বিস্ময়করই বটে!

ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ড ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গত ৩ মে ইংলিশ কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে ল্যাঙ্কাশায়ার ও গ্লস্টারশায়ারের দ্বিতীয় দিনের খেলা চলছিল। সেদিন ল্যাঙ্কাশায়ারের টেলএন্ডার টম বেইলির সৌজন্যে অবাক করা এক দৃশ্য দেখা যায়। দ্বিতীয় রান নেওয়ার সময় তাঁর পকেট থেকে পিচের মাঝখানে পড়ে একটি মুঠোফোন!

পকেট থেকে পিচে মুঠোফোন পড়ে যাওয়ার ভিডিও দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা ক্রিকেটাঙ্গনে হাস্যরস সৃষ্টি করে। তবে এ ঘটনায় ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) দুর্নীতি দমন বিভাগ টম বেইলিকে কড়া ভাষায় সতর্কবার্তাও দেন।

ক্রিকেট মাঠে খেলোয়াড়দের পকেটে অস্বাভাবিক জিনিস আবিষ্কারের ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। নকল দাঁত থেকে মিষ্টি, স্যান্ডপেপার (সিরিশ কাগজ) থেকে স্যান্ডউইচ—অতীতে এমন অনেক কিছুই পাওয়া গেছে খেলোয়াড়দের কাছে।

এসব ঘটনা বেশির ভাগ সময় হাস্যরসের জন্ম দিলেও কয়েকটি ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারকে কঠিন শাস্তিও পেতে হয়েছে। সেসব উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়েই এ আয়োজন—

মুঠোফোন

টম বেইলির আগে মুঠোফোন পাওয়া গিয়েছিল ইংল্যান্ডের সাবেক ব্যাটসম্যান অ্যালান ল্যাম্বের কাছে। সেটাও যেনতেন ম্যাচে নয়—১৯৯০ সালে নটিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজে ইংল্যান্ড–নিউজিল্যান্ড টেস্ট ম্যাচে।

ল্যাম্বের ফোন নিয়ে মাঠে ঢোকার ঘটনা জানা যায় বিখ্যাত আম্পায়ার ডিকি বার্ডের বর্ণনায়। বার্ড জানান, ল্যাম্ব মুঠোফোনটা তাঁর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন, ‘যদি কেউ ফোন করে, তাহলে রিসিভ করে বলবেন, ফোনের মালিক এখন খেলছেন।’ খেলা চলাকালীন বার্ড নাকি একটি কলও রিসিভ করেছিলেন! তবে কে ফোন করেছিলেন, কী কথা হয়েছিল—তা জানা যায়নি।

নকল দাঁত

নকল দাঁত নিয়ে খেলতে নামার ঘটনার সঙ্গেও জড়িয়ে ডিকি বার্ডের নাম। ১৯৭৫ সালে বাক্সটনে তুষারপাতের মধ্যেই হয়েছিল ডার্বিশায়ার–ল্যাঙ্কাশায়ার ম্যাচ। খেলা চলাকালীন ডার্বিশায়ার ব্যাটসম্যান অ্যাশলে হার্ভে–ওয়াকার তাঁর এক সেট নকল দাঁত বার্ডের কাছে রাখতে দিয়েছিলেন। শর্ট ফাইন লেগে ফিল্ডিং করছিলেন ল্যাঙ্কাশায়ারের ডেভিড লয়েড। তিনিও তাঁর নকল দাঁতের সেট বার্ডকে দিতে যান। কিন্তু বার্ড প্রথমে তা নিতে চাননি। তবে রুমালে মুড়িয়ে দেওয়ার পর নিজের কাছে রেখে দেন।

নুড়িপাথর

ডার্বিশায়ারের বাঁহাতি স্পিনার ফ্রেড সোয়ারব্রুক নিজের পকেটে রাখতেন একটি পাথরের টুকরা। এটিকে তিনি মনে করতেন ‘ভাগ্যবান নুড়ি’। এক মনোবিজ্ঞানী সোয়ারব্রুককে বল করার আগে পিচে একটি পাথর নিয়ে ঘষে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ মেনে সোয়ারব্রুক সেটাই করতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এটি কাজে আসেনি। পরবর্তীতে তাঁকে অবসর নিতে বাধ্য করা হয়েছিল।

কমলা

এসেক্সের জন লিভার একবার পকেটভর্তি কমলা নিয়ে মাঠে গিয়েছিলেন এবং ইয়ান গুল্ডকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন যে তিনি তাঁকে কমলা দিয়ে বল করবেন এবং প্রথম বলেই আউট করবেন। কিন্তু লিভার গুল্ডকে আউট করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

