নিউইয়র্ক প্রবাসী মাহিনের ভাষা এখন ‘ডেটা-অ্যালগরিদম’
Published: 15th, May 2025 GMT
ছেলেবেলা কেটেছে বই, সিনেমা আর কল্পনায়। আর এখন-ডেটা, অ্যালগরিদম আর গবেষণার জগতে। বাংলাদেশের ছেলে মো. রায়হান হাসান মাহিন নিজের ভেতর গড়ে তুলেছেন এক অনন্য যাত্রা, যেখানে গল্পকার থেকে হয়ে উঠেছেন সম্ভাবনাময় গবেষক।
মাহিনের শৈশবের মোড় ঘোরে সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ দেখে। সেই সিনেমা তার মনে কল্পনা ও মানবিকতার যে বীজ বপন করে, তা সময়ের সঙ্গে বিকশিত হয় সাহিত্য, গবেষণা ও প্রযুক্তির পরতে পরতে।
২০০৬ সালের দিকে বাংলা ও বিশ্বসাহিত্যের বইয়ের প্রতি তার আগ্রহ বাড়ে। দার্শনিক চিন্তা, মনোবিজ্ঞান, রাজনীতি-সবকিছুতেই আগ্রহী হয়ে ওঠেন। দস্তয়েভস্কি, কাফকা, রবীন্দ্রনাথ, কামুর চিন্তা তাকে ভাবনায় গভীর করে তোলে। সে সময় থেকেই লেখালেখির শুরু। অস্তিত্ব সংকট, মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব ও সমাজ বাস্তবতা উঠে আসে তার ছোটগল্পে। ২০১৬ সালে ‘মাঝের পাতা’ নামে তার একটি গল্প স্থান পায় বইমেলার সংকলনে।
একই বছরে মাহিন পেশাজীবনে প্রবেশ করেন। একটি বহুজাতিক সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন জুনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে। পাশাপাশি ভর্তি হন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে। এখানেই প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে তার নতুন আগ্রহ তৈরি হয়।
মেশিন লার্নিং, ডেটা অ্যানালাইসিস, অ্যালগরিদম—এসব বিষয় তার কাছে হয়ে ওঠে নতুন ধরনের গল্প বলার মাধ্যম। গবেষণার প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে। শুরু করেন স্বাধীন গবেষণা। কাজ করেন স্বাস্থ্য বিশ্লেষণ, রোগ শনাক্তকরণ ও আর্থিক পূর্বাভাস প্রকল্পে। সাহিত্যিক মননের কারণেই ডেটার মধ্যেও তিনি খুঁজে পান গল্প, যেখানে অন্যরা দেখে শুধু সংখ্যা।
এসময় মাহিন যুক্ত হন ‘সূর্য শিশির’ নামের একটি সংগঠনের সঙ্গে। অংশ নেন বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ এবং শহর পরিচ্ছন্নতা অভিযানে। ২০২৪ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় নিউ ইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আন্দোলনেও অংশ নেন।
২০২০ সালে স্নাতক ডিগ্রি শেষ করার পর যুক্তরাষ্ট্রের নিউ রোচেলের মনরো বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। শুরুতে প্রবাসজীবন কঠিন ছিল। রান্না শেখা থেকে নিজের সব দায়িত্ব নিজেই নিতে হয়েছে। ধীরে ধীরে একা জীবনকেই মানিয়ে নেন। পড়ালেখার পাশাপাশি চালিয়ে যান গবেষণা।
মাহিনের গবেষণার বড় সাফল্য আসে ওরাল ক্যানসার শনাক্তকরণে মেশিন লার্নিং ব্যবহারের একটি গবেষণায়। ‘A Machine Learning Ensemble Approach for Early Detection of Oral Cancer’ শীর্ষক প্রবন্ধটি আন্তর্জাতিক গবেষণা জার্নালে প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি ক্লিনিক্যাল ডেটা ও ইমেজ অ্যানালাইসিস একত্র করে একটি কার্যকর ও স্কেলযোগ্য মডেল প্রস্তাব করেন।
