গর্ভবতী মায়ের শারীরিক যত্নে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
Published: 10th, May 2025 GMT
গর্ভাবস্থায় মা ভালো থাকলে গর্ভস্থ শিশুটিও ভালো থাকে। এই সময়ে মায়ের কী খাওয়া উচিত, কেমন পোশাক পরা উচিত, কোন টিকা কখন নেওয়া উচিত এই সব বিষয়ে সচেতনতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি।
সহযোগী অধ্যাপক ডা. জয়শ্রী সাহা স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ, পপুলার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল একটি পডকাস্টে বলেন, ‘‘গর্ভধারণের আগে থেকে সে যে ধরণের খাদ্য গ্রহণে অভ্যস্ত ছিল সেটাই সে কন্টিনিউ করবে। কিন্তু খাবারের পরিমাণটা আমরা একটু বাড়িয়ে খেতে বলি। যেমন—
সে হয়তো আগে দুধ খেতো না, বা ফল খেতো না, সেগুলো খাওয়ার ব্যাপারে আমরা ইনকারেজ করি। শাক-সবজি এবং প্রোটিন জাতীয় খাবার একটু বাড়িয়ে খেতে বলি। এই সময় সাপ্লিমেন্ট হিসেবে কিছু আয়রন, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে বলি। তবে আয়রন এবং ক্যালসিয়াম দুটি ট্যবলেট একসঙ্গে খাওয়া যাবে না। কারণ এগুলোর কোনোটিই শরীরের জন্য খুব ভালো প্রভাব তৈরি করতে পারে না।’’
যদি কোনো শারীরিক সমস্যা না থাকে এবং ব্লিডিং না হয় তাহলে একজন মা গর্ভাবস্থায় তার স্বাভাবিক কাজগুলো চালিয়ে যেতে পারেন। এবং এই সময় হালকা কিছু এক্সারসাইজও সে করতে পারবে। তবে এই সময় লম্বা জার্নি করা, ভারি কোনো কাজ করা যাবে না। গর্ভধারণের প্রথম তিন মাস এবং শেষ দুই মাস ফিজিক্যাল রিলেশনটা বন্ধ রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেন জয়শ্রী সাহা।
আরো পড়ুন:
বড় স্বপ্ন পূরণে কীভাবে এগিয়ে যাবেন
বন্ধু মানসিক চাপে থাকলে যা করতে পারেন
এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘‘খেয়াল রাখতে হবে যাতে কোষ্টকাঠিন্য না হয়। গর্ভাবস্থায় কোষ্টকাঠিন্যটা একেবারে কমন সমস্যা। এই সময় একজন মা যদি বেশি পরিমাণে দুধ, ফল, এবং আঁশজাতীয় খাবার খায় তাহলে এই সমস্যাটা হয় না। তারপরেও যদি হয় আমরা কিছু ‘ল্যাক্সেটিভ’ সাজেস্ট করি। এই সময়টাতে আমরা হাইহিল পরতে নিষেধ করি। যাতে হঠাৎ সে পড়ে না যায়, বা তার চলাফেরায় অসুবিধা না হয়। আবার পোশাকটাও এমনভাবে নির্বাচন করতে হবে, যাতে সে আরামদায়ক অবস্থায় থাকতে পারে।’’
গর্ভবতী মা কোন টিকা কখন নেবেন, এই বিষয়ে জয়শ্রী সাহার পরামর্শ—
যদি একজন গর্ভবতী মায়ে হেপাটাইটিস বি-ভাইরাস তিন ডোজ কমপ্লিট করা থাকে, তাহলে খুব ভালো। অনেক মেয়েরা আছে যে একটা দুইটা ডোজ নিয়ে আর কমপ্লিট করতে পারেননি। তাদের কিন্তু গর্ভাবস্থায় হেপাটাইটিস বি-ভাইরাসের ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে না। টিটেনাসের পাঁচ ডোজ টিকা যদি কমপ্লিট করা না থাকে তাহলে গর্ভাবস্থার পাঁচ মাসের মধ্যে আমরা একটা ভ্যাকসিন দিতে হবে। আর ছয় মাসের সময় আরেকটি ভ্যাকসিন দিতে হবে। কারও যদি পাঁ টি ভ্যাকসিন আগেই নেওয়া থাকে কিন্তু সেটা যদি পাঁচ বছরের বেশি সময় আগে নেওয়া থাকে তাহলে গর্ভাবস্থায় টিটেনাসের একটি টিকা দিতে হবে।
এই সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা খুব জরুরি।
পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
প্রস্রাব ভালোভাবে কমপ্লিট করতে হবে। প্রস্রাব ধরে রাখা যাবে না।
উল্লেখ্য, সঠিক নির্দেশনা পেতে গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসের মধ্যে পরবর্তী সময়ের করণীয় ঠিক করতে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এই সময় র পর ম
এছাড়াও পড়ুন:
জবিতে ৫ বছরে ৯ আত্মহত্যা, মানসিক সেবায় নেই পেশাদার কাউন্সিলর
মানসিকভাবে সুস্থ না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকে থাকা কঠিন—কথাটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের মুখে প্রায়ই শোনা যায়। অথচ সেই মানসিক সুস্থতা নিশ্চিতের অন্যতম মাধ্যম—কাউন্সিলিং সেবায় রয়েছে চরম অবহেলা।
সম্প্রতি জবি শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে মানসিক সহায়তা প্রদানকারী একমাত্র কাউন্সিলিং সেন্টারটিও রয়েছে সংকটে। পেশাদার কাউন্সিলরের অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। সেবা নিয়ে বাড়ছে অসন্তোষ ও উদ্বেগ।