গুল্ডের আরেকটি পরিচয় কি নতুন করে বলতে হবে? তিনি আইসিসি এলিট প্যানেলের সাবেক আম্পায়ার। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ–ভারত কোয়ার্টার ফাইনালে যিনি একাধিক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যেগুলো বাংলাদেশের বিপক্ষে যায় এবং মাশরাফি বিন মুর্তজার দল ম্যাচটি হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয়।

চশমা মোছার কাপড়

২০১৯ অ্যাশেজ সিরিজে হেডিংলি টেস্টের কথা কে ভুলতে পারেন! জ্যাক লিচকে নিয়ে শেষ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৭৬ রানের জুটি গড়ে ইংল্যান্ডকে জিতিয়েছিলেন বেন স্টোকস। এই ৭৬ রানের মধ্যে ৭৪ একাই করেন স্টোকস। ১ রান আসে অতিরিক্ত থেকে আর লিচ ১৭ বল খেলে অপরাজিত থাকেন ১ রানে। ইংল্যান্ডের জয়ের পর সেটিকে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে মূল্যবান রান বলেছিলেন লিচ।

বাঁহাতি এই স্পিনার যে চশমা পরে খেলেন, তা অনেকের জানা। সেদিন স্টোকসের সঙ্গে ব্যাটিংয়ের সময় পকেটে কাপড়ের টুকরা রেখেছিলেন লিচ যেন কামিন্স–হ্যাজলউড–প্যাটিনসনদের গতিময় বল স্পষ্টভাবে দেখতে বারবার চশমা মুছতে পারেন।

ওই ঘটনা এতটাই আলোচিত হয় যে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটপ্রেমীরা ‘জ্যাক লিচের চশমা’ নামে টুইটারে (বর্তমানে এক্স) একটি অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলেন। ২০২৩ সালের পর থেকে সেই অ্যাকাউন্ট থেকে নতুন কোনো পোস্ট করা হয়নি। তবে পেজে এখনো কিছু অনুসারী আছেন।

কাগজের টুকরা

২ বছর ৭ মাস টেস্টে ফিফটির দেখা পাননি দিনেশ রামদিন। ইনিংসের হিসেবে ১৪টি। এই ১৪ ইনিংসের ৯টিতেই আউট হয়েছেন এক অঙ্কের ঘরে। এমন দৈন্যদশা দেখে রামদিনের সমালোচনা করেছিলেন স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস। তবে পূর্বসূরির কড়া ভাষা ভালোভাবে নিতে পারেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক এই উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান।

কিন্তু ভিভকে তিনি জবাবটা যে এভাবে দেবেন, তা কে জানত! ২০১২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এজবাস্টন টেস্টে সেঞ্চুরি করার পরপরই পকেট থেকে একটি কাগজ বের করেন রামদিন। যাতে লেখা, ‘এই যে ভিভ, আর কথা বোলো না।’ এমন কাণ্ড করায় পরে অবশ্য দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন রামদিন।

রুমাল

বলতে পারেন, এটি খেলোয়াড়দের কুসংস্কারে বিশ্বাস। স্টিভ ওয়াহ যেমন সব সময় একটা লাল রুমাল পকেটে রেখে খেলতেন। রুমালটি তাঁর দাদা দিয়েছিলেন। সেই রুমালের একটি টুকরা তিনি মারলন স্যামুলয়েলসকে দিয়েছিলেন। স্যামুয়েলসও এটি নিজের পকেটে রেখে দিতেন। তবে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরির পর দর্শকদের দেখানোর জন্য রুমালের টুকরাটি বের করেছিলেন।

বীরেন্দর শেবাগ ও মহিন্দর অমরনাথও লাল রুমালের ভক্ত ছিলেন। জহির খান আবার হলুদ রুমাল সঙ্গে রাখতে পছন্দ করতেন। দক্ষিণ আফ্রিকার তাব্রেজ শামসি তো একসময় রুমাল দিয়ে জাদুর কৌশল দেখাতেন। উইকেট শিকারের পর রুমালকে প্রতীকী অর্থে জাদুর কাঠিতে পরিণত করতেন।

মিন্ট

২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হোবার্ট টেস্টে মিন্টের (পুদিনা) চুইংগাম থেকে পাওয়া চিনি বলের ওপর ঘষতে থাকেন ফাফ ডু প্লেসি। সহজ কথায়, ডু প্লেসি বল বিকৃতি করেন। এ ঘটনায় আইসিসি তাঁর ম্যাচ ফির পুরোটাই জরিমানা করে। ইংল্যান্ডের সাবেক ব্যাটসম্যান মার্কাস ট্রেসকোথিকও ২০০৫ সালের বিখ্যাত সেই অ্যাশেজ সিরিজে সময় এটি করার কথা স্বীকার করেছিলেন।

