বরিশালের ছয়টি আসনে বিএনপির প্রার্থী–জট থাকলেও জামায়াতে ইসলামী ইতিমধ্যে সব কটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। ১০টি উপজেলা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নিয়ে এই জেলায় ৬টি সংসদীয় আসন। এসব আসনে বিএনপির অন্তত ৩০ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁদের বেশির ভাগই নানাভাবে মাঠে আছেন। আবার অনেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে না নামলেও ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এতে দলগতভাবে বিএনপির নেতা-কর্মীরা নানাভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এসব আসনে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বেশ তৎপর। তবে বিএনপির বাইরে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাংগঠনিক তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। এর বাইরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সাংগঠনিক তৎপরতা সামান্য লক্ষ্য করা গেলেও নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা একেবারেই নেই।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন বাস্তবতায় বরিশালের রাজনীতি মূলত বিএনপিকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। তবে দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়া, নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব দলীয় রাজনীতিকে স্থবির করার পাশাপাশি নানাভাবে বিভক্ত করে তুলেছে। তবে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী চূড়ান্ত করে অনেকটাই নির্ভার আছে। চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশেও এই সমস্যা নেই।

বরিশালের ছয়টি সংসদীয় আসনের প্রতিটিতেই বিএনপির একাধিক প্রার্থী আছেন। দলের নেতৃত্ব, এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে বিভেদের পাশাপাশি এখন নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতি ঘিরে তা আরেক দফা বেড়েছে।

বিগত দিনে জামায়াত ও বিএনপি জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও এবার জামায়াত আলাদা প্রার্থী দিচ্ছে। গত ২১ জুন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বরিশালসহ বিভাগের ২১টি আসনে দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা দিয়েছেন।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুয়াযযম হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াত জোটগতভাবে কিংবা জোটের বাইরে যখনই নির্বাচন করেছে, তখন ৩০০ আসনেই কাজ করেছে। জামায়াতের ৩০০ আসনে নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা আছে। হাসিনা সরকারের পতনের পর মানুষের মধ্যে নতুন স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার জন্ম নিয়েছে। দেশের জনগণ ৫৪ বছর অন্য সব রাজনৈতিক দলগুলোকে দেখেছে। কিন্তু এবার জামায়াতকে ঘিরেই নতুন স্বপ্ন দেখতে চায়।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীরা এলাকায় সভা-সমাবেশ, গত রমজানে ইফতার মাহফিল, ঈদ পুনর্মিলনী, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। এবার পবিত্র ঈদুল আজহার পরও এসব মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা এলাকায় নানা অনুষ্ঠানে তৎপর ছিলেন।

বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া)

এই আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য জহিরউদ্দিন স্বপন গত ১৫ বছরে ঈদ-কোরবানি, এমনকি পারিবারিক অনুষ্ঠানে এলাকায় এসে বাধার মুখে পড়তেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি এখন নিয়মিত এলাকায় আসছেন, নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মাঠ গোছাচ্ছেন। দুই ঈদে তিনি দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। একইভাবে এই আসনে অপর দুই মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সোবাহান এলাকায় সক্রিয় আছেন। এখানে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী হিসেবে মাওলানা কামরুল ইসলামের নাম ঘোষণা করেছে।

বরিশাল-২ (উজিরপুর ও বানারীপাড়া)

এই আসনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এস সরফুদ্দিন আহমেদ (সান্টু) দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার রাজনীতিতে সক্রিয়। বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন মামলায় তাঁর নাম থাকায় তিনি এলাকায় তেমন আনতে পারেননি। সরকার পতনের পর তিনি সক্রিয় হয়েছেন। যদিও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন (আলাল) বরিশাল-২ আসনে এর আগে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাই এ আসন থেকে তিনিও মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে এলাকায় গুঞ্জন আছে। তবে দলের অপর একটি সূত্র জানায়, তিনি বরিশাল-৫ (সদর) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। এর বাইরে দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ–বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সদস্য দুলাল হোসেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদসহ (জুয়েল) আরও কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এখানে জামায়াতে ইসলামী আবদুল মান্নানকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে।

বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী)

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান আসাদ মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাঁরা সবাই এখন এলাকামুখী। মনিরুজ্জামান আসাদ এরই মধ্যে গণসংযোগে নেমে পড়েছেন। এখানে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদও সক্রিয় আছেন। এখানে জামায়াতের প্রার্থী জাহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবরও এলাকায় সক্রিয়।

বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ)

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে দুই উপজেলায় নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মেজবা উদ্দিন ফরহাদ। তৎপর আছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান। এই দুই নেতার তৎপরতায় হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় বিএনপি কার্যত দুই ধারায় বিভক্ত। এখানে জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা আবদুর জব্বার।

বরিশাল-৫ (সদর-সিটি করপোরেশন)

