প্রায় ৮৩ শতাংশ তরুণের ভবিষ্যতে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের আগ্রহ নেই
Published: 8th, July 2025 GMT
ভবিষ্যতে রাজনীতিতে যোগ দিতে অথবা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে কি আপনি আগ্রহী, এমন প্রশ্নের জবাবে ৮২ দশমিক ৭ শতাংশ তরুণ বলেছেন, তাঁরা আগ্রহী নন।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও একশনএইডের একটি জরিপে তরুণদের এই মনোভাব উঠে এসেছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তরুণদের ভাবনা-সম্পর্কিত এই জরিপ গতকাল সোমবার প্রকাশ করা হয়।
জরিপে ৩৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, দেশের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তরুণদের সংযোগ ‘অকার্যকর’ বলে মনে করেন তাঁরা। আর এই সংযোগ ‘খুবই অকার্যকর’ বলে মনে করেন ১৬ দশমিক ১ শতাংশ উত্তরদাতা।
আরও পড়ুনতরুণেরা চান শিক্ষা-স্বাস্থ্যে সংস্কার, ‘মব’ ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ২ ঘণ্টা আগেতরুণদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর করণীয় বিষয়ে জরিপে কিছু মত দিয়েছেন উত্তরদাতারা। এগুলো হলো যুব বা ছাত্র নেতৃত্বাধীন শাখাগুলোর সংযোগসংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন। দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তরুণদের অনুপাত বাড়ানো। প্রান্তিক যুবসমাজের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। দলের এজেন্ডায় যুবকেন্দ্রিক আরও বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্ততা বাড়ানো।
জরিপে কারা অংশ নিয়েছেনগতকাল রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে বলা হয়, গত ২০ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত মিশ্র পদ্ধতিতে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এটি ছিল পরিমাণগত জরিপ ও গুণগত সাক্ষাৎকার। আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে ‘ফলোআপ’ জরিপ পরিচালনা করা হবে।
পরিমাণগত জরিপে ‘টার্গেট গ্রুপ’ ছিলেন ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী তরুণেরা। ২ হাজার তরুণ (নারী ও পুরুষ) জরিপে অংশ নেন। গ্রাম-নগর ও নারী-পুরুষের অনুপাত ছিল ৫০: ৫০। এ ছাড়া জরিপে অন্তত ১০ শতাংশ অমুসলিম প্রতিনিধিত্ব ছিল। দেশের আট বিভাগে—প্রতি বিভাগের দুটি জেলা ও প্রতিটি জেলার দুটি উপজেলায় জরিপটি পরিচালিত হয়।
গুণগত সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রে ছিল ১৭টি কেস স্টাডি। এতে আট বিভাগে বিভিন্ন পেশা, ধর্ম ও আকাঙ্ক্ষার মানুষের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। প্রতিটি বিভাগ থেকে অন্তত দুটি কেস স্টাডি নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুননির্বাচনে কোন দল কত শতাংশ ভোট পেতে পারে, তরুণেরা যা ভাবছেন১৪ ঘণ্টা আগেনির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার বিষয়ে আশাবাদজরিপে আগামী নির্বাচন নিয়ে তরুণদের মতামত জানতে চাওয়া হয়। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে বলে আপনি কতটা আত্মবিশ্বাসী, এমন প্রশ্নে ৪০ দশমিক ৮৯ শতাংশ উত্তরদাতা মোটামুটি আশাবাদের কথা বলেছেন। খুবই আশাবাদী ২৭ দশমিক ৯১ শতাংশ উত্তরদাতা। আর পুরোপুরি আশাবাদী ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ উত্তরদাতা। ৬ শতাংশ উত্তরদাতা মোটেও আশাবাদী নন।
প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়ে তারুণ্যনির্ভর দলগুলোর মাধ্যমে রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসার বিষয়ে কি আপনি আশাবাদী, এমন প্রশ্নে ৪২ দশমিক ১৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাঁরা আশাবাদী। ৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, খুবই আশাবাদী। অর্থাৎ প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়ে তারুণ্যনির্ভর দলগুলোর মাধ্যমে রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসার বিষয়ে প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতা আশাবাদী।
বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী? এই প্রশ্নে ৫৬ শতাংশ ৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, সংস্কারের মাধ্যমে এটি ধীরে ধীরে উন্নত হতে পারে। সংস্কার হোক বা না হোক, এটা একই রকম থাকবে বলে মনে করেন ১৩ দশমিক ১ শতাংশ উত্তরদাতা।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চার উন্নতি হবে, এ বিষয়ে আপনি কতটা একমত, এমন প্রশ্নে ৩৮ দশমিক ২৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাঁরা কিছুটা উন্নতির সম্ভাবনা দেখেন। অবশ্যই উন্নতি হবে বলে মনে করেন ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ উত্তরদাতা। অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতা মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চার উন্নতি হবে।
