ভিন্নতর। ডিজিটাল যুগের আবির্ভাবের ঠিক আগ মুহূর্ত পর্যন্তও সঠিক তথ্যসংগ্রহ করে সঠিক সময়ে তা প্রকাশ করা ছিল গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে চ্যালেঞ্জ। তারপরও টেলিফোন-ফ্যাক্স যুগের সেই কঠিন সময়ে এই বাংলার গ্রামীণ জনপদ কাঁপিয়ে বেরিয়েছেন একজন সংবাদকথক। নাম মোনাজাতউদ্দিন (১৯৪৫-১৯৯৫)। চারণ সাংবাদিক, গ্রামীণ সাংবাদিক, মফস্বল সাংবাদিক যে অভিধায়ই তাকে ভূষিত করি না কেন, আমার কাছে মনে হয় তিনি ছিলেন মূলত সংবাদকথক। গল্প বলার মতো করে সংবাদকে মানুষের কাছে তুলে ধরতেন। তাই তার প্রায় প্রতিটি সংবাদই প্রাণ পেত। মনে হতো, সামনেই ঘটনাগুলো ঘটছে। মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, সমস্যা-সমাধান, বেঁচে থাকা অথবা মৃত্যু- সব কিছুরই আলাদা পরিস্ফুটনই মোনাজাতউদ্দিনের খবরের স্বাতন্ত্র্য। আসলে এত জীবনঘনিষ্ঠ হয়ে সাংবাদিকতা করার উদাহরণ খুব কমই আছে আমাদের সামনে।

উনিশ শতকে বাঙালির আত্মবিকাশের শুরু মূলত সাহিত্য-সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে। তবে সেই ছোঁয়া গ্রামীণ বা মফস্বল জীবনে খুব একটা প্রভাব ফেলেনি। কারণ, সভ্যতা বিকাশের অন্যতম বাহন হলো গণমাধ্যম। ওই সময় গণমাধ্যমের ধারণা সেভাবে প্রসার লাভ করেনি। তারপরও জমিদারকর্তৃক প্রজা পীড়নের দলিল হিসেবে মফস্বল থেকে কাঙাল হরিনাথ (১৮৩৩-১৮৯৬) প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশের মাধ্যমে গ্রামীণ সাংবাদিকতার দ্বার উন্মোচন করেন। উনিশ শতকে গণমাধ্যমগুলো প্রসার লাভ শুরু করে। আর ভারতীয় উপমহাদেশে গণমাধ্যমগুলো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে মূলত ’৪৭-এ দেশভাগের পর। আর এই প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে মফস্বল জীবনের প্রতিনিধি হিসেবে কাঙাল হরিনাথের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে আমাদের মাঝে আবির্ভূত হন মোনাজাতউদ্দিন।

সভ্যতার ক্রমবিকাশের প্রথম দিক থেকেই নগরকেন্দ্রীক ধারণার বাইরে মানুষ খুব একটা আসতে পারেনি। তাই গ্রাম বা মফস্বল থেকেছে অবহেলিত। সেই মফস্বলের মানুষদের জীবনঘনিষ্ঠ খবরের কারিগর ছিলেন মোনাজাতউদ্দিন। তিনি নগরবৃত্তের বাইরে এসে গ্রামীণ প্রান্তিক মানুষের জীবন ফুটিয়ে তুলতেন খবরের ভাষায়। গতানুগতিক সাংবাদিকতার বাইরে একজন মানুষের দেখার দৃষ্টিভঙ্গি কতটুকু স্বতন্ত্র্য হতে পারে তা মোনাজাতউদ্দিনের লেখায় প্রখরভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি বাংলাদেশের নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক বৃত্তের বাইরে এসে জীবনকে কাছ থেকে দেখতে পেরেছিলেন বলেই সংবাদ পরিবেশনে নতুন ধারা তৈরি করতে পেরেছেন। তিনি সবসময় বাংলাদেশের পথে-প্রান্তরে, গ্রামে-গঞ্জে ছুটে বেড়াতেন খবরে সন্ধানে। মিশে যেতেন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভেতর। তাই তার দেখার চোখ ছিল ভিন্নতর। এজন্যই তাকে ‘চারণ সাংবাদিক’ অভিধায় ভূষিত করা হয়েছে।

