‘সীমান্তপথে ভারত পুশ-ইন করছে, কোথায় পাওয়ারফুল’ উপদেষ্টা খোদা বখস?’
Published: 11th, May 2025 GMT
বাংলাদেশের সীমান্তপথে ভারতীয় নাগরিকদের পুশ-ইন চলছে অথচ সরকার এ বিষয়ে একটি কথাও বলছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। একই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন সরকারের ‘পাওয়ারফুল’ উপদেষ্টা খোদা বখস কোথায় আছেন?
আজ রোববার দুপুরে বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ফোরামের আয়োজনে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘শুনেছি একজন খুব শক্তিশালী উপদেষ্টা রয়েছেন- খোদা বখস। তিনি নাকি স্বরাষ্ট্র বিষয়ক সব কিছু দেখেন এবং খুবই ক্ষমতাবান। আবার শোনা যায়, তিনি নাকি বিএনপিকে খুব একটা পছন্দ করেন না। নিজের মতো করে সব গুছিয়ে রাখেন। তাহলে এত ক্ষমতাবান উপদেষ্টা থাকার পরও আজ সীমান্তে ভারতীয় নাগরিকদের পুশ-ইনের মতো ঘটনা ঘটছে কেন? সাতক্ষীরা, কুড়িগ্রাম, খাগড়াছড়ি, মৌলভীবাজার—এসব সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে লোক ঢোকানো হচ্ছে, সরকার কিছু বলছে না। কোথায় খোদা বখস? কোথায় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়?’
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘কোথায় সরকার? তারা তো পুশ-ইন বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এগুলো তো বিরাট অন্যায়। কোথা থেকে এই রাষ্ট্রীয় অপরাধগুলো করা হচ্ছে? । বাংলাদেশের জনগণকে কি এত দুর্বল জাতি ভাবছেন? মুক্তিযুদ্ধের দেশ, যে জাতি ৩০ লাখ শহীদ আর দেড় হাজার শিশু-কিশোরের রক্ত দিয়েছে, সে জাতিকে উপেক্ষা করে সীমান্ত দিয়ে লোক ঢুকানো হবে আর সরকার কিছুই বলবে না? তাহলে তো শেখ হাসিনা যেমন করেছেন আপনারাও তাই করছেন। আমাদের সীমান্তে লোক হত্যা করলে শেখ হাসিনা একটা প্রতিবাদও করতেন না, বর্তমান সরকারও আজ নিরুত্তর।’
রিজভীর অভিযোগ, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে তারা ব্যর্থ। “সরকার সংস্কারের কথা বলেছিল, জনগণ তা মেনে নিয়েছিল। বলা হয়েছিল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। কিন্তু এখনও সে বিষয়ে সরকার নীরব। কেন এই নিশ্চুপতা?”—জানতে চান তিনি।
রিজভী অভিযোগ করেন, ‘একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি, যিনি খুনের মামলার আসামি, তিনি দেশে ছিলেন—এনএসআই ও ডিজিএফআই ক্লিয়ারেন্স ছাড়া তিনি বিদেশে গেলেন কীভাবে? তার তো লাল পাসপোর্ট রয়েছে। সেটি বাতিল করা হয়নি কেন?’