আরও পড়ুনতারুণ্য জরিপ: তরুণেরা কেন রাজনীতিবিমুখ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯দেশ ও তরুণদের আরও ভালো সেবা দেওয়ার জন্য আপনি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে কী ধরনের সংস্কার আশা করেন, এই প্রশ্নে ৬০ শতাংশ উত্তরদাতা পৃষ্ঠপোষকতা, স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক সহিংসতার অবসানের কথা বলেছেন। নিয়মিত অভ্যন্তরীণ নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর কথা বলেছেন, ৫৪ শতাংশ উত্তরদাতা। ব্যক্তি বা উত্তরাধিকারের রাজনীতির চেয়ে নীতিভিত্তিক রাজনীতির পক্ষে মত দিয়েছেন ৫২ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরদাতা। দলীয় তহবিল ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতার কথা বলেছেন ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা। এ ছাড়া ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ উত্তরদাতা দলগুলোর নেতৃত্বের পর্যায়ে আরও বেশি তরুণ ও নারীদের অন্তর্ভুক্তির পক্ষে বলেছেন।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, দেশের জাতীয় রাজনীতি সম্পর্কে একেবারেই সচেতনতা নেই ১৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ পুরুষ ও ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ নারী উত্তরদাতার। আঞ্চলিক রাজনীতি সম্পর্কে একেবারেই ধারণা নেই ১২ দশমিক ৩৮ শতাংশ পুরুষ ও ১৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ নারী উত্তরদাতার।
জরিপ বলছে, ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা সাধারণত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে পান। ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরদাতা টেলিভিশন, ১৩ শতাংশ সংবাদপত্র ও ১ দশমিক ৪ শতাংশ রেডিওর কথা বলেছেন।
আরও পড়ুনডিসি হতে কর্মকর্তাদের আগ্রহ হঠাৎ কমেছে, কারণ কী ১৭ মার্চ ২০২৫ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিষয়ে মতামতধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিষয়ে জরিপে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। প্রশ্ন ছিল, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য সহায়ক বলে মনে করেন কি না—এই প্রশ্নে ৪৮ দশমিক ২৩ শতাংশ উত্তরদাতা ‘হ্যাঁ’ সূচক উত্তর দিয়েছেন। ‘না’ সূচক উত্তর দিয়েছেন ৫১ দশমিক ৭৭ শতাংশ উত্তরদাতা। মুসলমানদের মধ্যে ৫৮ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ১২ দশমিক ২৩ শতাংশ উত্তরদাতা ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে দেশের উন্নয়নের জন্য সহায়ক মনে করেন। আর এমনটা মনে করেন না মুসলমানদের মধ্যে ৪১ দশমিক ৮৬ শতাংশ উত্তরদাতা এবং অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ৮৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ উত্তরদাতা।
জরিপে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি নিয়ে আপনি কতটা উদ্বিগ্ন? ৩৮ দশমিক ৩ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাঁরা উদ্বিগ্ন। খুবই উদ্বিগ্ন ৮ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা। আর কখনো কখনো উদ্বিগ্ন বা নিরপেক্ষ ৩০ শতাংশ উত্তরদাতা।
কত দিন পর বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি? এমন প্রশ্নে ২২ দশমিক ৮ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল কখনোই ক্ষমতায় আসবে না। পাঁচ বছরের মধ্যে ধর্মভিত্তিক দল ক্ষমতায় আসবে বলে মনে করেন ১১ দশমিক ৬ শতাংশ উত্তরদাতা। ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ক্ষমতায় আসতে পারে বলে মনে করেন ১২ দশমিক ২ শতাংশ উত্তরদাতা। আর ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা দেখেন ১৪ দশমিক ১ শতাংশ উত্তরদাতা।
আরও পড়ুনবাংলাদেশি তরুণেরা এত বেশি দেশ ছাড়তে চায় কেন১৮ মে ২০২৩বর্তমান পরিস্থিতিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মানুষ নিরাপদ বলে বিশ্বাস করেন কি না, এই প্রশ্নে ৭৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ উত্তরদাতা ‘হ্যাঁ’ বলেছেন। মুসলমানদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ উত্তরদাতা আর অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ৪৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মানুষ নিরাপদ।