বর্তমান সংবাদমাধ্যমগুলো মূলত রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও এলিট শ্রেণির মানুষের প্রতি পক্ষপাতিত্বেই ব্যতিব্যস্ত। কিন্তু গ্রামীণ যে মানুষগুলো সামাজিক ও রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার, অর্থনৈতিক বৈষম্যের জাঁতাকলে পিষ্ট তাদের কথা এখনো সংবাদপত্রে খুব কমই উঠে আসে। কারণ, বাজার কাটতির বেড়াজাল থেকে গণমাধ্যমগুলো খুব একটা বের হতে পারে না। কিন্তু মোনাজাতউদ্দিন সেইসব প্রান্তিক মানুষের জীবনের গল্প তুলে ধরতেই ঘুরে বেড়াতেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সে কারণে তার লেখা স্বতন্ত্র্য সংবাদভাষ্যগুলো পত্রিকার পাতায় আলাদা মাত্রা পেত। তিনি মূলত গ্রামীণ মানুষকে অধিকার সচেতন করতেই কলম তুলে নিয়েছিলেন। তিনি জনসম্পৃক্ত থেকে জনগণের দুঃখ-দুর্দশা ও আবেগ-অনুভূতির কথা তুলে আনতেন। এজন্য তিনি দিনের পর দিন এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে ঘুরে বেরিয়েছেন। 
মোনাজাতউদ্দিনের সংবাদ পরিবেশনের স্টাইলের কারণে তাকে আমরা ‘জনসাংবাদিক’ নামেও অভিহিত করতে পারি। তিনি লিখিছেন নিজস্ব স্টাইলে, অহরহ ভেঙেছেন সাংবাদিকতার ব্যাকরণ। তিন বলতেন, ‘আমি যা জানি, যা বুঝি, তাই লিখি আমার মতো করে।’ তার অনুসন্ধানী চোখ মানুষের জীবনের বিচিত্র রূপের সন্ধানে থাকতো। তিনি হাঁটতে হাঁটতে সংবাদভাষ্য নির্মাণ করতেন। মানুষের জীবনযাত্রা, জীবনের টানাপোড়েন, জীবন বোধ, সম্পর্কের গভীরতা ও অন্তর্দ্বন্দ্ব তার সংবাদভাষ্য নির্মাণের প্রধান কয়েকটি অনুষঙ্গ বলা চলে। এই অনুষঙ্গগুলোই তার সংবাদকথনের ভেতরে ঢুকে এক অন্যরকম ভাষ্য নির্মাণ করতেন। আর এই ভাষ্যের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠতো একটি অবহেলিত জনপদের কথা, কখনো মঙ্গার কথা, কখনো হাড়-হাড্ডিসার মানুষের না খেয়ে থাকার গল্প; আবার আশা জাগানিয়া কোনো খবর পাঠককে বোঝাতো এই তো বেঁচে থাকার সার্থকতা।

একসময় দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোকে বলা হতো মঙ্গাপীড়িত এলাকা। এক ফসলি জমি থাকার কারণে প্রতিবছর আশ্বিন-কার্তিক মাস এলেই উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা বা দুর্ভিক্ষ দেখা দিত। মানুষ ওই সময় একবেলা কোনোরকম খেয়ে বাঁচতো। বেশির ভাগ মানুষের ঘরে খাবার থাকত না। আমন ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত খাবার জুটত না। নদী ভাঙনে বিপর্যস্ত হতো চারদিক। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘যে দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আছে, সেদেশে দুর্ভিক্ষ হতে পারে না।’ এই আপ্তবাক্য বুকে ধারণ করেই হয়তো মোনাজাতউদ্দিন মঙ্গাপীড়িত জনগণের কথা লিখে গেছেন। লিখে গেছেন সেখানকার মানুষের খাদ্যযুদ্ধের কথা। একটি অঞ্চল কীভাবে অবহেলিত হয়ে পড়েছিল তা উঠে এসেছে মোনাজাতউদ্দিনের লেখনিতে।

শুধু মোনাজাতউদ্দিন নয়, তার মতো কয়েকজনের অনুসন্ধানী সাংবাদিকের লেখনির ধারাবাহিকতায় উত্তরবঙ্গে সেচ প্রকল্প নেয় সরকার। ফলে চৌচির জমিগুলো ভিজে ওঠে ফসল ফলানোর প্রত্যাশায়। দ্রুতই জমিগুলো তিন ফসলি চাষাবাদের উপযোগী হয়ে ওঠে। ফসল ফলানোর এক নির্মোহ প্রতিযোগিতায় নামে উত্তরাঞ্চলের মানুষ। এবং তারা সফলও হয়। বর্তমানে দেশের সিংহভাগ চাল উৎপন্ন হয় উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে, যা ওই অঞ্চলের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও সরবরাহ করা হয়। মোনাজাতউদ্দিনের মতো সংবাদকারিগরের কারণেই অমর্ত্য সেনের কথা সত্য প্রমাণিত হয়। অথবা তার কথাকে সত্য প্রমাণ করতেই মোনজাতের মতো মানুষ পৃথিবীতে আসে।

