নিমন্ত্রণপত্রে শুধু সিনেমার নির্মাতা তানিম নূরের নাম; কিন্তু সিনেমার নাম কী, তা ছিল গোপন! তারপর ১৩ মে সন্ধ্যা। তখনো কেউ জানত না, কী নাম হতে যাচ্ছে ঈদের সবচেয়ে আলোচিত সিনেমার। হঠাৎ একে একে ঢুকলেন তারকারা—সবাই মুখোশ পরে! একটু পরে, মঞ্চে ডাক, মুখোশ খোলেন তাঁরা—আর দর্শকের চোখে বিস্ময়, সংবাদ সম্মেলন পরিণত হলো রীতিমতো তারকাদের মিলনমেলায়। একসঙ্গে এত তারকা! মঞ্চে দাঁড়িয়ে তানিম নূর ঘোষণা করলেন তাঁর সিনেমার নাম—‘উৎসব’।
স্লোগানটা অভিনব, ‘সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ—পরিবার ছাড়া দেখা নিষেধ’। স্লোগান কেন ‘পরিবার ছাড়া দেখা নিষেধ’? খুব সরল উত্তর, এ সিনেমা পরিবারের সঙ্গে দেখার জন্যই। নির্মাতা তানিম নূরের ভাষ্যে, ‘ঈদের সময় আমাদের দরকার এমন কিছু, যা সবাই মিলে দেখতে পারি, উপভোগ করতে পারি—তেমন সিনেমা এখন কম। এ ঘাটতি পূরণ করতেই করেছি “উৎসব”। পরিবার ছাড়া দেখার কথা বলা মানে আসলে সবার সঙ্গে মিলে দেখুন, উৎসব করুন!’

সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন দেশের নামকরা শিল্পীরা। সংবাদ সম্মেলনে সিনেমার নাম ঘোষণা এবং শিল্পীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। এ তালিকায় আছেন জাহিদ হাসান, জয়া আহসান, অপি করিম, চঞ্চল চৌধুরী, আফসানা মিমি, তারিক আনাম খান, আজাদ আবুল কালাম, ইন্তেখাব দিনার, সুনেরাহ বিনতে কামাল, সৌম্য জ্যোতি, সাদিয়া আয়মানসহ অনেকে।

এক সিনেমায় এত তারকার উপস্থিতি দেশীয় চলচ্চিত্রে বিরল। এক সিনেমায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এত অভিনয়শিল্পীর কাজ করার ঘটনা নেই বললেই চলে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সিনেমাটি উৎসবের আমেজে দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তি পাবে।

নির্মাতা তানিম নূর জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে পরিবার মিলে দেখার মতো একটা সিনেমা বানানোর ইচ্ছা ছিল তাঁর। সেই ইচ্ছা-স্বপ্ন তাড়া করতে গিয়েই নির্মিত হয়েছে উৎসব। অভিনেতা জাহিদ হাসান জানান, দীর্ঘদিন পর ‘উৎসব’ সিনেমায় অনেক শিল্পী মিলে কাজ করেছেন, সেটাই তাঁর কাছে আনন্দের। সিনেমাটি দেখে দর্শকেরাও অনেক আনন্দ পাবেন বলে মনে করেন অভিনেতা। তাঁর সমসাময়িক অভিনেত্রী আফসানা মিমির ভাষ্যে, ‘পরিবার ছাড়া দেখা নিষেধ—কথাটা আমাকে আন্দোলিত করেছে। কারণ, অনেক দিন ধরেই আমরা পরিবার নিয়ে দেখার মতো একটা সিনেমা খুঁজছিলাম।’
সিনেমাটি প্রযোজনা করেছে ডোপ প্রোডাকশনস, সহপ্রযোজনায় আছে চরকি। সিনেমার নাম ঘোষণার অনুষ্ঠানে ডোপ প্রোডাকশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘প্রথম সিনেমা আর সেটাই ঈদের জন্য। সবার সহযোগিতা ছাড়া এটা সম্ভব হতো না। সবাইকে ধন্যবাদ। ঈদের আমেজ থাকতে থাকতে আমরা দেশের বাইরেও “উৎসব” মুক্তি দিতে চাই।’

চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি বলেন, ‘“উৎসব” এই সময়ের খুব জরুরি সিনেমা। এখন কী ধরনের সিনেমা হচ্ছে, তা আমরা সবাই দেখছি। এর ভিড়ে সবাই মিলে দেখার মতো সিনেমা খুবই প্রয়োজন, বিশেষ করে ঈদের মতো সময়ে।’
তানিম নূরের উচ্ছ্বাসের কারণেই সিনেমাটিতে কাজ করতে রাজি হয়েছেন সবাই। একটা অসাধ্য সাধন হয়েছে বলে জানান আজাদ আবুল কালাম। ‘উৎসব’ সিনেমার সহযোগী প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আছে লাফিং এলিফ্যান্ট। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার সাকিব ফাহাদ বলেন, তানিম নূরের অদম্য ইচ্ছাই তাঁকে এ সিনেমায় যুক্ত হতে আগ্রহী করেছে।

সিনেমাটি নিয়ে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘এ সিনেমায় কাজ করেছি খুব আনন্দ নিয়ে। এ আনন্দ এবার আমরা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই।’ অপি করিম বলেন, ‘সবার সঙ্গে একই সিনেমায় কাজ করার লোভ সংবরণ করতে পারিনি। এই প্রজন্ম আমাদের তো একসঙ্গে কাজ করতে দেখেইনি। তাই ভাবলাম, এই প্রজন্ম “উৎসব” সিনেমার মধ্য দিয়ে দেখুক, আমরা এখনো আছি।’

এ সিনেমার বিষয়বস্তুর কথা মনে হলে শৈশবের কথাও মনে পড়ে ইন্তেখাব দিনারের। বলেন, ‘আমি এ সিনেমায় অনেক পরে যুক্ত হয়েছি। পরে যুক্ত করা হলেও আমি নির্মাতাকে ধন্যবাদ জানাই যে এমন একটা সিনেমায় আমি এত গুণী অভিনয়শিল্পী ও মানুষের সঙ্গে কাজ করছি।’ এত গুণী অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে কাজ করতে পারাটাকে নিজেদের বড় পাওয়া মনে করছেন সুনেরাহ বিনতে কামাল ও সাদিয়া আয়মান।
সিনেমাটির গল্প লিখেছেন তানিম নূর, আয়মান আসিব স্বাধীন, সুস্ময় সরকার ও শিমুল হক। ডিরক্টর অব ফটোগ্রাফি হিসেবে কাজ করেছেন রাশেদ জামান। সিনেমার নাম ঘোষণা ও শিল্পী পরিচিতির এ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কাজী নওশাবা, এফ এস নাঈম, সৈয়দ আহমেদ শাওকী, সালেহ সোবহান অনীম, ফাতেমা তুজ জোহরা ঐশীসহ অনেকে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র ছ ড় ক জ কর আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

রবীন্দ্রসরোবরে সুরে–ছন্দে জমজমাট নবান্ন উৎসব

অগ্রহায়ণের প্রথম দিনে নবান্ন উৎসব হলো রাজধানীতে। নাচ, গান, আবৃত্তি, আলোচনায় রোববার ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর উন্মুক্ত মঞ্চে উদ্‌যাপন করা হলো ঋতুভিত্তিক এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব।

হেমন্তের বেলা শেষে ষড়ঋতু উদ্‌যাপন জাতীয় পর্ষদ আয়োজিত নবান্ন উৎসবের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। এরপর ছিল ফারহানা করিমের নেতৃত্বে সমবেত নৃত্য।