এছাড়া আর্থিক বিশ্লেষণ ও বিগ ডেটা নিয়ে আরো কয়েকটি গবেষণায় কাজ করেছেন তিনি। বর্তমানে মাহিন কোনো প্রতিষ্ঠানে যুক্ত না থাকলেও গবেষণা, দক্ষতা উন্নয়ন এবং সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে নিয়মিত ব্যস্ত। ভবিষ্যতে পিএইচডি, বৈশ্বিক গবেষণা এবং জনস্বাস্থ্য ও নৈতিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা তার।
মাহিন বলেন, ‘‘গল্প বলা আমাকে অনুভব করতে শিখিয়েছে, গবেষণা আমাকে ব্যাখ্যা করতে শিখিয়েছে। এখন চাই এই জ্ঞান মানবকল্যাণে কাজে লাগাতে।’’
গল্প থেকে গবেষণায় এসে পৌঁছানো মাহিনের ভাষা এখন শব্দ নয়-ডেটা, অ্যালগরিদম আর কার্যকর প্রভাব।
ঢাকা/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
এক আর্জেন্টাইনের হ্যাটট্রিকে মেসিদের বড় জয়, প্রথমবার কাপ ফাইনালে ইন্টার মায়ামি
ক্লাব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমএলএস কাপ ফাইনালে উঠেছে ইন্টার মায়ামি। আজ প্লে-অফের ইস্টার্ন কনফারেন্স ফাইনালে নিউইয়র্ক সিটি এফসিকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে লিওনেল মেসির দল।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ লিগে ৩০টি দল ইস্টার্ন ও ওয়েস্টার্ন কনফারেন্সে ভাগ হয়ে খেলে। দুই অংশের চ্যাম্পিয়নরা খেলে এমএলএস কাপ ফাইনাল। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত মায়ামি এর আগে তিনবার প্লে-অফে খেললেও কনফারেন্স সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি। এবার সেমি ও ফাইনাল জিতে নাম লিখিয়েছে কাপ ফাইনালেই।
চেজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত আজকের কনফারেন্স ফাইনালে মায়ামি জিতেছে তাদেও আলেন্দের নৈপুণ্যে। ২৬ বছর বয়সী এই আর্জেন্টাইন হ্যাটট্রিক করেছেন। একটি গোল করেছেন আরেক আর্জেন্টাইন মাতেও সিলভেত্তি। অন্য গোলটি তালেসকো সেগোভিয়ার। মেসি তাঁর রোজারিওর ছেলে সিলভেত্তির গোলে অ্যাসিস্ট করেছেন।
আর্জেন্টাইনময় ম্যাচটিতে আলেন্দে মায়ামিকে এগিয়ে দেন ১৪তম মিনিটে। এই গোলে অ্যাসিস্ট ছিল আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার রদ্রিগো দি পলের। ২৪তম মিনিটে আলেন্দে নিজের ও দলের দ্বিতীয় গোল করেন হেডে, তাঁকে বক্সে দুর্দান্ত এক ক্রস দেন জর্দি আলবা। ম্যাচের ৩৭ মিনিটে নিউইয়র্ক সিটির জাস্টিন হাক এক গোল শোধ করে দিলে মায়ামি বিরতিতে যায় ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে।
৬৭তম মিনিটে মেসি বক্সের মধ্যে ঘেরাওয়ে পড়লে বল বাড়ান ফাঁকায় থাকা সিলভেত্তির দিকে। ১৯ বছর বয়সী এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার বল জালে জালে পাঠাতে ভুল করেননি। মায়ামি জয়ের বিষয়ে প্রায় নিশ্চিত হয় ৮৩তম মিনিটে।
এ সময় বক্সের ভেতর আলবার ব্যাক পাস পেয়ে সেগোভিয়া গোল করে ব্যবধান ৪-১ করে ফেলেন। ম্যাচের ৮৯তম মিনিটে ইয়ানিক ব্রাইটের সহায়তায় নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন আলেন্দে। মায়ামি মাঠ ছাড়ে ৫-১ গোলের বড় জয় নিয়ে।
আগামী ৬ ডিসেম্বর এমএলএস কাপ ফাইনালে মায়ামি খেলবে ওয়েস্টার্ন কনফারেন্স ফাইনালে সান ডিয়েগো ও ভ্যাঙ্কুভার হোয়াইটক্যাপসের মধ্যকার জয়ী দলের বিপক্ষে।