গ্রামীণ প্রান্তিক জনগণ আধুনিক একটি রাষ্ট্রকাঠামোর ভেতরে থেকেও তথ্যবৈষম্যের শিকার হয় প্রতিনিয়ত। মনে হয় বর্তমান রাষ্ট্র ধারণার ভেতরেই হয়তো এমনটা রয়েছে যে, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সব তথ্য জানার প্রয়োজন নেই; এমনকি তাদের তথ্যও পুরোপুরি কাউকে জানানোর ব্যবস্থা থাকে না। মোনাজাতউদ্দিন গণমানুষের প্রতিনিধি হয়ে তথ্যবৈষম্য দূর করতে কাজ করে গেছেন। বলতে গেলে তিনি ছিলেন গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি। তাই কৃষকের প্রতিনিধি হয়ে লিখেছেন ‘কৃষকের ফরিয়াদ’। কারণ, একজন কৃষকের ক্ষমতা নেই সরকারের উচ্চপর্যায়ে সমস্যার কথা খুলে বলার। সেই ক্ষমতা ছিল মোনাজাতউদ্দিনের কাছে। আর তাই তিনি কখনো কৃষকের প্রতিনিধি, কখনো জনপ্রতিনিধি, কখনো ব্যবসায়ী, কখনোবা ছাত্র-শিক্ষকের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদমাধ্যমে তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরতেন। একজন সংবাদকর্মী যে সমাজের সব স্তরের প্রতিনিধি হয়ে উঠতে পারেন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ ছিলেন এই চারণ সাংবাদিক।

প্রান্তিক জনজীবনের প্রকৃত চেহারা পাঠকের সামনে তুলে এনে সাংবাদিকতায় এক ভিন্নধারা যুক্ত করেছেন মোনাজাতউদ্দিন। গ্রামীণ সমাজের ভেতরে যে কত রকমের ক্ষত থাকে তা তিনি তুলে ধরেছেন শহুরে পাঠকের সামনে। প্রশাসনে ঘাপলা, সরকারি বরাদ্দে অনিয়ম, ক্ষমতাসীনদের দাপট, ভূমিহীন মানুষের লড়াই, মঙ্গাপীড়িত মানুষের অধিকারের কথা তিনি তুলে এনেছেন পত্রিকার পাতায়। পেশাগত জীবনে সত্য প্রকাশে কখনো আপস করেননি তিনি। কোনো ঘটনা ঘটলে, তা যার বিরুদ্ধেই হোক না কেন, প্রকাশ করছেন তিনি। সরকারি বরাদ্দ ও ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম, এমনকি কালোবাজারির খবর লিখতে গিয়েও কোনো কোনো সময় নিজের আত্মীয়ের বিরুদ্ধেও কলম ধরতে হয়েছে তাকে। সমাজের অনিয়ম-দুর্নীতি আর নানান অসঙ্গতির কথা তুলে আনতে গিয়ে তিনি বহুবার ক্ষমতাসীনদের চাপের মুখে পড়েছেন। তারপরও মোনাজাতের কলম থেকে থাকেনি। 

