মা ও শিক্ষিকা- এই দুইটি পরিচয়ই নারীজীবনের দুটি পবিত্রতম ও মহত্তম ভূমিকাকে প্রতিনিধিত্ব করে। একজন মা তার সন্তানের জন্য যেমন নিরাপদ আশ্রয়, ভালোবাসার উৎস এবং নৈতিকতার পথ প্রদর্শক। তেমনি একজন শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনের পথে প্রেরণা, সহানুভূতির প্রতীক এবং ভবিষ্যৎ নির্মাণের কারিগর।
এই দুইটি ভূমিকাকে সমান দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করছেন তিতুমীর কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মমতাজ মহল নীলা।
মমতাজ মহল নীলা বলেন, “একজন মা যেমন সন্তানের যত্নে সর্বদা ব্যস্ত, তেমনি একজন শিক্ষিকাও তার শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিকাশে দায়িত্ববান। আমি এই দুই পরিচয়কেই উপভোগ করি এবং এটিই আমার জীবনের স্বার্থকতা।”
আরো পড়ুন:
মা তোমাকে খুব ভালোবাসি
স্যালুট সূর্যদেবী, তোমাকে ভালোবাসি
মা হওয়ার অভিজ্ঞতা তার শিক্ষকতার ধরণেও পরিবর্তন এনেছে। তিনি মনে করেন, মা হওয়ার পর আত্মবিশ্বাস, সহনশীলতা, এবং আন্তরিকতা অনেক বেড়েছে। একটি শিশু যেমন নির্ভর করে তার মায়ের ওপর, শিক্ষার্থীরাও চায় একজন ভালো শ্রোতা ও দিকনির্দেশক।
তার মতে, একজন মায়ের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হওয়া উচিত মানবিকতা। শিশুর ভাষা শেখা থেকে শুরু করে তার মূল্যবোধ, নৈতিকতা, সহমর্মিতা এবং আচরণ গঠনের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু পরিবার। আর সেই কেন্দ্রের প্রাণ হচ্ছে মা। এই বিবেচনায় একজন মা কেবল জন্মদাত্রী নন, বরং একজন অনন্য নৈতিক রূপকার।
শিক্ষিকা ও মা এই দুই চ্যালেঞ্জিং পরিচয়ের মাঝে সময় ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নীলা বলেন, “আমি ২৪ ঘণ্টাকে ৮-৮-৮ ভাগ করি। আট ঘণ্টা চাকরি, আট ঘণ্টা সন্তানদের জন্য এবং বাকি সময় প্রয়োজনীয় বিশ্রাম ও ব্যক্তিগত কাজের জন্য। যদিও এটি সবসময় সহজ হয় না। তবে সন্তানের মুখের হাসিই সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয়।”
তিনি বলেন, “দুটো ভূমিকারই আলাদা আলাদা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সন্তান যেমন মায়ের কাছ থেকে ভালোবাসা ও শিখন পায়, তেমনি শিক্ষার্থীরাও শিক্ষিকার কাছ থেকে জ্ঞান ও মূল্যবোধ গ্রহণ করে। আমার সন্তান আমাকে সারাজীবন ‘মা’ বলে ডাকবে। আর আমার শিক্ষার্থীরাও আমায় জীবনভর মনে রাখবে এক দিশারীর মতো।”
নীলার জীবনের অন্যতম আবেগঘন মুহূর্ত ছিল তার মায়ের 'রত্নগর্ভা পুরস্কার' প্রাপ্তি। তিনি বলেন, “মা দিবসে আমার মা এই সম্মাননা পান, যা আমাদের পুরো পরিবারের জন্য ছিল গর্বের। মা হিসেবে তার আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের স্বীকৃতি পেয়ে আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি সুন্দর উপলক্ষ পেয়েছি।”
মা দিবসের প্রেক্ষাপটে নীলা বলেন, “এই দিনটি কেবল উদযাপনের নয়, বরং মায়েদের আত্মত্যাগ, ভালোবাসা ও মানবিক ভূমিকার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি উপলক্ষ। আমি নিজেও একজন মা হিসেবে বুঝি, একজন সন্তানের জীবনে মা কী অসীম প্রভাব রাখে। আমার সন্তান এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার বার্তা থাকবে ‘বি দ্য বেস্ট ভার্সন অফ ইউরসেল্ফ’। প্রতিদিন নিজেকে একটু করে উন্নত করো, আত্মনির্ভর হও, মানবিক হও, আর সমাজের জন্য একজন দায়িত্বশীল মানুষ হয়ে ওঠো। এই চেতনাই হোক মা দিবসের প্রকৃত শিক্ষা।”
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম দ বস একজন ম র জন য র জ বন এই দ ই
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েল-ভারত যেভাবে পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করতে চেয়েছিল
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র সাবেক প্রধান জর্জ টেনেট তাঁকে ‘ওসামা বিন লাদেনের মতোই বিপজ্জনক’ বলে মনে করতেন এবং মোসাদের সাবেক প্রধান শাবতাই শ্যাভিট তাঁকে হত্যা না করার জন্য আফসোস করেছিলেন। তিনি হচ্ছে আব্দুল কাদির খান, পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির জনক। পাকিস্তানের প্রায় ২৫০ মিলিয়ন পাকিস্তানি নাগরিকদের কাছে একজন কিংবদন্তি, একজন জাতীয় বীর। এই পরমাণুবিজ্ঞানী ১৯৩৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৮৫ বছর বয়সে ২০২১ সালে মারা যান।
