নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় অনলাইনে প্রতারণার অভিযোগে দুই ভাইসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার উপজেলার রঘুনাথপুর ও যাদবপুর এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ছয়টি মুঠোফোন সেট ও সিম উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন কালিয়া উপজেলার যাদবপুর গ্রামের শেখ বাহার উদ্দিনের দুই ছেলে নাজমুল হুসাইন (৩১) ও বাপ্পি হাসান (২৭), একই গ্রামের আফসার মীনার ছেলে রনি মীনা (৪১) ও রঘুনাথপুর গ্রামের শুকুর আলী মুন্সির ছেলে মুসাব্বির মুন্সি (২৮)। তাঁদের বিরুদ্ধে সাইবার সুরক্ষা আইন ও প্রতারণার অভিযোগে দুটি মামলা করা হয়েছে। জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আশরাফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ জানায়, ওই চারজন অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিভিন্ন পণ্য বিক্রির নামে মানুষকে ঠকিয়ে অর্থ আয় করতেন। সাইবার সুরক্ষা ও প্রতারণার দুটি মামলার সূত্র ধরে গতকাল সকালে প্রথমে কালিয়া উপজেলার রঘুনাথপুরে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মুসাব্বিরকে। পরে পাশের যাদবপুরে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় দুই ভাই নাজমুল ও বাপ্পিকে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তাঁদের পরিবারের লোকজন প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশ প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত মুঠোফোন ও সিম জব্দ করতে সক্ষম হয়। এরপর একই এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় রনি মীনা নামের আরেকজনকে। তাঁর কাছ থেকেও মুঠোফোন ও সিম জব্দ করা হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রতারক চক্র গ্রামের গরিব মানুষকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে সিম কেনায়। এরপর তারা সেই সিম বেশি টাকা দিয়ে কিনে নেয়। তারা ওয়েবপেজ তৈরি করে ইলিশ মাছ, বাইক, মুঠোফোনসহ বিভিন্ন পণ্য কম দামে বিক্রির লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেয়। কম দামে পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখে অনেকে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এরপর কেউ পণ্য কিনতে চাইলে প্রতারক চক্র প্রথমে অল্প কিছু টাকা দিয়ে বুকিং দিতে বলে। পরে ডেলিভারি দেওয়ার কথা বলে ধাপে ধাপে কৌশলে আরও টাকা নেয়।

আশরাফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘প্রতারক চক্র এ কাজে ব্যবহার করে অন্যের কেনা সিম এবং একবার ব্যবহার করে ওই সিম ফেলে দেয়। আর যেহেতু সিমগুলো আসামিদের নামে নিবন্ধিত নয়, সেহেতু মামলা হলে তদন্তের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হয়। তারপরও আমরা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইন প্রতারকদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। দুই ভাইসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছি। ওই অঞ্চলে আরও অভিযান চালানো হবে।’

ক্রেতাদের উদ্দেশে আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা অনলাইনে ফোন, ইলিশ মাছ, মোটরসাইকেল বা যেকোনো পণ্য কম মূল্যে বিক্রির চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে যাচাই-বাছাই না করে অগ্রিম কোনো টাকা দেবেন না। অনলাইনে পণ্য কিনলে ক্যাশ অন ডেলিভারি, অর্থাৎ পণ্য হাতে পেয়ে টাকা দেবেন এমনভাবে কিনবেন, প্রতারণার ফাঁদে পড়বেন না। আর কোনোভাবে প্রতারণার শিকার হলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দেবেন।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আশর ফ ল ইসল ম গ র প ত র কর উপজ ল ব যবহ

এছাড়াও পড়ুন:

এলিট আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা কতটা নির্ভুল

বার্মিংহামের এজবাস্টনে কাল আরেকটি টেস্ট শেষ হলো। আরেকবার মাঠের আম্পায়ার হিসেবে দেখা গেল বাংলাদেশের শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকতকে এবং অনেকটা প্রত্যাশিতভাবেই তিনি আবার আলোচনায়। কারণ, ম্যাচটা যে ছিল ভারতের!

শরফুদ্দৌলা এর আগে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে ভারতের দুটি ম্যাচ (একটিতে টিভি আম্পায়ার) পরিচালনা করে আলোচিত হয়েছিলেন। এবার আম্পায়ারিং করলেন এজবাস্টনে অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফির দ্বিতীয় টেস্টে।

বাংলাদেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে জায়গা করে নেওয়া শরফুদ্দৌলা মূলত তাঁর দৃঢ় মানসিকতা ও সাহসী সিদ্ধান্তের কারণেই বারবার খবরের শিরোনাম হন।

তা এজবাস্টন টেস্টে কেমন আম্পায়ারিং করলেন শরফুদ্দৌলা? হার্শা ভোগলের মতো জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার যখন ‘সার্টিফিকেট’ দেন, তখন সেটিকে ভালো বলতেই হবে।