আসনটি বিভাগীয় সদরের আসন হওয়ায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই আসনে মজিবর রহমান সরোয়ার দীর্ঘদিন অনেকটা একক প্রার্থী হলেও মহানগর বিএনপির নেতৃত্ব তাঁর বিরোধীদের হাতে চলে যাওয়ায় তিনি কিছুটা কোণঠাসা ছিলেন। তবে পাঁচবারের সংসদ সদস্য, সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং জাতীয় সংসদের হুইপের দায়িত্ব পালন করা মজিবর রহমান সরোয়ার কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব পদে ছিলেন। মহানগর বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন প্রায় ২০ বছর। সব মিলিয়ে বরিশাল মহানগরের ৩০টি ওয়ার্ড ও সদর উপজেলায় সব কটি ইউনিয়নে তাঁর সাংগঠনিক ভিত্তি আছে। বরিশাল নগর বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব তাঁর বিরোধীদের হাতে থাকলেও তাঁরা নিজেদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বে লিপ্ত। এর বাড়তি সুবিধা পাবেন মজিবর রহমান সরোয়ার।

এবার এই আসনে অনেক আগে থেকেই আলাদাভাবে সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গণসংযোগ চালিয়ে আসছেন কেন্দ্রীয় সদস্য আবু নাছের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ। তিনি এখানে মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (পদ স্থগিত) বিলকিস আক্তার জাহান (শিরিন), কেন্দ্রীয় সদস্য এবায়েদুল হক চান, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খানসহ আরও কয়েকজন এই আসনে মনোনয়ন চাইবেন বলে আলোচনা আছে। এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি মুয়াযযম হোসাইনকে। তিনিও সক্রিয় আছেন এখানে।

মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘বরিশাল বিএনপির ঘাঁটি, এটা সবাই জানেন। এখানে জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থীকেই সমর্থন করবেন ভোটাররা। দল আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় এবং মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতাকে মনোনয়ন দিবে বলে আমি আশাবাদী।’

বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ)

এই আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান ছাড়াও মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে সক্রিয় আছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খান (রাজন)। এই আসনে জামায়াতে ইসলামী মাওলানা মাহমুদুন্নবীকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে।

মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীদের জট নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা আকন কুদ্দুসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি বড় দল। তাই এখানে প্রার্থীর সংখ্যা বেশি থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ও নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের পাশে যাঁরা ছিলেন, ৫ আগস্টের পর যাঁরা উজ্জ্বল ভাবমূর্তি বজায় রেখেছেন, তাঁরাই মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বুঝেশুনেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র ক ন দ র য় ক ন দ র য় সদস য নগর ব এনপ র র পতন র পর কম ট র স অন ষ ঠ ন সরক র র ল ইসল ম র জন ত বর শ ল এল ক য় গঠন ক উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বরিশালে বিএনপিতে প্রার্থী–জট, নির্ভার জামায়াত

বরিশালের ছয়টি আসনে বিএনপির প্রার্থী–জট থাকলেও জামায়াতে ইসলামী ইতিমধ্যে সব কটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। ১০টি উপজেলা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নিয়ে এই জেলায় ৬টি সংসদীয় আসন। এসব আসনে বিএনপির অন্তত ৩০ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁদের বেশির ভাগই নানাভাবে মাঠে আছেন। আবার অনেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে না নামলেও ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এতে দলগতভাবে বিএনপির নেতা-কর্মীরা নানাভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এসব আসনে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বেশ তৎপর। তবে বিএনপির বাইরে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাংগঠনিক তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। এর বাইরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সাংগঠনিক তৎপরতা সামান্য লক্ষ্য করা গেলেও নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা একেবারেই নেই।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন বাস্তবতায় বরিশালের রাজনীতি মূলত বিএনপিকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। তবে দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়া, নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব দলীয় রাজনীতিকে স্থবির করার পাশাপাশি নানাভাবে বিভক্ত করে তুলেছে। তবে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী চূড়ান্ত করে অনেকটাই নির্ভার আছে। চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশেও এই সমস্যা নেই।

বরিশালের ছয়টি সংসদীয় আসনের প্রতিটিতেই বিএনপির একাধিক প্রার্থী আছেন। দলের নেতৃত্ব, এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে বিভেদের পাশাপাশি এখন নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতি ঘিরে তা আরেক দফা বেড়েছে।

বিগত দিনে জামায়াত ও বিএনপি জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও এবার জামায়াত আলাদা প্রার্থী দিচ্ছে। গত ২১ জুন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বরিশালসহ বিভাগের ২১টি আসনে দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা দিয়েছেন।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুয়াযযম হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াত জোটগতভাবে কিংবা জোটের বাইরে যখনই নির্বাচন করেছে, তখন ৩০০ আসনেই কাজ করেছে। জামায়াতের ৩০০ আসনে নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা আছে। হাসিনা সরকারের পতনের পর মানুষের মধ্যে নতুন স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার জন্ম নিয়েছে। দেশের জনগণ ৫৪ বছর অন্য সব রাজনৈতিক দলগুলোকে দেখেছে। কিন্তু এবার জামায়াতকে ঘিরেই নতুন স্বপ্ন দেখতে চায়।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীরা এলাকায় সভা-সমাবেশ, গত রমজানে ইফতার মাহফিল, ঈদ পুনর্মিলনী, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। এবার পবিত্র ঈদুল আজহার পরও এসব মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা এলাকায় নানা অনুষ্ঠানে তৎপর ছিলেন।

বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া)

এই আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য জহিরউদ্দিন স্বপন গত ১৫ বছরে ঈদ-কোরবানি, এমনকি পারিবারিক অনুষ্ঠানে এলাকায় এসে বাধার মুখে পড়তেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি এখন নিয়মিত এলাকায় আসছেন, নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মাঠ গোছাচ্ছেন। দুই ঈদে তিনি দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। একইভাবে এই আসনে অপর দুই মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সোবাহান এলাকায় সক্রিয় আছেন। এখানে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী হিসেবে মাওলানা কামরুল ইসলামের নাম ঘোষণা করেছে।

বরিশাল-২ (উজিরপুর ও বানারীপাড়া)

এই আসনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এস সরফুদ্দিন আহমেদ (সান্টু) দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার রাজনীতিতে সক্রিয়। বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন মামলায় তাঁর নাম থাকায় তিনি এলাকায় তেমন আনতে পারেননি। সরকার পতনের পর তিনি সক্রিয় হয়েছেন। যদিও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন (আলাল) বরিশাল-২ আসনে এর আগে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাই এ আসন থেকে তিনিও মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে এলাকায় গুঞ্জন আছে। তবে দলের অপর একটি সূত্র জানায়, তিনি বরিশাল-৫ (সদর) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। এর বাইরে দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ–বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সদস্য দুলাল হোসেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদসহ (জুয়েল) আরও কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এখানে জামায়াতে ইসলামী আবদুল মান্নানকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে।

বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী)

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান আসাদ মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাঁরা সবাই এখন এলাকামুখী। মনিরুজ্জামান আসাদ এরই মধ্যে গণসংযোগে নেমে পড়েছেন। এখানে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদও সক্রিয় আছেন। এখানে জামায়াতের প্রার্থী জাহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবরও এলাকায় সক্রিয়।

বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ)

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে দুই উপজেলায় নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মেজবা উদ্দিন ফরহাদ। তৎপর আছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান। এই দুই নেতার তৎপরতায় হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় বিএনপি কার্যত দুই ধারায় বিভক্ত। এখানে জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা আবদুর জব্বার।

বরিশাল-৫ (সদর-সিটি করপোরেশন)

আসনটি বিভাগীয় সদরের আসন হওয়ায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই আসনে মজিবর রহমান সরোয়ার দীর্ঘদিন অনেকটা একক প্রার্থী হলেও মহানগর বিএনপির নেতৃত্ব তাঁর বিরোধীদের হাতে চলে যাওয়ায় তিনি কিছুটা কোণঠাসা ছিলেন। তবে পাঁচবারের সংসদ সদস্য, সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং জাতীয় সংসদের হুইপের দায়িত্ব পালন করা মজিবর রহমান সরোয়ার কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব পদে ছিলেন। মহানগর বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন প্রায় ২০ বছর। সব মিলিয়ে বরিশাল মহানগরের ৩০টি ওয়ার্ড ও সদর উপজেলায় সব কটি ইউনিয়নে তাঁর সাংগঠনিক ভিত্তি আছে। বরিশাল নগর বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব তাঁর বিরোধীদের হাতে থাকলেও তাঁরা নিজেদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বে লিপ্ত। এর বাড়তি সুবিধা পাবেন মজিবর রহমান সরোয়ার।

এবার এই আসনে অনেক আগে থেকেই আলাদাভাবে সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গণসংযোগ চালিয়ে আসছেন কেন্দ্রীয় সদস্য আবু নাছের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ। তিনি এখানে মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (পদ স্থগিত) বিলকিস আক্তার জাহান (শিরিন), কেন্দ্রীয় সদস্য এবায়েদুল হক চান, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খানসহ আরও কয়েকজন এই আসনে মনোনয়ন চাইবেন বলে আলোচনা আছে। এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি মুয়াযযম হোসাইনকে। তিনিও সক্রিয় আছেন এখানে।

মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘বরিশাল বিএনপির ঘাঁটি, এটা সবাই জানেন। এখানে জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থীকেই সমর্থন করবেন ভোটাররা। দল আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় এবং মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতাকে মনোনয়ন দিবে বলে আমি আশাবাদী।’

বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ)

এই আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান ছাড়াও মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে সক্রিয় আছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খান (রাজন)। এই আসনে জামায়াতে ইসলামী মাওলানা মাহমুদুন্নবীকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে।

মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীদের জট নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা আকন কুদ্দুসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি বড় দল। তাই এখানে প্রার্থীর সংখ্যা বেশি থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ও নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের পাশে যাঁরা ছিলেন, ৫ আগস্টের পর যাঁরা উজ্জ্বল ভাবমূর্তি বজায় রেখেছেন, তাঁরাই মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বুঝেশুনেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