কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘ বিতর্কে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা অনেক দশক ধরেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটা নিষিদ্ধ বিষয় বা ট্যাবু হয়ে রয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ভারতের একটি অতি স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিয়ে ফেলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি তো অভিনব পথে কূটনীতির জন্য পরিচিতই। গত শনিবার তিনি সামাজিক মাধ্যমে ঘোষণা দেন, চার দিন ধরে সীমান্ত সংঘর্ষ চালানোর পর ভারত আর পাকিস্তান মার্কিন মধ্যস্থতায় ‘সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি’তে রাজি হয়েছে। পরে আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘কাশ্মীর নিয়ে হাজার বছর পর হলেও কোনো সমাধানে পৌঁছনো যায় কিনা, তা দেখতে আমি আপনাদের দুই পক্ষের সঙ্গেই একযোগে কাজ করব।’

গতকাল মঙ্গলবার বিবিসির বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, কাশ্মীর নিয়ে বিতর্কটা সেই ১৯৪৭-এ শুরু, যখন ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হয়। সম্প্রতি ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে। সর্বশেষ সংঘাত গড়ায় সামরিক স্থাপনায় হামলা-পাল্টা হামলায়। এ অবস্থায় ট্রাম্প মধ্যস্থতায় এগিয়ে আসেন। সেই সঙ্গে তিনি কাশ্মীর সংকট মোকাবিলায় সমঝোতার প্রস্তাব দেন। 

ভারতের সাবেক বিদেশ সচিব শ্যাম সরন বিবিসিকে বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই ভারত এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানাবে না। বহু বছর ধরে আমাদের ঘোষিত অবস্থানের বিপরীত এ প্রস্তাবটি।’ তবে ইসলামাবাদ ট্রাম্পের প্রস্তাবকে স্বাগত জানায়। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দক্ষিণ এশিয়া ও বৃহত্তর অঞ্চলে শান্তি-নিরাপত্তার ওপর দীর্ঘ সময় ধরে যে বিষয়টি গুরুতর প্রভাব ফেলছে, সেই জম্মু-কাশ্মীরের বিতর্ক সমাধানে সহায়তার যে ইচ্ছা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রকাশ করেছেন, তাকে আমরা স্বাগত জানাই।’

সমালোচনা আসছে ভারতে বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে। দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে। তারা বলছে, ওয়াশিংটন ডিসি থেকে যুদ্ধবিরতির প্রথম ঘোষণার বিষয়ে একটি সর্বদলীয় বৈঠকও ডাকার আহ্বান জানিয়েছে তারা। কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, ‘আমরা কি তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার পথ খুলে দিয়েছি? ভারতের জাতীয় কংগ্রেস জানতে চায়, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা আবারও চালু হচ্ছে কিনা।’

কাশ্মীর নিয়ে ইসলামাবাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে অস্বীকার করেছে দিল্লি। ঐতিহাসিকভাবে ভারত যে কোনো তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার বিরোধিতা করে এসেছে। এর পেছনে দুই দেশের মধ্যে ১৯৭২ সালে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির শর্ত দেখিয়ে থাকে ভারত। সম্প্রতি সিন্ধুর পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিলে পাকিস্তানও ওই চুক্তি (সিমলা চুক্তি) স্থগিত করে।  

পাকিস্তানের ১১ সেনা নিহত ও ৭৮ জন আহত: আইএসপিআর

দ্য ডন অনলাইন জানায়, পাকিস্তানে সম্প্রতি ভারতের হামলায় দেশটির ৪০ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর ১১ সদস্যও জীবন দিয়েছেন। আহত হন আরও ৭৮ জন। গতকাল মঙ্গলবার পাকিস্তান আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়। এতে বলা হয়, নিহতদের মধ্যে সাতজন নারী ও ১৫টি শিশু রয়েছে। 

এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ঘোষণা দিয়েছেন, অপারেশন বুনিয়ান উন মারসুসের ‘গৌরবময় সাফল্য’কে স্মরণ করে প্রতি বছর ১০ মে ‘ইয়াওম-এ-মারকা-ই-হক’পালিত হবে।


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র প রস ত ব

এছাড়াও পড়ুন:

পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেনি: আইএসপিআর প্রধান

টানা চার দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ভারত ও পাকিস্তান গত শনিবার (১০ মে) যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় কূটনৈতিক তৎপরতায় এই যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়েছে।

তবে পাকিস্তান দাবি করে বলছে যে, তারা যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেনি বরং ভারতীয়দের অনুরোধে সাড়া দিয়েছে।

সোমবার (১২ মে) পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। 

আরো পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে কার কেমন ক্ষতি হলো?

সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত: যুক্তরাষ্ট্রকে হস্তক্ষেপের আহ্বান

প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর মিডিয়া উইং আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে পাকিস্তানের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেছেন, “পাকিস্তান কখনো কোনো যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেনি।”

সশস্ত্র বাহিনীর কৌশলগত পদক্ষেপ ও যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানাতে রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিআর প্রধান বলেন,  “৬ ও ৭ মে রাতে, সেই জঘন্য ও কাপুরুষোচিত হামলার পর, ভারতীয়রা (যুদ্ধবিরতির) অনুরোধ করে। পাকিস্তান খুব স্পষ্টভাবে জানায়- এই পদক্ষেপের প্রাপ্য জবাব দেওয়ার পরেই আমরা বিবেচনা করবো।”

লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরীর মতে, ‘অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস’- এর অধীনে পাকিস্তান তাদের প্রতিশোধমূলক অভিযান পরিচালনা করার পরই ইসলামাবাদ ভারতীয় প্রস্তাবের প্রতি সাড়া দিয়েছে।

তিনি বলেন,  “সুতরাং ১০ মে, প্রতিক্রিয়া ও প্রতিশোধের পরে...এবং আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের অনুরোধ ও হস্তক্ষেপের ভিত্তিতে, আমরা ভারতীয়দের ইতিমধ্যেই করা অনুরোধের প্রতি সাড়া দিয়েছি।”

তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত ভাইরাল দাবিরও জবাব দেন যে, পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে একজন ভারতীয় পাইলট আটক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, “আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, পাকিস্তানে কোনো ভারতীয় পাইলট আটক নেই।” তিনি বলেন, “এগুলো সবই ভুয়া খবর এবং নেতিবাচক প্রচারণার অংশ, যা একাধিক ভারতীয় উৎস থেকে তৈরি করা হয়েছে।”

দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার উচ্চ ঝুঁকি তুলে ধরে, পাকিস্তান আইএসপিআর প্রধান ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের ধারণাটিকে ‘অকল্পনীয়’ এবং ‘নিছক বোকামি’ বলে অভিহিত করেন।

তিনি বলেন, “দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী পারমাণবিক শক্তির মধ্যে সংঘাতে...এই ধরনের সংঘাত আসলে একটি অযৌক্তিকতা।

তিনি আরো বলেন, “ভারত ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে, এই ধরনের সংঘাত ১.৬ বিলিয়নেরও বেশি মানুষের বিপদ ডেকে আনতে পারে।”

আইএসপিআর প্রধান বলেন, “বাস্তবে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের কোনো স্থান নেই এবং যদি কেউ যুদ্ধের জন্য এই স্থান তৈরি করতে চায়, তবে সে আসলে পারস্পরিক ধ্বংসের জন্য স্থান তৈরি করছে।”

সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী জানান, ভারতের উস্কানি সত্ত্বেও পাকিস্তান পুরো সংঘাত জুড়ে কৌশলগত পরিপক্কতার সঙ্গে কাজ করেছে। তিনি বলেন, “ভারতীয় আগ্রাসনের জবাব সতর্কতার সঙ্গে পরিচালিত হয়েছে যাতে অনিয়ন্ত্রিত উত্তেজনা এড়ানো যায় এবং একই সাথে প্রচলিত সামরিক বাহিনী ব্যবহার করে ‘দ্বিগুণ’ উচ্চতর জবাব দেওয়া হয়েছে।”

আইএসপিআর প্রধান ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ‘অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস’কে ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতি পাকিস্তানের একটি ব্যাপক জাতীয় প্রতিক্রিয়া হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “এই অভিযানের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনী জাতির কাছে দেওয়া প্রতিটি প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে।”

তিনি বলেন, “অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস জাতীয় শক্তির সকল উপাদানের একত্রিত হওয়ার এক দুর্দান্ত উদাহরণ। পাকিস্তানি জনগণের অপ্রতিরোধ্য সমর্থনে, আমরা কার্যকরভাবে আমাদের জাতীয় সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা এবং আমাদের মহান মাতৃভূমির প্রতি প্রত্যক্ষ হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করেছি।” 

লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী পুনর্ব্যক্ত করেন যে, সংঘাতের শুরুতে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী তিনটি স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল: “আমরা ভারতীয় আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দেব। সেই জবাব আমাদের নিজস্ব পছন্দের সময়, স্থান এবং পদ্ধতিতে আসবে। এবং যখন আমরা পাল্টা আঘাত করব, তখন পুরো বিশ্ব জানবে- এটি এমন কিছু হবে না যা আপনাকে ভারতীয় মিডিয়ার কাছে বলতে হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এগুলো কেবল অভিপ্রায়ের বিবৃতি নয় বরং উদ্দেশ্য, যা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়েছে। আমরা এটাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম এবং তা পূরণ করেছি।”

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষে ১১ সেনা নিহত ও ৭৮ জন আহত হয়েছেন: পাকিস্তান আইএসপিআর
  • ভারতীয় হামলায় পাকিস্তানে ১১ সেনা নিহত, আহত ৭৮: আইএসপিআর
  • ভারতই যুদ্ধবিরতির আগ্রহ দেখিয়েছে, দাবি পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর
  • পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেনি: আইএসপিআর প্রধান