নতুন শুল্কের সময়সীমা ‘শতভাগ চূড়ান্ত নয়’, দর-কষাকষির সুযোগ রাখলেন ট্রাম্প
Published: 8th, July 2025 GMT
এক ডজনের বেশি দেশের ওপর শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল সোমবার আবার বাণিজ্যযুদ্ধ উসকে দিয়েছেন। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, আগামী আগস্টের মধ্যে চুক্তিতে পৌঁছাতে যে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি নমনীয় হতে পারে।
জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কিছু বাণিজ্যিক অংশীদারকে চিঠি পাঠিয়ে ট্রাম্প জানিয়েছেন, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে স্থগিত করা পাল্টা শুল্ক তিন সপ্তাহের মধ্যে, এমনকি আগের চেয়েও বেশি হারে ফিরে আসবে।
চিঠিতে ট্রাম্প বলেন, টোকিও ও সিউলের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হবে। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও মালয়েশিয়ার ওপর ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ হারে শুল্ক বসানোর কথা বলা হয়েছে।
আগস্টের সময়সীমা সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে নৈশভোজে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বলব, সময়সীমা ঠিকঠাক রয়েছে, তবে একেবারে শতভাগ নয়।’তবে আগের মতো এবারও শুল্ক আরোপ নিয়ে দেশগুলোর সঙ্গে দর-কষাকষির সুযোগ রাখলেন ৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্প। তবে এরই মধ্যে তাঁর ঘোষণায় বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
১ আগস্টের সময়সীমা সম্পর্কে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্র সফররত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে নৈশভোজে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বলব, সময়সীমা ঠিকঠাক রয়েছে, তবে একেবারে শতভাগ নয়।’
চিঠিগুলোই কি তাঁর চূড়ান্ত প্রস্তাব—জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি একে চূড়ান্ত বলব। কেউ যদি ভিন্ন প্রস্তাব দেয় এবং সেটা আমার ভালো লাগে, তবে আমরা সেটা করব।’
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ‘স্বাধীনতা দিবস’ ঘোষণা করে ট্রাম্প বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। সে সময় ওই সব দেশের জন্য ১০ শতাংশ শুল্ককে ভিত্তি হিসেবে ধার্য করা হয়।
আমি একে (শুল্ক কার্যকরের নতুন সময়) চূড়ান্ত বলছি, তবে কেউ যদি ভিন্ন প্রস্তাব দেয় এবং সেটা আমার ভালো লাগে, তবে আমরা তা করব।ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টতবে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ববাজারে অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় ট্রাম্প দ্রুতই ১০ শতাংশের ওপরে যে শুল্ক ছিল, তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন। এ অতিরিক্ত শুল্ক আগামীকাল বুধবার থেকে আবার কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। এর আগেই ট্রাম্প সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের ওই চিঠি পাঠান।
জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানদের কাছে পাঠানো প্রায় হুবহু এক রকমের চিঠিতে ট্রাম্প বলেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে পারস্পরিক (স্বার্থের অনুকূল) নয়’—এ কারণেই ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে।
যদি দেশগুলো পাল্টা ব্যবস্থা নেয়, তবে আরও কড়াকড়ি শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প।
তবে গতকাল ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে আগামীকালের সময়সীমা আনুষ্ঠানিকভাবে ১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়িয়েছেন।
প্রেসিডেন্টের এখতিয়ারনতুন এ সময়সীমা কার্যত আরেক দফা বিলম্বই এনে দিল। এর ওপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্যে আবারও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আসলে চূড়ান্ত সময়সীমা কোনটি।
ট্রাম্পের নিজস্ব সামাজিকমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করা চিঠি অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ৩২ শতাংশ, বাংলাদেশের পণ্যে ৩৫ শতাংশ ও থাইল্যান্ডের ওপর ৩৬ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হবে।
চিঠি পাওয়া অধিকাংশ দেশের শুল্কহার পূর্বঘোষিত হারগুলোর মতোই ছিল; যদিও লাওস ও কম্বোডিয়ার মতো কয়েকটি দেশের ক্ষেত্রে কিছুটা কম দেখা গেছে।
‘৯০ দিনে ৯০টি চুক্তি’র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। কিন্তু এখন পর্যন্ত শুধু যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের সঙ্গে দুটি চূড়ান্ত চুক্তি হয়েছে। চীনের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি অস্বাভাবিক উচ্চ শুল্ক কিছুটা কমানোর ব্যাপারে একটি সমঝোতা হয়েছে।
গত রোববার জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা বলেছেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় তিনি ‘সহজে আপস করবেন না’।
ট্রাম্প কেন প্রথমেই জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার দিকে গেলেন—জানতে চাইলে হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা লেভিট বলেন, ‘এটা প্রেসিডেন্টের এখতিয়ার। তিনিই দেশগুলো বেছে নিয়েছেন।’
এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েন্ডি কাটলার বলেন, টোকিও ও সিউলের কাছে পাঠানো চিঠি ‘অন্যদের জন্য সতর্কবার্তা’ হিসেবে কাজ করবে।
ওয়েন্ডি আরও বলেন, দুই দেশই দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক নিরাপত্তা অংশীদার ছিল। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক প্রতিষ্ঠান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরও কিছু চুক্তির ঘোষণা আসবে।
আরও পড়ুনবাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প৬ ঘণ্টা আগেমার্কিন শেয়ারবাজারে ধসট্রাম্পের নতুন শুল্ক ঘোষণার প্রভাবে গতকালই যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে ধস নামে। নাসডাক সূচক ০.
