বিদ্যুতের তারে প্রাণ হারাচ্ছে লজ্জাবতী বানর ও চশমাপরা হনুমান
Published: 15th, May 2025 GMT
মৌলভীবাজারের জুড়ীর লাঠিটিলা ও বড়লেখা রেঞ্জের মাধবকুণ্ড ইকোপার্কে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ১ বছরে ৭টি বিপন্ন প্রজাতির লজ্জাবতী বানর ও ৩টি চশমাপরা হনুমানের মৃত্যু হয়েছে। প্লাস্টিক কভার ছাড়া টানানো বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে এমন দুর্ঘটনা ঘটছে।
পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘পাথারিয়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিম’ ও স্থানীয়দের থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, গত ১২ মে মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের মূল ফটকের পাশে একটি প্রাপ্তবয়স্ক বানরের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ৩১ মার্চ ও ২৬ এপ্রিল আরও ২টি বানরের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদিকে লাঠিটিলা বন বিট এলাকায় এবছর আরও ৩টি ও বিনন্দপুরে ১টিসহ মোট লজ্জাবতী বানর ও লাঠিটিলা বনে আরও ৩টি চশমরাপরা হনুমানের মৃত্যু হয়েছে।
বন বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানান, মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের মূলফটক সংলগ্ন প্রায় অর্ধ কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে লজ্জাবতী বানরের গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল। সেখানে রাস্তার পাশ দিয়ে বিদ্যুতের কভার ছাড়া তার টানানো রয়েছে, তাতে মাঝে মধ্যেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাচ্ছে লজ্জাবতী বানর।
এ মৃত্যুর ঘটনায় পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘পাথারিয়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিম’ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তাদের অভিযোগ, এসব সংরক্ষিত বন এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন বিপন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী মারা গেছে। এ নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের পক্ষ থেকে পত্রের মাধ্যমে সংরক্ষিত বন এলাকায় ইনসুলেটেড (প্রলেপযুক্ত) তারের ব্যবস্থার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর দায় এড়াতে অল্প কিছু জায়গায় প্লাস্টিক মোড়ানো তার দিয়েছে। তবে বনের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
পরিবেশকর্মী আবিদ হুসাইন বলেন, “বিদ্যুৎস্পৃষ্টে চশমাপরা হনুমান মারা যাওয়ার খবর বরাবরই পাই। এমন ঘটনায় সম্প্রতি জুড়ী - বড়লেখা মিলে বেশ কয়েকটি চশমাপরা হনুমান মারা গেছে। ২০২৩ সালে বন বিভাগ পল্লী বিদ্যুৎ এর বড়লেখা জোনাল অফিসে আবেদন করেছিল বনের ভিতরের তারগুলো ইনসুলেটেড করার জন্য, কিন্তু নানা অজুহাতে তা বাস্তবায়ন করছে না তারা। এভাবে যদি প্রতিনিয়ত হনুমানগুলো মারা যায়, তবে প্রাণিটি বিলুপ্তির পথে চলে যাবে। আমি মনে করি যত দ্রুত সম্ভব এদের রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।”
লজ্জাবতী বানর গবেষণা ও সংরক্ষণ প্রকল্পের মুখ্য গবেষক সাবিত হাসান বলেন, “লজ্জাবতী বানর হুমকির মুখে পড়ার অন্যতম কারণ, নির্বিচারে বন উজাড়, পাচার, ঔষধ হিসাবে ব্যবহার ও বিদ্যুতের ঝুঁকিপূর্ণ তার। এছাড়া রাস্তার দুপাশের গাছের মধ্যকার ডাল (ক্যানোপি) কেটে সংযোগ নষ্ট হওয়ায় বাড়ছে রাস্তায় বানরের দুর্ঘটনার ঝুঁকি। এসব ঝুঁকি থেকে লজ্জাবতী বানরসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের রক্ষা করতে এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বনের মধ্যেকার বিদ্যুতের তার ঝুঁকিমুক্ত করতে হবে। একই সাথে রাস্তার দুই ধারের গাছের সংযোগ রক্ষা করতে হবে । বন সংরক্ষণে গাছ রোপণে লজ্জাবতী বানরের জন্য গাম বা আঠা উৎপাদনকারী গাছকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।”
এ বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বন্যপ্রাণী প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল সদর দপ্তর (মৌলভীবাজার) ড.
ঢাকা/আজিজ/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য হন ম ন
এছাড়াও পড়ুন:
কাশবনের হাতছানিতে ব্রহ্মপুত্রের তীরে ভিড়
চারদিকে জেগে ওঠা ব্রহ্মপুত্র নদের বালুচর। এর মাঝখানে স্বচ্ছ পানির আধার। ওপরে নীল আকাশে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘ। আর চরজুড়ে শুভ্র কাশফুল। প্রকৃতির দানেই তৈরি হয়েছে এ মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। বাতাসে দুলতে থাকা কাশফুলের এ সৌন্দর্য ভ্রমণপিপাসুদের মনে দেয় একধরনের প্রশান্তি। তাই প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় করছেন এখানে।
এ অপার সৌন্দর্যের দেখা মিলবে জামালপুর শহরের ফৌজদারি এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত নদের ধারে ভিড় করছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষের। সবাই নিজেদের মতো করে ছবি তুলছেন, কেউবা কাশফুল ছিঁড়ে তৈরি করছেন তোড়া।
গত মঙ্গলবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, শহরের মোড় থেকে শুরু করে নদের তীর পর্যন্ত মানুষের ভিড়। ছোট্ট একটি সেতু পার হয়ে সবাই ছুটছেন নদীর ধারে। প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে ফুটেছে কাশফুল। সবুজ লম্বা পাতার বুক থেকে বেরিয়ে আসা শুভ্র কাশফুল কোথাও থোকা থোকা, কোথাও গুচ্ছ আকারে। দূর থেকে মনে হবে, বালুচরে যেন সাদা চাদর বিছানো। হাওয়ায় দুলে ওঠা কাশফুলে মন ভরে যাচ্ছে দর্শনার্থীদের।
চরের যে অংশে কাশবনের সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে জনবসতি নেই। আছে স্বচ্ছ পানির লেকের মতো একটি ডোবা। কাশফুলঘেরা সেই পানিতে ডিঙিনৌকা নিয়ে ঘুরছেন দর্শনার্থীরা। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষ কেউ ছবি তুলছেন, কেউবা সন্তানদের নিয়ে খেলায় মেতে উঠেছেন।