সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান বাতিল হচ্ছে। বিদ্যমান চারটি আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা বাতিল করে নতুন অধ্যাদেশ করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।

এর ফলে রাজনৈতিক দলগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারবে না। প্রার্থীরা সবাই হবেন নির্দলীয়, যা এখন স্বতন্ত্র নামে পরিচিত।

দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের ব্যবহার বন্ধে দাবি জানিয়ে আসছিলেন বিভিন্ন দল ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন দলীয় প্রতীক বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছিল।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, এ বিধান বাদ দিলে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নন এমন অনেক যোগ্য ব্যক্তিও নির্বাচনে আগ্রহী হবেন।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চারটি খসড়া অধ্যাদেশের বিষয়ে তিনি জেনেছেন। এর বাইরে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আইন অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মো.

জিয়াউল হক

এ–সংক্রান্ত চারটি আলাদা অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করে ১ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরপর উপদেষ্টা পরিষদ হয়ে লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সম্মতি নিয়ে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুরাইয়া আখতার জাহান মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আইন অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মো. জিয়াউল হক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চারটি খসড়া অধ্যাদেশের বিষয়ে তিনি জেনেছেন। এর বাইরে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে রাজনীতিতে আলোচনা আছে। বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের বিরোধিতা করে আসছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্যান্য দল আগে স্থানীয় নির্বাচন চাইছে। এরই মধ্যে স্থানীয় সরকারকাঠামোর চারটি আইনের দলীয় প্রতীকের ধারা বাতিল করতে যাচ্ছে সরকার।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাদ দিতে বিএনপি দাবি জানিয়ে আসছে। বিএনপির ৩১ দফাতেও এটি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটি আমাদের দলের যে দাবি ছিল, তার প্রতিফলন।’

দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পদ্ধতি বাতিলের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছে এনসিপি। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হলে জাতীয় রাজনীতির বিরোধ স্থানীয় পর্যায়ে চলে যায়। অনেক ভালো সামাজিক নেতৃত্ব দলীয়ভাবে প্রভাবিত হন। সব মিলিয়ে স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না হওয়াটাই ভালো।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের জন্য তৈরি করা চারটি খসড়া অধ্যাদেশের সারসংক্ষেপে বলা হয়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে সঠিকভাবে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নির্বাচনে সব পর্যায়ের জনগণের অংশগ্রহণের লক্ষ্যে চারটি আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা বাতিল করা প্রয়োজন।

স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাদ দিতে বিএনপি দাবি জানিয়ে আসছে। বিএনপির ৩১ দফাতেও এটি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটি আমাদের দলের যে দাবি ছিল, তার প্রতিফলন।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয় ৮ আগস্ট। এরপর সব সিটি করপোরেশনের মেয়র, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার মেয়রদের অপসারণ করা হয়। এসব পদে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে প্রশাসক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অপসারণ করা না হলেও অনেক জায়গায় চেয়ারম্যানরা পলাতক। সেসব জায়গায় প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, আলাদা করে চারটি অধ্যাদেশের প্রয়োজন নেই। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ আইনকে একটি অধ্যাদেশে আনা সম্ভব। সেটা কেন করা হলো না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাঁর মতে, এক দিনেই চারটি নির্বাচন করা সম্ভব।

বর্তমানে স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় পাঁচটি স্তর রয়েছে। এর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ ৪ হাজার ৫৮১টি। এ ছাড়া ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদ, ৬৪টি জেলা পরিষদ (তিন পার্বত্য জেলাসহ), ৩৩০টি পৌরসভা ও ১২টি সিটি করপোরেশন রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, জেলা পরিষদে সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচন হয় না। তাই জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে দলীয় প্রতীকের বিধানটি বাতিল বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করার সিদ্ধান্ত হয়।

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব পুরোটা আমলে নেওয়া হচ্ছে না বলে তিনি মনে করেন।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, আলাদা করে চারটি অধ্যাদেশের প্রয়োজন নেই। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ আইনকে একটি অধ্যাদেশে আনা সম্ভব। সেটা কেন করা হলো না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাঁর মতে, এক দিনেই চারটি নির্বাচন করা সম্ভব। আলাদা আলাদা নির্বাচনের দরকার নেই। সংস্কার না করে কোনো নির্বাচন করা ঠিক হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক ব এনপ র র জন ত উপজ ল প রসভ

