সেতু-কালভার্ট বন্ধ করে বাড়ি চাষাবাদ ঝুঁকিতে
Published: 10th, May 2025 GMT
বাড়িঘর নির্মাণ করায় ইতোমধ্যে তিনটি সেতু-কালভার্ট বন্ধ হয়ে গেছে। আরও একটি কালভার্ট বন্ধ করে স্থাপনা নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। এটি বন্ধ হলে দুই বিলের ৭ হাজার একর জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে চাষাবাদ বন্ধের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
এই চিত্র গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর উত্তরপাড়া গ্রামের দুটি বিলের।
সেতু-কালভার্ট রক্ষায় গোপীনাথপুর উত্তরপাড়া গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে গোপীনাথপুর উত্তরপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক থেকে একটি সড়ক এ গ্রামের দিকে চলে গেছে। এ সড়কের প্রথম মোড়ে একটি বক্স কালভার্ট রয়েছে। এ কালভার্ট দিয়ে বিলে পানি প্রবাহিত হয়। কালভার্টের দক্ষিণ পাশে মাটি ফেলে একটি অংশ ভরাট করা হয়েছে। তারও দক্ষিণে জমির মালিক শহিদ মিয়া বালু দিয়ে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়েছেন। এতে কালভার্ট দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন কালভার্ট ঘেঁষে বালু ফেলে ভরাট করবেন শহিদ। নির্মাণ করবেন বাড়ি। তাঁর পাশের জমির মালিক লিয়াকত খাঁ বাঁশ দিয়ে জমি ঘিরেছেন। এখন বালু ফেলে জমি ভরাট করবেন। তিনিও সেখানে বাড়িঘর নির্মাণ করবেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া ওই সড়কের রাজ্জাক শরীফ, লায়েক আলী মিয়া ও তারেক মিয়ার বাড়ির সামনের সেতু-কালভার্ট বাড়িঘর নির্মাণ করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
গোপীনাথপুর উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মশিউর রহমান বলেন, এটি নিম্ন জলাভূমি বা বিলবেষ্টিত গ্রাম। ১৯৮৪ সালে এ গ্রামের মধ্য দিয়ে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করে সরকার। সড়কের উত্তর পাশে গোপীনাথপুর উত্তরপাড়া ও ধলগ্রাম বিল। এ বিলে সাড়ে ৩ হাজার একর ফসলি জমি। সড়কের দক্ষিণ পাশে গোপীনাথপুর উত্তরপাড়া ও কাজীপাড়া বিল। এ বিলেও সাড়ে ৩ হাজার একর ফসলি জমি রয়েছে। বিল দুটিতে চাষাবাদের পানিপ্রবাহ ঠিক রাখতে সড়কে সেতু-কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। বিলের জমিতে সারা বছর ধান, পাট, সরিষা, তিল, মসুর, খেসারিসহ বিভিন্ন ফসল ফলে। এ ফসল দিয়ে গ্রামের ৮০ ভাগ পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে।
ওই গ্রামের কৃষক শাহ আলম মোল্লা বলেন, সড়ক নির্মাণের আগে গ্রামের বাড়িগুলো বিলের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। তখন বর্ষায় নৌকায় ও শুকনা মৌসুমে হেঁটে বাড়ি যেতে হতো। প্রতিটি পরিবারে লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন খালবিলে নৌকা চলে না। তাই সড়কের পাশে অনেকে সেতু-কালভার্ট বন্ধ করে বাড়িঘর নির্মাণ করছেন। এতে পানির অভাবে তারা চাষাবাদ বন্ধের আশঙ্কা করছেন। বিলে ফসল না হলে তাদের জীবিকা বন্ধ হয়ে যাবে।
গোপীনাথপুর উত্তরপাড়া গ্রামের কৃষক কেরামত আলী সরদার বলেন, বাড়িঘর করে আগে তিনটি সেতু-কালভার্ট বন্ধ করা হয়েছে। এখন আরও একটি কালভার্ট বন্ধ করা হচ্ছে। এতে দুটি বিলে জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। এমন অবস্থার সৃষ্টি হলে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাবে। এতে এ গ্রামের ৮০ ভাগ মানুষ জীবন-জীবিকা হারাবে। সুতরাং কৃষির স্বার্থে সেতু-কালভার্ট রক্ষা করতে হবে।
কালভার্টে মাটি ফেলার কথা স্বীকার করে শহিদ মিয়া বলেন, এ রাস্তার রাজ্জাক শরীফ, লায়েক আলী মিয়া ও তারেক মিয়ার বাড়ির সামনের সেতু-কালভার্ট বাড়িঘর নির্মাণ করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন তিনি তাঁর পৈতৃক সম্পত্তিতে
বাড়িঘর নির্মাণ করবেন। কালভার্ট তাদের জমির পাশে পড়েছে।
পাশের জমির মালিক লিয়াকত খাঁ জানান, তিনি গরিব মানুষ। তাঁর ভাগে সামান্য পৈতৃক জায়গা পড়েছে। তাঁর আর কোনো জমি নেই। তাই এ জমিতেই তিনি বালু ভরাট করে বাড়িঘর করবেন।
গোপালগঞ্জ সদর ইউএনও এম রকিবুল হাসান বলেন, গত শুক্রবার অভিযোগ পেয়েছি।
ঘটনাস্থলে পরিদর্শন টিম যাবে। পরিদর্শন টিমের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়াকে ইতিবাচক মনে করে বিএনপি
আইনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রক্রিয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, একমাত্র বিএনপিই আইন-আদালতের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিচার চেয়েছে। দেরি হলেও সরকার সেই পথে এগিয়েছে।
গতকাল শনিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ অভিমত দেন দলের নেতারা। বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। রাত সাড়ে ১০টায় বৈঠক শুরু হয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা চলে। বৈঠক শেষে বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা এসব তথ্য জানান।
এদিকে জুলাই গণহত্যার বিচার না হওয়ায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকার। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী আনা হয়েছে। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক দলকে শাস্তি দেওয়া যাবে। গতকাল রাতে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়।
গতকাল রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আদালতের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে করার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাতে বিএনপির সম্মতি থাকবে। এ বিষয়ে আজ রোববার বিএনপি বিবৃতির মাধ্যমে তাদের অবস্থান জানাবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে জাতীয় নাগরিক পার্টির আন্দোলন এবং সরকারের সিদ্ধান্ত ‘ফ্রেন্ডলি ম্যাচের’ মতো। কারণ নাগরিক পার্টি সরকারের দল।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে লিখিতভাবে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগকে বিচারের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছিল বিএনপি।