খবর সংগ্রহের নেশায় উত্তর জনপদের পথ থেকে পথে ছুটেছেন মোনাজাতউদ্দিন। তার কলম এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, শহুরে সাংবাদিকতাকে টেক্কা দিয়ে গ্রামীণ সাংবাদিকতাকে নগরে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। তার কলমই দেখিয়েছে, নগরের চেয়েও বড় খবর থাকতে পারে গ্রামে। বলতে গেলে গ্রামীণ খবরের শেকড়ে দৃষ্টি ছিল মোনাজাতউদ্দিনের। একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রায় প্রতিদিনই তিনি পাঠকের সামনে হাজির করেছেন নতুন নতুন বিষয়। সমাজের রঙিন চশমার সামনে তিনি তুলে ধরেছেন নেপথ্যের অসঙ্গতির চিত্র। তার খবর পড়ে পাঠকের মাথা কখনো নিচু হয়েছে, আবার কখনো পাঠক নিজের অজান্তেই প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন। 
সংবাদের পেছনে ছুটতে গিয়ে মোনাজাতউদ্দিন চষে বেরিয়েছেন গ্রাম থেকে গ্রামে, পথে-প্রান্তরে। বলতে গেলে গ্রামই ছিল তার কর্মক্ষেত্র। তিনি দু’হাতে লিখেছেন সরেজমিন প্রতিবেদন, অনুসন্ধানী প্রতিবেদনসহ ভিন্নমুখী খবর। এমনকি প্রতিবেদনগুলোর ফলো-আপও করেছেন তিনি। কেবল চোখ দিয়ে দেখে নয়, মন দিয়ে অনুধাবন করে সংবাদ বা খবর লিখতেন মোনাজাত।

সেইসঙ্গে প্রতিবেদনের নিজস্ব এক ভাষারীতি সৃষ্টি করেছেন তিনি। যে ভাষায় কোনো উত্তেজনা থাকত না, থাকত না কোনো আড়ম্বর। তথ্যের পর তথ্য সাজিয়ে তৈরি করতেন গ্রামীণ মানুষের জীবনভাষ্য। তার নিজস্ব ভাষারীতিতে লেখা প্রতিবেদনগুলো যেন একেকটা চলমান দলিল। তিনি গ্রামীণ সংবাদ নিয়ে কাজ করলেও কেবলমাত্র প্রতিবেদনের সংবাদমূল্য, বিষয় বৈচিত্র্য ও উপস্থাপনার সাবলীলতার কারণে তা মফস্বল পাতার গন্ডি  পেরিয়ে স্থান করে নিত প্রথম পাতায়। কখনো ফার্স্ট লিড, কখনো সেকেন্ড লিড, আবার কখনোবা স্পেশাল ট্রিটমেন্ট পেত তার প্রতিবেদনগুলো। 

মোনাজাতউদ্দিন শুধু সংবাদ লেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতেন না। এর পেছনের গল্পগুলোও তিনি জানাতেন পাঠকদের। কারণ, প্রতিটি অনুসন্ধানী সংবাদের পেছনে থাকে অনেক বড় বড় গল্প। তাই তো তিনি লেখেন- পথ থেকে পথে (১৯৯১), কানসোনার মুখ (১৯৯২), সংবাদ নেপথ্যে (১৯৯২), নিজস্ব রিপোর্ট (১৯৯৩), পায়রাবন্দের শেকড় সংবাদ (১৯৯৩), অনুসন্ধানী প্রতিবেদন (১৯৯৫), চিলমারীর একযুগ (১৯৯৫), লক্ষ্মীটারি (১৯৯৬) প্রভৃতি। সবগুলো বইয়ের বিষয়বস্তু কিন্তু খবর। একটি প্রতিবেদন কীভাবে জন্ম নেয়, কীভাবে সংবাদপত্রের পাতায় উঠে আসে সেদিকটিও পাঠকদের জানাতেন তিনি। বইগুলো পড়লেই বোঝা যায়, সংবাদ সংগ্রহে কত রকমের বিকল্প পথের সন্ধান দিয়ে গেছেন তিনি।

মোনাজাতউদ্দিন শুধু সংবাদবিষয়ক বই-ই লিখেননি, তার সৃষ্টিশীলতায় যুক্ত হয়েছে একাধিক ছোটগল্পের বই। তার সৃজনশীলতা প্রকাশ পেয়েছে পত্রিকার প্রচ্ছদেও। রেডিও বাংলাদেশ রংপুর কেন্দ্রের তালিকাভুক্ত নাট্যকার, গীতিকার ও কথক ছিলেন তিনি। মঞ্চ নাটকের রচয়িতা হিসেবেও সুনাম রয়েছে তারা। শুধু রংপুরের মঞ্চে নয়, ঢাকার মঞ্চেও মঞ্চায়িত হয়েছে তার নাট্যরূপ দেওয়া নাটক ‘চন্দ্রবতী’। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন একুশে পদকসহ অনেক পুরস্কার। পেয়েছেন কয়েকটি একাডেমিক সম্মাননা। তিনি লাভ করেছেন ‘জহুর হোসেন চৌধুরী স্বর্ণপদক’। ‘কানসোনার মুখ’ প্রতিবেদনের জন্য পান ফিলিপস্ পুরস্কার। তিনি ভারতের অশোক ফেলোশিপও অর্জন করেছিলেন। 