এজবাস্টনে কাল ইংল্যান্ডকে ৩৩৬ রানে হারিয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা ফিরিয়েছে ভারত। শুবমান গিলের দলকে হার্শা যেমন প্রশংসায় ভাসিয়েছেন, তেমনি আম্পায়ার শরফুদ্দৌলারও বন্দনা করেছেন।

এজবাস্টন টেস্টে আম্পায়ারিং নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হার্শা লিখেছেন, ‘এই ম্যাচে অসাধারণ আম্পায়ারিং হয়েছে। ক্রিস গ্যাফানির কাছ থেকে আপনি এই মানের আম্পায়ারিং আশা করতে পারেন। তবে শরফুদ্দৌলা সৈকত সত্যিই দুর্দান্ত ছিলেন।’

পরিসংখ্যান বলছে, ৪৮ বছর বয়সী শরফুদ্দৌলা এজবাস্টন টেস্টে ১০টি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর ৮টিতেই তিনি সঠিক ছিলেন, ২টি সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়েছে। সাফল্যের হার ৮০%। মানে, লেটার মার্কস বা এ‍+।  

শরফুদ্দৌলা এলিট প্যানেলে জায়গা করে নেন গত বছরের মার্চে। এরপর থেকে মাঠের আম্পায়ার হিসেবে সাতটি টেস্ট পরিচালনা করেছেন। শুরুটা হয়েছিল গত বছরের জুলাইয়ে বেলফাস্টে আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে টেস্ট দিয়ে। সেই ম্যাচে ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস) ছিল না।

পরের ছয় টেস্টে তাঁর নেওয়া ৪১ সিদ্ধান্তের মধ্যে মাত্র ১০টিতে ব্যাটসম্যান অথবা ফিল্ডিং করা দল সফল হতে পেরেছে। ৩১টি সিদ্ধান্ত তাঁর পক্ষে গেছে। অর্থাৎ, সাফল্যের হার ৭৫.৬১%। আম্পায়ার্স কলে মাত্র ৫টি সিদ্ধান্তে আউট অথবা নট আউট হয়েছে।

১০০% সাফল্য পেয়েছেন—এমন রেকর্ডও আছে শরফুদ্দৌলার। তাও আবার একটি নয়; দুটি টেস্টে। গত বছরের অক্টোবরে মুলতানে পাকিস্তান-ইংল্যান্ড টেস্টে তাঁর নেওয়া তিনটি সিদ্ধান্তই ছিল সঠিক। এরপর নভেম্বরে ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কা টেস্টে আট সিদ্ধান্তের সবকটি নির্ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

শরফুদ্দৌলা সবচেয়ে কম সাফল্য পেয়েছেন পাকিস্তান-ইংল্যান্ডের আরেক টেস্টে। অক্টোবরে রাওয়ালপিন্ডিতে হওয়া সেই টেস্টে তাঁর সাতটি সিদ্ধান্তের মধ্যে শুধু দুটি সঠিক ছিল (সাফল্যের হার ২৮.৫৭%)। অবশ্য রাওয়ালপিন্ডির পুরোদস্তুর স্পিন সহায়ক সেই উইকেটে আরেক আম্পায়ার ক্রিস গ্যাফানিকেও বড় পরীক্ষা দিতে হয়েছিল।

এলিট আম্পায়ার হওয়ার পর শরফুদ্দৌলা যে সাত টেস্টে মাঠের আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, এর সাতটিই আলাদা ভেন্যুতে। দেশের হিসেবে সংখ্যাটা ছয়।  

ক্রিকেটারদের যেমন ক্রিকেট তীর্থ লর্ডসে খেলার ও সেখানকার অনার্স বোর্ডে নাম তোলার স্বপ্ন থাকে, আম্পায়ারদেরও নিশ্চয় সেখানে আম্পায়ারিং করার ইচ্ছা থাকে!

শরফুদ্দৌলারও সেই ইচ্ছা পূরণ হবে পরের ম্যাচেই। বৃহস্পতিবার লর্ডসে শুরু ইংল্যান্ড-ভারত তৃতীয় টেস্ট। এই ম্যাচেও মাঠের আম্পায়ার হিসেবে দেখা যাবে ‘বাংলাদেশের গর্ব’ শরফুদ্দৌলাকে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অক্সফোর্ডে পড়ে চাকরি মেলেনি, যে সিদ্ধান্ত নিলেন যুবক
  • সাড়ে ৫ বছর পর জামিনে মুক্তি পেলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই দুই শিক্ষার্থী
  • অক্সফোর্ডে পড়াশোনা শেষে ফুড ডেলিভারির চাকরি
  • ‘তুই আওয়ামী লীগ করিস, বাঁচতে হলে টাকা দে’
  • লারার রেকর্ড ভাঙার চেষ্টা না করেই কেন ইনিংস ঘোষণা, জানালেন মুল্ডার
  • ঝিনাইদহে এসআই মিরাজুল হত্যা: চারজনের মৃত্যুদণ্ড, চারজনের যাবজ্জীবন
  • এলিট আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা কতটা নির্ভুল
  • পঞ্চগড়ে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার ৪ যুবক কারাগারে
  • ঝিনাইদহে একই পরিবারের ৪ জনকে কুপিয়ে জখম