গত ২০২১ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট নয়জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। তারা হলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের সুমাইয়া মেহজাবিন স্বর্ণা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অমিতোষ হালদার, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মেজবাহ উল আজিম, ব্যবস্থাপনা বিভাগের মেহেবুল্লাহ তৌসি, আইন বিভাগের ফাইরুজ আবন্তিকা, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবরিনা রহমান শাম্মী, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের হাবিব রিয়াদ, ফিন্যান্স বিভাগের মো. আহাদ হোসেন এবং সংগীত বিভাগের প্রত্যাশা মজুমদার।
আরো পড়ুন:
২ দাবিতে জবি ছাত্র ফ্রন্টের গণভোট
সেমিনারে অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেলেন জবি শিক্ষার্থী
এসব শিক্ষার্থীদের প্রায় সবারই আত্মহত্যার প্রধান কারণ হতাশা। তাদের এ মর্মান্তিক ঘটনাগুলো সমাজ ও শিক্ষাব্যবস্থার নানা ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরেছে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে যাত্রা শুরু করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিলিং সেন্টার। উদ্দেশ্য ছিল মানসিক চাপ ও হতাশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু বর্তমানে এটি চলছে অস্থায়ী ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে। ছোট দুইটি কক্ষে চলছে কার্যক্রম, নেই কোনো পেশাদার মনোরোগ চিকিৎসক বা মানসিক বিশেষজ্ঞ। দায়িত্বে থাকা মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা খণ্ডকালীন এবং সেমিস্টার পরীক্ষার সময় ব্যতীত সেবা দেন। তবে তাদের বিশেষ কোনো প্রশিক্ষণ বা তদারকি নেই। ফলে সেবার মান ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মোট ২৬১ জন শিক্ষার্থী কাউন্সিলিং সেবার জন্য নিবন্ধন করেন। তাদের মধ্যে ১৯৯ জন সেবা গ্রহণ করেছেন, সাতজন নিজেরাই সেবা বাতিল করেন এবং ৫৫ জনের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, এই সময়ের মধ্যে ৩৭ জন শিক্ষার্থী আত্মঘাতী চিন্তায় ভুগেছেন। যাদের কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক মনে করেন, তরুণদের হতাশা, কর্মসংস্থান সংকট, প্রেম ঘটিত জটিলতা ও পারিবারিক চাপ ইত্যাদি কারণে মানসিক চাপ বাড়ছে। কার্যকর কাউন্সিলিং না থাকলে এটি ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন মহলের মতে, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কোনো বিলাসিতা নয়, বরং শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার। শুধু একজন নয়, একটি পূর্ণাঙ্গ পেশাদার কাউন্সিলিং টিম গঠন করাই এখন সময়ের দাবি।
শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, একাডেমিক কাউন্সিলিংয়ের মতো মানসিক কাউন্সিলিংকেও গুরুত্ব দেওয়া হলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব। পেশাদার কাউন্সিলর নিয়োগ ও কাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়া শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এখন সময় প্রতিশ্রুতির নয়, কার্যকর উদ্যোগের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মনোবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, “কাউন্সিলিং মানে একদিনের সেশন নয়। এটি পেশাদার, ধৈর্যশীল ও অভিজ্ঞ হাতে পরিচালিত হওয়া দরকার। শিক্ষার্থীদের দিয়ে এই সেবা চালানো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।”
কাউন্সিলিং সেন্টার পরিচালনা কমিটির দায়িত্বে থাকা মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফারাজানা আহমেদ বলেন, “আমাদের এখানে একজন অভিজ্ঞ পেশাদার কাউন্সিলর নিয়োগ দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে যারা দায়িত্বে আছেন, তারা খণ্ডকালীন শিক্ষার্থী। সেমিস্টার চললে সেবায় বিঘ্ন ঘটে। তবুও তারা নিজ উদ্যোগে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আমরা সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী হতাশা, সম্পর্কের জটিলতা ও পারিবারিক সমস্যার কারণে সাহায্য নিতে আসে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, “আমরা কাউন্সিলিং সেবার মানোন্নয়নে কাজ করছি। মনোবিজ্ঞান ছাড়াও সমাজকর্ম বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করে আরও কার্যকর সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা করছি। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে একটি বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
তবে পেশাদার কাউন্সিলর নিয়োগ নিয়ে তিনি বলেন, “এটি সময়সাপেক্ষ। আর আপাতত তা সম্ভবও নয়।”