তিনি ওই রাষ্ট্রপতিকে ফ্যাসিবাদের প্রতিনিধি আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘তিনি শেখ হাসিনার মানসিকতার প্রতিচ্ছবি ছিলেন। তাহলে এমন একজন ব্যক্তি কীভাবে দেশ ছাড়লেন? সরকারের জানা ছিল না?’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য রমেশ দত্ত, বৌদ্ধ ফোরামের নেতা সুশীল বড়ুয়া, পার্থ প্রতিম বড়ুয়া অপু প্রমুখ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ উপদ ষ ট সরক র র প শ ইন
এছাড়াও পড়ুন:
রত্নগর্ভা সম্মাননা পেলেন ৩৫ মা
নাটকে আমাকে প্রায়ই ‘মা’ ডাকতে হয়। তখন সঙ্গে সঙ্গে আমার মায়ের কথা মনে পড়ে। পৃথিবীর প্রতিটি মা-ই তো রত্নগর্ভা। যেকোনো একজন মাকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনার সন্তান কী? তিনি বলবেন, সে তো আমার রত্ন। আন্তর্জাতিক মা দিবসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মা সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে এসব কথা বলেন বরেণ্য অভিনেতা আবুল হায়াত। অনুষ্ঠানে রত্নগর্ভা ৩৫ মাকে সম্মাননা দেয় আজাদ প্রোডাক্টস।
আজ রোববার ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘রত্নগর্ভা মা ২০২৩-২৪’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ২০০৩ সাল থেকে আজাদ প্রোডাক্টস এই সম্মাননা দিয়ে আসছে। অনুষ্ঠান শুরু হয় জেমসের বিখ্যাত ‘মা’ গানটি দিয়ে।
এ বছর সাধারণ বিভাগে ২৫ জন আর বিশেষ বিভাগে ১০ জন মা সম্মাননা পেয়েছেন। সাধারণ বিভাগে রত্নগর্ভা সম্মাননা পাওয়া মায়েরা হলেন মারতুজা নুসরাত, ফরিদা বেগম, রাশিদা বেগম, নাসিমা মান্নান চৌধুরী, বিবি মরিয়ম, রোকেয়া খানম, পিয়ারা বেগম, আফরোজা পারুল, রোকসানা আক্তার, হাসিনা আক্তার, বেগম সালেহা করিম, ফাতিমা নার্গিস, আনজুমান আরা বেগম, সালমা আলম, জোবেদা খানম, রাজিয়া বেগম, মোসাম্মৎ মাহমুদা বেগম, কিশোয়ার জাহান, ফাতেমা বেগম, সুরাইয়া চৌধুরী, রাবেয়া পারভীন, আদরিনী সরকার, হাছিনা আক্তার, মনোয়ারা বেগম ও হালিমা আক্তার।
বিশেষ বিভাগে সম্মাননা পেয়েছেন সাহানা সিরাজ, সাহানা আকতার চৌধুরী, মুসলিমা খানম, অলকা ঘোষ, স্মৃতি কণা বড়ুয়া, শামছুন্নাহার হোসেন, খাদিজা খন্দকার, ফরিদা বেগম, ফাতেমা আলম, সৈয়দা দিলরুবা খানম। ‘মাই ড্যাড ওয়ান্ডারফুল’ পুরস্কার পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক আরেফিন বাদল।
এবারের রত্নগর্ভা মায়েদের একজন রোকেয়া খানম। হাতিয়া দ্বীপের এই নারী উচ্চমাধ্যমিকের পর আর পড়তে পারেননি। চাকরি করায় সেখানেও দিতে হতো যথেষ্ট সময়। তবে এত ব্যস্ততার মধ্যেও সন্তানের লেখাপড়ায় কোনো ছাড় দেননি এই মা। তাঁর তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে একজন একটি বেসরকারি প্রযুক্তি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, একজন সরকারি একটি অধিদপ্তরের উপপরিচালক, একজন ব্যবসায়ী আর মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি করছেন।
রোকেয়া খানম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওরা যখন ছোট ছিল, তখন থেকেই ওদের উচ্চশিক্ষিত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। হাতিয়ায় যতটুকু সম্ভব পড়িয়েছি। এরপর বাইরে পাঠিয়েছি। এখন ওরা প্রতিষ্ঠিত। ভালো লাগে যে আমরা সবাই মিলে ঢাকায় একসঙ্গে থাকি।’
মাকে নিয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উপপরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা হাতিয়ার বাসিন্দা। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত মা যত্ন নিয়ে সবার দেখাশোনা করেছেন। এরপর যে যার মতো সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। এই পুরো যাত্রাটাই মায়ের অবদানে।’
অনুষ্ঠানে পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ বলেন, ‘আমার স্ত্রী সাহানা সিরাজ আজ তাঁর সন্তানের জন্য রত্নগর্ভা মা পুরস্কার পাচ্ছেন, এটা আমার জন্য আনন্দের সংবাদ।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান সময়ের এই অস্থির পৃথিবীতে খ্যাতি অর্জন, অর্থ উপার্জনের যে প্রতিযোগিতায় সন্তানদের ধাবিত করছি, তা কখনো সভ্যতার কল্যাণ আনতে পারে না। কতটা খ্যাতিমান সন্তান তৈরি করলাম, তার চেয়ে মানবিক, সামাজিক সচেতনতাবোধ ও ন্যায়পরায়ণ সন্তানকে আমি বেশি প্রাধান্য দিই।’
রত্নগর্ভা মা সম্মাননা পাওয়া মায়েদের একাংশ। রোববার ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী মিলনায়তনে