মৌলভীবাজারের জুড়ীর লাঠিটিলা ও বড়লেখা রেঞ্জের মাধবকুণ্ড ইকোপার্কে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ১ বছরে ৭টি বিপন্ন প্রজাতির লজ্জাবতী বানর ও ৩টি চশমাপরা হনুমানের মৃত্যু হয়েছে। প্লাস্টিক কভার ছাড়া টানানো বিদ‍‍্যুতের তারে জড়িয়ে এমন দুর্ঘটনা ঘটছে।

পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘পাথারিয়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিম’ ও স্থানীয়দের থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা যায়, গত ১২ মে মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের মূল ফটকের পাশে একটি প্রাপ্তবয়স্ক বানরের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ৩১ মার্চ ও ২৬ এপ্রিল  আরও ২টি বানরের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদিকে লাঠিটিলা বন বিট এলাকায় এবছর আরও ৩টি ও বিনন্দপুরে ১টিসহ মোট লজ্জাবতী বানর ও লাঠিটিলা বনে আরও ৩টি চশমরাপরা হনুমানের মৃত্যু হয়েছে।

বন বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানান, মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের মূলফটক সংলগ্ন প্রায় অর্ধ কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে লজ্জাবতী বানরের গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল। সেখানে রাস্তার পাশ দিয়ে বিদ্যুতের কভার ছাড়া তার টানানো রয়েছে, তাতে মাঝে মধ্যেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাচ্ছে লজ্জাবতী বানর।

এ মৃত্যুর ঘটনায় পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘পাথারিয়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিম’ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তাদের অভিযোগ,  এসব সংরক্ষিত বন এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন বিপন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী মারা গেছে। এ নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের পক্ষ থেকে পত্রের মাধ্যমে সংরক্ষিত বন এলাকায় ইনসুলেটেড (প্রলেপযুক্ত) তারের ব্যবস্থার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর দায় এড়াতে অল্প কিছু জায়গায় প্লাস্টিক মোড়ানো তার দিয়েছে। তবে বনের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। 

পরিবেশকর্মী আবিদ হুসাইন বলেন, “বিদ্যুৎস্পৃষ্টে চশমাপরা হনুমান মারা যাওয়ার খবর বরাবরই পাই। এমন ঘটনায় সম্প্রতি জুড়ী - বড়লেখা মিলে বেশ কয়েকটি চশমাপরা হনুমান মারা গেছে। ২০২৩ সালে বন বিভাগ পল্লী বিদ্যুৎ এর বড়লেখা জোনাল অফিসে আবেদন করেছিল বনের ভিতরের তারগুলো ইনসুলেটেড করার জন্য, কিন্তু নানা অজুহাতে তা বাস্তবায়ন করছে না তারা। এভাবে যদি প্রতিনিয়ত হনুমানগুলো মারা যায়, তবে প্রাণিটি বিলুপ্তির পথে চলে যাবে। আমি মনে করি যত দ্রুত সম্ভব এদের রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।”

লজ্জাবতী বানর গবেষণা ও সংরক্ষণ প্রকল্পের মুখ্য গবেষক সাবিত হাসান বলেন, “লজ্জাবতী বানর হুমকির মুখে পড়ার অন্যতম কারণ, নির্বিচারে বন উজাড়, পাচার, ঔষধ হিসাবে ব্যবহার ও বিদ্যুতের ঝুঁকিপূর্ণ তার। এছাড়া রাস্তার দুপাশের গাছের মধ্যকার ডাল (ক্যানোপি) কেটে  সংযোগ নষ্ট হওয়ায় বাড়ছে রাস্তায় বানরের দুর্ঘটনার ঝুঁকি। এসব ঝুঁকি থেকে লজ্জাবতী বানরসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের রক্ষা করতে এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বনের মধ্যেকার বিদ্যুতের তার ঝুঁকিমুক্ত করতে হবে। একই সাথে রাস্তার দুই ধারের গাছের সংযোগ রক্ষা করতে হবে । বন সংরক্ষণে গাছ রোপণে লজ্জাবতী বানরের জন্য গাম বা আঠা উৎপাদনকারী গাছকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।”

এ বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বন্যপ্রাণী প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল সদর দপ্তর (মৌলভীবাজার) ড.

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “লজ্জাবতী বানর মারা যাওয়ার বিষয়টি স্থানীয় বন বিভাগের কেউ জানে না। তবে আমি একাধিকবার পল্লী বিদ্যুৎকে চিঠি দিয়েছি লাইনগুলো কভার করার জন্য। পর্যায়ক্রমে তারা খোলা তারগুলো ইনসুলেট করার কথা বলেছে। আমি এই বিষয়গুলো আবার তাদেরকে জানাবো যেন দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। আর কোন বন্যপ্রাণীর মৃত্যু দেখতে চাই না।”

ঢাকা/আজিজ/টিপু

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য হন ম ন

এছাড়াও পড়ুন:

কুড়িগ্রামে ৫ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বিএসএফের পুশ-ইন

ভারতে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) নিবন্ধিত পাঁচ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। 

গত ৭ মে ভোরে কুড়িগ্রাম জেলার সীমান্তবর্তী নতুনহাট বাজার এলাকায় ২২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের টহল দল তাদের আটক করে। আটক ব্যক্তিরা হলেন মোহাম্মদ উল্লাহ (৪৪), তার স্ত্রী রোমানা বেগম (৩৫), তাদের সন্তান তাহমিনা আক্তার (২০), রেদোয়ান (১৫), তাসমিনা আক্তার (১৩)। 

আটককৃতরা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বুথিডং জেলার কোয়াইংডং এলাকার বাসিন্দা। তাদের নিকট থেকে ইউএনএইচসিআর, নয়াদিল্লি কর্তৃক ইস্যুকৃত পাঁচটি রেজিস্ট্রেশন কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।

আটককৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, দুই বছর আগে তারা মিয়ানমার থেকে ভারতে পালিয়ে যান এবং আসামের মাটিয়া ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। সম্প্রতি, কিছু অজ্ঞাত ব্যক্তি তাদের গাড়িতে তুলে নেয়। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে চোখ বেঁধে একটি অজানা স্থানে নামিয়ে দেয় এবং কোনো প্রশ্ন না করে সামনে হাঁটতে বলে। সারারাত হেঁটে তারা ভোরের দিকে বাংলাদেশের সীমান্তে পৌঁছালে বিজিবি তাদের আটক করে।

সোনাহাট আলফা কোম্পানির কমান্ডার সুবেদার মো. আইয়ুব হোসেন জানান, সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই ধরনের ঘটনায় বিজিবি তৎপর রয়েছে। আটক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কুড়িগ্রাম ব্যাটালিয়ন সদরে হস্তান্তর করা হয়েছে।

পরিবারটি দাবি করেছে, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ তাদের বাংলাদেশে পুশ-ইন করেছে। 

ঢাকা/সৈকত//

সম্পর্কিত নিবন্ধ