আব্দুল কাদির খান ইরান, লিবিয়া এবং উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক কর্মসূচিতে সহায়তার জন্য একটি গোপন অত্যাধুনিক নেটওয়ার্কও পরিচালনা করেছিলেন। এ দেশগুলোর মধ্যে উত্তর কোরিয়াই শুধু পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হতে সক্ষম হয়েছে।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তারা পাকিস্তানকে পারমাণবিক শক্তি হওয়া থেকে বিরত রাখতে নানা গুপ্তহত্যার চেষ্টা করেছিল এবং হুমকি দিয়েছিল। ইসরায়েল নিজেও পারমাণবিক শক্তির অধিকারী দেশ, যদিও তারা তা কখনো স্বীকার করে না।
১৯৮০-এর দশকে ইসরায়েল ভারতের সহায়তায় পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা ফেলার একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছিল। যদিও ভারত সরকার সেই পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত বাতিল করে দেয়।
আব্দুল কাদির খান বিশ্বাস করতেন যে একটি পারমাণবিক বোমা তৈরি করে তিনি তাঁর দেশকে বিদেশি হুমকি থেকে বিশেষ করে পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী ভারত থেকে রক্ষা করেছেন। আজ পাকিস্তানি নাগরিকেরা তেমনটিই মনে করে।
‘কেন একটি ইসলামিক বোমা নয়?’প্রতিবেশী দেশ ভারত যখন প্রথম পারমাণবিক বোমা তৈরি করে পাকিস্তানও তখন এমন বোমা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৭৪ সালের ১৮ মে ভারত তার প্রথম পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা করে, যার সাংকেতিক নাম ছিল ‘স্মাইলিং বুদ্ধ’। এরপর পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো অবিলম্বে তাঁর নিজের দেশের জন্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির শপথ নেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা ঘাস বা লতাপাতা খাব, এমনকি ক্ষুধার্ত থাকব, কিন্তু আমরা নিজেদের জন্য একটি পারমাণবিক বোমা তৈরি করব।’
তিনি ঘোষণা করেন, ‘একটি খ্রিষ্টান বোমা আছে, একটি ইহুদি বোমা আছে এবং এখন একটি হিন্দু বোমাও আছে। কেন একটি ইসলামিক বোমা থাকবে না?’
ব্রিটিশ ভারতে জন্মগ্রহণ করা আব্দুল কাদির ১৯৬০ সালে করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান নিয়ে ডিগ্রি নেন। এরপর বার্লিনে মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (ধাতু প্রকৌশল বিদ্যা) নিয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামেও পড়াশোনা করেন।
১৯৭৪ সালে আব্দুল কাদির আমস্টারডামের অন্যতম পারমাণবিক জ্বালানি সংস্থা ইউরেনকোর একজন সাবকন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করছিলেন। কোম্পানিটি ইউরোপের পারমাণবিক চুল্লির জন্য পারমাণবিক জ্বালানি হিসেবে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সরবরাহ করত।
আব্দুল কাদির ইউরেনকোর গোপন এলাকায় প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিলেন, যেখান ছিল বিশ্বের সবচেয়ে সেরা সেন্ট্রিফিউজের ব্লুপ্রিন্ট। সেখানে প্রাকৃতিক ইউরেনিয়ামকে পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য সমৃদ্ধ করা হতো এবং তা পারমাণবিক বোমার জ্বালানিতে রূপান্তরিত করা হতো।
১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে তিনি নেদারল্যান্ডস থেকে হঠাৎ করে পাকিস্তানে চলে যান। বিষয়টি ছিল অনেকটা রহস্যময়। যাওয়ার সময় তিনি বলে যান, ‘পাকিস্তানে এমন একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে যা আমি প্রত্যাখ্যান করতে পারি না।’
পরে আব্দুল কাদিরের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডস থেকে ইউরেনিয়াম সেন্ট্রিফিউজের একটি ব্লুপ্রিন্ট চুরি করার অভিযোগ ওঠে, যা ইউরেনিয়ামকে অস্ত্র-গ্রেডের জ্বালানিতে পরিণত করতে পারে।
সেই বছরই জুলাই মাসে তিনি পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে একটি গবেষণা পরীক্ষাগার স্থাপন করেন, যেখানে পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম তৈরি করা শুরু হয়।
জুলফিকার আলী, ইন্দিরা গান্ধী ও মুয়াম্মার গাদ্দাফি