নবান্নকথনে অংশ নেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এহসান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আবহমানকাল থেকে আমাদের কৃষিপ্রধান দেশে অগ্রহায়ণে কৃষকের ঘরে নতুন ফসল ওঠে। নতুন ধান তাঁদের জীবনে নিয়ে আসে সচ্ছলতা। নিয়ে আসে আনন্দ। তবে নবান্ন কেবল ফসলের আনন্দই নয়, আমাদের লোকসংস্কৃতির একটি শক্তিশালী উপাদান। নাগরিক পরিবেশে ঋতুভিত্তিক এই উৎসবকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বসন্ত, বর্ষা, শরৎসহ ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো আয়োজন করা হবে।’

নবান্ন উৎসব উপলক্ষে রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চ ও মঞ্চের চারপাশের স্থান বর্ণাঢ্যভাবে সাজিয়ে তোলা হয়। এর সঙ্গে ছিল ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলির স্টল।

আলোচনার পরে শুরু হয় গানের পালা। সাগর বাউল শুরু করেছিলেন ভবা পাগলার গান ‘বারে বারে আসা হবে না’ গেয়ে। এরপর তিনি পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘লোকে বলে লালন ফকির কোন জাতের ছেলে’ এবং রাধারমণ দত্তের গান ‘অবলারে কান্দাইয়া’। ঢোল, একতারার বাজনা, বাঁশির সুর আর লোকসাধকদের এসব মরমি গানে গানে সাগর বাউল শ্রোতাদের মাতিয়ে তোলেন।

অনুষ্ঠানে নজরুলসংগীত পরিবেশনের কথা ছিল শিল্পী ফেরদৌস আরার। তবে তিনি অসুস্থতার জন্য সংগীত পরিবেশন করতে পারেননি। এই চমৎকার অনুষ্ঠানের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ ও শ্রোতাদের শুভেচ্ছা জানান।

লোকশিল্পী আলেয়া বেগম পরিবেশন করেন ‘মালা কার লাগিয়া গাঁথি’সহ বেশ কয়েকটি গান। গানের ফাঁকে ফাঁকে ছিল আবৃত্তি ও কবিদের কবিতা পাঠ। এই পর্বে অংশ নেন কবি রাসেল রায়হান, রিক্তা রিনি, সানাউল্লাহ সাগর, জব্বার আল নাইম, ইসমত শিল্পীসহ অনেকে।

সংগীতশিল্পীদের মধ্যে কোহিনূর আক্তার পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘তিন পাগলের হইল মেলা’। ডলি মণ্ডল পরিবেশন করেন ‘সব লোক কয় লালন কী জাত সংসারে’। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ষড়ঋতু উদ্‌যাপন জাতীয় পর্ষদের সদস্যসচিব দীপান্ত রায়হান।

শীতের মৃদু পরশ লেগেছে রাজধানীর হাওয়ায়। হালকা কুয়াশাও জমছে আকাশে। নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশে সুরে-ছন্দে বেশ খানিকটা রাত অবধি জমজমাট হয়ে উঠেছিল এই নাগরিক নবান্ন উৎসব।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জানা গেল রাজামৌলির ছবির নাম, থাকছেন মহেশ বাবু-প্রিয়াঙ্কা
  • দেশের প্রথম নারী এভারেস্টজয়ী নিশাত মজুমদারের জয়ের গল্প আসছে
  • নানা আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আদি নববর্ষ’ উদ্‌যাপন
  • মুগ্ধ করল নবান্ন উৎসবে ধান কাটার প্রতিযোগিতা
  • রবীন্দ্রসরোবরে সুরে–ছন্দে জমজমাট নবান্ন উৎসব
  • নবান্নের পিঠায় সুবাসিত রাবি
  • ঘূর্ণির জাদুতে বিশ্বজয় 
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তারুণ্যের উৎসব রোববার
  • পয়লা অগ্রহায়ণে ‘নববর্ষ’ উদ্‌যাপন করবে ডাকসু
  • দিনভর আনন্দ আয়োজনে সাফল্য উদ্‌যাপন