বর্তমানে মানুষ ভয় বা কোনো বিধিনিষেধ ছাড়াই নিজেদের ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন ও নিরাপদ কি না? এমন প্রশ্নে ৩৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন ‘খুবই নিরাপদ’। ২৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন ‘নিরাপদ’। মুসলমানদের মধ্যে ৪৩ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, ‘খুবই নিরাপদ’। আর ৩২ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন ‘নিরাপদ’। তবে অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ৩৯ দশমিক ২১ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, বর্তমানে মানুষ ভয় বা কোনো বিধিনিষেধ ছাড়াই নিজেদের ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন ও নিরাপদ নন। আর ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাঁরা ‘খুবই অনিরাপদ’।
আরও পড়ুনদেশে কর্মসংস্থানের অভাব, বিদেশ যেতে মরিয়া তরুণেরা১৯ আগস্ট ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত ক র জন ত র র জন ত ত ৭ দশম ক ১ দশম ক দশম ক ৭ দশম ক ১ তর ণ র ন র পদ বল ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
হাসপাতালে নেওয়ার নৌকা পেতে ১০ ঘণ্টা, নৌকাতেই মারা গেল অসুস্থ কিশোর
চট্টগ্রাম সন্দ্বীপ উপজেলার ১২ বছরের এক কিশোর এক সপ্তাহ ধরে ভুগছিল জ্বরসহ শারীরিক নানা জটিলতায়। উপজেলায় আর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না, তাই তাকে নগরের হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন চিকিৎসক। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর উত্তাল থাকায় মিলছিল না নৌযান। ওই কিশোরকে নিয়ে দুপুর ১২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নৌযানের আশায় ঘাটে অপেক্ষা করেন পরিবারের সদস্যরা। অবশেষে সাগরের সন্দ্বীপ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার জন্য মেলে ছোট একটি নৌকা। সেই নৌকাতেই মৃত্যু হয় ওই কিশোরের।
মারা যাওয়া কিশোরের নাম আবদুর রহমান। সে উপজেলার কালাপানিয়া ইউনিয়নের মো. মানিকের ছেলে। গতকাল সোমবার রাতে তার মৃত্যু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে লাশ নিয়ে এলাকায় ফেরে তার পরিবার।
আবদুর রহমানের ফুফাতো ভাই এ আর সোহেল প্রথম আলোকে জানান, অসুস্থ হয়ে পড়ার পর শুরুতে আবদুর রহমানকে সন্দ্বীপের বেসরকারি স্বর্ণদ্বীপ ফাউন্ডেশন হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় গতকাল সকালে তাকে সন্দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছিল। তবে সেখানে চিকিৎসক আবদুর রহমানকে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন।
এ আর সোহেল বলেন, ‘সোমবার দুপুর ১২টার পর থেকে আমরা ঘাটে বোটের অপেক্ষায় ছিলাম। বৈরী আবহাওয়ার কারণে নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় দীর্ঘ সময় কোনো বোট পাইনি। এ সময়ের মধ্যে আবদুর রহমানের অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। অবশেষে রাত ১০টা নাগাদ আমরা একটি লাল বোটের (উপকূলে যাত্রী নামানোর ছোট নৌকা) ব্যবস্থা করতে সক্ষম হই। ঝুঁকি নিয়ে সেটিতেই সীতাকুণ্ডের উদ্দেশে রওনা দিতে হয়েছে।’
সন্দ্বীপের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় দুর্যোগের মধ্যে ছোট নৌকায় সাগরের সন্দ্বীপ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার ঝুঁকি নিতে হয়েছে বলে জানান আবদুর রহমানের আরেক ফুফাতো ভাই ইকরাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘উত্তাল সমুদ্রে আমাদের বোট উল্টে যাওয়ার মতো অবস্থা, সে সময় আমরা টের পাই আবদুর রহমান আর বেঁচে নেই। ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে ঢেউয়ের প্রচণ্ড গর্জনেও আমরা হাল ছাড়িনি। নিজেদের মনকে সান্ত্বনা দিতে আবদুর রহমানকে সীতাকুণ্ডের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। চিকিৎসক জানান, আগেই আবদুর রহমানের প্রাণ চলে গেছে’।
আবদুর রহমানদের প্রতিবেশী মোজাম্মেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জরুরি মুহূর্তে রোগী পারাপারের ক্ষেত্রে এই ধরনের চিত্র এবারই প্রথম নয়। প্রায়শই এমন ভোগান্তি আর করুণ পরিণতির মুখে পড়ে মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, লোকবল ও সরঞ্জামের ব্যবস্থা করে এমন দুর্ভোগ ঠেকানোর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।’
জানতে চাইলে সন্দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মানস বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘১২ বছরের ওই কিশোরের মলদ্বার দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এমন ক্ষেত্রে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হলে একজন উপজেলা সার্জনের প্রয়োজন রয়েছে, কিন্তু এই ধরনের পোস্ট আমাদের নেই। তবে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েই তাঁকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দিয়েছি।’