সিরিশ কাগজ

ক্রিকেট ইতিহাসে এই ঘটনা ‘স্যান্ডপেপার গেট স্ক্যান্ডাল’ বা সিরিশ কাগজ কেলেঙ্কারি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। ২০১৮ সালে কেপটাউন টেস্টে কলঙ্কিত এই ঘটনার জন্ম দেন অস্ট্রেলিয়ার ক্যামেরন ব্যানক্রফট। পকেট থেকে হলুদ রঙের একটি সিরিশ কাগজ বের করে বল ঘষতে থাকেন তিনি। এতে মদদ ছিল অস্ট্রেলিয়ার তখনকার অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ও সহ–অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের।

ব্যানক্রফটের বল বিকৃতির সেই দৃশ্য টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়তেই তা স্টেডিয়ামের বড় পর্দায় দেখানো হয়। আতঙ্কিত হয়ে ব্যানক্রফট সঙ্গে সঙ্গে সিরিশ কাগজ তাঁর ট্রাউজারের মধ্যে ফেলেন।

কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। স্মিথ, ওয়ার্নার ও ব্যানক্রফটকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং পরবর্তী সময়ে তাঁদের বিভিন্ন মেয়াদে নিষিদ্ধ করা হয়।

জেলি বিন

জহির খানের মনোযোগ নষ্ট করে দিতে ২০০৭ সালে ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্টে অদ্ভুত কৌশল অবলম্বন করেছিল ইংল্যান্ড। মাইকেল ভনের নেতৃত্বাধীন দল পকেটভর্তি জেলি বিন (এক ধরনের রঙিন ক্যান্ডি বা মিষ্টান্নবিশেষ) নিয়ে মাঠে নামে এবং অপ্রস্তুত জহির খানের দিকে ছুড়ে মারতে থাকে।

এ ঘটনায় কেভিন পিটারসেনের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন জহির। যদিও ক্রিস ট্রেমলেট পরে স্বীকার করেন যে, ভাবনাটা এসেছিল ইয়ান বেলের মাথা থেকে। যাহোক, জহিরকে তাতিয়ে দিয়ে ভুলই করেছিল ইংলিশরা। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নেওয়া বাঁহাতি পেসার দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে ভারতের জয়ে বড় অবদান রাখেন। ম্যাচসেরার পুরস্কারও ওঠে তাঁর হাতে।

ধুলা

নব্বইয়ের দশকে ক্যামেরার যে এতটা প্রযুক্তিগত উন্নতি হয়েছে, সম্ভবত তা জানা ছিল না মাইকেল আথারটনের। জানা থাকলে নিশ্চয় এমনটা করতেন না!

১৯৯৪ সালের লর্ডস টেস্ট—২৫ বছর বয়সী আথারটন তখন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক। ম্যাচ চলার সময় বলের ওপর ধুলা ঘষতে দেখা যায় তাঁকে। আথারটন পরবর্তী সময়ে তাঁর ডায়েরিতে লিখেছেন, ‘বল ও হাত শুকনো রাখতেই মাঠের ট্যাভার্ন সাইডের একটি ব্যবহৃত পিচ থেকে ধুলা নিয়ে পকেটে ভরেছিলাম।’

পকেটে ধুলা রাখার ব্যাপারটি তখন বৈধ ছিল কি না, তা নিয়ে এখনো বিতর্ক আছে। তবে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) তৎকালীন প্রধান নির্বাচক রেমন্ড ইলিংওয়ার্থ আথারটনের ওপর রেগে গিয়েছিলেন এবং তাঁকে ২ হাজার পাউন্ড জরিমানা করেছিলেন। এর অর্ধেকটা ম্যাচ রেফারির কাছে মিথ্যা বলার জন্য এবং বাকি অর্ধেক পকেটে ময়লা রাখার জন্য।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব য টসম য ন কর ছ ল ন র মদ ন র ট কর উইক ট প রথম করত ন নকল দ

এছাড়াও পড়ুন:

নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ করেন যবিপ্রবি শিক্ষার্থী সুজা

কেউ কেউ শুধু স্বপ্ন দেখেই থেমে যায়, আবার কেউ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে ছুটে চলে অদম্য সাহসে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী বি এম সুজা উদ্দিন সেই অদম্য সাহসী মানুষদের একজন।

পরিবারে অভাব ছিল না, কারণ বাবা ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। কিন্তু সুজার মনে বাসা বেঁধেছিল ভিন্ন এক তৃষ্ণা; স্বপ্ন নিজের কিছু গড়ে তোলার, উদ্যোক্তা হওয়ার। তাই তো ২০২০ সালে অনার্স চতুর্থ বর্ষে থাকা অবস্থায় মাত্র ৩ হাজার টাকা মূলধন দিয়ে শুরু করেন ব্যবসা।