একজন মোনাজাতউদ্দিন নাম-গোত্রহীন অসংখ্য মানুষের প্রতিনিধি হয়ে উঠেছিলেন। তিনি মাটি ও মানুষের গভীরে ঢুকে জীবনের সন্ধান করতেন। জনমানুষের জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে যার ছিল কারবার। সেই মানুষটি ১৯৯৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর সংবাদের নেশায় ছুটতে ছুটতে গিয়েছিলেন বাহাদুরাবাদ। তিস্তামুখ ঘাট ও বাহাদুরাবাদের মাঝখানে ফেরি চলাচলে বিঘ্নের খবরের পেছনের খবর জানতে। তিস্তামুখ ঘাটে রেলওয়ের ফেরি শেরেবাংলায় ওঠেন তিনি। এরপর একাই যান ফেরির ছাদে। হাতে ছিল ক্যামেরা। বাহাদুরাবাদগামী ফেরিটি কালাসোনার টার্নিংপয়েন্ট অতিক্রম করছিল। তিনি হয়তো ছবি তোলার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ পা পিছলে পড়ে যান যমুনা নদীতে। তলিয়ে যান নদীর অতলে। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। যে মানুষটি খবরের পেছনে আদ্যন্ত ছুটে বেরিয়েছেন দুনির্বার সংবাদ-সাধকের মতো, সেই মানুষটিই পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যমুনার দুর্বিনীত জলে ডুবে অকালে প্রাণ হারান, নিজেই হয়ে যান সংবাদের শিরোনাম। যে অনুসন্ধিৎসু চোখ ঘটনার গভীর থেকে বের করে আনত খবর, সেই চোখের দৃষ্টি মুহূর্তেই স্থির হয়ে যায়।

লেখক: বার্তা সম্পাদক, সারাবাংলা ডটনেট ও দৈনিক সারাবাংলা

তারা//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ন ষ র জ বন গণয গ য গ র জনগ ষ ঠ র স ব দপত র ধ যমগ ল র স মন জ বন র ব দ কত র অন য থ কত ন কর ছ ন ক ষমত সরক র র খবর করত ন খবর র

এছাড়াও পড়ুন:

ইমিগ্রেশনের অতিরিক্ত এসপি প্রত্যাহার, বরখাস্ত ২

সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের থাইল্যান্ডের ব্যাংককে যাওয়ার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (এসপি) প্রত্যাহার করা হয়েছে। একইসঙ্গে মো. আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জের সদর থানায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং এসবির একজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে বাংলাদেশ পুলিশের মুখপাত্র এআইজি ইনামুল হক সাগর এক খুদেবার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রসঙ্গত, বুধবার রাত ৩টা ৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক যান সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। 

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিনি বেশ কয়েক মাস ধরেই শারীরিকভাবে অসুস্থ। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে চোখের অসুখ, কিডনি ও পাইলসের সমস্যা বেড়েছে। গেল সপ্তাহে তিনি রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। চিকিৎসকদের পরামর্শেই তিনি থাইল্যান্ডে গেছেন। 

এদিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বুধবার রাত ১১টার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান আবদুল হামিদ। সেখানে যাওয়ার পর ইমিগ্রেশনে প্রয়োজনীয় যাচাই বাছাই শেষে থাইল্যান্ডে যাওয়ার সবুজ সংকেত পান তিনি।

আবদুল হামিদ অ‍্যাডভোকেটের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা আছে। গত ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর থানায় এ মামলা দায়ের হয়। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং ওবায়দুল কাদেরের নাম রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাতে আবার ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি হামলা
  • লোহাগাড়ায় বাস-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ, যাত্রীর মৃত্যু
  • প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জাহিদুল হত্যায় আরও একজন গ্রেপ্তার
  • খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা এবং ‘নিয়তির সন্তান’ তারেক রহমান
  • পাকিস্তান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন মাঝ আকাশে ধ্বংস করা হয়েছে, দাবি ভারতের
  • নির্বাসিত কবির সঙ্গে
  • জবিতে ৫ বছরে ৯ আত্মহত্যা, মানসিক সেবায় নেই পেশাদার কাউন্সিলর
  • সাংবাদিকতার মান নিয়ে প্রশ্ন তুললেন রোহিত
  • ইমিগ্রেশনের অতিরিক্ত এসপি প্রত্যাহার, বরখাস্ত ২