এ ছাড়া ব্রিকস জোটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ছে, এমন দেশগুলোর ওপর আরও ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তাঁর অভিযোগ, দেশগুলো তাঁর শুল্কনীতির সমালোচনা করে যুক্তিবহির্ভূতভাবে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী নীতি অনুসরণ করছে।
তবে অনেক দেশ এখনো শেষ মুহূর্তে ট্রাম্পের শুল্ক পুরোপুরি এড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইউরোপীয় কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রোববার ট্রাম্পের সঙ্গে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েনের বাণিজ্য নিয়ে ‘গঠনমূলক আলোচনা’ হয়েছে।
আরও পড়ুন৩৫ শতাংশ শুল্কের কথা জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূসকে চিঠিতে যা লিখলেন ট্রাম্প৩ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র শ ল ক আর প র সময়স ম আগস ট র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
আফগানদের ইরান ছাড়ার শেষ দিন আজ, কাল থেকে গ্রেপ্তার
ইরানে বসবাসকারী লাখ লাখ আফগান অভিবাসী ও শরণার্থীকে দেশ ছাড়তে শেষবারের মতো নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সরকার। স্বেচ্ছায় ইরান ত্যাগের জন্য নির্ধারিত সময়সীমার শেষ দিন আজ রোববার। এরপর কাল থেকে ‘অবৈধভাবে অবস্থানরত’ আফগানদের গ্রেপ্তার করে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইরানি কর্তৃপক্ষ। খবর আল জাজিরার
এমন এক সময় এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো, যখন ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাতের পর ইরানে নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। ওই সংঘাতে জড়িয়ে ইরানের পরমাণু স্থাপনায় বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্রও।
গত মার্চ মাসে ইরান সরকার একটি আদেশ জারি করে। সেখানে অবৈধভাবে বসবাসকারী আফগানদের ৬ জুলাইয়ের (আজ রোববার) মধ্যে স্বেচ্ছায় চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়, তা না হলে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে আদেশে জানানো হয়।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, ইরান থেকে আফগানদের গণহারে ফেরত পাঠানো হলে আফগানিস্তান আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। যুদ্ধ, দারিদ্র্য এবং তালেবান শাসন থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসা এই মানুষদের অনেকে কয়েক দশক ধরে ইরানে বসবাস করছেন।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানায়, তেহরান ২০২৩ সালে ‘অবৈধভাবে’ দেশে বসবাসকারী বিদেশিদের বহিষ্কারের জন্য একটি অভিযান শুরু করে। পরে চলতি বছরের মার্চে ইরান সরকার একটি সময়সীমা ঘোষণা করে-যার মধ্যে যারা বৈধতা ছাড়া অবস্থান করছে, তাদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এরপর থেকে প্রায় সাত লাখ আফগান ইরান ছেড়েছে, শুধু জুন মাসেই ফিরে গেছে ২ লাখ ৩০ হাজারের বেশি।
ইরানে প্রায় ৪০ লাখ আফগান শরণার্থী ও অভিবাসী রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাদের অনেকে সেখানেই জন্মেছে এবং বেড়ে উঠেছে।
তেহরানে বসবাসকারী আফগান রেস্তোরাঁ মালিক বতৌল আকবরি আল জাজিরাকে বলেন, ইরানে এখন ‘অ্যান্টি-আফগান’ মনোভাব দেখা যাচ্ছে, যা আমাদের ভীষণভাবে কষ্ট দিচ্ছে। আমাদের অনেকের কাছে এটাই একমাত্র চেনা ঘর।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানায়, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালীন প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজার আফগানকে ইরান থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে, যেখানে আগের গড় ছিল দিনে মাত্র দুই হাজার।
ইরান সরকারের মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানি বলেন, আমরা সবসময় অতিথিপরায়ণ ছিলাম। কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তা আমাদের অগ্রাধিকার। অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশিদের অবশ্যই ফিরে যেতে হবে।
তেহরান থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক রেসুল সেরদার জানান, ইরানের অর্থনৈতিক সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সামাজিক সমস্যার জন্য আফগানদের দায়ী করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই অভিযোগগুলো আরও উসকে উঠেছে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চালানো প্রচারণা ও রাজনৈতিক ভাষণের মাধ্যমে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে ইসরায়েল আফগানদের গুপ্তচর হিসেবে ব্যবহার করছে।