তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তির বিধান বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
Published: 8th, July 2025 GMT
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপ করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। ১৩৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ এই রায় আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ও এর কয়েকটি ধারার বৈধতা নিয়ে পৃথক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) এবং বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর রায় দেন।
ঘোষিত রায়ে ওই দুটি (২০ ও ২১) ধারাসহ পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত থাকা ৭ ক,৭ খ,৪৪ (২) অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করেন উচ্চ আদালত।
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৫৪টি ক্ষেত্রে সংযোজন, পরিমার্জন ও প্রতিস্থাপন আনা হয়েছিল। ঘোষিত রায়ে বলা হয়েছে, পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পুরোটা বাতিল করা হচ্ছে না। বরং বাকি বিধানগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব আগামী জাতীয় সংসদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন আদালত।
আরও পড়ুনপঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী কাঠামো প্রবর্তন০৬ নভেম্বর ২০২৪রায়ে আদালত বলেছেন, জাতীয় সংসদ আইন অনুসারে জনগণের মতামত নিয়ে বিধানগুলো সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করতে পারবে।
রায়ে আদালত বলেছেন, গণভোটের বিধান বিলুপ্ত করা হয়, যেটি সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের অংশ ছিল। এটি ১৯৯১ সালে দ্বাদশ সংশোধনীতে যুক্ত হয়। সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের গণভোটের বিধান বিলুপ্তি-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ৪৭ ধারা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় বাতিল ঘোষণা করা হলো। ফলে দ্বাদশ সংশোধনীর ১৪২ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা হলো।
আরও পড়ুনসংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন কেন সাংঘর্ষিক নয়: হাইকোর্ট১৯ আগস্ট ২০২৪আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।
পঞ্চদশ সংশোধনী আইন চ্যালেঞ্জ করে গত বছরের ১৮ আগস্ট সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত ১৯ আগস্ট রুল দেন। রুলে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায় দেন হাইকোর্ট।
আরও পড়ুনতত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তির বিধান বাতিল, পুনর্বহাল গণভোট১৭ ডিসেম্বর ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন চ ছ দ ঘর ষ ক প রক শ
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজারে বন্যার পানি নামছে, বাড়ছে দুর্ভোগ
কক্সবাজারে বৃষ্টি থামায় নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি। সদর উপজেলার কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা থাকলেও পাঁচ উপজেলার শতাধিক গ্রাম থেকে পানি নামছে বলে জানা গেছে। ঘরে পানি ওঠায় দুর্ভোগ বেড়েছে দুর্গত এলাকার মানুষজনের। প্রশাসন থেকে কিছু এলাকায় শুকনা খাবার পৌঁছালেও পানির কারণে অনেক বাড়িতেই চুলা জ্বলেনি।
জেলায় আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে ভারী বর্ষণ হচ্ছে না। টানা চার দিনের বর্ষণ ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে এখনো কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও চকরিয়া উপজেলার শতাধিক গ্রামের অন্তত ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছিলেন। এর মধ্যে কেবল টেকনাফের অন্তত ৫০টি গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছিল। তবে ওই সব এলাকা থেকে এখন পানি নামছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান বলেন, আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৮৮ মিলিমিটার। এর মধ্যে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১১ মিলিমিটার। ৭ জুলাই বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছিল ১৫৭ এবং ৬ জুলাই ১৪৬ মিলিমিটার। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে। এর ফলে ভূমিধসেরও আশঙ্কা করছে আবহাওয়া বিভাগ।
এদিকে বাঁকখালী ও মাতামুহুরী নদীর পানি বঙ্গোপসাগরে নেমে যাওয়ায় চকরিয়া, পেকুয়া, রামু, কক্সবাজার সদর উপজেলার জলাবদ্ধতা কমে গেছে। ঘরবাড়ি থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও মানুষের দুর্ভোগ-ভোগান্তি কমছে না। বন্যার পানিতে এসব উপজেলায় অন্তত দুই হাজার ঘরবাড়ি নিমজ্জিত হয়েছিল।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, বৃষ্টিপাত কমায় পানি নামছে। ঘরবাড়ি থেকেও পানি সরে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে চাল ও শুকনা খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
টেকনাফে দুর্ভোগ-ভোগান্তিগত চার দিনের ভারী বর্ষণে টেকনাফের পাঁচটি ইউনিয়নের অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। তাতে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী ছিলেন। আজ সকাল থেকে বৃষ্টি কম হওয়ায় টেকনাফ পৌরসভার কলেজপাড়া, শীলবুনিয়াপাড়া, ডেইলপাড়া, জালিয়াপাড়া, খানকারডেইল, চৌধুরীপাড়া, কেকেপাড়া থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। অন্যদিকে হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের জালিয়াপাড়া, সাইটপাড়া, ফুলের ডেইল, আলী আকবরপাড়া, রঙ্গিখালী লামার পাড়া, আলীখালী, চৌধুরীপাড়া, পূর্ব পানখালী, মৌলভীবাজার, লামার পাড়া, ওয়াব্রাং, সুলিশপাড়া ও পূর্ব সিকদারপাড়া থেকেও বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। পাহাড়ধসের ঝুঁকি থাকায় কয়েক শ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে এনেছে উপজেলা প্রশাসন।
টেকনাফের পুরান পল্লানপাড়ার মায়মুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন দুই শতাধিক নারী-পুরুষ। তাঁদের একজন লায়লা খাতুন (৪৫) বলেন, ‘পাহাড়ধসের আশঙ্কায় চার সন্তান নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে এসেছি। এখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হলেও নারীদের সমস্যা অনেক। বিভিন্ন বয়সের মানুষকে একসঙ্গে রাখায় নারীদের ভোগান্তি বাড়ছে।’
আরেক নারী ছমুদা বেগম (২৩) বলেন, নেটং পাহাড়ের ঢালুতে তাঁর বাড়ি। স্বামী-সন্তান নিয়ে থাকেন চার বছর ধরে। ভারী বর্ষণ শুরু হলে আতঙ্ক বাড়ে। সন্তানদের কথা মাথায় রেখে ঘরবাড়ি ফেলে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। এভাবে কত দিন থাকতে হয় জানা নেই।
গতকাল সোমবার রাত আটটার দিকে মায়মুনা বিদ্যালয় কেন্দ্রে আশ্রিতদের দেখতে যান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। ভারী বর্ষণে পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থাকা কারও জন্য নিরাপদ নয় জানিয়ে তিনি আশ্রিতদের বলেন, পাহাড়ে থেকে যাওয়া অন্য লোকজনকেও আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনতে হবে।
এ সময় সঙ্গে ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাকিবুল হাসান চৌধুরী। ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, পানিবন্দী ও পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে থাকা ২৫০ পরিবারকে ১৫ মেট্রিক টন চাল ও এক হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পাহাড়ে থেকে লোকজনকে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।
কক্সবাজার শহরের কালুরদোকান এলাকার একটি সড়কে পানি জমে আছে। আজ সকালে