আরো পড়ুন:

১০ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে অকৃতকার্য ইবি উপাচার্য

চাকসু নির্বাচনের তারিখ পেছানো নিয়ে যা জানা গেল

একজন বন্ধুর কাছে দেড় হাজার এবং এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া দেড় হাজার টাকা দিয়ে যাত্রা শুরু হয় অনলাইনে ফেসবুক পেজ ও গ্রুপের মাধ্যমে, আজ অরগানিক ও স্বাস্থ্যকর খাবারের বিশ্বস্ত মাধ্যমে রূপ নিয়েছে।

গত ৪ বছর ধরে শুধু অনলাইনেই চলেছে এই পথচলা। এরপর একদিন সাহস করে ক্যাম্পাসের ভেতরে একটি টেবিলে কয়েকটি পণ্য সাজিয়ে বসেন তিনি। সেই টেবিলই হয়ে উঠল তার স্বপ্নের অফলাইন রূপ। আজ সেটা সবার কাছে পরিচিত ‘সুজাস ফুড হেভেন’ নামে।

শুরুতে তার পড়াশোনা আর ব্যবসা সামলানো ছিল অনেক কঠিন। অর্ডার হাতে পেলে ক্লাস বা পরীক্ষা না থাকলে নিজেই ডেলিভারি দিতেন যশোর শহর ও ক্যাম্পাসে। অন্য জেলায় পাঠাতেন কুরিয়ারে। ধীরে ধীরে দোকানে অংশীদার ও কর্মচারী যুক্ত হয়, তাতে কিছুটা স্বস্তি আসে তার। তবে স্বপ্ন পূরণের টানে পড়াশোনার প্রতি আগের মতো সিরিয়াস হ‌ওয়া সম্ভব না হলেও নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা চালিয়ে গেছেন। কারণ তিনি জানতেন, ফলাফলে কিছুটা ঘাটতি হলেও স্বপ্ন পূরণের পথে অভিজ্ঞতা অর্জনই বড় সম্পদ।

বন্ধুদের সহযোগিতা তার পথচলায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও পেয়েছেন প্রেরণা। ক্যাম্পাসে স্টল বসানোর সুযোগ কিংবা উদ্যোক্তা মেলায় অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা তাকে করেছে আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

মাসে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করে আজ তিনি নিজের খরচ মেটাচ্ছেন, কর্মচারীর বেতন দিচ্ছেন এবং নতুন করে বিনিয়োগ করছেন ব্যবসায়। যদিও এখনো অর্থনৈতিক চাপ পুরোপুরি কাটেনি, তবে সুজা উদ্দিন দৃঢ় বিশ্বাসী- এই চাপই তাকে আরো শক্ত করবে এবং সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

সুজা বলেন, “আমার পথচলা একেবারে সহজ ছিল না। প্রথম দিকে আমার দোকানে বসতে লজ্জা লাগত, কখনো কখনো বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখিও হয়েছি। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে সবকিছু জয় করে এখন আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি- আলহামদুলিল্লাহ, আমি আমার কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট। গ্রাহকদের ভালোবাসা ও সম্মান আমার আত্মবিশ্বাসকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।”

তার স্বপ্ন নিরাপদ খাদ্যের আউটলেট গড়ে তোলা এবং ভবিষ্যতে আরো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। ইতোমধ্যে একজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরে তিনি মনে করেন, এটাই তার সবচেয়ে বড় সাফল্যের সূচনা।

অন্য শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে করে তিনি বলেন, “যদি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন থাকে, তাহলে পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়ে ছোট পরিসরে কাজ শুরু করুন। এমন প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করুন, যা সম্পর্কে আপনি জানেন, ভালো সোর্স রয়েছে এবং যেটা নিয়ে কাজ করতে আপনি আনন্দ পান। এতে সময় সঠিকভাবে কাজে লাগবে, অভিজ্ঞতাও বাড়বে। পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর সহজেই বড় পরিসরে শুরু করতে পারবেন।”

সুজা উদ্দিন হয়তো বড় ব্যবসায়ী নন, কিন্তু তার গল্প বড়। তিনি প্রমাণ করেছেন শুধু চাকরির স্বপ্ন দেখলেই জীবন বদলায় না। স্বপ্ন দেখতে হয় ভিন্নভাবে, সাহস করে শুরু করতে হয় ছোট থেকে। এটি তার সাহসের গল্প, স্বপ্নের গল্প, নিজেকে গড়ে তোলার গল্প।

‘সুজাস ফুড হেভেন’ শুধু একটি খাবারের দোকান নয়, এটি একটি প্রমাণ। চাইলে স্বপ্ন সত্যি হয়, যদি লড়াই করার সাহস থাকে।

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