এছাড়াও পড়ুন:

দর কষাকষির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ঠিক হবে: অর্থ উপদেষ্টা

বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক চূড়ান্ত নয় বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘ওয়ান টু ওয়ান নেসোসিয়েশনের মাধ্যমে এটা ঠিক হবে। এ লক্ষ্যে আগামীকাল ৯ জুলাই ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের (ইউএসটিআর) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিনিধিদের বৈঠক হবে।’

আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ নিয়ে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘ওখানে আমাদের বাণিজ্য উপদেষ্টা আছেন। উনি ৩ দিন আগে গেছেন। আজকেই কমার্স টিম যাচ্ছে। ৮ তারিখে মিটিং। ওদের ৮ তারিখ মানে আগামীকাল বুধবার খুব ভোরবেলা। মিটিংয়ের পর আমরা বুঝতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘শুল্ক যেটা যেটা দিয়েছেন সেটা ঠিক অফিসিয়াল…। ইউএসটিআরের সঙ্গে আলাপ করবে উনি (বাণিজ্য উপদেষ্টা) ম্যান্ডেটরি। এর আগের দিন কথা বলেছেন। কালকের পর আপনারা বুঝতে পারবেন।’

মিটিংয়ে কি কোনো উন্নতি হওয়ার আশা করা যায়? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা আশা করি। যাই হোক, সেটার প্রেক্ষিতে আমরা অন্যান্য পদক্ষেপগুলো নেব। এখন বৈঠকটা মোটামুটি পজেটিভ। ৬ তারিখ একটা মিটিং হয়েছে, মোটামুটি পজেটিভ আছে।’

চিঠি তো ইতোমধ্যে ইস্যু হয়ে গেছে, সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট দিয়েছে। এটা ওয়ান টু ওয়ান যখন নেগোসিয়েশনে ঠিক হবে। চিঠি তো বহু আগে দিয়ে দিতো, ৩৫ শতাংশ। এইটা আবার ১৪টা দেশের জন্য বলছে একই। কিন্তু ওয়ান টু ওয়ান নেগোসিয়েশন হবে, সে জন্যই তো ইউএসটিআরে সঙ্গে কথা বলা। এটা ফাইনাল না।’

ভিয়েতনাম চেষ্টা করে ২৬ শতাংশ কমিয়েছে, বাংলাদেশের কেন মাত্র ২ শতাংশ কমানো হলো। তার মানে কি নেগোসিয়েশন ভালো হয়নি? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘না না নেগোসিয়েশন….। এটা ঠিক যে আমাদের ডেফিসিট মাত্র পাঁচ বিলিয়ন ডলার। ভিয়েতনামের ১২৫ বিলিয়ন ডলার। ওখানে কিন্তু ওরা মোটামুটি কনসেশন দিতে পারে, মানে রাজি হয়েছে। কিন্তু আমাদের এত কম ডেফিসিট। আমরা চেষ্টা করছি যে আমাদের এত কম ডেফিসিট, এত শুল্ক দেওয়ার তো জাসটিফিকেশন থাকে না।’

তিনি বলেন, ‘ওরা যেটা করছে ব্ল্যাঙ্কেট কতোগুলো করেছে। চায়নার জন্য আলাদা। একেবারে চায়নার একটা সিঙ্গেল হ্যান্ডেলে ডিল করে ওরা। আর বাকিরা… এটা যেটা করেছে ১৪টা দেশের একই বলেছে। এখন আমরা নেগোশিয়েট করব।’

চিঠিতে যে সমস্ত কন্ডিশন দেওয়া হয়েছে এগুলো কি ফুলফিল করা সম্ভব? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এখন তো আমি কিছু বলতে পারব না।’

রাজস্ব আয় নিয়ে করা এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এইবার কালেকশন যা হয়েছে মোটামুটি, একেবারে বিরাট গ্যাপ না। আর আগামী বছর আমরা চেষ্টা করছি শুধু ট্যাক্স, ভ্যাট না দিয়ে সিস্টেমটা চেঞ্জ করলে দেখবেন কালেকশনটা অনেক বেশি হবে। লিকেজ হবে না, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আতাত করে কিছু করতে পারবে না। আমাদের ট্যাক্স ক্যাপাসিটি ভালো, কিন্তু আমরা সেটা ইউটিলাইজ করতে পারিনি। সে কারণে রেভিনিউ কিছুটা শর্ট।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